রাত্রি ঘেরা বাড়ী

রাত্রি ঘেরা বাড়ী

– কেমন আছ সার্কাসের দুখিনী নন্দিনী, এই বিস্রস্ত বিকেলে?
– ভালো নেই। অনুশোচনার জল নদী ছাড়িয়ে মাঠ, মাঠ ছাড়িয়ে পুকুর, পুকুর ছাড়িয়ে রাস্তা, ঘরের উঠোন …মেঝে থইথই …
– ভুল পায়ের ছাপে পা রেখেছিলে মনে হয়। চোখ খোলা থাকলে অনেক কুদৃষ্টি পাশ ফিরে শোয়, ভুলেছিলে নিশ্চয়ই।
– ডুবন্ত আঁকড়ায় এমনকি পচা খড়। না শ্বাস না বাস কোনো কিছুতেই বাড়ানো হাত কাজে আসেনা।
– বিকেল শেষ হলে সকাল আসেনা কখনো, আসেনি কোনো উদভ্রান্ত উদ্বেগে। জানতেই যদি তবে এত কেন হাহুতাশ?
– মানুষই তো ভাবে। বাঁচার বহুভুজ কোণে মাকড়সা ও বাঘ দুজনেই সমান মাংসভূক। শুধু সম্মান বিক্রি হয় ক্যানিবল হাটে।
– ছুটির রোশনাইএ মত্ত আশপাশ, এ দীর্ঘ বিকেলে তোমার তো আনন্দে সাঁতার দেবার কথা ছিল! তাহলে আজ কেন এত আফসোস ছেঁড়াপাতা হাতে?
– ভাগ করার ঈশপের গল্প পড়েছ? এও তাই, কালনেমির লঙ্কা ভাগ পুড়িয়ে ছাড়খার করে দেয় প্রত্যেক বাঁচার সেকেন্ড। একচ্ছত্র সম্মান চাই আমার।
– দুর্ভোগ স্তর সাজিয়েছে, হাতে মোটা কালো রং ব্রাশ। সাবধানে ডিভাইডার এড়াও, ডাইনে বাঁয়ে তাকাও নির্দ্বিধায়, পথ বুঝে নিলে, শ্বাপদ এড়িয়ে এগোও।
– শ্বাপদও খিদে পেলে শিকারে বেরোয়। এ বধ্যভূমিতে মানুষই শ্বাপদ। বিশ্বাস কার হাতে রাখি, বুঝিনা কিছুই।
– তাহলে রাত নামুক। চোখ বুজে একান্ত ঈথারস্লটে প্রার্থনা ভাসাও, মানুষ, মানুষ হোক হে দুর্বোধ্য সময়। তারারা হাঁটুক রাজপথে। সূর্য চুমু দিক নবান্নের সদ্যজাত ধানের গোলায়। স্তিমিত গলায় বলো…
– আমেন।

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

2 thoughts on “রাত্রি ঘেরা বাড়ী

  1. 'মানুষই তো ভাবে। বাঁচার বহুভুজ কোণে মাকড়সা ও বাঘ দুজনেই সমান মাংসভূক। শুধু সম্মান বিক্রি হয় ক্যানিবল হাটে।' https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।