বিভাগের আর্কাইভঃ কবিতা

এভাবেই যদি …

এভাবেই যদি রোজ চেরাজলে ডুবে যায়
নতমুখী পাপড়ি- বিন্যাস,
গহীন নোঙর- কাঁটা নাল্ হয়ে
নির্বিবাদী গ্রীবাকে জড়ায়,
অব্যর্থে খোয়া যায়

পদ্মকোরক ফোটা মগজ-বৃওের
তুলকালাম শব্দদেহীদের
নিশিঘোর মেদুর-মিছিল,

বদরক্ত খোয়ারীর অম্লজান রসের জারকে
যদি মূল সময়ই বয়ে বয়ে নষ্ট হয়ে যায়
ফেটে যায় বিনা আঁচে
আয়ওের যাবতীয় দুধেলা সরাই…

তবে বিপন্ন ছায়াময়
হে হাওয়াহারী কল্পদ্রুম তুমি,
তুমি আর অলৌকিক পদ্মনাল নোঙর কাঁটায়
বিষন্ন সুষুম্নায় মায়াহীন কেন গাঁথো
কবোষ্ণ কোরকের অলীক মিথুন !!

হিজড়াবৃত্তি

315

আমরা আমাদের স্বতন্ত্র ভাবনা গুলোকে হত্যা করছি স্বৈর নীতির কষাঘাতে।
স্বপ্নগুলো বিক্রি করা হয়েছে সে-ই কবে;
বাস্তবে
আমরা বন্দি হয়ে আছি জন্ম জন্মান্তর।.. তবে
কেউ কেউ বেচে আছে
বিকৃত রুচিবোধের কাছে নিজেকে বিক্রি করে!
না না আমি একদমই বেশ্যালয়ের কথা বলছি না।
বেশ্যালয় তো সেখানে চলে
যেখানে পুরুষ হয়ে উঠে অরাধ্য
আমরাতো অনেক আগেই মেনে নিয়েছি নিজেদের হিজড়া রূপ!…
অ পুরুষ
আর অ নারীতে
জন্ম নিচ্ছে আমাদের বিকলাঙ্গ প্রজন্ম!…
তবুও খবর আসে
এক পুরুষে পুড়ছে অজস্র আত্মা
যারা পুষে রেখেছে তাদের স্বতন্ত্র সত্তা।

© নতুন পাণ্ডুলিপি

ডুব

পানির নিচে এতোটা অন্ধকার –
অথচ আমরা দিব্যি ডুবে আছি
নৈয়ায়িকের সব ভাষা এখানে স্থির।

পলল গন্ধে টেনে নেয়া শ্বাস –
আধো ঘুম রাত্রি যাপন
ক্ষয়ে যাচ্ছে পলিমাটি দেহ।

না ঝিনুক না মুক্তো তবুও
দৃঢ় প্রত্যয়ী আশা থরে থরে সাজিয়ে রাখি
কী নিশ্চিত জীবন!

বুকের ভেতর অপেক্ষমান নদী
থৈ থৈ জল। ডুবছে কামনার চোখ
মেটাফোর জীবন।

আঙুলে ঘষে তুলছি শিল্প রং
মৃত্যুর মতো শান্ত আশ্চর্য সেই ডুব;
চুপ! চুপ! সব হচ্ছে কালের বিবর্তন।

আগত কবিতা

কিছু বানান ভাঙা শাদা হাড়ের অবশ বেদীমূলে
তোমার শহর, শহরে-করোটির পাশ বেয়ে
ওভারব্রিজ এবং সুইপার কলোনির অমৃত
পথ ধরে ডুবে যাচ্ছে চাঁদ আর এক পাউন্ড
কালো কালিতে টহল মারে অন্ধকার, সে সব
দৃশ্য ফিরে আসে সংগীতভাবনার মতো, রাত;
রাতে কী পাণ্ডুলিপি গোছাচ্ছ? টেবিলে পার্কিং
বইগুলো, সবুজ ঘাসের নরম পাটাতন-
সামরিক ফুলের শিশির কার্ফু ভেঙে

ধরো, ভ্রাম্যমাণ আকাশ-ওড়ে, সঙে আর কেউ?
সে পুনরুদ্ধার বিনয় পাখির মতো প্রতীকী ভাব
নিয়ে সেটে দিয়ে গেছে আজ সন্ধ্যায় এক নারী,
উড়ন্ত চুলের গার্হস্থ্য রূপ-বিদ্যা-ভাষা, কবিতার ঢেউ

তার স্তনে নজর ফেলবার আগে ছেলেপুলের
অভ্যেসগত ধূলোখেলায় আড়ালে রয়ে যায়
অধৌত ছুরির মতো হৃদয়বৃত্তির ধার-আগত কবিতা।

অনিকেত ফুল

images

আনন্দে অনিকেতের কাছে যাই
অনিকেত নীরব থাকে
কখনো তার শরীর থেকে ঝরে
অযুত সহস্র আলো
কখনো আঁধারের চেয়েও গভীর
মিশকালো তার মুখ।

সহসা আমার মুখ কালো মেঘে
ঢাকা পড়ে যায়
চোখ থেকে, মুখ থেকে, গাল থেকে
ঝরে পড়ে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি
মাটিতে তৈরী হয় ছোটোখাটো স্রোত,
স্রোতে ভাসতে থাকে
অনিকেত ফুল আর তার অনুতপ্ত হাসি।

বাঁকপ্রহরী

দাঁড়িয়েছো নিঝুম ! যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলে
ঠিক সেখানেই থাকো। সেতু পার হয়ে আমি
আসছি, তোমাকে জড়িয়ে দেবো রোদের
রেশমে, বিনীত দুপুরের নদীতে ভাসিয়ে সব
খুচরো স্মৃতিপরাগ।

দাঁড়িয়েছো নিঝুম ! আমি ও একদিন ছিলাম
এই বাঁকের প্রহরী। রাতের পর রাত, শুধুই
চেয়ে চেয়ে দেখতাম নৌকোদের চলাচল। বাতি
জ্বালিয়ে ঢেউগুলোর বিনম্র প্রস্থান।
আবার দেখা হবে। দেখা হতেই হয়। কারণ ঋতু
এবং রতি- ই চক্রবাকে, মানুষের নমস্য প্রলয়।

ঠোঁটে তালা মেরে আর কতদিন

316

তালো খুলো, চায়ের কাপ ছোঁয়াও এবার ঠোঁটে
এমন চুপচাপ নিরবতা ভালো নয় মোটে,
কথা বলো অনর্গল
ছেটে ফেলো মন বাগানের দ্বিধার ঝোপঝাড় জঙ্গল!

ভোরের আকাশে কুয়াশা ওড়ছে
দেখো কিচিরমিচির পাখিরা গাইছে ঘুরছে,
লালাভার ছায়াতলে বসে চা খাবে?
আশাকরি চুপ থাকার স্বভাব বদলাবে!

সময় গুলো হলো না তোমার আমার,
দু’জনার মনে যেন হিংসের খামার,
কেন যে এত তিক্ত মেজাজ তোমার, তুমি বিষণ্ণ হরদম
স্বার্থ ছাড়া বুঝি ফেলো না এক কদম।

মনের অর্গল খুলো এসো পাশে, চা খেতে পারো,
জীবনের রঙ করে নিতে পারো সুখে গাঢ়,
কী এক অহম পুষো,
ভাগ্যকে না দোষে আমাকেই দোষো!

কবে যে মেঘের মত মন তোমার হবে,
কবে যে খই ফোটা কথা ক’বে
কবে বলবে, চলো চা নিয়ে বসি কোথাও,
কবে হবে আমায় নিয়ে দূরে উধাও?

কত গল্প মনে জমা, পারছি না সমাপ্তি টানতে,
মনের খবর চাওনি কখনো জানতে!
এবার ধরো, চায়ে চুমুক দিয়ে মনের তৃপ্তি ফিরিয়ে আনো,
এবার ভালোবেসে আমায় কাছে টানো।

.
(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, ঢাকা)

তোমাকে চিনেছি আমি

315

তোমাকে চিনেছি আমি
ভোরের শিশির
নৈশব্দের দীর্ঘশ্বাস তুমি
কান্না নিরবধির

ছুঁয়েছো কবির অন্তর
আতপ্ত হাতে
যৌবনন্ধ দাবীর দুর্মার
অনল নেভাতে,

প্রজ্বলিত চিত্তে বেমালুম
হই মুখোমুখি
সুডোল বুকের উষ্ণতার
দিয়েছো ফাঁকি!

নাকি এমনিই তোমার
স্বভাব? মমতার
হাতছানিতে পোড়াও কাবাব।
সারা রাত
নির্ঝর শিশির প্রপাত,
আমি চিনেছি তোমাকে-
বুকের ভেতর বেহিসাব আঘাত।

প্রণয়ের আঁধার

index আধার

যা রে অন্তর বসে দিলাম!
কইতর পাখি বাসার মতো
অন্তর খসে জ্বলা দিল,অন্তর্যামী
আমি কি করে যে বাঁচছি-
বাঁচার স্বাদ এখন প্রণয়ের অনল;
ইটভাটা বুকের গভীরে সচল।

বিকাল ছিল, রঙে রঙে রঙধনু আকাশ
সবুজ ঘিরা মাঠ আর মাঠ- ধূলি
বালি খেলার প্রাণ চঞ্চল উঠান;
সবই আজ সাদা মেঘে শঙ্খচিলের
উড়া বাতাস- তবু মাটির মৃন্ময় গন্ধে রাত
কাটে না আর- প্রণয় সাজে আঁধার!

০৫ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২০ নভেম্বর ’২২

একদিন তোমাকে

একদিন তোমাকে কবিতার কথা বলেছিলাম
বলেছিলে, প্রীতিলতা, সূর্যসেন, তিতুমীর ওদের বলো;
আমি কোনো কিছু বলতে পারিনি!
বলতে পারিনি, ঠাট্টা ছলে তুমি সেদিন যথার্থ বলেছিলে
প্রত্যেকটি কবিতাই এক একটি জ্যান্ত বিপ্লব !!

বলতে পারিনি আমার কাছে ভালোবাসা আর বিপ্লব
একই ফুলে গাঁথা মালা!
কবিতা কোনোদিন কালোকে সাদা বলে না
কবিতা কোনোদিন হেমন্তকে বসন্ত বলে না
কবিতা কোনোদিন চিলকে শকুন বলে না
কবিতা কোনোদিন প্রেমকে অসুন্দর বলে না!!

অতঃপর তুমি আরও কতোকিছু বললে, কতোকিছু;
কাক আবার কোন্‌ হাঁড়ির খবর রাখে না?
তখনও আমি তোমাকে কিছু বলতে পারিনি!!
বলতে পারিনি, তুমিও নারী; নদীও নারী—-
বলতে পারিনি এমনি কতো হাঁড়ির খবর… কেবল
কবিতা আমাকে এতোটা আস্তাকুরে নামতে দেয়নি!

সুখ মেলে শ্রমে ঘামে

may

সুখের রজনী পাবে গো সজনী
শ্রম-ঘাম ফেলে যাও,
কখনো না তবে বিফল না হবে
ফল হাতে হাতে নাও।

তব ঘামখানি দিয়ে হাতছানি
বলে ‘নিয়ে যাও সুখ’.
অলসতা জেনো দুখ দেয় মেনো
তারি দাহে পুড়ে বুক।

ঘাম ঝরে বলে সুফল যে ফলে
সুখের প্লাবন নামে,
শ্রমের বদলে দুখ যায় চলে
সুখের বারি না থামে।

ধরার এ রীতি শ্রমে যার ভীতি
পায় না শান্তি তারা,
নিয়তি তো চায় মানুষ না পায়
হোক সব কিছু হারা।

শুধু থেকো সৎ পাবে তবে পথ
হবে ভবে জয়ী শেষে,
বাজে সুর বীণ কেটে যাবে দিন
কাটেও জীবন হেসে।

ফেলে যারা ঘাম পাবে ধরাধাম
আর নেই কোন ভয়,
জুড়ায় ক্লান্তি সেই তো শান্তি
শেষে জয়কার জয়।

মাত্রাবৃত্তঃ ৬+৬/৬+২

সৌদামিনি, আপনার অপেক্ষায়

All-focus

সৌদামিনি কেমন আছেন ?
আমি ভালো নেই আপনাকে ভেবে।
অনেক দিনই ত গত হলো
কই আপনার দেখা পেলাম না।
কোথায় আছেন, কেমন আছেন
এই ভাবনায় দিন কাটে না আমার।

আপনার যা গত হয়েছে প্রায় চার যুগ আগে,
আমার কাছে সেটা বর্তমান !
আমি এখনও নিরব চিৎকার শুনি বুকের মাঝে,
এখনও ভয়ে কাটে আমার নির্ঘুম দীর্ঘ প্রতি রাত।

আপনার জন্য অপেক্ষা করছি প্রায় চার যুগ ধরে।
কই একবারের জন্যও ত আসলেন না আপনি ?
আপনি বলেছিলেন দেখে নিস ‘বিন্দু’ আমি আসব …
ঠিক আসবো,কোন এক ভোরে সূর্য উদয়ের পথে।

আজ এতটা সময়ের ব্যবচ্ছেদে আমার বুকটা
এক বন্ধ্যা মরুভূমি। সূর্য দেখলেই ভয় লাগে।
এই বাংলার আকাশ-বাতাস, আলো-ছায়া– হ্যাঁ সব…
আজও আপনার অপেক্ষায় আছে।

এই বাংলার প্রতিটি ঘরে এক জোড়া চোখ নিয়ত
চেয়ে থাকে আপনার পথের দিকে।
এই বুঝি আপনি আসছেন দুরন্ত উল্লাসে হেসে হেসে।
সৌদামিনি,
আপনি আসছেন তো– আমি এবং আমরা সবাই
আপনার অপেক্ষায় আছি …

থাকবো যতদিন এই বাংলা আছে,
আছে এই লাল-সবুজের বাংলাদেশ।

আমাদেরও দেখা হবে

আমাদের দেখা হওয়ার কথা ছিল, আসোনি শেষ পর্যন্ত,
আহা আমাদের সময়গুলো ছিল কতই না প্রাণোবন্ত
তুমিই দিয়েছিলে ফিরিয়ে, ভুলে যাওয়া দিগন্তে প্রেম গিয়েছে ফিরে,
আমাদের আর দেখা হবে না ভাবছো তাই, দুঃস্বপ্ন আছে ঘিরে।

আমাদের সময়গুলো থেমে আছে সেই অতীত প্রেম কাব্যে,
এই তুমি কী সেই জীবন নিয়ে আরেকবার ভাববে?
সেই বৃষ্টি ভেজা ক্ষণ, সেই উচ্ছাস ভরা চিরকুট,
ভাবো ফের, ভালোবাসার সেই সম্পর্ক ছিল কতই না অটুট।

একদিন মন ফিরিয়ে নিলে, ঘুরলে বাস্তবতার ঘূর্ণিপাকে,
আমরা শুধু কিছু অতীত সুখ জমিয়েছি মনের তাকে,
আজ এখানে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বসে আছি দুজন,
প্রেম পাখি ডাকে না আর কুহু কুজন।

আমাদের সুখগুলো ওড়ে গিয়ে বসলো যেন অচেনাপুরী,
এই দেহ অশীতিপুর মন যে এখনো কুড়ি,
চলো বৃষ্টিতে ভেজার পরিকল্পনা মনে আঁটি,
চলো বসি মুখোমুখি, পাশাপাশি হাঁটি,
আমাদের পা ছুঁয়ে দিক এবেলার বৃষ্টি ভেজা মাটি।

আঙ্গুলের ফাঁক গলে সু সময় হারিয়েছে, দুর্ভাবনায় টানো ইতি
যতটুকু শ্বাস ততটুকু আশ, চলো সময়ের সাথে বাড়াই সম্প্রীতি,
সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূরে ঠেলে সম্মুখে আগাই, ভিজি বৃষ্টির জলে,
কিছু উত্তপ্ত প্রেমালাপ মন হতে পড়ুক গলে গলে।

দেখা হোক আমাদের আবার, সেই বয়সী বটবৃক্ষের ছায়ায়,
মন বেঁধে নেই ভালোবাসার মায়ায়,
সময় নেই সময় নেই এ ধারণা ভুল, সময় এখনো আছে আমাদের হাতে,
আমরা ফাগুন দিনে ফিরে যাই আবার…..মন রাঙাই বসন্তের আভাতে।

দায়মুক্তি

305

দায়মুক্তি দিলাম
উড়ে যা পরিযায়ী, নাইবা পেলাম ফিরে
দূর অতীতের ধানসিঁড়ি,
আলের পথে ওম মাখা ঘাসফুলের যৌবন;
যে বুকে তীক্ষ্ণ ঠোঁট ঠুকে ঠুকে
অজস্র কবুতর করেছে শস্য আহরণ-
ধরে নিলাম অসংখ্য রক্ত কণার মত
সঞ্চয়েতে ঠায় নিয়েছে একটি ধ্রুপদী চুম্বন!

বিভ্রম চিত্রদাগ

বন হরিণের চিত্রদাগে এজমালি চাঁদ নিয়ে
বনসান্নিধ্যে হেঁটে যাও-নদী, প্রসূত জলে-
এত মাছগন্ধি স্নেহের শরীর তোমার
ঝিনুকের থকথক সুরে চুল ভেজানো নারী
কলাপাতা সবুজ রঙের বিস্ফারিত মাঠ
বুনোফুলের শিশির-সাম্পান ছিঁড়ে নড়ে
আমন বিকেলের মলাটে ষোড়শী কাঁচের বাক্স

আবহপাখির ডানায় জরির মতো এসে
এই লাল বাড়িটার হাওয়ায় বসে বসে
লিখে যাচ্ছে একটা সুগন্ধি লেবুগাছ, পাতা-
আর জ্যোৎস্নামুখি শহরে উড়ে যাচ্ছে
বটফলের ডানা ঝাপটানো পৃথিবীর হাট
মাছের সংসারে স্নান করে কাকাতুয়া নদী-