গণতান্ত্রিক আপদ বিদায়

গণতান্ত্রিক আপদ বিদায়

আজ ভোর চারটে চল্লিশে
সর্বশক্তিমান হাতুড়িতে আওয়াজ তুল্লেন
ঠক্…!
আর আমার ফাঁসি হয়ে গেল নির্জন জেলে।
তিনজন গোবেচারা নিতান্তই পেটের দায়ে
জলজ্যান্ত খুন টা দেখল দাঁড়িয়ে,
জেলের রান্নাঘরে তখন সাপ্তাহিক মাংসের প্রস্তুতি।

আচমকা তুলে এনেছিল বলে
বোতলের যেটুকু শেষ করতে পারিনি
কিম্বা সংহিতার আদরের চরম সময়ে
দরজায় কে যেন ডেকে কাচ ভেঙেছিল,
মন্দারমণির বালি পায়ে মেখে
পাশাপাশি হাঁটার সন্ধে
রবীন্দ্রসদনে সুমন ঝংকার গায়ে জড়িয়ে
শেষ মেট্রোর ফাঁকা কামরায়
আষ্টেপৃষ্ঠে ঠোঁটজোড়ায় জিভের সপাট টান,
সেইসব বিস্মৃতির গল্প
শীতের রোদ্দুরের ওম নিয়ে
চোখের সামনে ভাসতে না ভাসতেই
নেমে এল মাড়ের দুর্গন্ধি কালো মুখোশ।

উলঙ্গবেলা থেকেই জেনে এসেছি
হাজার এক বলিরেখার উল্কি আঁকা
মুখ নিয়ে নিস্পৃহ বাবার কোনো পার্সোনালিটি নেই,
রাতদিন অশ্রাব্য খিস্তি দেওয়া
মায়ের ধার শুরু হতো মাঝবয়সিনী মাসে,
সাত ভাইবোন কোনো উচ্চাশা ছাড়াই
যান্ত্রিক মুখস্থ করতাম
আকবরের জন্মতারিখ
নেহরুর মহানুভবতা
আমেরিকার জলবায়ু।

বহুটাকার বিনিময়ে বিনা টেন্ডারে কেনা
সাদা দড়িতে নাকি অনেক পাকা কলা
মাখানো নিবিড় মনোযোগে!
কয়েকটা কলা আমাদের দিলে
হয়তো বাবাকে ধার করতে হত না
হয়তো সেই সালিশী সভায় থুতু চাটতে হত না
সদ্য যুবতী হওয়া বড় বোনটাকে,
হয়তো রেল লাইনের ধারে পড়ে থাকত না
ওর প্রতিবাদী স্বপ্নশূন্য বিবস্ত্র দেহ,
হয়তো … হয়তো …!

কণ্ঠার হাড় ভেঙে যেতেই একদলা
থুতু বেরিয়ে ছিটকে গেছিল
এক চোখ ওয়ালা মেশিনের রোবটের মুখে,
ঈশ্বরীয় নিদান উচ্চারণ হল
‘ডেড’…
পৃথিবী বাঁচলো আরো একবার –
ভোরের আকাশে, পাবে, ডিস্কোথেকে
তখন আলোর কারিকুরিতে
ওয়ে ওয়ে ইয়ার…
হ্যাপি নিউ ইয়ার –
আজ ভোর চারটে চল্লিশে।

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

1 thought on “গণতান্ত্রিক আপদ বিদায়

  1. গণতান্ত্রিক আপদ বিদায়। নিঃসন্দেহে সুখকর একটি বিষয়। জীবন যুদ্ধে এই বা কম কিসে। জীবনের পরতে পরতে কেবলই যুদ্ধ আর যুদ্ধ; অহিংস পরম ধর্ম কেবলই আজ কথার পিঠে কথা। চলি সবাই এভাবে। ক্ষতি কী !!

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।