নষ্ট বাসা, প্রকৃতি অথবা

ঘড়ির বেঁটে লম্বা কাঁটার তীরনকল খাঁজে জড়িয়ে কুচি কুচি সাদা কালো মেঘলা নকশা। পারমিতা টুকটাক সাংসারিক, টুকিটাকি উদাসীন।

লাল মোরামের ঝমঝম রাস্তায় পেএএএপাআআআর…। কয়েদের গেটের পাশে শিউলি গাছ ডাগর হয়ে উঠেছে, হাতছানি দিচ্ছে অন্তরায়।

কোথাও কাচের বাসন ভাঙলো হাত ফসকানো বিমনস্কতায়! বাসনেরা বড় ভঙ্গুর হয়, বাসনারা বড় ভঙ্গুর হয়।

রাস্তার ওপারে দূর ছোঁয়া কারখানার চিমনি কিম্বা রোজকার চরে ফেরা কালো রঙ সাদা রঙ মোষ বা যান্ত্রিক গরু। পারমিতার তুলিতে আঁকা ভুরু বিষন্নতার তল খোঁজে।

তাতানো তাওয়ায় কাটে গা বমি করা রাতের প্রথম প্রহর। চব্বিশ ইনটু সাত অর্থকরী হাত, মাথাহীন নিরেট অবয়ব দখল নেয় মধ্যতিরিশের পারমিতাশূন্য মাখন শরীর।

বাকি রাত অনাবাসিক অস্থিরতা তাড়িয়ে বেড়ায় ঘুমন্ত মেকানাইজড বাড়ির আনাচে কানাচে। পেঁচারাও এড়িয়ে চলে এ কয়েদখানার শুষ্ক ধোঁয়াটে ছায়া।

কালো সরষেবাটায় গলে ভেজা কাঁকুড়ে বিমূর্ততায় টুপটাপ ঝরে পড়ে ভোর। ওয়াটার কালারে সূর্য ওঠে রোজকার মিথ্যে আশ্বাসের রঙবেরঙের গিফট বাস্কেট হাতে।

মোরামের রিড বাজিয়ে চলে যায় বাসন চাইগোওওও… কাচের বাসনওওওওওন…! জরাছাপ জেঁকে বসে সকাল রোদ্দুরে।

পথের রেশ ধরে পারমিতা এগোয় কোনো এক নিশ্চুপ পলাশ শালের জঙ্গলমহলে। সেখানে বসত করে মধ্যতিরিশের উচ্ছ্বাসের রংধনু ছড়িয়ে অন্য পারমিতা।

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

2 thoughts on “নষ্ট বাসা, প্রকৃতি অথবা

  1. “পথের রেশ ধরে পারমিতা এগোয় কোনো এক নিশ্চুপ পলাশ শালের জঙ্গলমহলে। সেখানে বসত করে মধ্যতিরিশের উচ্ছ্বাসের রংধনু ছড়িয়ে অন্য পারমিতা।”

    অণু গল্পের ধাঁচ অসাধারণ। বাচন ভঙ্গির উপস্থাপনও অনন্য এবং অনবদ্য। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

  2. ভালো লাগলো পারমিতার জীবন ও অনুগল্পের নির্মাণ শৈলী !

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।