বিভাগের আর্কাইভঃ কবিতা

তোমার বাড়ী এলাম বন্ধু

3104

চা সাধো না আমায় তুমি তোমার বাড়ী এলাম
শান্তিটুকু করে দিলাম তোমার কাছে নিলাম;
সঠিক মূল্যে কিনে নিয়ো মনটা এবার তুমি,
এক কাপ চা দিলে হবে প্রফুল্ল মন ভূমি।

তোমার মনে আমায় রেখো, তুমি আমার মনে,
গল্প করে চা খাবে কী তুমি আমার সনে?
তুমি বানাও আমি খাবো, লিকার দিয়ো বেশী,
একটুখানি চিনি দিলে হবো আরও খুশি।

এক চিমটি প্রেম দিয়ো চায়ে, বাসবো ভালো তোমায়,
কেন বাপু পড়ে থাকো বিষণ্নতার কোমায়?
এসো বন্ধু বসো পাশে গল্প করো হাজার,
চা খাবো আর বলবো কথা, মনে যে প্রেম বাজার।

ভালোবাসার সময়গুলো চলো বুকে তুলি,
একটু না হয় বলো আজকে মিষ্টি মধুর বুলি;
দীর্ঘশ্বাসের প্রহর আমায় আর দিয়ো না বন্ধু,
প্রেম এনে দাও উথাল পাথাল মনে তেরো সিন্ধু।

চায়ের কাপে তুলে রেখো বিষণ্ণতা যত,
যেয়ো ভুলে কষ্ট ব্যথা যা হয়েছে গত;
বর্তমানটা সুন্দর ভারি, ঠিক উপভোগ করো,
মন জমিনে প্রেমের খামার বন্ধু এবার গড়ো।

চা খাওয়াবে আজকে আমায়? দুধ না রঙিন চা গো?
বন্ধু তুমি ঘুমিয়ো না এবার তবে জাগো,
জেগে জেগে স্বপ্ন দেখো পাশে আছি আমি
আমার চেয়ে তোমার কাছে ঘুম কী হলো দামী?

.
(সামস্যাং এস নাইন প্লাস, ঢাকা)

মৃত্যু এবং আমি

প্রতিদিন একটু একটু করে মরে যাচ্ছি আমি !
অথচ, আমি যেভাবে মৃত্যু চেয়েছি,
যে ভাবে আমাকে চেয়েছি, সেভাবে নয়।
একটি বর্ণহীন আলো আসে – চোখে মুখে লাগে।
তারপর দ্রুত চলে যায়।

গ্রীষ্মকাল কিংবা বর্ষাকাল,
এই শরতের অনাহত পারাপার কিংবা হেমন্তের দিন যাপন।
একটি ছায়া অদৃশ্য হয়ে যায় – যে তুমি চাও, সেভাবে নয়।
দিন ছোট হয়, রাত দীর্ঘ হয়
যেন পৃথিবী শেষ হয়ে যাচ্ছে ক্ষয়ে যাওয়া নিশ্বাসে।

তারপর,
রাত গভীর হলে আমি শুনতে পাই ভূতের বিলাপ।
রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে কানে ভেসে আসে –
“তাহলে তুমি ঈশ্বরের কাছে তোমার জীবন উৎসর্গ করেছ।”

কিন্তু,
প্রতিদিন একটু একটু করে মরে যাচ্ছি আমি
অথচ,
যে আমি আমাকে চেয়েছি, সেভাবে নয়।

টাইমঘড়ির আওয়াজ

এমন মধ্যরাত, নির্জন কেবিনের মতো;
সেদিন এইসব বিপন্ন ঘুম লাগার আগে
বোধহয় সাপের নীল চোখে তাকাচ্ছিলাম-

ঘুমঘর দেয়ালে একা, একার মধ্যে কে যেন
ছায়া এনে টাইমঘড়ির আওয়াজ তুলছে
প্রতিটি শরীর থেকে নরম চাহনি তার
বৃষ্টি এসেছিল এক ঝলক-চোখ পেঁচিয়ে
শেষবার মানুষের মতো বুক বাড়ালাম
উষ্ণ ঠাণ্ডা, ফিজিক্সের মতো কল্পনা মাত্র
শত শত ময়ূরবসনে যমুনার চাঁদ, রাতে-

একটা বেড়াল দুপুরের গান গাইতে গাইতে
কালো মগের শাদা দুধে চুমুক বসিয়ে
পোস্টবক্স পুঁতে ঠিকঠাক দ্বিগুণ ভালোবেসে
একটা ইঁদুর মেরে হাসছে। টের পেলাম না…
অথচ ক্রমশ ভেবেছি, ব্যাকুলতার নৃত্যে সে!

খন্ড কবিতা

309

ছাই চাপা বুকের কপাট খুলে- দ্যাখো
ফুলের নাম করে চেয়ে গেছে হেমলক, সংক্রমিত বিষ
এভাবে আরো কিছু ঘা, অসংগতি, রক্তঘাতি শাপ
মরণের আহ্বানে গলিত পাথর- হিমবাহের স্রোত
বইছে অশ্রু-নদী শতদ্রু…

তাপসীরে…
অলীক সাধনের রাত পোহালে
আসিস শুদ্ধ স্নানে! নইলে
রক্ত গমনে আত্মা’রা সাক্ষী হয়ে ফুটবে
সংরক্ষিত বাগানে…

আশাহত

শুধুমাত্র শেকড়ের টান
এইযে ফিরে আসা পায়ের চিহ্নটুকু ফেলে
ঠুকরে খাওয়া সময়ের গান- দগদগে ক্ষত
তবুও আঁকড়ে থাকার শেষ চেষ্টা

ঢেউ তোলা শাড়ির আঁচল
ঝুলে থাকা বিজ্ঞাপনের মতো করে
আকুতি জাগাও প্রাণে
তবে কি সব শূন্যতার কোরাস

সারি সারি আলো শুষে নিচ্ছে অন্ধকার
ওদিকে দরজায় দাঁড়িয়ে এক আশাহত মা
নিভু আঁচে পুড়ছে তার রঙিন স্বপ্ন।

বীজ ও বর্তমান

অসমাপ্ত ছায়া রেখে বিদায় নিল চাঁদের গ্রহণ
আমি যে রাতকে আলিঙ্গন করবো বলে
এসেছিলাম নদীকূলে,
সেই নদীও আমাকে দেখালো একান্ত ভাটিতন্ত্র
একা হয়ে যাবার আগে
আমি সবিনয়ে পরখ করতে চাইলাম
আমার পদছাপ।

এই পথে হেঁটেছে এর আগেও কেউ।
এই বীজপত্রে লেগে আছে যে বৃষ্টির ফোঁটা- তা দেখে
আমি ইতিহাসকন্যার কাছে,
জাতে চাইলাম রক্ত ও রঙের
পার্থক্য। জানতে চাইলাম- আমার পূর্ববর্তী
পথিকেরা এখন কোথায় আছে, কেমন আছে।

আমার সদ্যপ্রেমিকা ইতিহাসকন্যা মুখ ফিরিয়ে নিল।
বললো-
‘তুমি পঠনের পরিণাম জানো না,
চেনো না ঘটনা অতিক্রম করার অবিকল্প পথ।
যদি জানতে-
তবে চন্দ্রবীজেই খুঁজে নিতে পারতে
তোমার বর্তমান ঠিকানা।’

আমি অসহায়ের মতো আর্তনাদকেই-
লুকিয়ে রাখতে চাইলাম পাঁজরের অবিকল প্রচ্ছদে।

দূর্গার বিদায় ক্ষণে

050438

পূজার দিনে চলছে আজি
সিঁদুর নিয়ে খেলা,
দেখে সকলে বহু প্রতিমা
কাটায় সারা বেলা।

মায়ের পায়ে সিঁদুর দিয়ে
মাখে এয়োর গালে।
মা খুশি যদি তবেই মেলে
ভালো সবার ভালে।

দুর্গা মার বিদায় আজ
যাবে বাপের বাড়ি,
সকলে তাই আঁখির জলে
দুঃখ পায় ভারী।

এই পূজোতে ধনী গরিব
খুব আমোদ করে,
ধুনুচি নাচে ও ঢাকঢোলে
নৃত্যে প্রাণ ভরে।

রঙিন শাড়ি নতুন জামা
সবার গায়ে গায়ে,
পাড়ায় দেখি মেয়েরা সব
আলতা রঙে পায়ে।

মাত্রাবৃত্তঃ ৫+৫ / ৫+২

চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধের আগে

পৃথিবীর পা থেকে এখনও খসে পড়েনি ফুলঘুঙুরের ছায়া
যারা অভিমানী রাতের সাথে কাটিয়েছিলাম যৌথবাসর,
তারা কেউই ভুলে যাইনি চন্দনের ঘ্রাণকাহিনি। তবু কেউ
যুদ্ধের দামামা বাজাবে বলে, শাণাচ্ছে সঙ্গিন। রোবটের
প্রলম্বিত পাঁজরের পাশাপাশি সাজিয়ে দীন মানুষের পাঁজর
পর্যবেক্ষণ করছে পারমাণবিক সন্ধ্যার হাসি।

কবিতার কোনো প্রতিপক্ষ নেই জেনেও, একদল মতলববাজ
লিখে রাখছে কবিতার আদলে কিছু জঙ্গল। কিছু জুয়াড়ি,
জুয়া খেলা বারণ রেখে- কাটাকুটি খেলা খেলছে সমুদ্রের সাথে।

পাহাড়ের চূড়া থেকে এখনও মুছে যায়নি মানুষের পদছাপ,
আমরা যারা অনুসরণে বিশ্বাসী- তারা সকল অন্ধকার
অস্বীকার করে দাঁড়াতে চাইছি,
একটি কালো জিরাফ শুধুই গলা বাড়াচ্ছে
আমাদের দিকে…… আমাদের দিকে।

ভাদ্রের দুপুরে বৃষ্টির আমেজ

তালপাকা রোদ্দুরে পুড়ে পুড়ে ছাই, সহসা নেমে আসলো বৃষ্টি,
কী মনোরম দৃশ্য, কী হিম আবেশ, বাহিরে রাখি ঠায় দৃষ্টি;
ইচ্ছে করছে তোমার সাথে দূরে কোথাও যাই,
মন দেয়াল বৃষ্টির জলে থরে থরে সাজাই।

তুমি কাঁথামুড়ি দিয়ে ঘুমোবে? নাকি বের হবে আমায় নিয়ে
এসো কিছু সুখ এই ভাদ্রে আনি ছিনিয়ে,
মেঘলা আকাশ, দিনের বুকে বিবর্ণ আলো
এমন দিনে উচ্ছলতা হারাই, নেই মনঘরে উচ্ছাসের আলো।

চলো মনের ঘরে জ্বালাই উচ্ছাসের আলো,
তুমিও যে মেঘলা আকাশের মতই মন করে আছো কালো,
বুঝেছি, তোমারও মন করছে কেমন কেমন! তাই না?
চুপচাপ নিরিবিলি থাকি দুজন আলাদা রুমে, এ আমি চাই না।

চলো ভালোবেসে সময় করে নেই আপন,
বৃষ্টি ফোঁটা তুলে নেই ঠোঁটে, মনে তুলি সুখের কাঁপন;
ভিড় এড়িয়ে কোথায় চলে যাই, খুঁজে নেই নির্জন,
মনে যত দ্বিধা দ্বন্দ্ব আর বিষণ্নতার ছাপ, করি বর্জন।

বিষণ্ণ দিনের বুকে বসে চুপচাপ, হবে কী আর,
চলো সময়ের পিঠে হই সওয়ার
তুলে আনি মুগ্ধতা, ছুঁয়ে দেই বৃষ্টি ভেজা পাতা,
মাথা থাকুন শূন্য, ফেলে যাবো ঘরেই রঙিন ছাতা।

গরম চায়ে রাখলে ঠোঁট, ঠান্ডা যাবে কেটে,
যেখানেই যাই না কেন, যাবো না হয় হেঁটে হেঁটে,
কাদামাটি ছুঁয়ে দিক বসন, ভিজে যাক গায়ের জামা,
বন্ধু ঘরে মন টেকে না, মনের তারে বাজে সুখ সারে গামা।

বাংলাদেশ

3084

কখনো কখনো আমি হয়ে যাই
এই ল্যান্ডস্কেপের উপর
একটি সাদা রাজহাঁস।
হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন;
কখনো কখনো হয়ে যাই আমি।

দু’পা সাঁতরিয়ে খুঁজে ফিরি,
আগামীর সব স্বপ্ন মানুষ !
যাদের হাতে আছে আমার
অঙ্কুরিত একটি স্বপ্ন বীজ !

কখনো কখনো মানুষ খুঁজে ফিরি,
এই মানুষের ভিড়ে— সত্য মানুষ !
এই নির্জন পার্ক থেকে নির্জন তীরে।

কখনো কখনো খুঁজে ফিরি আমি,
পাশাপাশি পথ চলায়
তোমার আঙুলের ফাঁকে
সম্ভাবনাময় একটি লাল সবুজের খাম।

এখনো আমি খুঁজে ফিরি দু’চোখ মেলে,
এই বিস্তৃত ভূ-খণ্ডে,
লাল-সবুজের দেশ, গর্বিত বাংলাদেশ !

নৈকট্যের ছায়া

স্বপ্ন যেন হাট-বাজার, শস্যক্ষেতের ফুল

পৃথিবীর থেকে একদিনের বয়স বেশি,
এ রকম ডুবে থাকা ঘুমের ভেতরে
স্বপ্ন নিয়ে পালটে ফেলা যায়

হ্যাণ্ডশেক ঝুলিয়ে ভালো মানুষের পরিচয়
এবং সকল গ্যালাক্সির সঙে নাচুনি ঢোল
কেশরহীন প্রাণে জ্যোৎস্নার জনপদ,
বৈদ্যুতিক বালবের নিচে অনুভব করা
কামান্ধ গর্ব, মমির মতো শাদা পরীর মুখ

আসন্ন সেলাইমেশিনের সুতোয় প্যাঁচানো-
রক গান, ঘন্টা পেরোনো ঘড়িটার-সময়
কোথায় যায়, কী নিয়ে যায়-শাদা হাড়ে
খেলা করে জৈবযৌগ আটাশ চাউলের ভাত,
মাঠ যেন হেঁটে আসছে শহরের নিকটবর্তী…

সেই সাতটি বার

103

শনি, মঙ্গল দুই হাটই গেলো
বাড়ির সামনে আর নৌকা বাঁধে না
জল শুকনো বালুচর প্রায়;
কয়েরবিলের কথা খুব মনে পরছে
কচুরিপানার ফুল, শাপলা তুলা
জলে সাঁতার কাটা- আর কত কি?
রবি, সমও গেলো বদমদাড়ি, বউছি
খেলার মাঠ বিবর্তন, চিনাই যায় না
বুধ বৃহঃ গেলো ধুলিবালি খেলাধূলার ঘাট
শুক্রবারও গেলো টিভিতে সিনেমা
চঞ্চল ক্ষণ, অম্লান করে স্মৃতির পটে
এভাবে চলে গেলো ফিরে না আর-
সকাল, বিকাল, সন্ধ্যা- সেই সাতটি বার!

২৮ আশ্বিন ১৪২৯, ১৩ অক্টোবর ’২২

স্মৃতি প্রীতি

কিছু স্মৃতি কিছু প্রীতি
যায় তো না ভোলা,
মনের কথা যথাযথা
যায় না যে বলা।

সুখের সাথে দিনে রাতে
চলতে হয় যে কভু,
হাসি মুখে সুখে দুখে
অবাক লাগে তবু।

সুখী জনে নিত্য ক্ষণে
খেলে নানা খেলা,
সুখের সময় পুরো মৃন্ময়
ভাসে খুশির ভেলা।

সুখের স্মৃতি দুখের প্রীতি
কষ্ট লাগে প্রাণে,
কত আশা কত ভাষা
প্রকাশ পায় না গানে।

রচনাকালঃ
১০/১০/২০২২

বিসর্জন

এটা কোনো ঘর? খালিপেট কন্টেনারে
ঠাসা চিরকাল।
পাখিচোখ সঠিক সতর্কে সারে
সুরতের হাল।

কাজে ও অকাজে ভাঙ্গাচোরাবাঁকা
শুধু জড়াবড়ি
আদপেই নয়ওতো চারুকলা আঁকা
শঙ্খ বা কড়ি
যে বুকে করে যত্নে রেখে দেবে
কাচের শোকেসে,
সশরীর আরামেতে যাবে
শ্রমসুখে ভেসে।
শক্তহাতে ক্ষীর চেঁছে রেখে
বাকি ফেলে দাও
যেন, দূষণে তিক্ত হবে মধুমাস
আবহাওয়াটাও

বিসর্জিতা প্রতিমারা চিৎসাঁতরে
কতটুকু যায়?
আনমনা ছবি হয়ে ভেসে থাকে
নদীর চরায়…..

এই আছি এই নেই

2404

লবণ জলে চোখের পাতা,
আঁকছে জীবন আলপনা।

রাতবিরেতে আকাশটাও,
গাইছে মেঘের বন্দনায়।

যখন তখন মনগলিতে,
চলছে মধুর দিনগোনা।

ঝিলমিলিয়ে হৃদয়পুরে
তোমারই যে আনাগোনা।

চাঁদের বুড়ি চড়কা কাটে,
জ্যোৎস্না সুখের জালবোনা।

পাখির নীড়ে ঠিক দুপুরে,
ঐ সাতসুরেরা আনমনা।

নিবিড় সুখে ঘর আমার!
যত বাঁধন ছেঁড়া কল্পনা।

আমি যদি নাই হয়ে যাই,
দেখো ইচ্ছে কিন্তু মন্দ না!