ঘর থেকে বের হই, প্রথম কদমের পূর্বে স্রষ্টার কৃপা কামনা করে এগোই পৃথিবীর পথে। …
যে পথ গুলো জালের মতন ছড়িয়ে আছে। এক একটা পথ এক একটা মঞ্জিলের দিকে ছুটছে, কোন কোন পথ আবার ধূম্রজালের মতন, লেটানো, পেঁচানো; কোন অতীব ক্ষীণ আবার কোন কোন পথ বলিষ্ঠ, সুঠাম।
এসব পথে আমাকে চলতে হয়, দৌড়াতে হয়, কখনো কখনো পথের জড়তায় থমকে যেতে হয়। কখনো কখনো সইতে হয় পথের দাম্ভিকতা! আজকাল
অনেক পথ দাম্ভিকতার গণ্ডি পেরিয়ে পৃথিবীর বুকে নিজেকে এক মহা ত্রাস, মহা আগ্রাসী হিসেবে দাঁড় করাতে মহাব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
আমাকে এসব পথের পথিক হিসেবে একেক সময় একেক বোধ ভোগ করতে হয়। সে আমি ভুগি- নীরবে। মাঝে মধ্যে ভোগের তীব্রতায় কঁকিয়ে উঠি, হাঁপিয়ে উঠি-
যে পথ গুলো আমার নিত্য চলার সঙ্গী কখনো কখনো সে পথ গুলোই ভীষণ অচেনা হয়ে উঠে। আমি হোঁচট খাই, পড়তে পড়তে উঠে দাঁড়াই। বেশ করে বুঝি আমাদের চির চেনা পথ গুলো এখন এত অচেনা যে- সে আর পথিকের মঞ্জিলে পোঁছে দেয়ার পথ থাকে না। এ পথ গুলো ক্রমেই স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছে, ফলে আমরা বাধ্য হই তার ইচ্ছের নর্দমায় গিয়ে পড়তে!
আমি সে নর্দমার গহ্বর থেকে আমার মঞ্জিলের দিকে তাকাই। ফেলে আসা ঘর- বসতি, সমাজ সংস্কৃতির দিকে তাকাই। পেছনের পথে আলো ঝলমলে ল্যাম্পপোস্ট গুলো আমার দৃষ্টি রেখা কে ব্যাঙ্গ করে, তীব্র উপহাস করে… তারও আগের পথ গুলো এবড়ো থেবড়ো মেঠো কদাকার, অথচ কি অমায়িক মমতা মাখা, যেন পথিকের জন্য বুকের সবটুকু ভালবাসা উজাড় করতে পেরেই সে তৃপ্ত!
আমি আহত হই, সামনের দুর্গম পথ পাণে তাকিয়ে ভীত হই। ভীতির নির্মমতায় কখনো কখনো ক্ষুব্ধ হই, প্রচণ্ড রকমের ক্রোধ আর তীব্র এক স্পৃহা আমাকে ঘিরে ধরে, আমি বিপ্লবী হই। …
আমি আমার পথের অবস্থান নির্ণয়ের চেষ্টা করি- “এখন কোথায় আছি?”
আমি চেষ্টা করি এই পথ সেই পথ থেকে দু’জন পথের সাথী খুঁজে নিতে। চেষ্টা করি একটি
সঙ্ঘবদ্ধ শক্তি বিনির্মাণে…
হায়!
এতো পথ, এতো পথিক, এতো জন স্রোত!
আমি তৃষিত মানুষের মতন একবার এক পথে ছুটে যাই, চৌরাস্তা, ত্রি মোহনায় দাঁড়াই।
গলা ফাটিয়ে হাঁক ডাক দিই, হাত বাড়াই, মুখোমুখি দাঁড়িয়ে স্বপ্নের কথা বলি!
একটি নির্মল ভোরের কথা শুনাই,
আমি বোঝাতে চাই পথ চলার জন্য কারো করুণার প্রয়োজন নাই, কারো লাল চক্ষু সহ্য করার প্রয়োজন নাই।…
না, আমার কথা শোনার সময় নাই কারো। কারো কারো সময় থাকলেও দু’দণ্ড দাঁড়িয়ে
কোন কিছু শোনার মানসিকতা নাই। কেউ কেউ অত্যন্ত প্রাজ্ঞ অথচ অতীতের স্মৃতি এতো হোঁচটে ভরা যে- নতুন পথের উপর তার আর ভরসা করার সাহস নাই।
আমি দমে যাই না
পথ এগোই, একা…
আমি দেখি পৃথিবীর আলো গুলো উঁকি দিচ্ছে অজস্র গুহার মুখে, আপন উজ্জ্বল দিয়ে মেটাতে চাইছে বন্দী গুহার জমানো অন্ধকার। অথচ গুহাবাসীরা অনেকেই চায় না তাদের আবাস নিবাস আলোকিত হোক, তারা মশগুল বৃত্তের মধ্যে ঘুরপাকে, তারা মেনে নিয়েছে তাদের সীমারেখা!
এরা কি পথ ভ্রষ্ট?
আচ্ছা ওরাই বা কারা? যারা নিজেদের ধ্যান জ্ঞান সবকিছু ব্যয় করছে পথ নিয়ন্ত্রণের জন্য- প্রয়োজনে তর্জন- গর্জন, যা কিছু পথের কাঁটা বলে মনে হচ্ছে দরকার হলে অনায়েশে তা সরিয়ে দিচ্ছে!
আমি নর্দমায় পড়ে গেছি, আর আগেও পড়েছি অসংখ্যবার, আবার উঠে পথ চলেছি, এখনো উঠে দাঁড়াচ্ছি … দাঁড়াতে দাঁড়াতে মনে হলো আবারো তো পড়তে হবে, দাঁড়িয়ে কি হবে?
তবু দাঁড়াই,
আমার পথের লক্ষ্য দিক নির্ণয় করি, পা চালাই, অনেক দূর পরে তৃষিত হই, গলা শুকোয়।
কথা জড়িয়ে যায় জিহ্বায়।
পৃথিবীর যে অংশে আমার নিত্য চলার পথ সে অংশটাকে একবার পরখ করার চেষ্টা করি পৃথিবীর বাহিরে হতে> উপর হতে, নভোচারীদের মতন।
আমি নির্বাক চেয়ে থাকি- এমন সোনার থালার মতন পটভূমি দেখে।এতো বৈচিত্রতা এতো মাধুর্যতা, এতো মমতার আবহ আর কোন অংশে নাই যা আছে আমার জন্মভূমিতে, আমার নিত্য চলার পথে…
তাহলে এতো থমকে যাওয়া কেন? এতো হোঁচট, এতো খানাখন্দ, এতো জঞ্জাল কিসের?
আমি আমার চোখ বুজে ভাবি
মা, মা ডাকি
বাবা বা ডাকি, এগো, ওগো বলে বৌ কে ডাকি,
আমি শুনি বাবা ডাক, পাপ্পা…
নিজের নাম শুনি মায়ের মুখে বাবার মুখে… এসব কিছু আমাকে পথ দেখায়, পথের নির্দেশনা দেখায়…।
আমি বল পাই… স্বপ্ন আঁকি,
চাঁদের আলোয় চাঁদের পথ, সূর্যের আলোয় সূর্যের পথ। এছাড়া
আমি আরো সব পথ দেখি- মধ্যরাত ফেরুলে বাবার জিকিরে… সাত সকালে কোরানের সুরে। আমি পথ দেখি কবিতায়, গানে, নির্মল সকালে শিশির ভেজা ঘাসফুলের মুচকি হাসিতে, পাশের বাড়ির যুদ্ধাহত জ্যেঠুর পুঁথির শ্লোকে…
এসবে আমার পথ চলার জল খোরাক তো মিলে যায়। কিন্তু আমি রুখে যাই, নতুন কোন হোঁচটে …
এই যে পথ এখানে তো তাহার থাকার কথা না
যে আছে সমাজপতির আসনে, যে কালরাতের পূজক সে কি করছে- আমাদের কবিতা সন্ধ্যায়? পুঁজি বাজারের রাঘব বোয়ালেরা কি করছে রাষ্ট্র যন্ত্রের ইঞ্জিন ঘরে?
আর…
ওরা কোন কাজে আঁকড়ে আছে শিল্পিত ক্যানভাস- যারা রক্তের সওদা করে, কালো টাকার
পাহাড়ে নিজের উৎপ্রেতে থাকার গুহা বানায়!
এই যে আল্ট্রামর্ডান গাড়ি গুলো সে পথ বেয়ে ছুটে চলে
আমি থমকে দাঁড়াই তাদের সওয়ারীরা যখন এক টা ভোটের জন্য পায়ের ফসকা ফেলে দেয়।
আমার বার বার মনে হয় আমি ভুল পথে আছি
এই পথ আমার নয়।
এই কবিতা
এই গান
এই ঐতিহ্যের গুণগান এসব তো ছিনতাই হয়ে গ্যাছে, যে ভাবে ছিনতাই হয়েছে আমাদের ৭১, যেভাবে গুম হয়ে গেছে আমাদের সোনালী ইতিহাস…
আমাদের পিঠেপুলির ঘ্রাণ…
শস্যক্ষেতের চোখ ধাঁধানো রূপ- মায়া!
জানি আরেকটু এগোলে বিপদ তেঁতে উঠবে।
কিন্তু আমি তো দমে যাবার জন্য পথে আসিনি- আমি এসেছি পথের শেষে পথে মঞ্জিলে
নিজের অস্তিত্বের পতাকা উড়াতে।
তা কেউ আমার পথের সাথী হোক বা না হোক
কেউ তালিয়া বাজাক বা না বাজাক, আমার পথ চলা নিরন্তর এগিয়ে যাবে ।
'এতো পথ, এতো পথিক, এতো জন স্রোত!
আমি তৃষিত মানুষের মতন একবার এক পথে ছুটে যাই, চৌরাস্তা, ত্রি মোহনায় দাঁড়াই। গলা ফাটিয়ে হাঁক ডাক দিই, হাত বাড়াই, মুখোমুখি দাঁড়িয়ে স্বপ্নের কথা বলি! '
___ পথ তবু পথের মতোই রয়ে যায়। লিখাটি পড়ে বেদনার্ত হলাম স্যার। স্বাগতম।
মন খারাপ হওয়ার মতো লেখা। অনেকদিন পড় আপনার লেখা পড়লাম। ভাল থাকুন কবি দা।
এতো পথ, এতো পথিক, এতো জন স্রোত!
আমি তৃষিত মানুষের মতন একবার এক পথে ছুটে যাই, চৌরাস্তা, ত্রি মোহনায় দাঁড়াই।
নতুন বছরের ভালোবাসা কবি ভাই