একটি চুমু ও একটি থাপ্পরের বৃত্তান্ত

একটি চুমু ও একটি থাপ্পরের বৃত্তান্ত


আমাদের গেদু মিয়া বিজ্ঞানী।
সে দিন ঘরের দেয়ালে একটি টিকটিকি পোকা ধরতে গিয়ে ধপ করে ছাদ থেকে ফ্লোরে পরে গেল তার সামনে । গেদু মিয়া খেয়াল করল টিকটিকিটি ৪৫ ডিগ্রির পরিবর্তে ৯০ ডিগ্রীতে ঝাপ দিতে গিয়ে এই অঘটনটি ঘটিয়েছে। টিকটিকিটি দৌড়ে পালাল। গেদু মিয়া নিশ্চিত বিশ্বাসে উপনীত হলো টিকটিকি পরে মরে না, মরে পরে। গেদু মিয়া এত দ্রুত ভাবতে পারে! মজার ব্যাপার হলো সকাল বেলা উঠানে যখন মোরগ কর কর করে উঠে তখন সে তার ভাষা বুঝতে পারে। মোরগ তার প্রেমিকাকে ডাকছে। এ ব্যাপারে সে যে থিসিসটা তৈরী করে ফেলেছে তাতে সে পশু পাখীদের ভাষার হুবুহু বিবরণ দিয়েছে। কিন্তু তার সমস্যা হল মানুষ নিয়ে, মানুষ গুলো অন্যরকম। মুখে বলে এক আর হৃদয়ে ঝপে আরেক। সে দেখেছে মানুষ ভালোবাসার কথা বলে নির্দিদ্ধায় বোমা ছুড়ে মারতে পারে। সেবার যখন হিরোশিমায় পারমানবিক বোমা মারা হলো তখন তারা শান্তির কথা প্রচার করল। মানুষের ভাষা এমনই চমৎকার!!

তো আমাদের বিজ্ঞানী বহু দিন বহু দেশ ঘুরে বহু পথ পেরিয়ে একটা যন্ত্র আবিষ্কার করলেন। মানুষের মনের ভাষাকে আলাদা করে ফেলতে পারে মুখের ভাষা থেকে। নাম দিলো মনো-মিটার। নেহাতই সে বাংলাদেশে জন্মগ্রহন করেছেন না হলে তাকে নোবেল পুরস্কার দিতে বাধ্য হতেন সুইডিস কর্তৃপক্ষ। অবশ্য এমন আশা সে করেও না কারন তার পূর্বপুরুষ জগদীশ চন্দ্র বসুকে কোনি মেরে নোবেল নিয়ে নিলো মার্কুনি। এই কুনির ভয়ে সে তাই তার যন্ত্র জনসমে প্রকাশ করল না। কিন্তু যন্ত্রটা নিয়ে সে বসে রইল না। মাঝে মাঝে টেস্ট করে নেয়।

একবার ট্রেনে চড়ছিলেন গেদু মিয়া । তার যন্ত্রটা একটা কামড়ায় রেখে সে বসে রইল। কামড়ায় ছিল চার জন। একজন মহিলা অধ্যাপিকা, সুদর্শন যুবক, যৌবতী সুন্দুরী আর একজন রাজনীতিবিদ। তাদের কথোপকথন বেশ উপভোগ্য ছিল।

অধ্যাপিকা: সমাজটা অধ:পতনে চলে যাচ্ছে, যুবক যুবতী অবাধ মেলামেশাই এর প্রধান কার।
যুবক: আমরা সামাজিক আন্দোলন গড়তে পারি।
যুবতী: নারীদের কে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখতে হবে।
রাজনীতিবিদ: রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাটাই পাল্টাতে হবে।

এমন সময় বিদ্যুত্ চলে গেল। সাথে সাথে একটি চুমুর ও থাপ্পরের আওয়াজ পাওয়া গেল। আজব খেলা আবার বিদ্যুত্ চলে এলো। দেখা গেল যুবকের গাল লাল হয়ে আছে। নিশ্চিত যে থাপ্পরটি যুবক খেয়েছে।

গেদু মিয়া বিশাল আগ্রহী হযে উঠল। তার মনো-মিটারে দৃষ্টি দিয়ে বসে রইল।
মনে মনের কথাগুলো যন্ত্রটি পড়তে লাগল।

অধ্যাপিকা: ঠিক আছে, সাবাস মেয়ে , আমার দেশে এমন মেয়েই দরকার। একটু চান্স পাইছে আর… থাপ্পরটি যথার্থ হয়েছে।

যুবতী: আমাকে রেখে ম্যাডামকে? থাপ্পর খাবা নাতো কি খাবা?

যুবক: শালা রাজনীতিবিদ মজা লইলি তুই আর থাপ্পর খেলাম আমি।

রাজনীতিবিদ: নিজের হাতে একটা চুমু দিলাম আর একটা থাপ্পর দিলাম বেয়াদপ পোলাডার গালে। আমারে কেউ সন্দেহ করে নাই তো??/

এভাবে রাজনীতিবিদরা সন্দেহাতীতভাবে নিজেদেরকে অনন্য উচ্চতায় মেলে ধরেন আর ঐ যুবকের মতো আমরা চুমুর আওয়াজ শুনে ও থাপ্পর খেতে খেতে বছরের পর বছর পার করে দেই এবং নতুন খাপ্পরের প্রতীক্ষা করতে থাকি।

14 thoughts on “একটি চুমু ও একটি থাপ্পরের বৃত্তান্ত

  1. নির্ভেজাল সত্য বলেছেন স্যার।
    গেদু কিচ্ছা যারা জানেন তাদের অনেক প্রিয় এই সিরিজ।
    লিখিতং বিষয় আর প্রচ্ছদের ছবির জন্য ১০০ নাম্বার দেয়া যেতে পারে। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_mail.gif

    1. এবার ভাবছি গেদুকে দাড় করিয়ে দিবো নানা রাজনৈতিক নেতাদের মুখামুখি। গেদুকে অনেক ট্রেনিং দিয়ে তৈরি করছি যাতে করে রাজনীতিবিদদের এমনভাবে উপস্থাপন করে যাতে করে সচেতন লোক বুঝে নিতে পারে কাকে নিয়ে লেখা হচ্ছে অথচ কারো নাম দাম কিছুই উল্লেখ থাকবে না। গেদুর জয় হোক, গেদু পারুক।

    1. এভাবে রাজনীতিবিদরা সন্দেহাতীতভাবে নিজেদেরকে অনন্য উচ্চতায় মেলে ধরেন আর ঐ যুবকের মতো আমরা চুমুর আওয়াজ শুনে ও থাপ্পর খেতে খেতে বছরের পর বছর পার করে দেই

    2. একদম সঠিক বলেছেন। এগুলি নিয়ে অনেক লেখালেখি দরকার। প্রথমেই হয়তো কিছু হবে না, বাঁধা আসবে, কিন্তু একটু একটু করে ঢেউয়ের সৃশটি হবে। পরিবর্তনের জন্য এমন মৃদু ঢেউ তৈরি করা দরকার।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. অধ্যাপিকা: ঠিক আছে, সাবাস মেয়ে , আমার দেশে এমন মেয়েই দরকার। একটু চান্স পাইছে আর… থাপ্পরটি যথার্থ হয়েছে।

      যুবতী: আমাকে রেখে ম্যাডামকে? থাপ্পর খাবা নাতো কি খাবা?

      যুবক: শালা রাজনীতিবিদ মজা লইলি তুই আর থাপ্পর খেলাম আমি।

      রাজনীতিবিদ: নিজের হাতে একটা চুমু দিলাম আর একটা থাপ্পর দিলাম বেয়াদপ পোলাডার গালে। আমারে কেউ সন্দেহ করে নাই তো??/

      কোন ডায়লগটা আপনার মনে ধরেছে? !!!!!

  2. চুমু=চুমু
    চুমু=থাপ্পর
    এলজাবরার কি জটিল হিসাব! বোঝা মুশকিল/

    1. এলজাবরার হিসাবটা গদু মিয়ার ভাল জানা থাকার কথা। দেখি তিনি কিছু বুঝেন কিনা।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।