অন্যজীবনের স্বপ্ন

অন্যজীবনের স্বপ্ন
এই শহরে বন্ধি আমি, হারানো দিনের স্বপ্ন দেখি, দূরবর্তী কোন ভূমি রৌদ্রকরোজ্জ্বল যার পাদদেশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট নদী একে বেকে কল্ কল্ শব্দ ছড়িয়ে, ওখানে কাকেরা হুলস্থুল করে উঠে, ওখানে বৃষ্টির ফোটারা আসে স্বর্গীয় বার্তা নিয়ে। আমারই মতো এই শহরের অধিবাসীদের স্মৃতিতে রয়ে গেছে হাজারো সৌন্দর্যের উৎস বন্য-আদিম-মৌলিক। হে ধাবমান যাত্রী, কান্তিহীন কেবল ছুটে চলা, পাবে না পাবে না খুজে সেই শান্তি এখানে, যা হারিয়ে এসেছো।

আমার জানালার ওপাশে ব্রেক কষার কচ কচ শব্দ, মানুষের কোলাহল আর এয়ার কন্ডিশনারের গুঞ্জন। এসব চলমান থাকে রাত্রি থেকে সকাল আর সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত। ও মানুষ আর মানুষের বাচ্চারা! কেন এই কোলাহলে হারিয়ে যাও যেখানে হাহাকার পাথরের বিল্ডিংয়ে ঘুরপাক খেতে থাকে, না থাকে চান-সুরুয, না থাকে তারা আর আকাশ? কেন কৃত্রিম জীবনে জড়াও কৃত্রিম আলোতে? কেন নি:শ্বাসে নাও ধুলো আর যান্ত্রিক ধোয়া? কি খুজে পাও তুমি সাদা সার্ট আর টাইয়ে? তোমার সোনালী চুলের নিচের মাথাটায় ব্যবসায়ের বায়ু ঘুরপাক খায় কেন? যদি এই হয় সুখের দৃশ্যায়ন, আমি বলি,“ অ খোদা! আমাকে কখনো সুখী করো না।”

আর হ্যা, কেন আমি বন্ধি চারদেয়ালের কারাগারে? কেন আমি আমার জন্মস্থান ছেড়ে এসেছি চলে, সেই গ্রাম যেখান থেকে আমার স¤প্রসারণ? এখানে, বস্তুত:, আমার কর্মসংস্থান। এখান থেকে আমি আমার খাবার আর বস্ত্র কেনার অর্থ জোগান দেই। এখানে আমি কায়িক শ্রম থেকে মুক্ত। এবং এখানে আমার হৃদয় আর আত্মা মৃত। আমি কি নিরাপত্তার জন্য আত্মা বিক্রয় করব? জীবনের নিরাপত্তা? কতটুকু!

মানুষতো তার রুটি উত্তাপের জন্য, খাদ্য শিকারের জন্য আর উন্মুক্ত আকাশের তলে জীবনকে যাপনের জন্যে আগত। মানুষতো আগত দীর্ঘ সময় দাড়িয়ে থাকার জন্য ঝড়ের তান্ডবের মাঝে যখন বিদ্যুৎ চমকাতে থাকে তাকে ঘিরে, রত্রির আধার আলোকিত করার জন্য। মানুষতো আগত মুক্ত প্রবহমান বায়ুতে নি:শ্বাস নেবার জন্য এবং স্বচ্ছ, শীতল ঝর্ণার পানি পান করার জন্য।

সুতরাং এই চারদেয়ালে বন্দি আমি স্বপ্ন দেখি। যেন আমি পাহাড়ের যে দিকটায় সমুদ্রের হাওয়া এসে আছড়ে পড়ে ওখানে বাসা বাধা এক শিকারী পাখি। যেন আমি ঈগলের উড়ন, ভল্লুকের ওঙ্কার। যেন আমি পাহাড়ের পাদদেশ ঘেষে গিয়াছে যে সমুদ্র নালী সেখানে দাড়িয়ে জল খেতে থাকা এক একলা হরিণ। আমি সমুদ্রের গর্জনে মত্ত থাকি, ঝর্ণার স্বচ্ছ জলে মিটাই পিপাসা। গহীন বনে বাধা মৌচাকের ক্রমাগত গুণ-গুণ গানে মত্ত থাকা আর হেটে যাই নিরব বন-প্রান্তর। আমি স্বপ্ন দেখি নিরানী করা ঘাসের স্তুপে বসে, পূর্ণ চাদের আলোয় অথবা তারা খচিত আকাশের নিচে যা সময়ের সূচনা হতে ক্রমাগত স¤প্রসারিত হয়ে যাচ্ছে। আমি রাত্রির নিরবতা উপভোগ করি। আমি দুধ ঘাসের মিষ্টি গন্ধ শুকি। আমি এই নিরবতা আর বিশালতা ছেড়ে আসব না ফিরে যতক্ষণ না ঈশ্বরের উপস্থিতি টের পাই।

না, আগামী কাল আমি এই শহর ছেড়ে দিব, একজন মানুষের ঠিকানা খুজে পাবার জন্য।

12 thoughts on “অন্যজীবনের স্বপ্ন

  1. আমি কি নিরাপত্তার জন্য আত্মা বিক্রয় করব?

    না, আগামী কাল আমি এই শহর ছেড়ে দিব, একজন মানুষের ঠিকানা খুজে পাবার জন্য।

    1. কতদিন পর কোন পোষ্টে প্রথম আপনাকে পেলম!

      আমার দৃষ্টিতে সেরা অংশটুকু কোড করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

  2. আসলেই ভিন্ন রকমের স্বপ্ন! এমন স্বপ্নও মেঝে মেঝে দেখতে হয়। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    1. জি জনাব বড় ভাই, আমিতো প্রায়ই দেখি।

      ধম্যবাদ।

    1. ও মানুষ আর মানুষের বাচ্চারা! কেন এই কোলাহলে হারিয়ে যাও যেখানে হাহাকার পাথরের বিল্ডিংয়ে ঘুরপাক খেতে থাকে, না থাকে চান-সুরুয, না থাকে তারা আর আকাশ?

      এই যখন অবস্থা তখনি পেলাম পাঁচ তারা উপহার। ধন্যবাদ দিয়ে আর টেকো মাথায় তেল দিতে চাই না।

  3. না, আগামী কাল আমি এই শহর ছেড়ে দিব, একজন মানুষের ঠিকানা খুজে পাবার জন্য।
    *অসাধারণ পরিসমাপ্তি….
    বেশ ভালো লেগেছে।
    শুভরাত্রি।

    1. পোষ্টে।মন্তব্য করার জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া।

      শুভ কামনা আপনার প্রতি।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।