সব কিছু ঠিক আছে ঠিক নেই শুধু বেতনটা
তিন মাসে এক মাস দেয় তবু ছয় মাস পরে।
তাই বুঝি ভুলে যাই চাকরিটা করেছিলাম কবে
গিন্নী বলে ঘরে এনো চাল মাছ ভাব যদি তবে।
আরও কত ভুলি নিজের নাম সহ নামটা ছেলের
সবই কি দোষ আমার নেই কিছু ভুলের?
বস বলে অফিস হবে ঠিক, বেতন কি দেইনা আমি
পেটে কত মনে কত ক্ষুধা জমে জানে অন্তর্যামী।
বেতনের কথা আনেনা মুখে ভাবেননা তারা
কেরানিরা পায় কিনা খেতে, কেমনে জোগায় ভাড়া!
এইভাবে চলছেতো চলছে দিন মাস বছর ব্যাপী
সাহেব ভাবে যা করার করুক ওরা আমিতো হ্যাপী।।
মোঃ খালিদ উমর এর সকল পোস্ট
নাবিক বধূ
ওগো মোর সুনীল সাগর
থৈ থৈ জল তরঙ্গ কতনা রঙ্গ
ভেসে বেড়ায় বিনা সংগ
তোমার বুকে
সুখে আর দুখে।
সুদূর প্রান্তে তোমাতে আকাশে
গেছে মিশে
প্রেয়সী থাকে যেমন পথ চেয়ে
বিরহ গান গেয়ে।
তুমিও গেছ মিশে আকাশের বুকে
দেখেছ কি বিরহী কেমনে ধুকে?
তরতর বেগে তরণী পরে
আসবে ঘরে
আমার পাশে তোমায় ছেড়ে
প্রিয়তম ফিরে।
পরাবে গলে ঊর্মি মালা গেঁথে
সেদিনও সে বলেছিল দাঁড়িয়ে পথে।
বরষার মেঘ
রিমঝিম রিমঝিম বাদল দিনে তোমার কথা পড়ে মনে
কোথায় আছ তুমি আজ এমনি বরষা মুখর দিনে।
তোমার পরশ মাখা স্বপ্ন আমায় করেছে মগ্ন
দিন কাটে ঘরে একা তোমার সুরে গান গেয়ে।
বিদায় নিয়েছে বসন্ত এসেছে বরষা তবু কেন
কাটে না যে দিন গুলি তোমার পথ পানে চেয়ে।
বিরহী
চাঁদ কেন হারাল ওই দূর বনে
কোন বিরহী কাঁদে এমন দিনে একা নির্জনে।
সহসা প্রশ্ন জাগে তাকে দেখেছি কি আগে
নিশীথে কেন গোপন মনে তারি ছবি জাগে
খুঁজে ফিরি মিছে তাকে কুয়াশা ঢাকা মনো বনে।
চৈতী দুপুরে তরুলতার বনে
ঝোপের ধারে জলায় ফোটা কচুরি ফুল
তুলিতেছিল সে আঁচল ভরে একা আনমনে
ছল ছল আঁখি দুটি ছিল ব্যাকুল।
বুঝি না সে এখনও রয়েছে
বনের মাঝে নাকি মনের মাঝে
ক্ষণে ক্ষণে ছায়া ভাসে অশ্রু ভেজা সাঁঝে
হৃদয়ের গভীরে লুকানো আঁখি তারে খুঁজে
স্মৃতির বাতায়নে।
মেঘ মদিরা
আজি মেঘ গরজিছে শ্রাবণ আকাশে
গুরু গুরু ডাকে দেয়া সুবাসিত বাতাসে।।
ঘনঘটা বেজে শোন পিয়ালের বনে
উথলে বিরহ জ্বালা প্রিয়ার মনে
এ লগনে তারে বলা যায় কি আভাসে
যদি না বাতাস বহে বকুল সুবাসে।।
ধীরে ধীরে বরষণে মন নিশীথে
পুলকিত হরষে চায় তারে দেখিতে
না দেখিয়া তারে ভাবি নিরলে বসে
সেও বুঝি ডাকে মোরে এমনি ফুল বাসে।।
হামিদ সাহেব
স্ত্রীর নানারকম কটুবাক্য, গালাগালি, নির্যাতন সহ্য করিতে না পারিয়া হামিদ সাহেব গৃহ ত্যাগ করিলেন। সারাদিন শুধু ফোঁস ফোঁস ঘুম আর ঘুম সংসারের একতা কাজও তাকে দিয়ে করার উপায় নাই, যাবে কোথায় যাক। রাত হলেই সুরুসুর করে এসে হাজির হবে।
না, ঘন্টা, রা্ত, দিন, সপ্তাহ পেরিয়ে যাবার পরেও যখন হামিদ সাহেবের প্রত্যাবর্তনের কোন চিহ্ন দেখা গেলনা তখন গিন্নী অবলা বেগম মনে মনে কিঞ্চিত আতঙ্গকগ্রস্ত হইল বটে; শত হইলেও স্বামী কিনা। কতক্ষণ রাগ করিয়া থাকা যায়। চারিদিকে ঢাক ঢোল পিটাইয়া ঘোষনা করাইয়া দিল ৪০ উর্ধ্ব হালকা পাতলা গড়নের ফর্সা গায়ের রঙ্গের হামিদ সাহেব নিখোঁজ, যে তাহার খবর দিতে পারিবে তাহাকে পুরস্কৃত করা হবে।
চতুর্দিক হইতে যে যাকে পায় তারই মাজায় কিংবা হাতে রশি বাধিয়া টানিতে টানিতে হামিদ গিন্নীর দরজায় কড়া নাড়ে। হামিদ সাহেবকে পাওয়া গিয়াছে এইতো দেখেন। ওমা বলে কি? ইনি হামিদ সাহেব নন। যান যান আসল মানুষকে খুঁজিয়া আনুন।
পরেরদিন এক লোক সত্যি সত্যি ইয়া গোঁফ আর ভুড়ি সজ্জিত গায়ে গতরে বিশাল বপুর হাফ প্যান্ট পরা সারা গায়ে কালিঝুলি মাখানো এক লোককে আনিয়া দরজায় কড়া নাড়তে হামিদ সাহেবের ছোট ছেলে দরজা খুলিয়া জিজ্ঞাসা করিল কি চাই। আগন্তুক রশির এক প্রান্ত বালকের দিকে আগাইয়া দিয়া কহিল এই যে বাবা হামিদ সাহেবকে অনেক কষ্ট করিয়া ধরিয়া আনিয়াছি নাও ধর।
দাঁড়ান আমি মাকে ডাকিয়া আনিতেছি। বালক ভিতর বাটিতে গিয়া আনন্দ সহকারে মাকে কহিল মা শীঘ্র আইস হামিদ সাহেবকে পাওয়া গিয়াছে। মা পুলকিত চিত্তে দরজায় আসিয়া এই বপু দেখিয়া হতভম্ভ হইয়া পুত্রের কান ধরিয়া গালে এক চপেটাঘাত করিয়া কহিল হারামজাদা নিজের বাপকেও চিনিস না?
কত যে ছিল গান
অনেক দিনের আশা ছিল তোমায় দেখিবার
মনের মুকুরে দীপ জ্বেলে ভালবাসিবার।।
আসা যাওয়ার পথের পাশে ক্লান্ত আঁখি মেলে
বসে আছি উদাস মনে সকল ভাবনা ফেলে।।
তোমার দেখা পাই না বলে মেঘের ছায়া পড়ে
বেলা শেষে চাঁদের আলো নিভে গেল অবশেষে।।
যুগের মালী
কর্কট ক্রান্তি মকর ক্রান্তি ছাড়িয়ে
উত্তর থেকে দক্ষিণ মেরু, বিষুব রেখা পেরিয়ে
অশান্ত ঝড় বইছে পৃথিবী জুড়ে
লক্ষ জনের অশ্রু ঝরিয়ে বিষাদের সুরে।
এটম নাপাম নিউক্লিয়ার হাইড্রোজেন বোমা
শান্তি সোহাগ রাখবে না জমা।
পাল্লা ধরেছে সকলে খেলবে মরণ খেলা
বসে না যেন বকুল তলে বসন্ত মেলা।
মা কাঁদে, শিশু কাঁদে, কাঁদে ধরণী,
অথৈ জলে ডুবে কাঁদে শান্তির তরণী।
শান্তির বাণী বন্দি করেছে সভা সম্মেলন
আর তাপানকুল ঘরে।
স্কাড রকেট ক্ষেপণাস্ত্র মারণাস্ত্র ছুড়ে বক্ষের পরে
ভিয়েতনাম আফগানিস্তান ইরাক ইরান আর লিবিয়ায়
খেলিছে ধ্বংসের খেলা।
যেন ফাল্গুনে বয়েছে কাল বৈশাখীর তাণ্ডবলীলা
ক্ষমতার দ্বন্দ্বে এনেছে লাঞ্ছনা
গঞ্জনা ক্ষুধা মৃত্যু যন্ত্রণা,
নিভেছে বাসনা প্রদীপ এবং প্রতিবাদের মন্ত্রণা।
সর্বগ্রাসী পিপাসায় শুষ্ক হলো পুষ্প বিতান
কোথায় সে যুগের মালী রাখে তার খতিয়ান।
সুদূরিকা
রাতের কোলে ঘুমায় চাঁদ বাঁকা
আকাশের বুকে যেন স্বপ্নের ছবি আঁকা।।
হৃদয় রানী এলো দোলাতে আমায়
কি যেন বলিতে চায় চোখের ভাষায়
আধ খোলা জানালায় সেই সুদূরিকা।।
রাতের চাঁদিনী সে ডাকে ইশারায়
মালা হাতে কাছে কেন আসে না যে হায়
মরীচিকা সে যেন সুদূর নীহারিকা।।
আমি ঢাকা মহানগরী
এই যে আজকে আপনারা বসবাস করছেন আমার বুকে এই আমি ঢাকা মহানগরী। এক সময় কিন্তু আমি এত বড় ছিলাম না। নবাবদের আমলে মাত্র কয়েকজন নবাব বাড়ির নায়েব, গোমস্তা আর খানসামারা এখানে বসবাস করত এবং তাদের সেবা যত্নের জন্য কামার, কুমার, নাপিত ধোপা, স্বর্ণকার, তাঁতি, গোয়ালা, ময়রা এমনি যাদের প্রয়োজন তেমনি কয়েক ঘর জনবসতি ছিল। সে অনেকদিন আগের কথা, প্রায় চারশো পঞ্চাশ বছর হবে। আমার চারিদিকে ছিল খাল বিল নদী নালা এমনি সব কিছু, হ্যাঁ হ্যাঁ, ধান ক্ষেতও ছিল। ওই যে বুড়িগঙ্গা নদী, সে যে কি সুন্দর নদী ছিল তা বলার নেই। নবাব বাড়ির আশপাশ থেকে এসে রাজহাঁস গুলি যখন নদীর বুকে সাতার কাটত কি সুন্দর ছিল সে দৃশ্য। পানসী নৌকা, নবাবদের বজরা ছোপাত ছোপাত বৈঠা তুলে বেয়ে যেত সে দৃশ্য ছিল দেখার মত। এগুলি আবার কখনও পাল তুলে যেত তখন আরও বেশি সুন্দর লাগত, নানা রঙ বেরঙের পাল দেখতে যে কি সুন্দর ছিল তা আর বলার নয়। বিকেল বেলা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে কতজনে এই দৃশ্য দেখত! বজরা বা পানসী থেকে ঘাটে নেমে বেশিরভাগই যেত ঘোরার গাড়ি করে। সাধারণ মানুষেরা যেত এক্কা গাড়ি করে। গরুর গাড়িও ছিল আবার হাতে টানা রিকশাও ছিল অনেক। নবাব বাড়ির মেয়েরা তাতি বাজারে গয়না বানাতে যেত, তারা বেশির ভাগই আসত ঘোরার গাড়িতে চেপে। অল্প কিছু পাকা রাস্তা ছিল। নবাব বাড়ির সৈন্যরা যখন ওই পাকা রাস্তায় কুচকাওয়াজ করে যেত ভারি সুন্দর লাগত। লোকজনে চেয়ে দেখত তাদের। সবারই একরকম পোষাক, এক রকম তরবারি হাতে, মাথায় এক রকম পাগড়ী। সন্ধ্যার পরে রাস্তার পাশে কেরোসিনের বাতি জ্বালিয়ে দিত। সে সব দিন ছিল সুখের দিন শান্তির দিন। মানুষ কত ভাবেই যে উৎসব করত যেমন শবে বরাত, রমজান এবং তারপরে ঈদ, দুর্গা পূজা, কালি পূজা, লক্ষ্মী পূজা, সরস্বতী পূজা। এ ছাড়া বার মাসে তের পাবন লেগেই ছিল। নবান্ন উৎসব, বৈশাখী উৎসব, বসন্ত উৎসব, নৌকা বাইচ এমনি কত কি! সুন্দর সুন্দর পোষাক পরে লোক জনেরা আমার বুকের উপর দিয়ে হেটে বেড়াত বাচ্চারা কত খেলাধুলা করত! কি আনন্দ ছিল! দেশের নানা জায়গা থেকে নৌকা করে কত মালামাল লোকজন আসত যেত। সদরঘাটে সবসময় হৈ হুল্লোড় লেগেই থাকত।
একদিন দেখলাম কোথায় থেকে ফিরিঙ্গী না কি যেন বলে তারা এসে হাজির। ইংরেজিতে ট্যাঁস টুস করে কথা বলত। আস্তে আস্তে তাদের অনেক লোকজন এসে আমার বুকে ডেরা বাধতে শুরু করল। সে যে কি ভয়ংকর দিন গেছে সে কথা মনে হলে আজও আমার বুক কেপে উঠে। দেশের মানুষ যারা ওদের কথামত চাষ বাস কাজ কর্ম করত না তাদের ধরে এনে চাবুক দিয়ে যে কি মারাই মারত সে সব চাবুক দেখলেও ভয় হতো। শুরু হলো রক্তের বন্যা, এত রক্ত আমি এর আগে কখনও দেখিনি। এইতো শুরু হলো অত্যাচার। তবে ওই ফিরিঙ্গীরা কিছু ভাল কাজ করেছিল। আমার উপর দিয়ে বেশ কিছু রাস্তা বানিয়েছিল, স্কুল কলেজ বানিয়েছিল। ওদের দেখাদেখি অভিজাত এবং ধনী পরিবারের লোকজনেরা মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ও বানিয়েছিল। তারপরের ইতিহাস বড়ই করুণ। যখন তাদের অত্যাচার চরমে পৌঁছল তখন এদেশের যুবকেরা একে একে জেগে উঠল। অনেক চোরাগোপ্তা আক্রমণ, শাস্তি আরও কত কি হলো! অনেক দিন পরে দেখলাম ওই ব্যটা ফিরিঙ্গীরা লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে।
কিন্তু ওরা পালালে কি হবে ওদের জায়গায় যারা এলো তারা আরও ভয়ংকর। পাঞ্জাবী না কি যেন বলত। কেমন করে কথা বলত। একদিন শুনলাম আমাদের এখান থেকে ওরা সমস্ত সম্পদ নিয়ে অনেক দূরে নাকি ওদের দেশ সেখানে নিয়ে যাচ্ছে। তারপরে ওরা আবার এক হুকুম জারি করল, কেও বাংলায় কথা বলতে পারবে না। আচ্ছা বলুনতো, বাংলায় কথা বলা যাবে না এটা আবার কেমন কথা? জন্ম থেকে যে ভাষায় কথা বলে আসছে সেই কথা কি ইচ্ছে করলেই বন্ধ করা যায়? এইতো শুরু হলো এক যুদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ত তারা সহ সকল ছাত্র ছাত্রী মিলে এর প্রতিবাদ করল আর ফলাফল যা হবার তাই হলো। পাঞ্জাবীরা নির্বিচারে গুলি শুরু করল। কতজন মারা গেল। বয়ে গেল রক্ত স্রোত। তাদের কথা মনে রাখার জন্য শহীদ মিনার হলো। আজও তাদের কথা কেও ভুলেনি আর কোনদিন ভুলবেও না। তাদের সেই অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে আজ বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়। সবই হয়েছে আমার বুকের উপরে। এমনি করে নানা অত্যাচার যখন সীমা ছাড়িয়ে গেল তখন শেখ মজিবর রহমান দল সংগঠন করা শুরু করল। ক্রমে সে যখন শক্তিমান হলো তখন একদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দিল আর অমনিই সারা দেশবাসী তার আহবানে সারা দিয়ে যুদ্ধ শুরু করল। যুবকেরা ট্রেনিঙের জন্য চলে গেল পাশের দেশে। ওদিকে ওই পাঞ্জাবীরা শুরু করল বাঙালি নিধন অভিযান। আমার উপরে ছাত্র ছাত্রীদের যত হল হোস্টেল, পুলিশ নিবাস ছিল সে গুলিসহ পথে ঘাটে শুরু করল ট্যাংক মেশিন গান দিয়ে গুলি করা। কত মানুষ যে মরল তার কোন হিসাব নেই। অনুমান করে বলছি, কয়েক লক্ষতো হবেই। যারা সুযোগ পেল তারা আমার আশ্রয় ছেড়ে চলে গেল, যার যেখানে সুবিধা। সেদিন আমার যে কি কান্না পেয়েছিল! কিন্তু আমি কাওকে কিছু বলতে পারিনি। আমিই তাদের বলে দিলাম তোমরা যে যেখানে পার চলে যাও। আমি আর তোমাদের বুকে আগলে রাখতে পারছি না, আমার উপরে হায়েনার আসর হয়েছে। আমি নিজেই বিপদগ্রস্ত। কয়েকদিন আগে থেকেই ওদের সেনা দলে আমার বুক ভারি করে ফেলেছে। ওদের প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল পাপে ভরা। ওরা যেমন খুশি তেমনি চলা ফেরা করছে। আমার বুকে বয়ে যাচ্ছে রক্ত নদী। যাকে খুশি তাকে মারছে সম্পদ লুটে নিচ্ছে কেও দেখার নেই কেউ প্রতিবাদ করার নেই। সকল বিদেশীদের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারী করে দিল। সংবাদ সংগ্রহের জন্যে কেও আসতে পারেনি। আমার বুকে বাস করে আমার আলো বাতাস জল নিয়ে যারা বেড়ে উঠেছে তাদের কিছু অমানুষ আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করে ওই পাঞ্জাবীদের সাথে হাত মেলাল। আহ! কত অনাচার অবিচার জুলুমই যে ওরা করেছে তা বলতে আমার কষ্ট হচ্ছে। সারা শহর আতংকে ছিল। যখন তখন গোলাগুলি হয়েছে, তখন এক বিভীষিকাময় দিন গেছে। কোন ভাবে কাজকর্ম সেরেই মানুষ ঘরে ফিরে এসেছে। কাজে বের হবার পর বাড়ির মানুষ ভাবতেও পারেনি সে আবার সুস্থ ভাবে বাড়ি ফিরে আসতে পারবে।
এভাবেই চলে গেল নয়টা মাস। একদিন পাশের দেশ থেকে সৈন্য এলো আর তাদের কাছে এখানে যারা অত্যাচার করছিল তাদের প্রধান আত্মসমর্পণ করল। এই দেশ স্বাধীন হলো। আমার ইতিহাসের আর এক অধ্যায় শুরু হলো। আমার বুকে বসে কত পরিকল্পনা হয়েছে, কত আলাপ আলোচনা হয়েছে, কত আশা উদ্দীপনা হয়েছে তা মনে হলে আজ মনটা ভরে যায়। শুরু হলো আমার বুকে আর এক খেলা। আমার বুকে নতুন বড় বড় রাস্তা ঘাট তৈরি হলো, কত সুন্দর সুন্দর দালান কোঠায় ভরে গেল। গন ভবন হলো, বঙ্গ ভবন হলো, সংসদ ভবন হলো। এমনি আকাশ ছোঁয়া কত দালান হলো। আমাকে এদেশের রাজধানী বানানো হলো। আমাকে মহানগরীর মর্যাদা দেয়া হলো। একটুখানি জায়গার কত দাম হলো, আমার আকার পরিধি কত বেড়ে গেল। কয়েক হাজার থেকে এখন আমার বুকে এক কোটি মানুষ বসবাস করছে। এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে যেতে অনেক সময় লেগে যায়। কত রঙ বেরঙের গাড়ি চলছে। গাড়ি চাপা পড়ে কত মানুষ প্রতিদিন মরছে কে তার হিসাব রাখে আর কেই বা তার বিচার করে? গাড়িতে গাড়িতে আমার সমস্ত রাস্তা ভরে আছে। শুধু গাড়িতে পা দিয়ে দিয়ে যাত্রা বাড়ি থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যেতে পারে। মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্র্যাফিক জ্যামে বসে থাকে। কাজের কত ক্ষতি হয় কত তেল গ্যাসের অপচয় হয় কেও দেখে না। রাজা মহারাজারা এদিক ওদিক যাবার সময় শহর বাসির সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে পথে বসিয়ে রেখে কত আনন্দ পায়। দেখে আমার প্রাণ জুড়িয়ে যায়। আস্তে আস্তে দেখছি যেই আমার বুকে আসে সেই হনুমান হয়ে যায়। আমার মনে কোন শান্তি পাচ্ছি না। কেও আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। কত মিছিল দেখেছি, কতি শ্লোগান শুনছি, ভিন্ন মিছিলের ভিন্ন ভিন্ন শ্লোগান। হরেক রকম ভাষা, হরেক রকম উদ্দেশ্য, কত কি যে হচ্ছে! এতদিন ভিন দেশিরা এখানে অন্যায় অনাচার করেছে এখন শুরু হয়েছে নিজেদের অনাচার। এত অনাচার আমি কি করে সহ্য করি? জনসাধারণের সংসদ ভবনে বসে যাকে তাকে অশ্রাব্য গালাগালি করছে। জুতা ছোড়া ছুরি করছে! ছি! ছি! কি লজ্জা!
আমার বুকের উপর দিয়ে গাড়ি হাঁকিয়ে যেয়ে কত পাপ করছে। বিধাতা এই পাপ কেমনে সইবে ভেবে অস্থির হই। মানুষ খুন করা, ধর্ষণ করাতো এখন মামুলি ব্যাপার এতে আর এখন আমি আঁতকে উঠি না। কত বিচিত্র ভাবে নৃশংস উপায়ে মানুষ খুন করছে, গুম করছে। আহা! তাদের পরিবারের কি আহাজারি! সে আর আমি সইতে পারছি না! মানুষ এত নৃশংস এত জঘন্য পিশাচ কি করে হয় ভেবে পাই না। শুনেছি বনের হিংস্র পশুরাও নাকি এমন হয় না। মেয়েরা যে ভাবে চলাফেরা করে তাতে আমার ভারি লজ্জা লাগে, আমি ওদের দিকে তাকাতে পারি না। পুরুষেরা সন্ধ্যার পর ওত পেতে থাকে কখন মেয়েরা আসবে! দেহ ব্যবসা করার জন্য কত বড় বড় লোকেরা তাদের মাইনে দিয়ে ফ্ল্যাট ভাড়া করে রাখে আবার ওদিকে মঞ্চে উঠে দামি দামি মন ভেজানো কথা বলে। যে সব মেয়েরা স্বাধীন ভাবে এই ব্যবসা করে তারা এখন আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে না তারা অভিজাত এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে নেয়।
কত জন্ম হয়েছে কত মৃত্যু হয়েছে এই আমার বুকে। এক দিকে আনন্দ হাসি উচ্ছ্বাস আবার আর এক দিকে শোক কান্না। প্রতিদিন কত লঞ্চ, জাহাজ, বাস, কোচ, প্লেন ছেড়ে যায় আবার কত আসে কেও তার হিসেব জানে না। আমার বুকে একটু আশ্রয়ের জন্য প্রতিদিন দূর দূরান্তের গ্রাম থেকে কত মানুষ আসছে, রোজগারের জন্য একটু ভাল থাকার জন্য। রাস্তার ফুটপাথে মানুষ গিজগিজ করে, কিন্তু আমি সবার মনের আশা পূরণ করতে পারছি না। রাস্তায় কত বাস চলে কিন্তু তবুও মানুষের ভিড় কমে না। এত মানুষ কেন আসে? মানুষের লোভ লালসা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে, কেও আর অল্পতে সন্তুষ্ট হতে পারছে না। মানুষের অভিলাষ এত উঁচু কেন হলো?
চকচকে কর্পোরেট কালচার নামে বৈধ উপায়ে নির্লজ্জের মত লোক ঠকাবার, কর্মচারীদের ঠকাবার জন্য নিখুঁত ব্যবস্থা আমদানি হয়েছে। শ্রমিক কর্মচারীদের ঠকিয়ে, এ ওকে ঠকিয়ে ফাকি দিয়ে মেরে কেটে কতজনে শত শত কোটি টাকা জমা করছে, টাকার পাহাড় বানাচ্ছে। ব্যাংকও সে টাকা রাখার জায়গা পায় না অথচ আমার বুকেই কত শিশুকে দেখি খাবার না পেয়ে আস্তা কুড়ে খাবার খুঁজছে। কতজনে ফ্রান্স থেকে পানি এনে পান করে আবার কতজন রাস্তার ফুটপাথে রাত কাটায়। এত টাকা দিয়ে কি করবে ওরা? এই উন্নয়নশীল দেশে এত চাকচিক্যের কি এমন প্রয়োজন আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না। দিনে দিনে আমার দুর্নাম ছড়িয়ে যাচ্ছে! কি লজ্জা! আমি নাকি বিশ্বের সবচেয়ে নোংরা শহর! কিন্তু কারা আমাকে নোংরা করছে? আমাকে নোংরা করে তারা কেমন করে ভাল থাকছে?
যারা আইন রক্ষা করবে তারাই আজ আইনের তোয়াক্কা না করে জঘন্য অপরাধে, পাপ কাজে, অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়েছে। কেও তাদের বিচার করছে না। সবাই শুধু নিজের কথা, নিজের ক্ষমতা-লোভের কথা ভাবছে। আমার বুকে বসেই ওই পাঞ্জাবী ইয়াহিয়া খান বলেছিল আমি ইস্ট পাকিস্তানের মানুষ চাই না শুধু মাটি চাই। এখনও সেই রূপ দেখছি, যারা শাসন করছে তাদের এমন মানসিকতার কোন পরিবর্তন হয়নি।
আসলে আমার কোন পরিবর্তন হয়নি আমি যেমন ছিলাম তেমনই আছি শুধু পাপের প্রক্রিয়া পরিবর্তন হয়েছে, পাপের পথ পরিবর্তন হয়েছে এবং পাপের ওজন ভারি হচ্ছে। মানুষের আমোদ প্রমোদের ধরণ বদলে গেছে। সেদিন দেখলাম কয়েকজন বন্ধু সারাদিন কাজ কর্ম সেরে রাতে ক্লাবে মিলিত হয়ে ইচ্ছে মত মদ পান করে সবাই যার যার গাড়ির চাবি টেবিলের উপরে রাখল এবং এক এক করে চোখ বন্ধ করে সামনে রাখা চাবি থেকে একটা চাবি তুলে নিল, যার হাতে যে চাবি আসল সে রাতের জন্য সে ওই গাড়ি যার তার বাড়িতে যেয়ে তার স্ত্রীর সাথে রাত কাঁটালো। এমন বিকৃত মানসিকতা এবং বিকৃত রুচি আমার বুকে আগে কখনও দেখিনি।
আমার ভীষণ ভয় করে! মাঝে মাঝে লজ্জায় ঘেন্নায় আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে কিন্তু আমার বুকে নিরীহ সাধারণ মানুষ যারা বাস করে তাদের কি হবে ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দেই। আমি আর পারছি না বিধাতা! আমাকে রক্ষা কর! আর কত পাপ আমাকে দেখতে হবে? হে বিধাতা তুমি কোথায়? আমাকে রক্ষা কর! মানুষের মনে শান্তি দাও!
লেখকের বিড়ম্বনা
আমি কোন লেখক বা সাহিত্যিক হবার জন্য হাতে কলম ধরিনি বা এই বিজ্ঞানের যুগে যেহেতু কলম দিয়ে লেখার প্রচলন উঠেই গেছে তাই বলা যায় কম্পিউটারের কি বোর্ডে হাত দেইনি। তবে মনের গোপন কোণে যে এমন একটা সাধ সুপ্ত নেই সে কথাও জোর দিয়ে বলতে চাই না। নিতান্তই চাকরি থেকে অবসর নিয়ে সময় কাটাবার জন্য বিশেষ করে কারো মুখের গ্রাস কেড়ে নেয়ার চেষ্টা বা দলিল, নোট জাল করা বা কাউকে গুম করে মুক্তিপণ আদায় করা বা ডাহা মিথ্যে সাক্ষী দেয়া কিংবা কারো মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাবার চিন্তা কিংবা কি করে মানুষের খাবারের সাথে ইট পাথরের গুড়ি কিংবা কাপড়ে দেয়ার রঙ কিংবা নর্দমার পানি বা নিদেনপক্ষে মানুষের খাবার অযোগ্য পদার্থ মেশানোর চিন্তা গুলি মাথায় এসে ভর না করে আমাকে রাতারাতি কোন বিখ্যাত আধুনিক মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী না করে ফেলতে পারে সেই চেষ্টা করতে চাই।
ফরমালিন এবং কার্বাইড দিয়ে পচা খাবার তাজা রাখা এবং ফলমূল পাকিয়ে মানুষের সামনে তুলে ধরার মহান চেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্যেই এই কাজে হাত দিয়েছি। আটা ময়দা দিয়ে এন্টিবায়োটিক বানানো, খড়ি মাটি দিয়ে স্যালাইন বানাবার প্রক্রিয়া শেখার আগ্রহ যাতে আমার মাথায় চেপে বসতে না পারে সেই অপ চেষ্টা করার জন্যেই এই কাজে রত থাকার চেষ্টা করি। এগুলি নাকি আধুনিকতা। তা ভাই আমি কিন্তু এত আধুনিক হতে চাই না সে কালের মানুষ সেকেলে থাকতে পারলেই ভাল। আমার যুগে আমার চাচাত ভাইকে দেখেছি ঝিটকার হাটে পাঁচ টাকায় একটা আধ মনি খাসি বিক্রি করে আট আনার রসগোল্লা কিনে এনেছিল তখন একশ টাকায় গরু পাওয়া যেত। আমি নিজেও আট আনা কেজি গরুর মাংস কিনেছি। যাক সেসব কথা, ওগুলি বললেতো বিশ্বাস করবেনই না উলটা আমাকে পা কিংবা মাথা গোল মনে করে সন্দেহের চোখে তাকাবেন তাই কি দরকার সেকালের কাহিনী গাইবার? নিজেই লিখি নিজেই পড়ি এসব কিছু করি আর সময় গুলা বেশ তর তর করে চলে যায়। ব্যাস আর কি?
আগে আমরা কলম দিয়েই লিখতাম কিন্তু মেয়েদের দেখতাম ওরা কি সুন্দর করে কি বোর্ড চেপে চেপে নানা কিছু লিখে ফেলছে। তাই দেখে দেখে ভীষণ লোভ হচ্ছিল ইশ আমিও যদি এমনি করে লিখতে পারতাম! ওদিকে লজ্জায় কাওকে বলতেও পারছিলাম না আবার শেখার ইচ্ছেটাকেও দমিয়ে রাখতে পারছিলাম না তাই একদিন নিজের ছোট মেয়েটাকেই বললাম আমাকে একটু এই কি বোর্ড চালানো শিখিয়ে দিতে পার মা? মেয়ে তার মনের মত ছাত্র পেয়ে মহা খুশি।
এসো বাবা আমি তিন দিনেই তোমাকে শিখিয়ে দিচ্ছি, তুমি সবই পারবে। তোমাকে প্রথমে কম্পিউটার অন অফ করা থেকে শুরু করব পরে ওয়ার্ডে কাজ করা শেখাব তারপরে ইন্টারনেট ব্যবহার করা, নানা কিছু সার্চ করে ইন্টারনেট থেকে দেখে নেয়া, ই মেইল করা এগুলি আস্তে আস্তে সব শিখিয়ে দেব।
বাহ! মনের আনন্দ চেপে রাখা কষ্ট হলেও কিছু করার ছিল না তাই চুপচাপই রইলাম। মেয়ে তার কাজ শুরু করে দিল। অনেক কিছুই শেখাল আমিও শিখলাম। ফল যা হল তা একেবারে মন্দ বলার উপায় নেই।
কি বোর্ড চেপে চেপে, ছড়া, পদ্য, গল্প এমনকি উপন্যাস পর্যন্ত লিখতে পারছি। আমার শিক্ষা গুরুও খুশি আমিও মহা খুশি। ক্রমে ক্রমে আমার নিজের ওয়েব সাইট, ব্লগ বানানো শিখে ফেললাম।
এই যে এতক্ষণ ভরে সাতকাহন গীত গাইলাম সে যে কেন গাইলাম তা কি কিছু বুঝতে পেরেছেন? এটা হল মাত্র ভূমিকা এবার শোনেন আসল ঘটনা। একটা কথা কানে কানে বলে যাই, দেখবেন কাওকে বলবেন না, আমি কিন্তু আমার প্রিয়তমা পত্নী দেবীকে মোটেই ভয় পাই না। (সত্য না মিথ্যা জানি না)।
সেদিন এমনি করে কি বোর্ডের বোতাম চেপে চেপে একটা গল্প লিখছি আর প্রিয়তমা এসে বললেন
এই, দোকান থেকে নুডলস নিয়ে এসো বিকেলে রান্না করব। লেখা ছেড়ে উঠে গিয়ে পাশের দোকান থেকে এনে দিলাম। ফিরে আবার বসেছি তখন
এই, যাওতো দেখ রান্না ঘরের জানালাটা খোলা আছে কিনা দেখে এসো খোলা থাকলে বন্ধ করে দিও মাছ ভেজে রেখেছি বিড়াল ঢুকলে সব খেয়ে ফেলবে যাও এক্ষণই যাও।
আমি গল্পের নায়িকাকে নৌকা ডুবি থেকে বাচাতে গিয়ে জানালা বন্ধ করার কথা ভুলে গেলাম আর অমনি একটু পরেই আবার তাড়া
কি হল জানালা বন্ধ করে এসেছ?
না ভুলে গেছিলাম
যাও এক্ষণই যাও। সারাদিন বসে বসে কি কর? তোমাকে দিয়ে কোন কাজ হয় না। তোমার কম্পিউটার বন্ধ করবে নাকি আমাকে উঠতে হবে?
ভয়ে আমার প্রাণ পাখি প্রায় খাঁচা ছেড়ে যাবার উপক্রম হল কিন্তু অনেক সাহস করে বললাম
আহা রাগ করছ কেন অন্তত কিছু অন্ন ধ্বংস তো হচ্ছে
হ্যাঁ শুধু তাই হচ্ছে , যাও কথা না বাড়িয়ে জানালা বন্ধ করে এসো
অগত্যা উঠে গেলাম। জানালা বন্ধ করে দেখি পানির ফিল্টার থেকে পানি লিক করে ডাইনিং স্পেসের মেঝে ভেসে যাচ্ছে। গিন্নিকে বলার সাহস না পেয়ে (বললেও সে আমাকেই মুছতে বলবে) ঘর মোছার ন্যাকরা আর বালতি কোথায় জিজ্ঞেস করলাম আর অমনি তিনি রেগে এক ঝারি দিয়ে বললেন ঘুমটা মাত্র লেগে আসছিল দিলেতো ভেঙ্গে! কি হয়েছে?
কাঁচুমাচু করে ওগুলির ঠিকানা জানতে চাইলাম
এগুলি দিয়ে এখন কি করবে?
কাহিনী শোনালাম।
যাও দেখ রান্না ঘরের সিংকের নিচে ন্যাকরা আর বাথ রুমে কাল বালতি আছে, দেখবে লাল বালতি কিন্তু নিও না।
আমার মনে কিন্তু তখন গল্পের নায়ক নায়িকা এখন কি করবে কোথায় যাবে তাই নিয়ে একটু ভাবনা কাজ করছে আর আমি ভুলে গিয়ে বাথরুম থেকে বিপদ জনক রঙ লাল মনে করে লাল বালতি আর ন্যাকরা নিয়ে ফ্লোর মুছে ওখানেই রেখে চলে এসে আবার মাত্রই কি বোর্ডের সামনে বসেছি আর গিন্নি তখন বাথরুমে যাবার জন্য উঠেছেন। তিনি রুম থেকে বের হয়ে লাল বালতিতে ঘর মোছার ন্যাকড়া দেখে তেলে বেগুনে ঝাঁজ করে উঠলেন
করেছ কি এটা, এই কাপড় ধোয়ার বালতি এখানে কেন?
নিজে ভুল করেছি এখন স্বীকার না করে উপায় নেই। সাহস করে অকপটে (সত্যের নাকি জয় হয়) বললাম ওটায় ফ্লোর মুছে রেখেছি!
সারা দিন কি কর? একটু চোখেও দেখ না যে কাল বালতিতে ঘর মুছে? কর কি? (ঘর মোছার বালতির দিকেও আমাকে নজর দারি করতে হবে কখনও কি ভেবেছিলাম?)
হ্যাঁ তাইতো ভুল হয়ে গেছে। আচ্ছা আবার হলে এমন হবে না এবার একটু থাম। ওদিকে নায়কের যাবার কথা ছিল পার্কে কিন্তু এই হাঙ্গামায় তাকে নিয়ে গেলাম নদীর পাড়ে। যা হবার তাই হল। কাহিনীর বিভ্রাট। আবার সেখান থেকে নতুন করে লিখতে হল।
সন্ধ্যার পর লিখতে বসেছি আর তিনি টিভি দেখছেন। আমি বললাম কি দেখ আমি তোমার এক মাত্র সোয়ামী, আমি একটু আধটু লিখালিখি করে মনের সুখ পাবার চেষ্টা করি, আমি যখন লিখতে বসি তখন দয়া করে আমাকে কিছু বল না। লিখতে লিখতে গল্পের ক্লাইমেক্সে এসে পড়েছি একটু পরেই শেষ হবে এমন সময় খোঁচা দিয়ে বলল
কি হয়েছে চশমাটা চাইছি না?
আচ্ছা চশমাটা এগিয়ে দিলাম। আবার লেখা শুরু করেছি লেখার গভীরে চলে গেছি আবার এক ধমক
কি হল সাউন্ড কমিয়ে দিতে বলছি শুনছ না।
সাউন্ড কমিয়ে দিয়ে এবার মধুর সুরে বললাম ওগো প্রিয়তমা, তুমি হলে আমার ঘরের সু গৃহিণী আমার প্রিয়তমা রমণী, জানত সংসার সুখের হয় রমণীর গুনে
হুম, বুঝলাম কিন্তু এত মধুর কথা কিসের জন্যে?
দেখ তোমার একমাত্র সোয়ামী একজন লেখক, কত কি লিখছে তুমিতো আর এগুলি পড়ে দেখ না কাজেই বুঝতে পার না কত কি অমূল্য লিখা লিখছি, কাজেই বলছিলাম কি লেখার সময় অন্তত আমাকে বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকলে ভাল বৈ মন্দ হবে না। জান না, মাইকেল মধুসূদন দত্ত যখন লিখতেন তখন তার স্ত্রী ডরোথি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতেন, আমার মাইকেলের কাগজ বা কলমের কালি ফুরিয়ে যায় তাহলে কে এনে দিবে? ও যে সারা রাত ধরে সাদা কাগজে লিখে যাবে! ভয়ে বসত না যদি ঘুমিয়ে পড়ে!
হুমায়ুন আহমেদের কুসুম কুমারি শাওন বলেছিল “একজন লেখক লিখছেন, তার থেকে পবিত্র দৃশ্য আর কিছু হতে পারে না।”
তাই বলছিলাম কি একজন লেখককে একটু সাহায্য কর! বলা যায় না দেখবে আমি হয়ত একদিন হুমায়ুন আহমেদ হয়ে যাব তখন কি হবে? ভেবে দেখেছো? ভাবতো একবার, সবাই যখন আমার প্রশংসা করবে, অটোগ্রাফ নেয়ার জন্যে বাড়িতে লাইন পড়ে যাবে, টিভিতে আমার ইন্টারভিউ নিবে তখন গর্বে অহংকারে তোমার পা মাটিতেই পড়তে চাইবে না!
তোমাকে কত কি কিনে দিব তার কি কোন হিসেব আছে? হুমায়ুন আহমেদ শাওনকে সেন্ট মার্টিনে বাড়ি করে দিয়েছিল আর আমি তোমাকে কাশমীরে বাড়ি করে দিব, তুমি মনের সুখে পায়ের উপরে পা রেখে সামনের ঝুর ঝুর করে ঝরা তুষার দেখবে আর কফি খাবে!
হ্যাঁ বুঝেছি, এখন যাওতো আধা কেজি কাঁচামরিচ নিয়ে এসো।
হাত থেকে চিনামাটির পেয়ালা পাকা মেঝেতে পড়ে যেমন খান খান হয়ে টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে যায় আমার লেখক হবার সাধ বাসনাও তেমনি করে ভেঙ্গে গেলো।
লেখকের এমন বিড়ম্বনা সইবার কোন উপায় আছে কি না তার কোন সন্ধান দিতে পারেন কেও?
এর থেকে পরিত্রাণের কোন উপায় বলতে পারেন? অন্তত সবাই মিলে একটু চেষ্টা করেই দেখুন না!
হাত তুলেন
এই মানুষটারে যারা চিনেন না তারা হাত তুলেন আর যারা চিনেন তারা মুরুব্বী’র কাছে নালিশ করেন প্লিজ! লোকটা নিখোঁজ বিগত আড়াইশ বছর যাবত।
কি যে করি?
কয়দিন যাবত শরীলডা কেমন কেমন লাগতেছে মাথায় ঝিম ধইরা থাকে, খালি খাই খাই ভাব কিন্তু দাতে ধার নাই তাই কিছু চাবাইতে পারিনা, চোখে সব সময় সইরষা ফুল দেহি, হাত পাও নিতে চাই একদিকে চইলা যায় আর এক দিকে। কি মসিবত!
এক দোস্ত কইল কবিরাজের কাছে যাও। ভাবলাম এইডা বুঝি সৎপরামর্শ তাই গেলাম। বিশেষজ্ঞ কবিরাজ হাত পাও, মাথা, গলা, নাক, চোখ, পেট, বুক সব টিপা টুপা দেইখা কইল রক্ত পরীক্ষা করতে হইবে।
নেন কত রক্ত লাগবো
বেশি না এক লিটার হইলেই হইবো
আচ্ছা নেন আমার শরীলে টনকে টন রক্ত আছে , নেন যা লাগে
রক্ত মক্ত পরীক্ষা কইরা কইলো আপনের সারা শরীলের রক্ত দূষিত হইয়া গেছে।
তাইলে এখন কি করুম?
রক্ত বদলাইতে হইবো, এ ছাড়া আর কোন উপায় নাই
ভাল রক্ত কই পামু?
আরে মিয়া আপনে নিজেইতো একজন দুষিত মানুষ, আপনের বাইচা থাকার দরকারটা কী? আপনে আবার ভাল রক্ত দিয়া কি করবেন? যান, ভাগেন মরেন গিয়া!
কন দেহি এইডা একজন বিশেষজ্ঞ কইবরাজের মত কথা হইলো?
তেলা পাখি
জানেন তো আমি বিজ্ঞানী হইতে চাই বলে সব সময় নানা রকম ভাবনা আমার মাথায় দৌড়াদৌড়ি করে। সেদিন বিকেল বেলা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে একটু একটু চুমুক দিচ্ছি আর ভাবছি, মানুষে তেলাপোকা বলে কেন? তাকে তেলাপোকা বলে অসম্মান কেন করে? তাহাকে তেলা পাখী বলে সম্মান করা উচিত নয় কি?
সেতো পক্ষীকুলের সদস্য, তাহার পাখা আছে, সে ইচ্ছা করলেই এক জায়গা থেকে উড়ে আর এক জায়গায় যেতে পারে তবে যখন এরোসল স্প্রে করা হয় তখন একটু বেশীই উড়তে পারে।
লোকে বলে পিপীলিকার পাখা উঠে মরিবার তরে। তাই বলে কি তেলা পাখিরও তাই নাকি? তেলা পাখি সারা বিশ্বে ভ্রমণ করতে পারে, বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন জাতি, ইচ্ছা করলেই বিশ্বে যে কোন ব্যাংকে লক্ষ কোটি হিরা মনি মানিক স্বর্ণ ইত্যাদি তার প্রয়োজন মত সঞ্চয় করতে পারে। তাহার দেহ আহা কতই না সুন্দর দেখলেই ওয়াক আসিতে চায়বলে একতা সুন্দর ছবিও দিতে পারছি না। কি জানি লোকে আবার লাঠি নিয়ে আমাকে তাড়া করে যদি!
আমার মনে হয় এখন থেকে তাকে তেলা পাখি বলা উচিত। এটা একটি ভাবনার বিষয় নয় কি?
শরতের নিমন্ত্রণ
শরতের শেষে দূরের ওই নীলিমায়।
বসে বসে দেখি তাই একা বাতায়নে
কোন বাঁধা মানে না দুই নয়নে।
দেখি সুন্দর কত এই নীল আকাশ
পাখা মেলেছে যেন মৃদুমন্দ বাতাস।
ফুটে আছে কাশফুল লাগে শিহরণ
ছোট ছোট মৌমাছি তোলে গুঞ্জরন।
এলোমেলো মেঘগুলি উড়ে যায় দূরে
নেমে আসে ঘুম রাখালি বাঁশির সুরে।