ব্লগিং এর মূলমন্ত্র

এই ছবিটি লক্ষ করে দেখুন এখানে একটা ব্লগে যা যা প্রয়োজন বা ব্লগিং করতে যেসব উপাদান দরকার তার অনেক কিছুই লিখা রয়েছে।

আমরা একটা ব্লগে কি চাই?

সবাইকে এই কথাটাই মনে রাখতে হবে ব্লগিং কোন পেশা নয়। ব্লগিং করা সবারই একটা নেশা। এখানে প্রতিযোগিতার চেয়ে সহ অবস্থানটাই, সবার আগে বিবেচ্য। এখানে যে যা পারছে যে যা ভাবছে তা অন্যের কাছে প্রকাশ করে ছোট্ট একটু মতামত চাইছে। নিজের চেয়ে জ্ঞানে গুণে বড় বা নিজের সমসাময়িক এমন সবার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইছে। তবে এখানে লিখতে লিখতে যে কেউ কোনদিন হুমায়ুন আহমেদ বা ইমদাদুল হক হয়ে যাবে না, তার কি কোন নিশ্চয়তা আছে?

এখানে অনেকেই নয়; কেউ কেউ নিজের পরিচিতি অংশে নিজেকে এমন করে জাহির করছেন যেন, তিনি এ দেশের কোন একজন মস্ত মহাজন পদের জন্য নিজের বায়োডাটা সকলকে জানাচ্ছেন।

আসলে তার কোন প্রয়োজন আছে কি?
এখানে বিভিন্ন পেশার, বিভিন্ন চরিত্রের, বিভিন্ন পরিবেশের, বিভিন্ন পেশার ব্লগার রয়েছেন। কেউ হয়ত বিমানের পাইলট, কেউ হয়ত জাহাজের ক্যাপ্টেন, কেউ সরকারি সচিবালয়ের উপ-সচিব, কেউ কৃষক, কেউ ডাক্তার আবার কেউবা নিতান্ত কাঠমিস্ত্রি কিংবা সাধারণ দোকানদার। অতএব সঙ্গত কারণেই সবার মন, মনন, চিন্তাশক্তি, ধ্যান ধারনা, লেখার গভীরতা, ভাবনার প্রশস্ততা যার যার মতই। এদের কাউকে বাদ দিয়ে কিন্তু আমরা ব্লগিং করতে পারব না। সবাইকে নিয়েই আমাদের এক সাথে চলতে হবে। এতে যদি আপনার ভাল না লাগে তাহলে কে কি করবে বলুন! এখানে কারোও সাথে কারও প্রতিযোগিতা কাম্য নয়। কেউ কারো সাথে প্রতিযোগিতার জন্য এখানে আসেনি। প্রতিযোগিতা হয় সমসাময়িকদের সাথে। অসম প্রতিযোগিতা সুন্দর বা সহনীয় হয় না। সবাই সবার সঙ্গে মিশবে, ছোটরা নতুনরা বড়দের কাছে অভিজ্ঞদের কাছে শিখবে, আলাপ আলোচনা করবে তবেই না হবে সহ অবস্থান।

আর প্রতিযোগিতা যেখানে আছে, যে ব্লগেই এমন প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা ছিল বা আছে সেখানে কি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পেরেছে কেউ? আর নিরপেক্ষতাই যদি না থাকে তাহলে আবার কিসের প্রতিযোগিতা? আমি ভাত রান্না করব, আপনি সুন্দর কবিতা লিখবেন, তিনি সুন্দর উপন্যাস লিখবেন, রহিম সুন্দর ফুল ফোটাবে, জামাল বাঘ শিকারের গল্প বলবে, কামাল রাঙ্গামাটি বা টোকিও বেড়াবার গল্প বলবে, মামুন খেজুরের রস খাবার ছবি দেখাবে, কোন সুন্দর বাগানের ছবি দেখাবে এদের কার সাথে কার প্রতিযোগিতা করবেন? কোন একটা নির্দিষ্ট বিষয় নিয়েই কি আর ব্লগ চলে? কখনও চলেছে বলে বিশ্বাসও করি না।

ছবিতে দেখুন সবাই মিলেমিশে কি সুন্দর ব্লগিং করছে!

আপনি একে দেখে নাক সিঁটকাবেন, ওর ব্লগে যাবেন না, এর ব্লগে মতামত বা আপনার প্রতিক্রিয়া জানাবেন না, এতে আপনার মান রক্ষা হবে না, এমনকি আপনার লেখায় মতামত করলেও নিতান্ত ভদ্রতা করে হলেও তাকে চা নাস্তা খাওয়ানো তো দূরের কথা ধন্যবাদ টুকু জানাতে কৃপণতা করবেন তাহলে আর এক সাথে থাকার ইচ্ছা কেন? আপনি বড় পদে চাকরি করেন কিংবা বড় ব্যবসায়ী বলেই যদি আপনি বড় মানুষ হয়ে থাকেন, বড় কিছু লিখতে পারেন তাহলে তো আপনি ব্যবসায়িক সফল ব্যক্তি, আপনি আর কেন ব্লগিং করে সময় নষ্ট করবেন?

প্রতিযোগিতার মনোভাব ছেড়ে, ছোট বড়র বিভেদ ছেড়ে আসুন আমরা সবাই একই শব্দনীড়ের ছায়ায় বসে হাসি তামাশা করে, আনন্দ পাবার চেষ্টা করি, সময়গুলোকে রাঙ্গিয়ে তুলি। ক’দিনেরই বা এই জীবন! আসুন সবাই সবাইকে ভালবাসি। পরস্পরকে ভালবেসে নিজ অবস্থান থেকে শব্দনীড়কে রাঙ্গিয়ে তুলি।

সকলে আমরা সকলের তরে প্রবাদটি শুধু কথায় নয় কাজে ফুটিয়ে তুলি। ধন্যবাদ।
আবার দেখা হবে আগামীতে কোন আনন্দ উৎসবে যদি কেও হাসের মাংস আর খিচুরি রান্না করে নিমন্ত্রণ করে!

18 thoughts on “ব্লগিং এর মূলমন্ত্র

  1. ক’দিনেরই বা এই জীবন! আসুন সবাই সবাইকে ভালবাসি। পরস্পরকে ভালবেসে নিজ অবস্থান থেকে শব্দনীড়কে রাঙ্গিয়ে তুলি। কাতার পূরণে সাম্য বা আত্মিক সমতা থাকতে হয়। আমাদের ইগো অথবা প্রাচুর্য আপাতত না হয় দূরে থাক; বরং বিসর্জনে রেখে আসি।

    পোস্ট বক্তব্য অন্ধের হাতি দর্শন আর বধিরের প্রিয় শিল্পী মোঃ রফি চর্চিত এই শব্দটির সাথে যেন না মিলিয়ে ফেলি; আমাদের অন্তর কুহরে থাক। আপনাকে ধন্যবাদ। :)

  2. আপনার এই লিখায় মূলত মনস্তাত্ত্বিক বিষয়টা খেয়াল করলাম। দশ রকমের মানুষ দশ রকমের সাইকোলজি নিয়ে থাকে।  ভালোমন্দ সবকিছু একোমোডেট করতে পারলে অনেক কিছুই সহজ হয়ে যায়। এই লেখার অনেক কিছুর সাথে একমত হয়ে আমার একটা কথা বলি, কাউকে এপ্রিসিয়েট করার যৌক্তিক সুযোগ পেলে সেটা মন উজাড় করে ব্যাবহার করা উচিত। লেখালেখিতেও সেটা প্রযোজ্য। 

    "আমি ভাত রান্না করব, আপনি সুন্দর কবিতা লিখবেন, তিনি সুন্দর উপন্যাস লিখবেন, রহিম সুন্দর ফুল ফোটাবে, জামাল বাঘ শিকারের গল্প বলবে, কামাল রাঙ্গামাটি বা টোকিও বেড়াবার গল্প বলবে, মামুন খেজুরের রস খাবার ছবি দেখাবে, কোন সুন্দর বাগানের ছবি দেখাবে এদের কার সাথে কার প্রতিযোগিতা করবেন? কোন একটা নির্দিষ্ট বিষয় নিয়েই কি আর ব্লগ চলে? কখনও চলেছে বলে বিশ্বাসও করি না"।—-পড়ে  মন খুশিতে ভরে গেল।

  3. দায়িত্ব নিয়েই বলছি আমরা কখনও সোজা হবো না। যেমন আছি তেমন থাকবো।

  4. চমতকার লিখেছেন ব্লগিং এর মূলমন্ত্রhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    "এখানে অনেকেই নয়; কেউ কেউ নিজের পরিচিতি অংশে নিজেকে এমন করে জাহির করছেন যেন, তিনি এ দেশের কোন একজন মস্ত মহাজন পদের জন্য নিজের বায়োডাটা সকলকে জানাচ্ছেন"

    এই লাইনটি পড়ার পড় অনেকের পরিচিতি খুঁজলাম কোথাও তেমনটি পেলাম না। অবশেষে দেখলাম আমার মতো বড় পরিচিতি কেউ দেন নি। তাই আমার পরিচিতি সরিয়ে নিলাম। আমি বেশ কটি ব্লগে অনেকের এমন পরিচিতি দেখেছিলাম তাই সরল মনেই দিয়েছিলাম।

    শুভকামনা প্রিয় খালিদ উমর ভাই কেhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    1. আপনার ব্যক্তিগত পরিচিতি সরাবার কোন প্রয়োজন নেই ভাইয়া। আপনি শুধু শব্দনীড়এর সাথে থেকে একে বিশ্বে ছড়িয়ে দিন এটাই আমার প্রস্তাব।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_smile.gif.gif

      1. প্রিয় খালিদ উমর ভাই, আমি মনে কষ্ট নিয়ে আমার পরিচিতি সরিয়ে নেই নি। আপনার লেখাটা পড়ার পর যখন অন্যান্নদের পরিচিতি দেখলাম তখন আমার পরিচিতিটা বেমানান মনে হয়েছে। আর আপনার এই লেখা না পড়লে হয়তো তা ধরতেই পারতাম না। বিশেষ করে ফেসবুকে ইলহাম ছদ্ম নামে লেখার পর একের পর এক প্রশ্ন আসতে লাগলো, এই ইলহাম কে? শেষ পর্যন্ত আমার টাইমলাইনে "চেনা মুখ" নামে আমি আমার ছদ্ম নামের পরিচয় দিয়েছি। তারও আগে আমার আরেকটি ছদ্ম নাম ছিলো এবং ঐ ছদ্ম নাম নিয়ে ফেসবুকে তুমুল মতভেদ হয়েছিলো। মুলত সেই দৃষ্টিকোন থেকেই আমি আমার পরিচিতিটা দিয়েছিলাম। কে ইলহাম আর কে আমি, আর আমি কি করি, কোথায় থাকি, কেনো ছদ্ম নামে লিখি ইত্যাদি পরিচিতিতে দিয়েছিলাম যেনো শব্দনীড়ে কেউ আমাকে নিয়ে কনফিউশনে না থাকে। আমি শব্দনীড়কে ভালোবাসি। আমি ২০১১/১২ সালেই বিভিন্ন ব্লগে আপনার সামুদ্রিক পথের বিভিন্ন লেখা পড়েছি এবং তখন থেকেই আমি শব্দনীড়কে ভালোবাসি। তখন অনেক ব্লগে লিখতাম। তারপর চাকুরীর ব্যাস্ততার কারনে অনেকদিন কোনও ব্লগেই লিখতে পারি নি। এখন নিজের টুকটাক ব্যবসার কারণে হাতে কিছুটা সময় পাই তাই এখন শুধু শব্দনীড়ে লিখি। আমি এতোটুকু কষ্ট মনে নেই নি। আমি শব্দনীড়ে আছি এবং থাকবো কারণ এখানে বাঙ্গলাদেশী এবং ভারতের বেশকিছু গুণী কবি/লেখক আছেন এবং শব্দনীড়ের সকল কবি/লেখকের মাঝে আমি একটা আন্তরিকতা খুঁজে পেয়েছি যা অন্য কোথাও পাই নি।

        অসংখ্য শব্দমালা নিয়ে শব্দনীড় বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ুক!

        শব্দনীড়ের সকল কবি/লেখক এবং পাঠকের প্রতি রইলো শুভেচ্ছা, শুভকামনা ও বিনম্র শ্রদ্ধা!

  5. নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। শব্দনীড়ে আমার প্রকাশিত পোস্ট ২৮০

    এর মধ্যে ৯৫% পোস্টে আমি মন্তব্য প্রতি-মন্তব্য দূরে থাক অন্য কারও পোস্টেও যাইনি। পোস্ট করে হাওয়া হয়েছি। এই চাকরী বাকরি, ছোটাছুটি দৌড় ইত্যাদি। ফলাফল কি হয়েছে জানেন? প্রথম দিকে আমার লিখার পাঠক থাকলেও ধীরে ধীরে পাঠক সংখ্যা শূন্যে নেমে এসেছে। আমাকে বহুবার মুরুব্বী ভাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, সৌমিত্র তুমি পাঠক হারাচ্ছো। তারপরও যাই যাই করেও আসা হয়নি।

    আমার লিখা যদি পাঠক নাই ই ছোঁয় তাহলে পোস্ট করে কি লাভ। এখন আমি বুঝি। ব্লগিং আমাকে টাকা দেবে না হয় তো। কিন্তু দিনশেষে বাড়ি ফিরে আমি যে কয়টা পারি অন্যের পোস্ট পড়ে প্রতিক্রিয়া যদি দিতে পারি, এতে আমার তো কোন ক্ষতি নাই। এখন আমি বুঝতে পেরেছি। কিছু পেতে কিছু দিতে হয়। এই দেয়াটা মন থেকে হতে হবে। আমি মন থেকে দেই। আমার এখন তৃপ্তি আসে। ভালো লাগে।

    1. মর্মার্থ উপলব্ধির জন্য ধন্যবাদ দাদা। আমারওতো একই সমস্যা। বাড়িতে আমার আবার এক বস আছে যিনি বাড়িতে ফেরার সাথে সাথেই আমাকে এমন ব্যস্ত করে রাখেন যে আমি কম্পিউটারের কাছেই যেতে পারিনা। যদিওবা যাই তিনি এসে দশ আঙ্গুলে ২০টা কি চেপে চেপে রিতিমত পিয়ানো বাজানো শুরু করেন। ভাইয়া নষ্ট হয়ে যাবেতো! না কিছু হবেনা।
      https://4.bp.blogspot.com/-IL0WnA9Fyrg/Whejemg91DI/AAAAAAAATLY/5X1v4ThvRpIYy58jEXb8ndUxpItFp095ACLcBGAs/s1600/IMG_20171123_185937.jpg

  6. পরস্পরকে ভালবেসে নিজ অবস্থান থেকে শব্দনীড়কে রাঙ্গিয়ে তুলি। এটাই কথা।

  7. আমি একজন চরম অসামাজিক লোক। তাই এই লেখাটি আমার জন্য ১০০ ভাগ বাস্তবসম্মত।

    কিন্তু আমি নিরুপায়। আমার অফুরন্ত সময় থাকার পরেও সময় নেই আমার। আমি দুঃখিত খালিদ ভাই। অনেক কিছু চাইলেও পারি না আমি। তবে এটা কোনো অজুহাত হলো না এটাও বুঝি।

    আপনারা সকলে ভালো থাকুন।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. মামুন ভাই, সালাম জানবেন। আপনি যে কেমন মানুষ এবং ব্লগার তা আমরা সবাই জানি। আসলেই আজকাল সময়ের এতই অভাব যে নিজের কাজগুলিও করা যায়না। যাতায়াতেই দিনের একটা সিংহ ভাগ সময় চলে যায় তারপরে ক্লান্তি আর শ্রান্তি! মানুষ দিনে দিনে রোবট হয়ে চলেছে।

      অজুহাতের কোন প্রয়োজন নেই ভাই আমরা সবাই একই নদীর মাঝি।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Shy.gif.gif

  8. সুন্দর পরামর্শ দানের জন্য আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ । আমি এখানে নতুন এবং পারিবারিক ঝামেলার কারণে শব্দনীড় ব্লগে শময় দিতে পারি না। তবে প্রতিদান দুই চারবার ব্লগে আমাকে ঘুরাঘুরি করতেই হয়। এটা আমার একপ্রকার নেশা। সবার লেখাই ফলো করি সময়ের কারণে মন্তব্য দেওয়া হয় না। তাই নিজের কাছেও সময়সময় খারাপ লাগে। আপনার ব্লগিং এর মূলমন্ত্র লেখা পাঠে আমি সহ আরও দশজন ব্লগ বিষয়ে কিছু জানতে পারবে বলে আশা করি। আপনাকে আমার অন্তস্তল থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ। 

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।