বিভাগের আর্কাইভঃ কবিতা

এখন কবিতা লিখি না – ৮

নিজেকে আবিষ্কার করি এক মহাশ্মশানে

তুমুল বজ্রপাত আমায় গেঁথে ফেলেছে মাটির সঙ্গে
পোড়া গাছের মতো দাঁড়িয়ে আছি

দেখছি করোটির স্তুপ…
কবন্ধে রক্তের ফোয়ারা…
কোটি কোটি মুদ্রার পত্তনিদার জ্বালিয়েছে চিতা…

সদম্ভ পদচারণা করে
যত দুঃশাসনের চেলা –
তত পুতনা –
আর বারোভাতারি স্বৈরাচারীর তর্জনী করে খেলা

নৈশ অভিযান

images

রাতের তারারা জ্বলজ্বল করে আকাশে
চাঁদের আলো মেঘের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারে।
পাইন গাছের মাথায় বাতাসের কারচুপি
গাছের ছায়া পড়ে বাড়ির চালে আর আশেপাশে।
তিরতির বয়ে চলা নদীর জলে মৃদুমন্দ ঢেউ
পার্শ্ববর্তী শহরের আলোয় চিকচিক করে।
এমনি একটি রাতে তোমার হাত ধরে হেঁটে গেছি
অনেক দূর দেবদারু পাইনের মাথা ছাড়িয়ে।
আরও অনেক দূর যেতে চাই অন্য কোনো দেশে
তুমি থেকো সাথে চিরকালীন হাত ধরে ভালোবেসে।

যুদ্ধের প্রকার

যে জনম পুনরায় খুঁজি ড্রোনসভ্যতার ভেতর-
তার কোনো চৌহদ্দি নেই। অসীম আত্মার মায়া
আমাকে শিখিয়েছে যে প্রেম,
তাকে অনেক আগেই ভাসিয়েছি বিসর্জনসন্ধ্যায়—
আর পাঁজরকে বলেছি,

যুদ্ধে না থাকলে মন ভালো থাকে না। প্রেমযুদ্ধ, অস্ত্রযুদ্ধ, অর্থযুদ্ধ,
আরও কত প্রকারের যুদ্ধ। সব যুদ্ধই দখলের। সব হত্যাই
ক্রন্দন ও ধ্বংসের প্রতিভূ …
আমি মাঠ’কেই আমার কাছে ফিরে আসতে বলি।

রক্তাক্ত প্রেমিকার মুখছবি দেখে আমি আবার তাকে
শিখিয়ে যেতে চাই আদিম খোঁপাতন্ত্র।

দুঃখ তো আস‌বেই

পাহাড় সম কষ্ট এ‌সে ও‌ড়ে বস‌তে পা‌রে ম‌নের দাওয়ায়,
কিছু বিষাদ আস‌তে পা‌রে বৈরী হাওয়ায়
কষ্টগু‌লো সাম‌য়িক ভে‌বে উ‌ড়ি‌য়ে দি‌তে হয়
মন‌কে শান্ত না রাখ‌লে সময় হ‌য়ে যা‌বে লৌহময়।

কখ‌নো কা‌রো অব‌হেলা,
বস‌তে পা‌রে ম‌নের মা‌ঠে বিরহ মেলা,
হেলার ভেলা হ‌তে পা স‌রি‌য়ে নি‌তে হয় ত্বরা
নই‌লে মন জ‌মি‌নে দে‌বে দেখা বা‌রোমা‌সি খরা।

কথা দি‌য়ে কেউ হয়‌তো রাখ‌বে না কথা,
কেউ না জে‌নে দি‌য়ে দি‌তে পা‌রে ম‌নে অযা‌চিত ব‌্যথা,
নাই বা রাখ‌লো কথা, নি‌জে‌কে রাখ‌তে হয় স্বচ্ছ,
মন প‌রিচ্ছন্ন রাখ‌লেই ত‌বে সম্মু‌খে দেখা যা‌বে সুখা‌লোর গুচ্ছ।

কখ‌নো কা‌জের ভার এ‌সে নু‌য়ে পড়‌তে পা‌রে কা‌ঁধে,
অথবা কেউ ফে‌লে দি‌তে পা‌রে দুর্নামের ফা‌ঁদে,
‌নি‌জে‌কে রে‌খে ভা‌লো ধৈর্য ধ‌রে স‌য়ে নি‌তে হয় সব
নই‌লে বু‌কের গহী‌নে বাড়‌বে বিষা‌দের কলরব।

কখ‌নো অপ্রা‌প্তির খরা বু‌কে, প্রত‌্যাশার মু‌খে প‌ড়ে যে‌তে পা‌রে ছাই,
কেউ দি‌তে পা‌রে অবলীলায় ঘৃণা‌তেই ঠাঁই,
মন‌কে বু‌ঝা‌তে হয়, এ ‌তোমার জন‌্য নয়, যা হয় প্রভু তার মা‌ঝে রা‌খেন মঙ্গল;
তোমা‌র নিজ প্রচেষ্টায় পার হ‌তে হ‌বে ঘৃণার জঙ্গল।

কখ‌নো অসুস্থতায় হ‌তে পা‌রো কাতর
কখ‌নো অ‌ধি‌ক শো‌কে পাথর,
সাম‌য়িক দুঃখ দুর্দশা হ‌তে পা‌রে সু‌খের সাংঘ‌র্ষিক,
সময় হ‌তে পা‌রে তোমার জন‌্য ‌‌বের‌সিক,
জো‌রে নিঃশ্বাস টে‌নে সব কষ্ট বিরহ বিষণ্ণতা পিছ‌নে ঠে‌লে
‌তোমা‌কে উড়‌তে হ‌বে ধৈ‌র্যের আকা‌শে ডানা মে‌লে।

আত্মখুনী

3110

প্রায়শই অভিযোগ শুনি
করোটিতে আগুন ধরিয়ে আমি নাকি আত্মখুনি!
গনগনে আগুনে
অনেকেই তো ঢেলেছো জ্বালানি
পুড়িয়েছ অসংখ্য রজনী, জ্বলজ্বলা মদ,
মনে মনে আজো ঢালছো দহনের রসদ!..

অভিযোগের বিপরীতে
কখনোই করা হয়নি অভিবিয়োগ!
যদিও
পোড়া লাভা স্রোতে ডুবেছে সবুজ উদ্যান
ডুবেছে অবুঝ হৃদয়, বিগলিত জ্যোতস্না রাত
প্রাণের অভ্যন্তর
ডুবে গেছে অসংখ্য স্বপ্ন; কবিতার শহর…

স্বরে অভিস্মরে
অন্ধকারের ভেতর কাটিয়েছি দিন
গহীন ডুব সাতারে…

রূপালি বরফের আগুন

এ শহরে অ্যাম্বুলেন্স হুইসেল বাজালে
নিঃশ্বাস গাঢ় হয়, রোজ অনতিদূর
ছুঁয়ে যায় এমন শান্ত আঁচড়ের দাগ-
চকের গুড়োয় শাদা বাড়িটার নির্জনে
এক ধরনের শীতল সমতল ধরে
রূপালি বরফের আগুন ছেঁকে দেয়
সমস্ত বাড়ির দরোজা, বহুদূরের পথ-

অচিরেই বিক্ষত আকাশ নেমে আসে
ধুলট শহর নিয়ে জিরাফের গলাসম
যেটুকু ছিল পালকে আশ্রয় এখানে
বঙ্কিম সাঁতারে সমুদ্র টেনে পৃথিবীতে
আসে- হৃদয় আর শরীর ভিজিয়ে
ঘরে তুলতে অমর্ত্য ফুলের অস্তভূমি!

জলনৌকা

বিসর্গ বেলায় শুকিয়ে নিচ্ছ শরীর
সোনা সোনা রোদ – ভাদ্রের দুপুর
অনেকগুলো মুখের কোরাস
পাখির ডানায় লেখা ভ্রমন সূচী
নিভছে অন্ধের দিনলিপি

যজ্ঞ শেষ
সবার চোখে পলল ঘুম
উছলে ওঠার সময় এখন
চৈতন্যের দিন আর নেই বাকি
না হয় চোখে ভাসুক
একটা জলনৌকার প্রতিচ্ছবি।

ব্যর্থতার সুখে

imag

দেহ জুড়ে ব্যর্থতার তারা
মিটমিট করে জ্বলছে- এতকিছু
জানা সত্ত্বেও চাঁদের এখনও
অহংকারময় পূর্ণিমা রাত-
ঝলসে যাই অজস্র বেদনায়;
তবু ঘুট ঘুটে অমাবস্যার মনে প্রত্যাশিত
ফুলের গন্ধ ছুঁয়ে যায় যুগান্তর।
তারপরেও মৃত্তিকার যত হট্টগোল
সোনালি মাঠে ফিরে তাকায় না-
ইঁদুর খেয়েছে পাকা ধানের সফল,
চাঁদের অহংকারে কিছু যায়- আসে না;
অতঃপর বহুদূর হেঁটে যাচ্ছি ব্যর্থতার সুখে।

২৮ কার্তিক ১৪২৯, ১৩ নভেম্বর ’২২

আমাদের এ জীবনটা

kyu

আসলে যেন আমাদের এ জীবনটা
পথিকের সে বিরাম স্থল
যেন ভূতল অসমতল;
যেন মানুষের কৌতূহল
যেন এ কচু পাতার জল
যেন সস্তা সে এক খেলনা সাদামাটা।

আসলে জীবনটা অকূল সে সমুদ্র
গল্প কাহিনীর চিত্র ছায়া
কখনো এ অন্ধ স্নেহ মায়া;
কখনো মেলে না মায়া দয়া
কখনো নেই মানুষে হায়া
কখনো অশান্ত কখনো আবার রুদ্র।

আসলে জীবনে ঘটেও অনেক কিছু
চুপিসারে শুনি প্রেম ডাক
শুনি সে শয়তানের হাঁক;
শুনি কান্না হই যে নির্বাক
শুনি গর্জন হই অবাক
সবাই ঘোরে মরীচিকার পিছু পিছু।

আসলে কই আর হাসি, কাঁদিই বেশী
বারুদের ধোঁয়া চারিদিকে
কেউ যে ডাকে না হাসিমুখে;
কেউ নেই ভালোবাসি তাকে
কেউ নেই সদা পাশে থাকে
মনে হয় এ পৃথিবী যেন মঞ্চ ফাঁসি।

আসলে জীবনটা বুঝি এক জটিলতা
সারা পথ শুধু দুঃখ গাঁথা
শুধু অকারণ পাই ব্যথা;
শুধু মাথায় শত দুশ্চিন্তা
শুধুই সর্বত্র বিফলতা
নেই কোথা আশা কিরণ শুধু শূন্যতা।

আসলে জীবনটা একটা কালো রাত্রি
দেখি বহু সে মিলন ক্ষণ
বহু বিদায়, অভিনন্দন;
বহু ধোঁকা ও মিথ্যে ভাষণ
বহু শোষণ, পদ দলন
অতৃপ্ত পথিক যেন সে সমাধি যাত্রী।

বিশ্বকাপ ক্রিকেট

29573

বিশ্বটা যে কাঁপছে এবার
কাঁপছে ক্রিকেট জ্বরে
ব্যাটার আর বোলার এরা
যাচ্ছে সবাই লড়ে।

চার হাঁকছে ছক্কা হাঁকছে
হাঁকছে গলার স্বরে
জান তুমি কাপটা এবার
উঠবে কাহার ঘরে?

নানান দেশের নানা মানুষ
মাতছে সবাই খেলায়
ব্যাটে-বলে কাটছে সময়
সাজছে ক্রিকেট মেলায়।

এই কাপটা বাংলাদেশের
কেউ নিও না ভাগ
টাইগাররা বোলিং ব্যাটিং এ
ভাঙ্গবে সবার দেমাগ!

দ্রোহ নেই,শুধুই পাথর

নিক্ষেপ করার জন্য যে জল আমার হাতে
তুলে দিয়েছিলে, তা হয়ে গিয়েছিল শিলা।
দ্রোহের ধানে ধানে সাজাতে চেয়েছিলে যে হেমন্ত,
তা হয়ে গিয়েছিল ধূসর কার্তিকের সূর্য।

আমি সেই সূর্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে একটি পলাতক
দোয়েলের চোখের দিকে তাকিয়েছিলাম। আমার
অনটন, আমাকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল
সকল উৎসব থেকে।

একদিন নদীর বুকেও অসংখ্য পাথর ভেসেছিল..
দেখেছিলে তুমি?
সবকিছু হারাতে হারাতে মানুষ যেটুকু কুড়ায়,
তার নাম পাথর
মাঝে মাঝে বসন্তকে ভেদ করে যে দমকা হাওয়া
তার নামও ঝড়।

কিছু মনোহারি ক্ষণ আমার হয়ে আসে

3114

বুনোফুলের ঘ্রাণে মাতাল
পথে যখন হাঁটি,
পায়ে তলায় থাকে আহা
ভেজা দূর্বার পাটি।

কিছু ছিঁড়ে হাতে রাখি
কিছু আঁচল ভরি,
কী আনন্দে ভাসাই রোজই
আমার জীবন তরী।

লাল পিঁপড়ে’রা বাঁধলো বাসা
ঐ না সবুজ পাতায়
তাদের তুলে রাখি আমি
নীল কবিতার খাতায়।

পাতার উপর জলের বিন্দু
ছুঁয়ে দিয়ে হাসি,
এই প্রকৃতি ফুল আর পাতা
কত ভালোবাসি।

ছন্দ তুলি মনের খাতায়
তালে তালে দুলি,
ভালো লাগে ডালে বসা
পাখির ঠোঁটের বুলি!

প্রজাপতির ডানায় ডানায়
কত রঙে ভরা,
এই সবুজের পথে হাঁটলে
কাটে মনের খরা।

ফুলগুলোকে সাজাই নিয়ে
মনদানিতে যতন,
বৃক্ষ তরু সবুযে পাই
খুঁজে সুখের রতন।

নিষিদ্ধ উপমা

শীতের প্রথম দিনে মেঘ উড়ে নামছে
এক সাঁওতাল কিশোরীর শরীর বেয়ে
শাদা হাঁসের মতো; নিকট হয়ে দেখছি
কমলালেবুর প্রবাহ রোদ খোলস ছড়ায়
জলের মুকুরে-এই গাঢ় পৃথিবীর মিথে
পাখির গান আর মেয়েটির নোলকে
ফলন ফলিতেছে নৈকট্য বাতাসের ফ্লেভার

কার্পাসের মতো ওড়ে, ইজেল শৈশব-ঝাঁক
এখানে ভিড়ঠাসা লজ্জার বোতাম চেপে
দুঃসময় লেখা হয় যেমন সাতটা আনন্দ
এক শুভ্র বালক জমাট মেঘের সুদূর টেনে
এই আলপথে বাতলে দেয় শস্যের ঋতু
উড়ে যায় হাঁস-বিচ্ছিন্ন শব্দ পতনে-উপমা!

হেমন্তের গান গেয়ে … চাষী সব ধান কাটে হেমন্তের হিমেল কবিতা (দশম পর্ব)

1

হেমন্তের গান গেয়ে …. চাষী সব ধান কাটে
হেমন্তের হিমেল কবিতা (দশম পর্ব)
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

হেমন্তের রং লাগে মাঠে পাকা ধান,
ধান কাটে গেয়ে সবে হেমন্তের গান।
ধানকাটা হলে শেষ নিয়ে আসে বাড়ি,
ধানের বোঝাই নিয়ে চলে গরু-গাড়ি।

জল নিতে আসে বধূ অজয়ের ঘাটে,
নদীপারে মাঠে মাঠে চাষী ধান কাটে।
বেলা পড়ে আসে যবে সূর্য অস্ত যায়,
মাঠে ঘাটে ঝোঁপঝাড়ে আঁধার ঘনায়।

রবিবারে হাট বসে অজয়ের ঘাটে,
নদীঘাটে বেচাকেনা সারাদিন কাটে।
ক্রেতা বিক্রেতার ভিড় সারাদিন ধরে,
হাট ভাঙে যবে সবে ফিরে যায় ঘরে।

হিমের পরশ লাগে শীত লাগে গায়ে,
সাঁঝের আঁধার নামে নদীঘাটে বাঁয়ে।
দূরে কোথা বাজে বাঁশি ভরে ওঠে মন,
হেমন্তের কাব্য গাথা লিখিল লক্ষ্মণ।

তুমি আসবে

তোমার আশায় বুক বেঁধে আছি
আমি জানি তুমি আসবে,
সকল বাধা পিছে পড়ে রবে
বিজয়ের হাসি হাসবে।
চলার পথে বাধা জানি আছে
আছে হারাবার মত ভয়,
যার মনে আছে সাহস অসীম
করবে সে বিশ্ব জয়।
বিপদ যখন আসে নিজ পানে
কেউ নাহি থাকে পাশে,
সুখের সময় যে ছিল আপন
দুরে তখন সে হাসে।
সম্মুখে তোমার যে অতি ব্যাকুল
পরনিন্দায় বাড়াবাড়ি,
অপরের সাথে করে জেনে রেখো
তোমার নিন্দা সরাসরি।
কথার মালা যে করে দান
কাজে দেয় মহা ফাঁকি,
তার সাথে আর নেই কোন ভাব
তার থেকে দুরে থাকি।
সময়ের সাথে নয় কোন আড়ি
সময় দেবে দু’হাত ভরি,
ধৈর্য্য ধরে কাজে দিই ডুব
অলসতাকে বলি সরি।
নিষ্ঠার সাথে শ্রম দিয়ে যাই
আমি জানি তুমি আসবে,
আজ নয় কাল কিংবা পরশু
সফলতা ঠিক তুমি আসবে।

তাং-১১-১১-২০২২ ইং