আমারও পরাণও যাহা চায়-শেষ পর্ব

10722-lost-love-poems
অনেক দিন আগে থেকেই গভীর রাতে ইরার ঘুম ভেঙ্গে যায়, বিছানায় ছটফট করে। পাশে শুয়ে মোশা ঘুমায়, নাক ডেকে ঘুমায়। ইরা ভেবেছিলো ফিরে আসার পর হয়তো মোশা তাকে ভালোবাসবে, তার কষ্ট বুঝবে, তার সাথে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করবে কিন’ ইরার সে আশা অপূর্ণই রয়ে গেলো অথচ নিয়ে আসার আগে মোশা তাকে কত না স্বপ্নই না দেখিয়েছিলো, আমাদের পঁচিশ বছরের সংসার, কত স্মৃতি, কত আনন্দ-বেদনা মিশিয়ে আছে। হতে পারে কখনো কখনো একটু মনোমালিন্য হয়েছে তাই বলে আমাদের কি সুখের কোনো স্মৃতি নেই? এসো ইরা, আমার সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে মিলে মিশে চলবো।
এই মোশার সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে চলার নমুনা, আমার চোখে ঘুম নেই, দুশ্চিন্তায় ছটফট করছি আর মোশা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।

জয় যেনো ইরাকে ঘুমের মাঝেও লক্ষ্য রাখতো, হয়তো ইরার প্রতিটি নি:শ্বাসও খেয়াল করতো, ইরার সুখ-দুঃখ অনুভব করতো। একদিন গভীর রাতে ইরার ঘুম ভেঙ্গে গেলো, সঙ্গে সঙ্গে জয় চমকে উঠলো, ইরা।
ইরাও চমকে উঠলো, কী হলো তোমার?
না, আমার কিছু হয়নি। তোমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো কেনো? কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছো?
না, এমনিতেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো। একটু পানি খাও, বলে জয় নিজেই এক গ্লাস পানি এনে দিলো।
সেদিন ইরার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া আর জয় তাকে নিজে পানি এনে দেয়াকে ইরার খুব স্বাভাবিক মনে হয়েছিলো কিন্তু আজ গভীর রাতে তার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া আর মোশার নাক ডেকে ঘুমানো দেখে মনে হলো, জয় তার কত আপন ছিলো।

ইরা কয়েকমুহূর্ত মোশার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো, মৃদু কণ্ঠে ডাক দিলো, এই, এই, ওঠো না। আমার ঘুম আসছে না, চলো তো একটু ছাদে যাই।
না, মোশার কোনো সাড়া শব্দ নেই। এবার ইরা মোশাকে মৃদু ধাক্কা দিলো, এই, ওঠো না…
মোশা এবার জোরে একটা ধমক দিলো, ইরা, শোওতো, ঘুমানোর চেষ্টা করো। এতো রাতে কেউ ছাদে যায়। তোমার মাথাটা সত্যিই গেছে। ঘুমাও, বলে মোশা আবার চোখ বন্ধ করলো। কয়েকমুহূর্ত পর আবার সেই নাক ডাকা ঘুম।
ইরার গণ্ডদেশ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে, হায় আল্লাহ আমি, আমি কি হীরা ফেলে কাঁচ তুলে নিলাম?

স্কুলে এসে চেয়ারে বসে ইরা ঝিমোচ্ছে। পাশের চেয়ারে বসেছে তার কলিগ সাহেদা, সে বার বার তাকে টোকা মারছে, এই আপা, এই।
ইরার মুখোমুখি বসেছে শরীফ সাহেব। ভদ্রলোক ইরাকে সবসময় খোঁচা মেরে কথা বলে। ইরার ব্যক্তিগত বিষয়গুলো সবার সামনে তুলে ইরাকে বিব্রতকর অবস’ায় ফেলে, ইরা মার্জিতভাবে অনেকবার ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা না বলার জন্য অনুরোধ করেছে কিন’ তারপরও একটু সুযোগ পেলেই কেউ কথা না বললেও শরীফ সাহেব বলবেনই।
আজ ইরাকে ঝিমাতে দেখে সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে সাহেদাকে লক্ষ্য করে বললেন, ঘুমাতে দেন আপা, ঘুমাতে দেন। আপাকে আজ খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
শরীফ সাহেবের কথা শুনে ইরার মাথায় যেনো রক্ত চেপে গেলো। সে কিছু বলবার জন্য মুখ তুলে তাকাতেই ক্লাসের ঘণ্টা বেজে গেলো।

ইরা হাজিরা খাতা নিয়ে ক্লাসে রোল কল করছে। ইরা ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে খুব প্রিয়। ইরা নিজে যেমন মনোযোগ দিয়ে পড়ায়, ছাত্র-ছাত্রীরাও তেমনি মনোযোগ দিয়ে তার কথা শোনে কিন্তু আজ ইরা ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারছে না। ছাত্র-ছাত্রীরাও ক্লাসে অমনোযোগী হয়ে পড়েছে। পরস্পরের সাথে কথা বলছে, হৈ চৈ করছে।
সাধারণত ইরার এমন হয় না, ইরা লক্ষ্য করেছে যেদিনই এমন হয়েছে, তার মন ছটফট করেছে, অমনোযোগী হয়ে পড়েছে, সেদিনই জয়ের কোনো না কোনো দু:সংবাদ এসেছে। ক’দিন থেকে জয়ের কোনো খবর নেয়া হয়নি আর জরিফুলকে তো সে ফোন করতে নিষেধই করেছে, ইসস কেনো যে জরিফুলকে ফোন করতে নিষেধ করলাম, জয়ের কোনোকিছু হলে আমি কীভাবে জানবো? ক্লাস শেষ হলে একবার জরিফুলকে ফোন দিতে হবে, আল্লাহ আমার জয়কে তুমি ভালো রেখো।

ইরার ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রীদের গুঞ্জন শুনে পাশের রুম থেকে সেই শরীফ সাহেব এলেন, আপা, স্টুডেন্টরা এতো কথা বলছে আপনি কিছু বলছেন না?
ইরা চমকে উঠলো, ও হ্যাঁ।
শরীফ সাহেব নিজে টেবিলে জোরে শব্দ করে বললেন, এই যে ছেলেমেয়েরা ক্লাসে এতো কথা বলছো কেনো?
ছাত্র-ছাত্রীরা চুপ করলো।
শরীফ সাহেব বললেন, ছেলেমেয়েদের শাসন করবেন আপা আর ক্লাসে মনোযোগী হবেন। টিচার এ্যাফসেন্ট মাইন্ড হলে স্টুডেন্টরা তো গোলমাল করবেই।
ইরা আবার ক্লাসে মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করলো কিন’ কিছুতেই মন ফেরাতে পারলো না।
ইরার মোবাইল ফোন বেজে উঠলো।
জরিফুল ফোন করেছে, ইরা তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করলো, হ্যালো।
হ্যালো ম্যাডাম।
ইরা কয়েকমুহূর্ত কানের কাছে ফোন ধরে রাখলো। চোখের সামনে পৃথিবীটা ওলট-পালট হয়ে গেলো, দু’ঠোট মৃদু ফাঁক হয়ে বুক চিরে হয়ে একটা আর্তনাদ বেরিয়ে এলো, জয়।
তারপর মোবাইল ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেলো।

সমাপ্ত।
এই ছোটগল্পটি প্রথম থেকে পড়তে ক্লিক করুন:আমারও পরাণও যাহা চায়-০১
আমার সব লেখা একসাথে পড়তে ক্লিক করুন:আমার ঠিকানা

জিল্লুর রহমান সম্পর্কে

চোখের সামনে যেকোন অসঙ্গতি মনের মধ্যে দাগ কাটতো, কিশোর মন প্রতিবাদী হয়ে উঠতো। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটতো কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে। ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে, নির্যাতন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কবিতা। কবিতার পাশাপাশি সামাজিক অসঙ্গতি নিয়ে শুরু হলো ছোটগল্প, উপন্যাস লেখা। একে একে প্রকাশিত হতে থাকলো কাব্যগ্রন্থ, উপন্যাস। প্রকাশিত হলো অমর একুশে বইমেলা-২০১৬ পর্যন্ত ০১টি কাব্যগ্রন্থ, ১৭ টি উপন্যাস এবং ০১ টি ধারাবাহিক উপন্যাসের ০৩ খণ্ড। গ্রন্থ আকারে প্রকাশের পাশাপাশি লেখা ছড়িয়ে পড়ল অনলাইনেও। লেখার শ্লোগানের মতো প্রতিটি উপন্যাসই যেন সামাজিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি। সর্বশেষ প্রতিচ্ছবিটি প্রকাশিত হয় অমর একুশে বইমেলা-২০১৭।

4 thoughts on “আমারও পরাণও যাহা চায়-শেষ পর্ব

  1. আসসালামু আলাইকুম।

    এই ধাঁচের গল্প গুলো আপাতত আলাদা রেখে তাহার চাইতে অন্যকোন বিষয়ের যেমন হাসির গল্প পোষ্ট করুন, আমরা পড়ি একটু রিলাক্স হই। বলুন তো দেখি ইচ্ছেপূরণ কার লেখা গল্প?

    খোদা হাফিজ।

  2. জয় এবং ইরা’র প্রেম আখ্যান এর আমারও পরাণও যাহা চায় শিরোনামের লিখন শেষ হলেও প্রত্যাশা থাকবে বাকি অংশ গুলোন পড়ার সুযোগ করে দেবার জন্য।

    সালাম এবং শুভেচ্ছা প্রিয় জিল্লুর রহমান ভাই। শুভরাত্রি।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।