দেখায় অদেখা

(অণুগল্প)
অফিস ছুটির পরে ধীরেন রফিক শীতুর সাথে নানান গল্প করতে করতে বেরিয়ে আসি। স্টেশনে সবাই মিলে হ্যা হ্যা করতে করতে চা খাওয়া আমাদের স্বভাব। গত সপ্তাহ থেকে খেয়াল করছি মিলন আসছে না। অফিসে দুটো সেকশন। অন্যদিকটা ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। সেখানে মিলনের তো বসা বা আড্ডা মারার কোন জায়গাই নেই। তাহলে?
ধীরেনকে জিজ্ঞেস করলাম। ও বলল – চেপে যা। চেপে যা।
আমার মুখে বিস্ময় দেখে আবার বলল – সবাই জানে আর তুই জানিস না। চুপ কর। পরে বলব।
ট্রেন এসে গেল। আমরা ট্রেনে চাপলাম। ধীরেন কিছু বলল না।
পরদিন দেখলাম মিলন বেশ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে। টিফিনের পরে দেখি মিলন তার টেবিলে নেই। গত সপ্তাহ থেকে কি তাই হচ্ছে?
ধীরেনর কাছে যেতেই ও বুঝতে পেরে আমাকে চোখ ইশারা করল। আমি তাই বাইরে দাঁড়িয়ে। একটু পরে ধীরেন হাত ধরে অফিস ক্যাণ্টিনের পেছনে নিয়ে গেল। দেখলাম, মিলন পিঙ্ক জামা ও প্যাণ্ট পরা অদ্ভূত রকমের একজনের সঙ্গে এমনি সাধারণ কথা বলছে।
ধীরেন দূরে দাঁড়িয়ে থাকল। আমি কাছে যেতেই মিলন চমকে উঠল। আর পিঙ্ক আরো পেছনে বস্তির দিকে চলে গেল। আমি স্বাভাবিক জিজ্ঞেস করলাম – কে উনি?
মিলন এমনিতে হাসিখুশি। বউ মারা গেছে গত বছর। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। হাত পা ঝাড়া। বলল – রাখ তো। ও সব ফালতু। বেশ কড়কে দিয়েছি।
ধীরেনও কিছু বলতে চাইছে না। অফিসে ফিরে মিলন বড়বাবুকে বলল – অতীশদা, আমার লোনের কি হল?
আমি পেছনেই ছিলাম। বললাম – এই তো মাস দুই আগে লোন নিলি। আবার?
-ধুর, জমা রেখে কি হবে? সরকারের যা অবস্থা।
স্টেশনে এসে দেখি না, মিলন আসে নি। বেরিয়েও কোথায় গেল? ধীরেনকে জিজ্ঞেস করলাম। বলল – ক্রমশ প্রকাশ্য। অনেকেই জানে কিন্তু পুরোটা সবাই জানে না। ভাই, তুমিও জেনে যাবে।
ট্রেনে বসে ভাবলাম। ব্যাপারটা কি? তাহলে কি কোন মেয়ে? কালকে মিলনকেই ধরব।
রাতে খবর দেখে আৎকে গেলাম। এ কি! মিলন! রক্তাক্ত দেহ!
ফোন করলাম ধীরেনকে। শুনলাম বেশ নির্লিপ্ত গলা। বলল – জানতাম। বেশি মাতম্বরী?
-ব্যাপারটা কি?
-ব্যাপার আবার কি? পদ্ধতির বাইরে কিছু হয় কি? দেখলি তো পেছন বস্তি। আহা, ভাল কাজ? আর শোন এই ব্যাপারে আর একটিও কথা কোনদিন জিজ্ঞেস করবি না।আর কাওকে না। ফোন রাখছি।

6 thoughts on “দেখায় অদেখা

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।