বাবার স্পঞ্জের স্যান্ডেল

বাবার স্পঞ্জের স্যান্ডেল
_______________

বাবুটা !
খেলনাটা কিনে দেই নাই বলে কি গাল ফুলিয়ে আছো এখনো ?
ভিতরে ভিতরে ফুঁসছো নিশ্চয়ই আমারই মতো ?
তোমার মা, তুমি দুষ্টুমি করলে কি বলতেন আমাকে নিয়ে ?
– ও প্লাস না! বাপের রক্ত। স্বভাব চরিত্র ও বাপের মত হবে না তো কি !
এমনই তো বলতেন সে, মনে পড়ে তোমার ?
খেলনা টা কিনে দেবো তো… আর কিছু দিন…।
তুমি কি ক্যালেন্ডার দেখতে শিখেছো, বাবুটা ?
হাসছো! বাবার কথা শুনে ?
পাগলা বাবা আমার- এমন ভাবছ না তো ?
তুমি কি কখনো এভাবে ভাবো বাবুটা, বাবাকে নিয়ে ?
.
তুমি হাসো বাবার কথা শুনে
আর গ্রিলের ওপারে গেলেই বাবাকে নিয়ে হাসেন অন্য মানুষেরা !
তোমার সামনে থেকে সরে গেলে, বাবা ও কি অন্য মানুষ হয়ে যান ?
তোমার…তোমার মায়ের…তার মায়ের…তোমার বাবার মায়ের
এভাবে সবার আড়াল হলে তোমার বাবা মানুষটা কেমন হয়ে যান ?
.
তুমি জানবে না এখন… সামনে জানবে, প্রচুর সময়
বাবা জানবেন না, সময় নেই… তাই তোমাকে বলা।
তুমি যেদিন জেনে-বুঝে অনুভবে বাবা মানুষটিকে দেখবে, সেদিনই তুমি আমাকে দেখবে।
তুমি কি কখনো আমাকে দেখতে চেয়েছো?
এভাবে ভাবতে তোমার কেমন লাগছে, বাবুটা?
.
এই শহর! এখানে প্রচুর অলি-গলি
এই অলিতে গলিতে, গ্রিলের ওপারে চলে যেতেই, বাবারা ক্রমশ: ভিন্ন মানুষে পরিণত হন।
এখানে রাক্ষুসী সন্ধ্যা নামে
সেখানে বাবারা ছায়ায় হারিয়ে যান!
নিজেদের কায়া হারিয়ে খুঁজে ফেরেন নিজেকে অহর্নিশ…
শ্রেফ তোমার জন্য, বাবুটা! এই বাবাও হেঁটে চলেন
সবার মতো নিজের হারানো কায়ার খোঁজে।
.
বড্ডো বন্ধুর সেই পথ
একজন বাবা বছর তিনেক আগে
এক জোড়া স্পঞ্জের স্যান্ডেল কিনেছিলেন নব্বই টাকা দিয়ে!
এক পাটির তলায় ছিদ্র হয়েছে
মন খারাপের বিকেলগুলিতে কালো রাজপথ, সেই ছিদ্র দিয়ে আকাশ দেখে নির্ভার হতে চায়।
.
পথে কাঁটা বিছানো
কতটা জানো?
সমগ্র বিশ্ব যন্ত্রণার পেরেক বিছিয়ে বাবাকে স্বাগত জানায় নিরবে।
বাবা আরও নিরবে হেঁটে চলেন… নিঝুম নিমগ্ন সুখে!
তুমি কি এখন অনুভব করছো বাবুটা, বাবাকে?
.
বাবুদের নিজেদের যদি কোনো জাদুঘর থেকে থাকে
তবে সেখানে সবার আগে, বাবার এক জোড়া স্পঞ্জের স্যান্ডেল শোভা পাবে!
শুধু তোমার জন্য বাবুটা!
সমগ্র বিশ্ব পায়ে দলে হেঁটেছেন তোমার বাবা..
অণুক্ষণ যন্ত্রণা সয়েছেন… তবু হেঁটেছেন… থামেন নাই!
.
তুমি কি গ্রিলের ওপার থেকে এখন বাবাকে দেখছো?
তুমি কি ‘আমাকে’ দেখতে পাচ্ছো?
.
খেলনা টা কিনে দেবো তো বাবুটা!
সপ্তাহটা ঘুরুক…।।

মামুন সম্পর্কে

একজন মানুষ, আজীবন একাকি। লেখালেখির শুরু সেই ছেলেবেলায়। ক্যাডেট কলেজের বন্দী জীবনের একচিলতে 'রিফ্রেশমেন্ট' হিসেবে এই সাহিত্যচর্চাকে কাছে টেনেছিলাম। এরপর দীর্ঘ বিরতি... নিজের চল্লিশ বছরে এসে আবারো লেখালখি ফেসবুকে। পরে ব্লগে প্রবেশ। তারপর সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে 'অপেক্ষা' নামের প্রথম গল্পগ্রন্থ দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বইমেলা ২০১৭ তে তিনটি গ্রন্থ- 'ছায়াসঙ্গী'- দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, 'ঘুঙ্গরু আর মেঙ্গরু'- উপন্যাস এবং 'শেষ তৈলচিত্র'- কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাহিত্যের প্রধান তিনটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নাম রেখেছি। কাজ চলছে ১০০০ অণুগল্প নিয়ে 'অণুগল্প সংকলন' নামের গ্রন্থটির। পেশাগত জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পোষাক শিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছি। লেখার ক্ষমতা আমি আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখেই যেতে হবে আমাকে।

3 thoughts on “বাবার স্পঞ্জের স্যান্ডেল

  1. লিখাটি পড়ে ভীষণ নস্টালজিক হতে হলো মি. মামুন। অসাধারণ আপনার লিখনী। 

  2. ভীষণ রকম স্মৃতি বিজরিত লেখা। সব মিলিয়ে অনেকরে জীবনের সাথে মিলে যাবে লেখাটি।

  3. শুধু কথা সাহিত্য নয়, কবিতাতেও আপনার চমৎকার দক্ষতা মামুন ভাই। ভালো আছেন নিশ্চয়ই।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।