একজন দাগী অপরাধী কিংবা একজন কুষ্ঠরোগী, যাকে সমাজের সবাই ঘৃণা করে বা দূরে থাকতে চায়, তারও একটি আশ্রয় থাকে। সেই আশ্রয়ের নামই পরিবার। অথচ মানবসভ্যতার আজকের এই পর্যায়ে এসে আমরা প্রত্যক্ষ করছি এমন বিস্ময়কর সব ঘটনা যা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়।
প্রতিদিনের পত্রিকার পাতা খুললেই সংবাদ পাই, সদ্যজাত সন্তানকে মা পলিথিনে মুড়িয়ে ডাস্টবিন বা নর্দমায় ফেলে রেখে যাচ্ছেন কিংবা ছাদ থেকে ছুড়ে মারছে। শিশুটির মৃত্যু হওয়ার আগেই কুকুর-বেড়াল তার হাত-পা খুবলে খেতে শুরু করছে। বাবা সন্তানকে হত্যা করছে, কুপিয়ে, বিষ খাইয়ে, শ্বাসরোধ করে ইত্যাদি নানা উপায়ে। কখনো আবার সন্তানদের হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যা করছে। ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রীর খুনোখুনিতো একেবারে সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ কোন সমাজরে ভাই?
যারা গভীরভাবে ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করবেন তারা আতঙ্কিত না হয়ে পারবেন না। এটা সুস্থ মানবসমাজের চিত্র হতে পারে না। এমনকি পশুদের সমাজেও এটা অতি বিরল ঘটনা যে মা-বাবা শিশু শাবককে হত্যা করছে।
জরবাদী, ভোগনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন দুইয়ে মিলে মানুষকে এতটাই লোভী, স্বার্থ পর, আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে যে, ব্যক্তিগত সুখ-সম্ভোগের জন্য রাষ্ট্র কিংবা সমাজের স্বার্থ তো দূরের কথা মানুষ তার পরিবারের স্বার্থও ভুলতে শুরু করেছে। অন্যদিকে অন্যায় ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, জীবনের নির্মম বাস্তবতা তাকে হতাশ, অস্থির, অসামাল করে তুলছে। ফলে সে জিঘাংসা আর ক্রোধের বশবর্তী হয়ে নিজ সন্তানের মাথায় বাড়ি দিতে যেমন দ্বিধা করছে না, নিজের গলায় দড়ি নিতেও দ্বিতীয়বার ভেবে দেখছে না। একেবারে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা।
পাশ্চাত্যের অনুকরণে আমরা বিশ্বাস করছি যে, বস্তুগত এই উন্নতিই আমাদের সকল সুখের আধার। আমাদের সরকার রাস্তাঘাট খুরতে খুরতে একাকার করে ফেলছে। আমাদের বাচ্চাগুলো পড়তে পড়তে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে। আমাদের মায়েরা বাচ্চার স্কুলের গেটের বাইরে বেঞ্চে বসে থেকে মাজা ব্যথা করে ফেলছে। কিন্তু এই ‘উন্নতি’র দৌড় যে মাকাল ফলের মতো প্রতারণায় পূর্ণ তা কে বুঝবে? আমাদের হাজার বছরের বিশ্বাসভিত্তিক জীবনাচরণ, আমাদের মূল্যবোধ, আমাদের ধর্মভিত্তিক নীতি-নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে কেবল বস্তুগত উন্নতি আমাদের সুখ দিতে পারবে না। তা তাদের মতো কেবল উপভোগ করতেই শেখাবে, সুখী হতে নয়।
হাস্যকর লাগে যখন দেখি আজও আমাদের বুদ্ধিজীবী, সমাজচিন্তকরা সেই প্রভু পশ্চিমা পণ্ডিতদের অমুক অমুক বইয়ের উদ্ ধৃতি দিয়েই এই সংকটের সমাধান দিচ্ছেন। আর দুঃখ লাগে যখন আমাদের সরকারের মন্ত্রীরা বলেন, পরিস্থিতি খুব খারাপ। নতুন আইনের কথা চিন্তা করা হচ্ছে। তারা সমাজের অবক্ষয় রোধ করবেন আইন দিয়ে! সুস্থ মানুষ এমনটা ভাবে কিভাবে? কথিত বুদ্ধিজীবী আর শাসকদের এই অন্ধত্ব আর মানসিক দাসত্ব যতদিন না ঘুচবে কোনভাবেই পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব নয়।
কথিত বুদ্ধিজীবী আর শাসকদের এই অন্ধত্ব আর মানসিক দাসত্ব যতদিন না ঘুচবে
কোনভাবেই পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব নয়।
____ সহমত জ্ঞাপন করছি।
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয়…
কথিত বুদ্ধিজীবী আর শাসকদের এই অন্ধত্ব আর মানসিক দাসত্ব যতদিন না ঘুচবে কোনভাবেই পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব নয়।
একমত।