চু চেন তাং

চু চেন তাং

চু চেন তাং! কার নাম চু চেন তাং ? এতো আমাদের দেশীয় নাম নয়। খাস চীন দেশীয় নাম। আরও অবাক লাগবে যে, চু চেন তাং রবীন্দ্রনাথেরই আর এক নাম। কবি সবেমাত্র নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন গীতাঞ্জলী লিখে। সমস্ত বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে ভারত-রবির খ্যাতি। দেশ দেশান্তর থেকে প্রচুর আমন্ত্রণ আসছে তাঁর কাছে। তিনি যে রবীন্দ্রনাথ, বিশ্বকবি, তাই বিশ্বের ডাকে সাড়া না দিয়ে তাকে বিমুখ করবেন কি করে ? তাই পূর্ব এশিয়া থেকে শুরু করে বিলেত, আমেরিকা, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, জাপান এবং আরও নানান দেশ তিনি ঘুরলেন। তারপর ডাক এলো মহাচীন থেকে। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে আমন্ত্রণ জানালো।

ভারতের যুগ যুগান্তের বন্ধু, কৃষ্টি ও সভ্যতার সহযাত্রী মহাচীনের আমন্ত্রণ পেয়ে কবির অন্তরাত্মা আনন্দে নেচে উঠলো। ভারত ঋষি, কবি, আসছেন চীন ভ্রমণে। কিভাবে তাঁকে সম্বর্ধনা জানানো হবে ? আর কি ভাবে করা হবে তাঁর আদর আপ্যায়ন? তাই নিয়ে সকলেই মহাব্যস্ত। দেশের ছোট-বড়-যুবক-ছাত্র সবার পক্ষ থেকে চীন সম্রাটের কাছে আবেদন গেল মহামান্য অতিথি কবীন্দ্র রবীন্দ্রনাথ কে যেন চীন সম্রাটেরই প্রাসাদে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এ যে সম্রাটেরও সৌভাগ্য, তাই অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে দেশবাসীর আবেদনে সাড়া দিলেন চীন সম্রাট। ১৯২৪ সালে রবীন্দ্রনাথ পা রাখলেন ঐতিহাসিক পিকিং শহরে, এখন যার নাম বেজিং বা পেইচিং। সমগ্র দেশের লোক জড়ো হলো কবিকে দেখার জন্য। তিল ধারণের জায়গা নেই। কবিকে দেখেতো সবাই অবাক। কবি কই ? এ যে শান্ত সমাহিত সর্বসুন্দর এক ঋষি, যাঁর চোখে মুখে দীপ্ত অপূর্ব সুন্দর জ্যোতি। ভূতপূর্ব চীন সম্রাট হু য়ান তাং কবিকে অভ্যর্থনা জানালেন। দেশবাসীর পক্ষ থেকে তিনি কবিকে উপহার দিলেন ৪০০ বছরের পুরনো একটি ছবি। ভারত-চীনের অতীত দিনের মধুর সম্পর্কের স্মারক। সেই প্রতীক উপহার পেয়ে আনন্দ উপচে পড়ে বিশ্বকবির।

এই আনন্দের ঢেউ যেতে না যেতেই সেখানেই আরেক আনন্দের বান এলো, কবির জন্মদিন – ২৫শে বৈশাখ। রাত্রির অন্ধকার মন্থন করে সূর্যশঙ্খ বেজে উঠলো। পরম সৌভাগ্যে মেতে উঠলেন চীনবাসী। বিশ্বকবির জন্মোৎসব পালন করবেন তাঁরা কবিকে সঙ্গে নিয়েই। কবি হয়তো সেই সময় ভেবেছিলেন, “পরবাসী আমি যে দুয়ারে চাই, তারি মাঝে মোর আছে যেন ঠাঁই”। তিনি এখানেও পরমাত্মীয়দের খোঁজ পেলেন। চীন দেশীয় রীতিতেই পালন করা হলো তাঁর জন্মদিন। সারা দেশ থেকে এলো শত শত উপঢৌকন। নীল পাজামা, কমলা রঙের আলখাল্লা আর মাথায় বেগুনি টুপি দিয়ে সাজানো হলো কবিকে। সবার সামনে কবি বক্তৃতা দিলেন আবেগভরা কণ্ঠে। চীনের মানুষও তাঁদের প্রাণের ভাষায় শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন বরেণ্য কবির জন্মোৎসবে। শুধু শ্রদ্ধা জানিয়েই চীনবাসী ক্ষান্ত হলেন না, তাঁরা তাঁদের প্রিয় কবিকে নিজস্ব ভাষায় নতুন নামকরণ করে তাঁকে একান্ত আপনার পরমাত্মীয় করে নিলেন। কবির নতুন নাম দিলেন তাঁরা – “চু চেন তাং”, যার অর্থ “বজ্রের ন্যায় পরাক্রান্ত ভারতসূর্য”। পরম তৃপ্তিতে কবি হাসলেন। হাসলেন ভারতসূর্য।

12 thoughts on “চু চেন তাং

  1. চু চেন তাং।

    অ সা ধা র ণ।
    কত কিছুই না গতানুগতিকের বাইরে অগোচরে থেকে যায় !! ধন্যবাদ কবি রিয়া। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    1. স্বাগতম প্রিয় বন্ধু। ধন্যবাদ আপনাকেও। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

  2. জানা ছিলো না বিষয়টি। পৃথিবীতে কত কিছুই না অজানা থেকে যায়। ধন্যবাদ আপনাকে।

    1. ধন্যবাদ কবি সুমন আহমেদ। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

  3. ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় রিয়া দিদি। আপনার মধুমাখা লেখনী পড়ে অনেককিছু জানা হলো। সত্যি এ বিষয়ে আগে জানা ছিল না। শুভেচ্ছা আপনাকে।

    1. সম্মান প্রিয় কবি নিতাই দা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

  4. ভালো একটি টপিকস। জেনে নিলাম কবি রিয়া। :)

    1. ধন্যবাদ কবি শাকিলা তুবা দি। :)

  5. চু চেন তাং ।

    চমৎকার। প্রিয় কবি জানা হল অনেক কিছু।কবিকে বিনম্র শ্রদ্ধা। শুভ কামনা।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।