মিথ্যে আমি মিথ্যে তুমি, মিথ্যে দিয়ে যায় চেনা …

কারণে অকারণে অনেকেই মিথ্যা কথা বলে থাকেন। কেউ অনেক বেশি পরিমাণে বলে থাকে কেউ প্রয়োজনে খুব কম বলে থাকেন। মিথ্যা কথা বলাকে ধর্মীয়ভাবে আমরা পাপ বলে থাকি। কিন্তু এই মিথ্যা বলারও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করেছেন বিজ্ঞানীরা।

মিথ্যা বলা বৈজ্ঞানিক কারণ :
গবেষকরা জানিয়েছেন, মিথ্যা কথা বলার বৈজ্ঞানিক কারণ হল মনের ইচ্ছা ও আকাঙ্খা। কেননা তারা বলেন, মিথ্যা বলার সঙ্গে মনের সম্পর্ক রয়েছে। Massachusetts university র গবেষক রবার্ট ফেল্ডম্যান জানিয়েছেন, শতকরা ৬০ ভাগ মানুষই কথা বলার সময় প্রতি ১০ মিনিটে অন্তত একটি মিথ্যা কথা বলেন।’ তবে, গবেষকরা আরো জানিয়েছেন, ‘মিথ্যা বলা কিন্তু ততোটা সহজ কাজ নয়। সত্যি বলার চেয়ে এতে ৩০ ভাগ বেশি সময় লাগে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এখন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ও ই-মেইলে মিথ্যা বলা হয় সবচেয়ে বেশি।

কিছু আলোচনা …
অনেক সময়ে আমাদের সম্পর্কগুলো মিথ্যের উপরেই দাঁড়িয়ে থাকে।কারো সাথে সম্পর্কে জড়াতে গেলে আপনাকে গুছিয়ে মিথ্যে কথা বলা শিখতেই হবে। এ যেনো ট্রাডিশান হয়ে গেছে।

মিথ্যে কথা বলা হয় আবার আয়োজন করে। বলছি তবে শুনুন, এই ফেসবুকের কল্যাণে প্রেম, ভালবাসা তো মুড়ি মুড়কি হয়েই দাঁড়িয়েছে। যেমন ধরুন গভীর রাতে বা দিনে, আপনি কারো জন্য অপেক্ষা করছেন, অনেক অপেক্ষার পরে আপনাকে ধন্য করতে তিনি এলেন। দুটো কথা হল, তারপর দীর্ঘ বিরতি। আপনি ভাবলেন ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো। কিন্তু না, আপনাকে মিথ্যে বলে, আপনার সেই মানুষ কিন্তু অনলাইনে আছেন। তবে আপনার ইনবক্সে নয়। অন্য কারো। আসলে মাত্র সাতটা দিন, আর সাতদিনের সাত জনকে সময় দেওয়া! ভীষণ কঠিন ব্যপার। এই ধরনের চরিত্র আমরা সবাই কম বেশি দেখে থাকি। এতো গেলো ইনবক্সে মিথ্যে প্রেম।

আবার ধরুন, ফোনের অপর পাশের মানুষটাকে নিয়ে খুব সুন্দর সুন্দর মিথ্যা স্বপ্ন বানাবেন… যেমন, আমাদের ছোট্ট একটি বাড়ি থাকবে, প্রেমিক অফিস থেকে আসবো, প্রেমিকা রান্নাঘরে গিয়ে দু’কাপ চা বানিয়ে আনবে, দখিনা বারান্দায় প্রচুর বাতাস হবে, চা খাবো, গল্প করবো, আর তুমি খিল খিল করে হাসবে, আর আমি মুগ্ধ মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখবো” ওই ‘বাগবান’ টাইপের আর কি। এটা হলো অধিক স্বপ্ন দেখা প্রেম।

মিথ্যে আশ্বাস, মিথ্যে স্বপ্ন। আপনি জানেন না আপনার একটা ছোট্ট বাড়ি হবে কি না, আপনি কোন চাকরী পাবেন কিনা। গাড়ি কেনার মতো টাকা আপনার পকেটে থাকবে কি না। জানেন না আপনি। তবুও আপনি এসব বলবেন, এইসব আপনাদের কথার রাতগুলো, দিনগুলো ভালো কাটবে। যখন কাউকে বলবেন ‘ভালোবাসি’ যদি সেটা মন থেকে বিশ্বাস করতে পারেন তবেই বলবেন। মিথ্যে আশ্বাস দেবেন না। কারণ বার বার ‘ভালোবাসি’ কথাটা বলার পরে, আপনি যতোগুলো কথা বলেছেন সেগুলোও মিথ্যেই থেকে যাবে। আপনি মিথ্যে হয়ে যাবেন।

সম্পর্ক কিন্তু নিশ্চয়তা পছন্দ করে। যেমন, আপনি ভবিষ্যতে একসাথে থাকবেন কিনা, এর সাথে যদি কয়েকটা “সত্যিকার অনিশ্চয়তা” জুড়ে দেন তাহলে সম্পর্কগুলো আস্তে আস্তে পানসে হয়ে যাবে যতোই ভালোবাসা জিনিসটা থাকুক না কেন। কিন্তু যদি মিথ্যে নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, “আমার ঈশ্বরের নামে শপথ করে বলছি আমি কোনভাবেই তোমার হাত ছাড়বো না”। আর তারপর যদি আপনি হাত ছেড়ে দেন তাহলে সম্পর্ক কখনো পানসে হবে না?

রাস্তায় আসার সময় একটা ছেলের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন, কিন্তু তার হাত ধরে বলবেন “তোমাকে ছাড়া অন্য কোন ছেলের দিকে আমি সেভাবে তাকাই না, ভালো লাগে না”। প্রেমিকা সেজেগুজে এসেছে, আপনাকে জিজ্ঞেস করলো কেমন লাগছে আমাকে?? আপনার ভালো লাগছে না। তবুও মুগ্ধ গলায় বলছেন, “কি আশ্চর্য! তোমাকে এতো সুন্দর লাগছে কেন??” কালকে পরীক্ষা, পড়াশোনা ছাড়া আপনার মাথায় কিছু নেই, সে সময় তার ফোন এলো, জিজ্ঞেস করলো আপনাকে;
-তুমি কি আমার কথা ভাবছিলে???
-তোমার কথা ছাড়া আর কার কথা ভাববো বলো??
সে খুশি, আপনিও খুশি।

কিন্তু যদি সত্যিগুলো বলে দিতেন, বলে দিতেন রাস্তায় অন্য একটা ছেলেকে দেখে মুগ্ধ হয়েছেন, তাকে দেখতে আপনার সুন্দর লাগছে না, অথবা আপনি তার কথা ভাবছিলেন না, তাহলে সম্পর্কটা “মিথ্যে” বলার কারণে যতোটা সুন্দর হয়েছে সেরকম কখনোই হবে না। তাইনা? কিন্তু মিথ্যে বলে ভালোবাসবেন না। এতে আপনার চরিত্র প্রকাশ পেয়ে যাবে।

সবাই আয়োজন করে মিথ্যে কথা বলে সম্পর্কটাকে সুন্দর করার জন্য। কিংবা নিজের ভাবমূর্তি ঠিক রাখার জন্য। সত্যি কথায় সম্পর্ক সুন্দর হয় না? ভালো মুহুর্তও কাটানো যায় না? চোখ বন্ধ করে চিন্তা করে দেখুন তো আপনি/আপনারা ক্রমাগত আপনার সম্পর্কের মানুষটার সঙ্গে মিথ্যে বলে চলেছেন। আপনার হয়তো ইচ্ছে করেই, কত সহজেই আপনার ‘কাছের মানুষটিকে’ ঠকিয়ে যাচ্ছেন। যে কিনা আপনার উপর অন্ধের মত বিশ্বাস রেখেছে, আপনার উপর নির্ভর করছে।

একটার পর একটা,ছোটখাট সব বিষয় নিয়ে তাকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে কিংবা মুগ্ধ করার জন্য সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যা বলেই যাচ্ছেন। আপনি হয়ত বার বার সেই মানুষটাকে বোকা বানাতে পেরে নিজে খুব আনন্দিত হচ্ছেন। অথবা আপনার চালাকি সে ধরতে পারছেনা বলে ভাবছেন মানুষটা আসলেই কত বোকা। কিংবা ধরতে পেরেও চুপচাপ থাকছে, সে অত্যন্ত ভদ্র বলে।

জেনে রাখুন সেই মানুষটি আপনাকে ভরসা করেছিল, যে মানুষটি আপনাকে বিশ্বাস করেছিল, যার যোগ্য আপনি ছিলেন না জেনেও, আপনাকে ভালোবেসেছে। তাকে নিয়ে খেলতে গিয়ে আপনি আপনার পরিবারের পরিচয় দিয়ে দিচ্ছেন না তো?

16 thoughts on “মিথ্যে আমি মিথ্যে তুমি, মিথ্যে দিয়ে যায় চেনা …

  1. অসাধারণ এবং খুবই সহজ করে লিখাটি উপস্থাপন করেছেন।
    বোধশক্তির কথা মাথায় রেখে এমন লিখন যে কাউকে আকর্ষণ করবে আশা করি।

  2. বর্তমানে আমরা মিথ্যা যুগে বসবাস করছি। পুস্তকের ভাষায় একে বলে পোস্ট ট্রুথ যুগ।

  3. আলোচনাটি ভাবনার সুযোগ তৈরী করে দেবে অনেকের। ধন্যবাদ কবি রিয়া চক্রবর্তী। 

  4. মিথ্যা কথা নিয়ে দারুণ একটা পোস্ট করলেন শ্রদ্ধেয় রিয়া দিদি। আমরা এখন সত্যি মিথ্যার মাঝে থেকেই চলাফেরা করে থাকি। ঘরে বাইরে সকলের সাথে এবং সবখানে আমাদের চলছে মিথ্যে বলার প্রতিযোগিতা।   

  5. জেনে রাখুন সেই মানুষটি আপনাকে ভরসা করেছিল, যে মানুষটি আপনাকে বিশ্বাস করেছিল, যার যোগ্য আপনি ছিলেন না জেনেও, আপনাকে ভালোবেসেছে। তাকে নিয়ে খেলতে গিয়ে আপনি আপনার পরিবারের পরিচয় দিয়ে দিচ্ছেন না তো?

     

    * নিদারুণ বাস্তব অভিভাষণ….

    শুভ কামনা প্রিয় কবি দি…. https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

  6. নাট্য মঞ্চে সবাই নাট্য মঞ্চস্হ করে চলছে  কম বেশি 

    শুভকামনা https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

  7. মিথ্যার মেঘে সত্যের সূর্য ঢাকা পড়েছে।
    সুন্দর উপস্থাপনা। প্রিয় লেখিকা সুন্দর
    ভাবনায় লেখাটিকে উপস্থাপন করেছেন।
    অভিনন্দন জানাই অভিনব প্রয়াসকে।
    জয়গুরু!

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।