বিভাগের আর্কাইভঃ কবিতা

না জানালেও পারি

মাঝে মাঝে জানান দিই আমার অস্তিত্ব। বলি, বেঁচে আছি
ভালো আছি কী না- জানি না, তবে আছি- এখনও আছি।

থাকা খুব জরুরি নয়,
ঘুম এবং ঘূর্ণির ভেতর
গদ্য এবং গন্দমের ভেতর
গহীন এবং ঘনত্বের ভেতর…

তবু চিরদিন থাকবো না বলেই, বলি-
আছি, আমিও আছি।

অনেক কথা না জানালেও পারি, অনেক
দুঃখের উষ্ণতা, না ছুঁয়ালেও পারি সমুদ্রের গায়ে
যারা প্রেমশাসিত বনের বাসিন্দা, যারা বিবাগী
পাহাড় পোষে বুকে, জানি তারা শুনতে চাইবে না
আমার অপ্রেমিক জীবনের মেঘগল্প,
তবু বলি, আছি- আমিও আছি সন্ধ্যের গল্পসভায়।

ভয়

বীজ পুঁতে অপেক্ষা করবার মতো
আর্তনাদ শিস দিয়ে ওঠে,
ঘাই খাওয়া শরীরে কখন একটা
সবুজবন এসে বসবে, পাখি এসে বসবে
এই দুইয়ের মুখোমুখি এক হতে পারলে
অগ্রহায়ণের চূড়ান্ত ফলাফল অবশ্যই
পাওয়া যেতো, রোদ না মেঘ…
কীভাবে ডাকনাম প্রকাশ করাতে হয়

ট্রেন পথের ওধারে হাট-বাজার,
স্তিমিত ত্বরণে এক বয়েসী নিমাই’কা,
পৃথিবীর সবুজ তরমুজ ক্ষেত ধরে
বাঁশি ফুঁকোয়-আঙ্গুলায়ুধ অংশযোগে-
প্রবোধ সুর-কেবল নিস্তব্ধতা পেরোয়ে
অস্তমিত স্বাধীনতার ফুলগুলো ওড়ে,
ন্যাড়া ডালে-শিশুদের পাশে শুয়ে ভয়
মিঠাইয়ের মতো যেন মিষ্ট মুখোশ…

ভৈরবী

index

ভোরের বেলা যখন বাসি
বেলি আর জুঁইয়ের গন্ধ
তখনো ছড়ানো আমাদের
ওই ঝুলবারান্দায়,
আহা কি মধুর সে গন্ধ
ভেসে আসে অদূরে
পাশের বাড়ির আমবাগানে
যেথায় মুকুল ধরে আছে,
ডালে ডালে, বাতাস
দুলিয়ে দেয় আম্রমঞ্জরী
পাশেই সুপারি গাছে
লেগে থাকা শিশির
ঝিকমিক করতে থাকে।
মাটিতে কাঁপা কাঁপা
দোদুল্যমান পত্রছায়া।

হাঙর-নদী-গ্রেনেড

কখন যে এসেছিলো একাদশী চাঁদের ঢেউ আধ-ডোবা
জল জোছনা, কোনদিন কেউ খোঁজও নিল না!
তখন সে পৈথানে রেখে গিয়েছিল প্রশান্তের ভাঙাবুক,
অথচ একদিন দু’আঙ্গুলে…
আলগোছে তুলে ধরেছিল এই গাঙ্গেয় চিবুক!

এখন সে তাল খুঁজে বেড়ায় বেতালের কবরে…,
রাজপথ ধরা খায় কাগজের ভাঁজে ভাঁজে,
গোকুলের খবরে; বেদনার পাথার লিখে রেখে যায়
বটতলার পুঁথি, শ্রাব্য-অশ্রাব্য, পুঁথিগন্ধময় শ্রাবণ শৈলী!

হেমলক ঘুমিয়ে আছে…আনকোরা ভাঙা রোদের ডালে,
কাঁচা কাঁচা নির্জীব গেটর ঝুলে আছে একহাত প্রস্থ
শিথানে, অবুঝ মাটিও ফ্যাল ফ্যাল চোখে চেয়ে থাকে
দূর্বাঘাসের দুয়ারী! ক্ষণে ক্ষণে প্রলাপ বকে আনাড়ি
পুতুলের মতোন, পাহাড় ভাঙার মতো বুক ভাঙে
হাঙর-নদী-গ্রেনেড সবাই একসাথে কাঁদে আর তাদের সাথে এসে যোগ দেয়
মেঘনার ঢল, শিথান-পৈথান এরা সব একসাথে!!

আকাশে আজ মেঘের হুড়োহুড়ি

29850

ইচ্ছে করে ছবি তুলি আকাশের, সব মেঘ করি বন্দি
একই জায়গায় রোজ ছবি তুলি, আরও তোলার করি ফন্দি,
মেঘগুলো রঙবাহারী, ইচ্ছেগুলো তাই যায় না মরে,
মেঘের আকাশ দেখলেই শান্তি ফিরে মন ঘরে।

ইচ্ছে করে মেঘেদের বন্দি করি চোখের আয়নায়
মেঘেরাও দুষ্ট ভারি হ্যাঁ মিলায় না আমার বায়নায়
মেঘরা কোথায় যায় উড়ে যায়,
মুগ্ধতারাও যায় দূরে যায়।

ইচ্ছে করে মেঘেদের পিঠে চড়ে দূর দেশে যাই চলে,
কত ইচ্ছে মেঘের মতই নিভে আর জ্বলে
মেঘের মাঝে মন রেখে দেই
মেঘ হতে আবার মন তুলে নেই।

এমন করে কাটে বেলা, মেঘদের দেখে দেখে,
কত কাব্য মেঘদের নিয়ে খাতায় রাখি লিখে;
রঙধনু রঙ কখনো বা মেঘের মাঝে ভাসে,
সূর্যটা তখন মেঘের ফাঁকে হাসে।

মেঘদের নিয়ে থাকি ইচ্ছে আমি সারাবেলা,
ইচ্ছে করে মেঘদের দেশে ভাসাই ইচ্ছে ভেলা;
মেঘরা আমায় সুখী করে,
আলো জ্বালায় মনের ঘরে।

আকাশজুড়ে মেঘের দঙ্গল, ওড়ে আবার ঘুরে,
নীলের বুকে রাখি দৃষ্টি দেখা যায় যতদূরে,
মেঘরা আসে মেঘরা যায়, বেলা আমার যায় পড়ে,
চোখে নিয়ে মেঘের স্মৃতি ফিরে আাসি ঘরে।

(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, পীঁরেরগাঁও মিয়াবাড়ী চুনারুঘাট)

তার গড়ন

index গড়ন

মেঘ তুমি দাঁড়িয়ে থেকো না
ছুঁয়ে যাও মাটির দেহ পুস্পকল্লানে
গন্ধ ছড়ুক- এভাবেই ভেজা বৃষ্টি
আকাশ বুকে শান্তি থাকুক;
ক্ষিদে পেটে মনের রূপ বড়ই রসহ্যময়!
স্বরূপ চেতনার- গন্ধ ধীরে ধীরে বয়
কি নিয়ম তার, এক সময় কোথায় জানি
চলে যায় আর ফিরে না মন, কিন্তু
মিশ্রিত দেহটা কেমন মায়ায় রূপান্তর করে
এই হলো মন সংসারের সমারোহণ
মেঘ তুমি বলো কার সাথে চলন!
মন পিটে কি রেখে গেলে তার গড়ন।

০৭ কার্তিক ১৪২৯, ২৩ অক্টোবর ’২২

এক জীবনে

ehy

এক জীবনে অনেক চাওয়া পেয়ে ওঠা যায় না
এদিক টেনে ওদিক খোলে লাথখোর যাপন, উড়ে যাওয়া ময়না

মনখারাপি রঙ বাদুড় কিম্বা কল্পনা
শ্মশানে আলেঢালে দুই পাখা স্বল্প না

জুলপি আর গোঁফের খাঁজে রূপোর নক্সী আলপনা
ক্লাসবেঞ্চে জীবন লক্ষ্য এখন অলীক জল্পনা

আঁকার খাতায় নদী – মেয়ে -পাহাড় – সূর্য মনটানা
উড়তে গিয়ে পঙ্খ কেটে ফিনিক্স এখন গল্প না

আগের অনেক কিছুই এখন ভাল্লাগে না ভাল্লাগে না
মিলিমিটারের এক জীবনে কিছুই করা যায় না

আমাকে দেখে যেভাবে কেঁদেছিল বৃষ্টির রাত

দর্শক হতে পারিনি আমি। তাই শ্রোতা হয়ে বসে পড়েছিলাম খোলা আকাশের নীচে।
আর নদীকে বলেছিলাম- তুমি বয়ে যাও, আমি স্থির থেকে যেতে চাই। নদী আমার
দিকে তাকিয়ে কেবল কেঁদেছিল। বলেছিল- তোমার দুইচোখ আমার হোক, কবি!

আমি নদীকে চোখ দুটি ধার দিতে চেয়েছিলাম। আমাকে দেখে এর আগে যেভাবে
কেঁদেছিল বৃষ্টির রাত, ঠিক সেভাবে সারারাত কেঁদেছিল এই বনবাদাড়। কিছু ঝড়
ডানায় বহন করে পাখিরা হয়েছিল নিরুদ্দেশ। কিছু ভালোবাসাহীন ছায়া আমাকে
অনুসরণ করে যেতে চেয়েছিল দ্বীপান্তরে। আর কিছু ভোর নিজেদের মৃত‌্যুদণ্ড চেয়েছিল।

আমি তখন সব পথ ভুলে গিয়ে অন্ধত্বের অধিবাস খুঁজেছিলাম। কারণ আমি জানতাম,
অন্ধ প্রাণের সকল পাপ খুব সহজেই বরণ করে নেয় আকাশ ও তার বুকের নক্ষত্রেরা।

সাক্ষাত

প্রায়শ লাল মোরগের মতো ছুটে বেড়াচ্ছে।
নিবিড় এক নির্জন সফর, চিকন গলায় রুয়ে
স্বরশ্রুত বন-অনেকটা বিভ্রম জ্বরে, তাপে-
কাঁপছে সেগুলোর ছবি। শরীর থেকে
শাদা নুনের বাকলে অম্লফোঁটার সংস্কার
আর শিশুর মতো হিজিবিজি আনন্দ,
এই দেখা পড়ে আছে কুসুম অভ্যেসে
নিকটতম যমুনার বিকেল, সায়াহ্নকৃত্য যেন

যেরকম জেলেদের মাছকন্যা শরীরে-
সমস্ত সলাজ পাকানো অধরা-রূপ,
কামনার মুগ্ধতা নুয়ে পড়া শীতল বার্তা
ক্রোধ ভুলে গিয়ে এক গৃহাস্থালী দিনে
ব্যক্তিগতকে খুঁটে খুঁটে তুলে দেয়-
সুসাস্থ্য ঘাসের ওপর; অব্যবহৃত পয়সার
আদলে বহু রেজগি শিশির, প্রত্যেক দিনের
বিনম্র সহজ চোখ, সমস্ত নদীপাড়-বিনিদ্র চুল
যেন তাঁর শাদা সন্ধ্যা।

লিমেরিক

পাথরের কান্নায় তাঁর হৃদয়ে দ্যাখি মমতার ঢেউ
তাই তো ফুটায় ধুতুরা ফুল তার বুকে হাসে সেও;
আমরা মানুষ, পেয়েছি অমূল্য হৃদয়
গলা কাটি মানুষের, কি পাষণ্ড নির্দয়
রক্ত চুষে হিংসা ঢেলে জান্নাত খুঁজি কেউ কেউ।

আকাশটারে ভালোবাসি

3118

আকাশটারে ভালোবেসে এই চলো না ঘুরে আসি,
সাত সমুদ্দুর তেরো নদী পার হয়ে যাই তেপান্তরে,
এই চলো না পাহাড় দেখি, ঝর্ণা ধারায় গিয়ে দাঁড়াই
রঙধনু রঙ আকাশ দেখি দুজন থাকি পাশাপাশি।

চলো না যাই পুকুর ঘাটে
জলের আয়নায় আকাশ দেখে
মন বাড়ীতে মুগ্ধতাদের
জড়ো করি এই দুপুরে।

যাবে নাকি নদীর পাড়ে
যেখানটাতে কাশফুলেরা
সাদা দাঁতে হেসে হেসে
বলছে ঢেকে আয় না কাছে আয় আয়।

মন সমুদ্দুর ব্যথার ঢেউয়ে
খাচ্ছে বাড়ি বুকের পাড়ে,
দাও কমিয়ে ব্যথার ছোঁয়া,
চলো না যাই নদীর ধারে।

দেখবো আকাশ মন উচাটন,
শুনতে পাও না মনের বায়না
কোথায় তোমার মন পড়ে রয়
সত্যি করে আজ বলো না।

এই শুনো না একটুখানি, এই রোদ বিকেল বেলা
পথে পথে চলো হাঁটি, আকাশ দেখিভার খাই হাওয়া
দেখি গিয়ে পাতার নাচন, হাওয়ার তোড়ে মেঘের ওড়া
এবার বাপু তৈরী হয়ে যাও, সুখে উচ্ছল মনের পাড়া।

.
(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, পীঁরেরগাঁও মিয়াবাড়ী চুনারুঘাট)

নাড়ীজ অক্ষর

31

ঘুমিয়ে আছি
অনাদিকাল থেকে
ঘুমের বুকে..
অতল যাপনের তৃপ্তিতে, বিভোর সুখে..
ঘুম ঘুম চোখে জাগি মাঝে মধ্যে
ক্ষুধার ‘খ’
তৃষ্ণার ‘ত’
আর মোহের ‘ম’ কে মেখে মেখে
এই আমি গমন করতে থাকি পরম মধুসূদনে
অনন্ত উদ্যানে
তলাতে থাকি….
যতক্ষণ না পারদের ফোয়ারা হতে
জন্মনিচ্ছে আত্মস্থ জোয়ার, ত্রিমাত্রিক নদ..
কলকল ধ্বনি
যতক্ষণ না শুনি প্রণয়কলহের অমৃত স্মর-
প্রাগৈতিহাসিক নিস্তব্ধতা ভেঙে
নশ্বর কবিতার বুকে উঠে আসা নাড়ীজ অক্ষর!..

সেরার সেরা

পথের ধারে কত যে ফুল
দেখছি ফুটে আছে
মৌমাছি আর প্রজাপতি
উড়ছে তাদের কাছে।

সবুজ পাতা গাছের সারি
পথ গিয়েছে বেঁকে
লম্বা ব্রিজ উঁচু ফ্ল্যাট
ডাইনে বাঁয়ে রেখে।

করছে পাখি কিচিরমিচির
চলছে গাড়ি ঘোড়া
কত রকম যাচ্ছে মানুষ
রঙিন জামায় মোড়া।

রোদের খেলা শিশির ঘাসে
নীল আকাশের নিচে
মাঠ ফসলের লাগছে দোলা
তারই পিছে পিছে।

স্কুলের পথে এসব দেখে
থাকে তুলনাতে
তাই তো খুকু পড়াশুনায়
সেরার সেরা তাতে।

পিঙ্গল নয়নে

29

মদ্যপ নই
তবু বারবার মাতাল হই পিঙ্গল নয়নে
জানি অ-ঠাই
তবু উদ্ধার পাবার লোভে ঝাঁপ দিই অথই আগুনে!..
উন্মাদ হই
যদিও জানি, ফুল হলেও বিষাক্ত হেমলক
মরণ ফাঁদ! তবুও
ওষ্ঠে জেগে রয় আমূল তৃষ্ণা, অগাধ বিষাদ!

অপরিমিত

Imag

কখনও যদি মনে হয় আমি কোথায়
নিজের বুকের মাঝে খুঁজে নিও
আমি লুকিয়ে আছি খুব সংগোপনে
গভীর গোপনে তা কি জানো প্রিয় ?
এক দিন কোনো হরিণ শাবকের মত
শকুন্তলার আঁচলে লুকিয়ে যাব।

তখন যেন আবার বোলো না আমায়
তুমি রাখতে আমায় পারো নি তাই।
একটু হেসে একটু কেঁদে বিদায় নিয়ে
চিরকালীন শূন্যতায় ফিরে যেতে চাই।

হয়তঃ এক পলকই তোমার অস্তিত্ব,
বাকিটুকু শুধু চোখের আড়ালে আমার
নাগালের সম্পূর্ণ বাইরে, তবু কানাকড়ি
পাবার আশায় এক পাশে পড়েছিলাম।