অতঃপর তুমি নারীর শ্রেষ্ঠত্বের কোন কোন তথ্যকে অস্বীকার করবে!
পৃথিবীর সব দেশেই অপরাধীদের মধ্যে পরিসংখ্যানে নারীদের চেয়ে পুরুষের সংখ্যা অনেক বেশি। চুরি ডাকাতি খুনের মতো যাবতীয় সাধারণ অপরাধের খতিয়ান দেখলে পুরুষ অপরাধীদের তুলনায় নারী অপরাধীর সংখ্যা নগণ্য। চুরি, জালিয়াতি করলেও নারী ডাকাত দল তেমন শোনা যায় না। ব্যতিক্রমী কিছু দস্যুরানী পুরুষ ডাকাত দলে পুরুষদের খুন ধর্ষণের ঢালাও অনুমতি দেওয়ার বিনিময়েই ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। অবশ্য ড্রাগ পাচার ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে মেয়েরা হামেশাই ব্যবহৃত হয় যা মুলত পুরুষরাই নিয়ন্ত্রণ করে।
অতঃপর তুমি নারীর শ্রেষ্ঠত্বের কোন কোন তথ্যকে অস্বীকার করবে!
আমাদের দেশে থানায় ডায়রি থেকে মেয়েদের বিরুদ্ধে অপরাধের চিত্র থাকলেও পুরুষের তুলনায় নারী অপরাধীর অনুপাতের কোনও রেকর্ড নেই। যা আছে তা হল বিচ্ছিন্নভাবে কিছু মহিলার কীর্তিকলাপের বর্ণনা ও তাদের নিয়ে কাহিনী। অন্যদিকে আমেরিকান ও ইওরোপীয় দেশগুলোতে অপরাধের লিঙ্গ ভিত্তিক পরিসংখ্যান যথেষ্ট বিশদে রাখা হয়। যার থেকে অপরাধ জগতে নারীর ভূমিকা কতটা তার একটা ছবি পাওয়া যায়। যেমন ২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কারাগারে নিক্ষিপ্ত আসামীর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা (৫,০৩৭,০০০) মহিলাদের (৫৮১,০০০) তুলনায় ৯ গুণেরও বেশি ছিল।
২০১৪ সালে অসামাজিক কাজের জন্য গ্রেপ্তার হওয়া মানুষের ৭৩% ছিল পুরুষ। এর মধ্যে হিংসাত্মক অপরাধের জন্য ধরা পড়া পুরুষের সংখ্যা ৮০.৪% এবং সম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধের জন্য ৬২.৯%। United States Department of Justice ১৯৮০ থেকে ২০০৮-এর মধ্যে খুনের একটা পরিসংখ্যান একত্রিত করে দেখা যায় – মোট অপরাধের ৯০.৫% করেছে পুরুষ বা ছেলেরা। অতঃপর তুমি নারীর শ্রেষ্ঠত্বের কোন কোন তথ্যকে অস্বীকার করবে!
…….
২০০২ সালে কানাডায় বার্ষিক মোট অপরাধী চিহ্নিত মানুষের মধ্যে পরিণত পুরুষ ৩,২৬,৫৩৬ জন, পরিণত মহিলা ৭১,০৫৮ জন, অপরিণত ছেলে ৭৪,৫১৩ জন এবং অপরিণত মেয়ের সংখ্যা ২৪,৪৮৭ জন। দেখা যাচ্ছে ছেলেরা অপরিণত বয়সেও মেয়েদের তুলনায় এমনকি পরিণত নারীর তুলনাতেও অপরাধে চাম্পিয়ান।
অতঃপর তুমি নারীর শ্রেষ্ঠত্বের কোন কোন তথ্যকে অস্বীকার করবে!
পুরুষালি হিংস্রতার পেছনে পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরনের (testosterone) ভূমিকা সংক্রান্ত প্রথম তত্ত্ব Challenge hypothesis অনুযায়ী- বয়ঃসন্ধিক্ষণে টেস্টোস্টেরন ক্ষরণ বৃদ্ধির ফলেই জননক্ষমতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভাব বেড়ে যায় যা আগ্রাসী আচরণের অন্যতম কারণ। বাস্তবে জেলে হিংস্র অপরাধীদের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে রক্তে টেস্টোস্টেরণের মাত্রা ও হিংস্রতার মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক প্রমাণ হয়েছে।
Merton’s theory of anomie অনুযায়ী নারীদের অপরাধ প্রবণতার পেছনে অনেক সময় তার মধ্যে পুরুষালি ভাবকে দায়ী মনে করা হয়। যেসব মেয়েরা সমাজ নির্ধারিত মেয়েলি ভূমিকা প্রত্যাখ্যান করে ‘টম বয়’ গোছের হয় তাদের মধ্যে অন্যান্য সাধারণ মেয়েদের তুলনায় অপরাধ প্রবণতা বেশি। একটু ডানপিটে ও স্বাধীনচেতা মেয়ে হলেই সে নিষ্ঠুর ও অপরাধী মনোবৃত্তির হবে এমন নয়। কিন্তু আগ্রাসী মনোভাব, অপরাধ ও হিংসার সাথে কোনওভাবে বিজ্ঞানীরা পুরুষালী বৈশিষ্ট্যের বিশেষত পুরুষ হরমোনের সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন। যেমন টেস্টোস্টেরন এই পুরুষ হরমোনটি নারী দেহেও কাম ও অন্যান্য উত্তেজনা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
পুরুষদের মাঝে টেস্টোস্টেরন বিপাক হার নারীদের তুলনায় ২০ গুণ বেশি।
অতঃপর তুমি নারীর শ্রেষ্ঠত্বের কোন কোন তথ্যকে অস্বীকার করবে!৷
………
পৃথিবীর সকল নারীকেই প্রাকৃতিক একটি পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আমাদের মা-খালারাও উঠতি বয়সে মাসিক বা ঋতুচক্রের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। একজন নারীকে ভবিষ্যতে সন্তানসম্ভবা হতে শারীরিকভাবে প্রস্তুত করে এই মাসিক প্রক্রিয়া। বাড়ন্ত কিশোরীর শরীরে মা হবার প্রক্রিয়া একেবারে প্রকৃতিভাবে যুক্ত করে দিয়েছে।
একজন কিশোরীর জন্য এটি প্রথম সংকেত যা বলে দেয় যে সে তার বাড়ন্ত কৈশোরে পা রাখতে যাচ্ছে। প্রতি মাসে ডিম্বাশয় একটি ডিম্বাণু উৎপাদন করে। সবচেয়ে পরিপক্ক বা পূর্ণাঙ্গ ডিম্বাণুটি ডিম্বনালির মধ্য দিয়ে জরায়ুতে চলে যায়। জরায়ু হচ্ছে দেহের এমন একটি অংশ যেখানে শিশু সুরক্ষিত থাকে ও প্রতিনিয়ত পুষ্টি পায়। যখন ডিম্বাণু পরিপক্ক হয় তখন শরীর জরায়ুতে রাসায়নিক সংকেত পাঠায়। ফলে জরায়ুর ভিতরের অংশ পুরু হয়ে ওঠে। ডিম্বাশয় থেকে পরিপক্ক ডিম্বাণু বেরিয়ে এসে ডিম্বনালীতে অবস্থান নেয়। এই পুরো প্রক্রিয়াকে বলে হয় ডিম্বাণু উৎপাদন প্রক্রিয়া।
ডিম্বানুটি শুক্রানু দ্বারা নিষিক্ত হলে গর্ভসঞ্চার হয়। গর্ভবতী অবস্থায় নিষিক্ত ডিম্বাণুটি ডিম্বনালীর মধ্য দিয়ে জরায়ুতে আসে। ৬ দিনের মধ্যে নিষিক্ত ডিম্বাণুটি জরায়ুতে সৃষ্ট নরম, পুরু আবরণের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। আর যদি গর্ভবতী না হয়, তাহলে অনিষিক্ত ডিম্বাণুটি নষ্ট হয়ে যায়। জরায়ুর ভেতরে কোন শিশু জন্ম না নেওয়ায় নরম ও পুরু আবরণটিও ভেঙে যায়; শরীর থেকে রক্তের আকারে বের হয়ে আসে। এভাবেই মাসিকের শুরু হয়। প্রকৃতি একজন নারীকে মাসের সাত দিন (কম বেশি হতে পারে) অর্থাৎ চার ভাগের এক ভাগ সময় জননী হওয়ার প্রক্রিয়ায় যুক্ত রাখে। যেখানে পুরুষ প্রকৃতিগতভাবে বেশি অপরাধ প্রবণতায় যুক্ত।
অতঃপর তুমি নারীর শ্রেষ্ঠত্বের কোন কোন তথ্যকে অস্বীকার করবে!৷
এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কে আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার বেশি হকদার?’ তিনি বললেন ‘তোমার মা’; সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মা’; সে আবারও বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মা’। সে পুনরায় বলল, ‘এরপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার পিতা’। (বুখারি শরিফ ও মুসলিম শরিফ)।
প্রিয় নবী (সা.) আরও এরশাদ করেন, ‘জান্নাত মায়ের পদতলে’। (মুসলিম)৷
অতঃপর তুমি নারীর শ্রেষ্ঠত্বের কোন কোন তথ্যকে অস্বীকার করবে!!