জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব এর সকল পোস্ট

জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব সম্পর্কে

জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার নলছিয়া নামক গ্রামে ১০ ই জুন ২০০১ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তার লেখা গুলো বাস্তব ধর্মীয়। লেখা তার নেশা। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে কবিতা লিখতে। * চরম মুর্খ সেই যে শিক্ষা অর্জন করে নিজের মাতৃভাষা শুদ্ধ ভাবে বলতে পারে না । * আমার কাছে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা পদ্ধতি থেকে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা পদ্ধতি শ্রেষ্ঠ।

আমি সেই

আমি তো উপন্যাসিকের সেই উপন্যাসটা
যেথায় উপন্যাসিক সযত্নে লেখে
সুখী মানুষের সুখের কথা
আর দুঃখী মানুষের দুঃখের কথা।

আমি তো প্রেমিকার অপ্রয়োজনীয়
ডায়েরির সেই কষ্টের পাতাটা
যে ডায়েরির পাতার নেই কোনো প্রয়োজন
শুধু অবহেলা আর অবহেলা।

আমি তো নিঝুম দুপুরে তৃষার্ত পথিকের
জল পানের সেই দৃশ্যটা
যা তৃষার্ত পথিকের জন্য আনন্দদায়ক।

আমি তো বর্ষাকালে প্রকৃতির
কদম আর কেয়া ফুলের মনোরম
সেই পরিবেশটা যা অনন্য ঋতু।

আমি তো সেই উদ্বাস্তু মানুষ গুলোর
নির্মম নিষ্ঠুরতম প্রহর গুলো
যা তাদের সতত কাঁদায় ।

আমি তো সেই শ্রমিক আন্দোলনের
নির্যাতিত নিপীড়িত মানবটা
যে শুধু মালিক শ্রেণির দ্বারা
শোষিত শোষিত শোষিত।

রচনাকালঃ
০১/০১/২০২০

মৃত্যু

আমি তো কোনো কিছুতে করি না ভয়
অন্যায়কারী পদতলে পিশায়ে মারি
সমালোচনা করি সম্মুখে
যদি আমার মাথায় মেশিন গান লাগানো থাকে
করি না তো আমি এই ধরার শত্রুর ভয়
যদি তাতে আমার মৃত্যু লেখা না রয়।
করি আমি এটাই ভয়
না যেন মৃত্যু অতি সহজ না ধরে আমায়।
যদি মৃত্যু আমায় স্বল্পকালে ধরে
দৃষ্টির অগোচরে রবে কত দেশ বিদেশ
আর কত কত রাজধান
বাকি রবে আর কত অজানা জ্ঞান
হবে না তো আমার স্বপ্ন পূরণ
কচি স্বপ্ন গুলো নিমেষেই পড়বে ঝরে
দেখবে না আলোর মুখ আমার নয়ন দিয়ে
ভেসে বেড়াবে শূন্য হাওয়ায়
কোনো স্থান পেয়ে।
হে সৃজনকারী,
তোমার কাছে আমার করজোড়ে এই নিবেদন
বিচরণের সুতো দীর্ঘ করো
আমি যেন আমার জীবনের অভিযান
করতে পারি পূরণ শুদ্ধ ভাবে।
আমি সেটাই করি ভয়
যেথায় আমার মৃত্যু লেখা রয়।
যদি আমি জানতে পারতাম
কবে শেষ হবে আমার এই ধরার বিচরণ
তবে সব আমি সাজিয়ে রাখব
কিন্তু সাজাবো না আমি বিষন্ন মন।
মৃত্যু বড় পাশবিক
অত্যাচার নির্যাতন নিপীড়ন থেকে
তাই আমি করি মৃত্যুকে ভয়
কঠিন মৃত্যু না যেন আমার না হয়।
যেহেতু আমি জীব
যতই করি ছলচাতুরী
পাব না তো রক্ষা তার কবল থেকে।
ওহে মৃত্যুর মালিক
তোমার কাছে আমার করজোড়ে এই নিবেদন
মৃত্যুকে আমি করি ভয়
সহজ মৃত্যু দিয়ে আমাকে ধরাতে থেকে করো ক্ষয়।

রচনাকালঃ
২০/০৮/২০২০

আমার জীবন

আমার জীবন পত্রবিহীন বৃক্ষের শাখের
ফুল যেমন বেমানান তেমন
কষ্ট দিয়ে জর্জরিত একটা কাব্য কথা
সেটায় তো আমার জীবন।

আমার জীবন কোকিল পাখির মতো
যার নেই স্থায়ী কোনো আবাসন
বৃক্ষের শাখে শাখে ঘুরে বেড়ানোর মতো
সেই ভাসমান দৃশ্যটা আমার জীবন।

আমার জীবন তো মৃত নদীর মতো
যেখানে নেই কোনো জলজ প্রাণ
যেখানে তৃষ্ণার্ত মানব পাবে না কো জল
সেই নির্মম দৃশ্যটা আমার জীবন।

আমার জীবন তো সেই নির্যাতিত নিপীড়িত
দাসের মতো যার কাজ শুধু কাজ
ভ্রান্ত হল প্রহর আর প্রহর
আমার সেই কষ্টের জীবনটা।

আমার জীবন তো দুঃখের সাগর
যেখানে নেই কোনো সুখের ছোঁয়া
শুধু দুঃখ আর দুঃখের চক্র
সেই দুঃখের দৃশ্যটা আমার জীবন।

রচনাকালঃ
০১/০১/২০২০

পদ্ম দীঘির ধারে

পদ্ম দীঘির ধারে
লাইন সারে সারে,
বাহারি রকমের হাসে
ফিরে দেখি পাছে,
করে ওরা স্নান
দূর হয় ম্লান।

বসে দেখ শিশু
পদ্মফুলের কিছু,
জলের ঢেউয়ে নাচে
পাতা ভেসে আছে।

মাছরাঙা ধরে মাছে
বসে আছে কদমগাছে,
কচ্ছপ ভেসে উঠে তীরে
শীতকালের রৌদ্রের দুপুরে।

পাশ দিয়ে যায় নারী
শালুকে তার আঁচল ভারী,
পানকৌড়ি ধরে মাছ
পদ্ম দীঘিতে পদ্ম থাকে বারো মাস।

বিকেল হলে ছেলেমেয়েরা
দেখতে আসে পদ্ম ফুল
জমিরের এই দীঘিতে
ডুবেছে সাত কুল।

প্রিয়জনের শোকে জমির
বসে থাকে তটে
লোকজন দেখলে জমির
দৌড়িয়ে নামে ঘাটে।

রচনাকালঃ
১১/০৯/২০২০

স্বপ্নের বাংলাদেশ

বলতে পারো সোনার বাংলা এমন হবে কবে?
কামার কুমার চাষা শ্রমিক সম মর্যাদা পাবে।
দূর্নীতি আর ঘুষের খেলা বাড়ছে সারাবেলা
এসব কিছুর বড় কারণ আদর্শের অবহেলা।
খুনখারাবি রাহাজানি বাড়ে কমছে না তো সমাজ আরো
স্বদেশীয় সংস্কৃতি পালন কর বিজাতীয়টা ছাড়ো।
যানজট আর পরিবেশ দূষণ মুক্ত হবে কবে
শান্তিতে ঘুরে বেড়াবে আর নির্মূল শ্বাস নেবে।
ইভটিজিং আর পরকীয়া কমবে কবে বল
স্ব স্ব ধর্ম পালন করে চলরে সবাই চল।

রচনাকালঃ
২৭/০৪/২০২০

কৌতূহল

এই যে শিশু
ভাবছ কিছু
তাকিয়ে গগনে প্রাণে
ও পথিক ভাই
এই গগনের তারকারাজির হিসাব কি,
এই ধরার কি কেউ জানে
আমি তো জানিনে বাপু।

শোন শোন পথিক ভাই বলি তোমারে
সাদা মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ায় শূন্যে কি করে
এই প্রশ্নটি রইল পথিক ভাই তোমার তরে
জানো নাকি
না, না বাপু।

ও পথিক ভাই
সন্ধা হলে আঁধার নামে আলোর মাঝারে
চাঁদনী রাতে জোনাকিরা আলো জ্বালে কেমন করে
জানো নাকি
না,না বাপু।

ও পথিক ভাই
গগন পথে সকল পাখি উড়ে কেমনে
বিমান, উড়োজাহাজ চলে নাকি তেমনে
জানিনে বাপু।

রচনাকালঃ
০৬/১১/২০২০

বীরবাহু উমর পর্ব -৩

তোমার অভয়ে মুয়াজ্জিন দিতে
মধুর সুরে আজান
তাই না শুনে নিখিল বিশ্ব
করতো স্রষ্টার জয় গান।

দ্বীনের পথে দিয়েছ তুমি
অঢেল ধন সম্পদ
তার জন্য পেয়েছো উমর
রাসূলের মহব্বত।

তুমি তো ছিল উমর আল্লাহর
রাসূলের দক্ষিণ বাহু
তার জন্য নিধন করতে পেরছো
ইসলামের সকল রাহু ।

নিজের জীবনের চেয়ে তুমি
রাসূলে বাসিত ভালো
ধর্ম গ্রহণের আগের জীবন
ছিলো তোমার কালো।

ইসলামের রাহু বিনাশ করতে
উদ্ধত উমরের শমশের
কভু উমর তোমার কাজে হতো না
কোনো হেরফের।

রচনাকালঃ
২৯/১১/২০২০

বীরবাহু উমর পর্ব -২

নিজের স্ত্রীকে দিয়ে উমর
করায়ছ দায়ের কাজ
তার জন্য তুমি উমর
পাওনি কভু লাজ।

আমজনতার নিয়েছ খবর
গভীর রাতে ঘুরে
কার আছে কিসে অভাব
দিয়েছ তা পুরে।

প্রহরীবিহীন সম্রাট উমর
চলছে উষ্ট্রের পিঠে চড়ি
একমাত্র ভৃত্য তােমার চলে
উষ্ট্রের রশি ধরি।

ভৃত্য চড়ে উষ্ট্রের পিঠে
উমর ধরে রশি
সম অধিকার দিয়ে চলে
দৃপ্ত পায়ে গগনের শশী।

সদা তোমার বলিষ্ঠ কন্ঠ
কাফেররা পেতে ভয়
কাবা সম্মুখে পড়িল নামাজ
রাসূলে মান সমুন্নত রয়।

বীরবাহু ওমর পর্ব -১

অর্ধ পৃথিবীর বাদশাহ তুমি
উমর তোমার নাম
এই ধরাতে তোমার সমতুল
নেই কো কারু দাম।

করছো তুমি রাজ্য শাসন
ধুলার তখতে বসি
খেজুর পাতার প্রাসাদ তােমার
বার বার গেছে খসি।

সাইমুম ঝড় তোমার প্রাসাদ
পড়েছে কত নুয়ে
তবুও তুমি শির দাঁড়িয়ে
অটুট ছিলে ভুঁয়ে।

নিজের সন্তানের অন্যায়ে তুমি
দিয়েছ বড় সাঁজা
তাই তো তুমি আদৌও উমর
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা।

নিজের পৃষ্ঠে বহন করে আটা
দিয়েছ বেদুইনে
তা খেয়ে তাদের জীবন
গেছে বাঁচিয়ে।

আপনজন

আমি হব সবার সেরা
সবার আপনজন
সুখে দুঃখে থাকবো পাশে
এই আমার পণ।

খেলার সময় খেলব আমি
কাজের সময় কাজ
পড়ার সময় পড়ব আমি
নিতে তাতে লাজ।

গুরুজনদের করব শ্রদ্ধা
করব ছোটদের স্নেহ
আদর ভালোবাসায় জড়িয়ে দেব
সকলে আমার এই গেহ।

রচনাকালঃ
১৮/১১/২০১৯

মাতাপিতা

মাতাপিতা থাকিতে করিও যতন
তবে হেরিলে বুঝিবে হেরিয়েছ রতন।

এমন আপন পরশ পাবে নাকো তুমি
মাতাপিতা তোমার আমার আপন জন্ম ভুমি।

ছেলেবেলায় আমারে পিতামাতা পুষিনু যেমন করে
মরণের পর তাদের সাথে ব্যবহার করিও তেমন করে।

শত কষ্ট করে আমারে করেছে তারা লালন
কষ্ট দিও না তাদের করো ফুলের মতো পালন।

জ্বালাতন করতাম যখন আমি রাতে
কষ্ট দিত না আদর করত দিয়ে মাথায় দুই হাতে।

সুখের স্থানে রেখে খোদা আমার পিতামাতারে
সন্তান হয়ে দুই হাত তুলে কামনা করি খোদার তরে।

রচনাকালঃ
২৬/১২/২০১৯

অস্তিত্ব বিলীন

একজন মানুষের তখনই মৃত্যু হয়
যখন পৃথিবী থেকে তার সকল সৃষ্টিকর্ম
স্মৃতি বিস্মৃতি গুলো বিলীন হয়ে যায়।

সেই মানুষের কখনোই মৃত্যু হয় না
যার সৃষ্টিকর্ম বিরল
সেই মানুষের কখনো মৃত্যু নেই
সে চির অমর
সেই চির অমর।

একটি জাতির তখনই মৃত্যু হয়
যখন সেই জাতির শিল্প সংস্কৃতি
ধ্বংস লীলায় পরিণত হয়
যখন সেই জাতি পরাবলম্বন করে
এবং দাসত্ব মেনে নেয়
তখনই সেই জাতির মৃত্যু হয়
অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার সাথে সাথেই।

অজস্র মানুষ এসেছে এই পৃথিবীতে
যারা কর্ম করে নাই
তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে
কেউ আর তাদের মনে করে না
এই পৃথিবীতে কোনো মূল্য নেই তাদের।

তাই জীবনের দৈর্ঘ্য যাই হোক না কেন
কর্মই পরম ধর্ম
কর্মেই মানুষ বাঁচে অন্যটা নয়
তাই অমর কর্ম কর।

রচনাকালঃ
২৩/১২/২০২০

বীরের জননী

বাংলার ধ্বংস লীলা
আর অন্যায় অবিচার দেখে
বসে আছো তুমি
মনে হয় তুমি আমার সন্তান না
কেন মা এ কথা বলছো
আমার সন্তান কাপুরুষ বা ভীতু হতে পারে না
আমি নির্ভীক সন্তানের জননী
যে তার মাকে রক্ষা করবে অন্যায় অনিয়ম হাত থেকে
জোর করে মাকে অন্যরা ভোগ দখল করতে চাইলে
বাঁধা দেবে
মাকে শ্লীলতাহানির হাত থেকে রক্ষা করবে।

ধর মা আমি তোমাকে রক্ষার্থে
শত্রুর আক্রমণে প্রাণ উৎস্বর্গ করলাম
তাহলে মা তুমি মুক্ত হয়ে কি করবে?
ওরে খোকা তুই শোন
আমার এক সন্তানের বিনিময়ে
আমার অনাগত সন্তানের নিরাপত্তা চাই
মুক্তি চাই, মুক্তি
আর যেন আমাকে রক্ষার জন্য
কাউকে জীবন দিতে না হয়
যাতে আমার অনাগত সন্তানের নিরাপদে
আমার কোলে ভালো ভাবে বিচরণ করতে পারে
যেন সকল কাজ তাদের মতামত দিতে পারে
যেন তারা হয় না আর অধিকার থেকে বঞ্চিত
দেখে না যেন সূর্যের বলয় গ্রাস
মায়ের সম্মুখে সন্তানের লাশ এটা হৃদয় বিদারণ কাজ
তবুও আমাকে রক্ষার্থে তোমাকে যেতে হবে
আমার আগত সকল সন্তান বীর
কাপুরুষ নয়
আমি বীরের জননী
আমি বীরের জননী।

জমিলার জীবন

farid

ইছামতী নদীর ধারে ছোট্ট দুখানা ঘর
জলাঙ্গীর ঊর্মিতে ঘর দুখানা করিত যে নড়বড়
স্নান ভোজ করে ওরা ইছার জলেতে
ধান নষ্ট, বীজ নষ্ট, নষ্ট ক্ষেতের পর ক্ষেত
আরও নষ্ট জমিলার জীবন সংসার
কেড়ে নিল ওর স্বামী সন্তান এক ভাঙনে
নদীর ধর্ম এক কূল ভাঙা
অপর কূল গড়া
এই তো নদীর খেলা
জগৎ জুড়ে গেছে ভরে
ধনী দরিদ্রের ভেলা।
নিঃস্ব হয়ে বিষাদ মনে
বসে ইছার ধারে
দু দন্ড চুপ থেকে জমিলা
কাঁপছে থরথরে
বলছে কোথায় আছে ছৈল স্বামী
দেওনা ওদের ডেকে
দেখব আমি ছৈল স্বামীরে
দুনয়ন ভরে
পতিপুত্র শোকাতুরা জমিলা
বলছে বলছে বারে বারে
নিঃস্ব করে নিয়ে গেছে সব
ইছামতি আমার।

শেষ বয়সে চাই

Asrom-50

তুমি আমায় বরং
শেষ বয়সে ভালোবাসাটা দিও
যখন আমার স্বজনরা সবাই থাকবে
কিন্তু আমাকে ভালোবাসার কেউ থাকবেনা
না হয় তখন তুমি আমায় বরং ভালোবেস।

আমায় তোমরা এখন খাবার দিও না
বরং আমি যখন বৃদ্ধ হব
করতে পারব না কোনো কাজ
সেই দুঃখের দিন আমায় তোমরা দিও
সেই ভালোবাসা।

তোমরা ভালোবাসাটা দিও
আমায় সেই দিন যেদিন আমার পাশে
কেউ থাকবে না
বরং আমায় তখন তুমি ভালোবেস
আমি এখন চাই না
আমায় তো এখন ভালোবাসার অনেকে আছে
তাই শেষ বয়সে চাই সবার ভালোবাসা
অনাদরের দিন গুলোতে।

রচনাকালঃ
১৯/১২/২০২০