কাল পরীর সমাধি-৭/৮

Lion Roaring

১৩।
মালাইকা চলছে তো চলছেই। চাঁদ যখন মাঝ আকাশে এলো তখন এক মুহূর্তের জন্য থামল। আবেল কি সময় মত বের হতে পেরেছে? না, থামার সময় নেই। চলতে চলতে এক সময় আরযো থেকে বনের মধ্যে দিয়ে যেখানে মেঠো পথ কোসি গ্রামে এসে মিশেছে ক্লান্ত হয়ে সেখানে এসে পৌঁছল। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল চাঁদ পশ্চিম আকাশের মাঝা মাঝি এসেছে। আশেপাশে এদিক ওদিক দেখল কিন্তু কোথাও তার কেরেল আবেলকে দেখতে পেল না। পথের ধারে একটা গাছের নিচে বসে কোমরে ছুরির অস্তিত্ব দেখে পরনের পোষাক দিয়ে মুখের ঘাম মুছে নিল। হাতের বর্শা হাতেই আছে। চাঁদ আরও হেলে পরেছে কিন্তু তার আবেল আসছে না কেন? তবে কি ও আসেনি? না না এ হতেই পারে না! এত দেরি হচ্ছে কেন? এমন হবার কথা নয়! পথে কি কোন বিপদ হয়েছে? না না, তার আবেলের কোন বিপদ হতে পারে না। অনেকক্ষণ বসে নানা কিছু ভাবল। চাঁদ আরও পশ্চিমে ঢলে পড়েছে ভোর হতে খুব বেশি দেরি নেই।

কি করব এখন? অনেক কিছু ভেবে উঠে দাঁড়াল। কোমরের ছুরিটা ডান হাতে নিল বাম হাতে বর্শা। আস্তে আস্তে বনের পথে পা বাড়াল। এদিকটায় সমতল ভূমি, একটু দূরে দূরে বড় বড় গাছ আর ছোট ছোট কিছু বুনো ঝোপ। অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। দেখতে দেখতে অনেকটা পথ চলে এসেছে, সামনে এবং আশেপাশে দুই একটা টিলা দেখা যাচ্ছে। চোখ, নাক, কান সতর্ক রেখে মালাইকা এগিয়ে যাচ্ছে। একটা টিলার ঢাল বেয়ে উপরে উঠছে। টিলার উপরে উঠে বনে বসবাস কারিদের অভ্যাস মত চারিদিকে দেখল। সবই ঠিক আছে আশেপাশে কিছু নেই। আবার এগিয়ে যাচ্ছে। একটা টিলা পার হয়ে এসেছে কিন্তু এখনও আবেলের দেখা নেই। কোথায় গেল? ভাবতে ভাবতে লক্ষ করেনি তার পিছনে স্বয়ং রাজা তাকে অনুসরণ করছে। রাজারা এভাবেই নিঃশব্দে শিকারের পিছনে অনুসরণ করে। সামনের টিলার উপরে উঠে পাশের একটা বাবলা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক দেখে নিল।

পিছন থেকে বাতাস আসছে। সবগুলা ইন্দ্রিয় সজাগ, পিছনে ঘুরে দাঁড়াল। কেমন যেন গন্ধ আসছে! হ্যাঁ তাইতো, রাজা মশাই! যে পথ পেরিয়ে এসেছে সেদিকে তাকাতেই দেখল একটু দূরে রাজা মশাই দাঁড়িয়ে। পিছনে পিছনে আসছিল ওকে থামতে দেখে ওটাও থেমে গেল। সঙ্গে সঙ্গে হাতের দুই অস্ত্র নিয়ে মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হলো। কি করবে এখন? কাটা বাবলা গাছে ওঠা যাবে না, বোঝাই কাটা। ক্ষুধার্ত রাজা মশাই অনেকক্ষণ এক ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে, ঘাড়ের কেশর ফুলে উঠেছে। শিকার ধরার জন্য প্রস্তুত। এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে আর মালাইকাও তার অস্ত্র গুলি শক্ত হাতে ধরে প্রস্তুত। দ্রুত গতিতে শ্বাস প্রশ্বাস চলছে, দুরন্ত গতিতে বুক ওঠা নামা করছে, কপাল বেয়ে ফোটা ফোটা ঘাম ঝরছে। জীবন মরণের লড়াই সামনে অপেক্ষা করছে। বন দেবতার নাম স্মরণ করে মন্ত্র পড়ছে। ভোরের আলো ফুটে উঠতে চাইছে। রাজা মশাই আরও একটু কাছে এসে আবার দাঁড়াল। দুইজনেই চোখে চোখে তাকিয়ে আছে। কে আগে কাকে আক্রমণ করবে! অনেকক্ষণ এভাবেই কেটে গেল। মালাইকা কোন অবস্থাতেই আগে আক্রমণ করবে না। ওর আক্রমণের অপেক্ষায় প্রস্তুত। ও লাফ দেয়ার সাথে সাথে ডান হাত সহ ছুড়িটা আস্ত মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দিবে, সম্ভব হলে বর্শাটা গলায় গেঁথে দিবে তারপরে যা হবার হবে।

দম বন্ধ করা মুহূর্ত কাটছে কিন্তু কেও কাওকে আক্রমণ করছে না। ওর দৃষ্টি অন্য দিকে ফেরাবার কোন পথ নেই। মালাইকা একটু এদিক সেদিক করলে বা অমনোযোগী হলে সাথে সাথেই লাফ দিবে! ভয়ংকর অপেক্ষায় দুই প্রাণী শুধু আক্রমণের ক্ষণ গুনছে। যে কোন মুহূর্তেই ঘটবে একটা ভয়ংকর কাণ্ড। হঠাৎ পিছনের পা দুইটা একটু নিচু হতেই মালাইকা মাথাটা বাম দিকে কাত করে ডান হাতের ছুরি বাড়িয়ে দিল আর ওমনিই দেখল ওর ডান হাত রাজা মশাইয়ের মুখের ভিতর ঢুকে গেল সঙ্গে সঙ্গে ছুরিটা ছেড়ে দিয়ে বাম হাতের বর্শাটা দিয়ে গলায় এক পার বসিয়ে দিল, সামনের থাবার ধাক্কা লেগে মালাইকা পরে যেত কিন্তু বর্শাটা গভীর ভাবে গেঁথে গেছে এবং বর্শার এক প্রান্ত মালাইকার হাতে ধরা রয়েছে বলে পড়ল না তবে এক পায়ের থাবা বুকে গেঁথে এক তাল মাংস ছিঁড়ে নিয়ে গেল। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে টেনে বর্শা ছাড়িয়ে নিয়ে আবার গেঁথে দিল পেটের ভিতরে। সিংহটা মুখের ভিতরে বেধা ছুরি নিয়ে এবং মুখের ভিতরে গলায় আঘাত পেয়ে বিকট এক হুংকার দিয়েই পড়ে গেল। যা হবার মুহূর্তের মধ্যেই হয়ে গেল। মালাইকা লাফ দিয়ে একটু দূরে দাঁড়াল এবং আহত সিংহ আবার লাফ দিয়ে উঠে ওর দিকে আর এক লাফ দিল কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে মালাইকা সরে দাঁড়াল আর ওটা একটু দূরে আছড়ে পড়ল। এত কিছু করেও মালাইকা রক্ষা পেল না। পিছনেই যে রানী আসছে সেটা মালাইকার চোখে পড়েনি। রানী এসে তার সাথীকে এভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় দেখেই এক লাফ দিয়ে মালাইকার ডান কাঁধে কামড়ে ধরে দৌড়ে চলল। পা গুলি মাটিতে হেঁচড়ে যাচ্ছে। [চলবে]

8 thoughts on “কাল পরীর সমাধি-৭/৮

  1. মনের মধ্যে মালাইকার জন্য আতংক বিঁধে রইলো।
    শেষ পর্বে দেখতে চাই কি হয় !!

    1. মালাইকা আর আবেলের এই পরিনতী আমি চাইনি কিন্তু কেমনে যেন কি হয়ে গেল। লেখাটা শেষ হবার পর আমি অন্তত সপ্তাহখানিক দারূন একটা অস্বস্তি আর অপরাধবোধে ভুগছিলাম। নিজের তৈরী চরিত্রের এমনটা আমি মন থেকে মেনে নিতে পারিনি।

  2. কি ভয়াবহ। কল্পনা করেই শিউড়ে উঠছি।
    শেষ পর্বের অপেক্ষায়।

    1. আফ্রিকার অধিকাংশ দেশে এটাই স্বাভাবিক জীবন, অবশ্য আজকাল অনেকটা সামলে নিয়েছে তবে এখনও গভীর জঙ্গলের আশেপাশের জনজীবন এমনই আছে।

  3. ভিন্ন পরিবেশের পটভূমিতে লেখা গল্প পড়ে লেখকের প্রশংসা করতেই হয়। অনেক কিছু যেমন জেনেছি তেমনি সমস্ত গল্প জুড়েই টানটান উত্তেজনা, মনে হয় এক বসায় পড়ে ফেলি।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।