দাউদুল ইসলাম এর সকল পোস্ট

দাউদুল ইসলাম সম্পর্কে

সব সময় নিজেকে বলি- মানুষ হবি যদি- অন্ধকার ঘরে যখন একা থাকবি তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করে নিস তুই কতটা মানুষ। কতটা তোর সভ্যতা কতটা তোর ভদ্রতা! স্নান ঘরে যখন একা শাওয়ারের নিচে দাঁড়াস- তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করিস কত টা আছে তোর মনুষত্বের রুচি! জিজ্ঞেস করিস কতটা তুই ভদ্র, সভ্য!

পর্যটন নিশি

তপ্ত নিশ্বাসে উবে যায় ঘুম..
অধীর ত্রাসে
মিশে থাকে নিঝুম পর্যটন
অচিন পর্বতারোহণের নেশা;
জ্যোৎস্নার বনে
পুনমী আলো ছায়া
সুগন্ধি মোহন মৃগ
অস্থির…
ঠুমরীর তালে নাচে নটরাজ
গোপন মুদ্রায়
স্ফুরিত মধুপের সুক্ষ্ণ কারুকাজ!

মানুষ অন্ধ হয়…

মানুষ অন্ধ হয়
হতেই হয়- প্রেমান্ধ, ধর্মান্ধ, ধনান্ধ, ক্ষমতা কিংবা শোষোণান্ধ
কেউ কেউ আবেগান্ধ, কেউ কেউ রাগান্ধ
আবার কেউ কেউ ডুবে থাকে শরীর সম্বন্ধীয় মোহান্ধতায়
অন্ধত্ব মানুষকে নিয়ে আসে চারিত্রিক এককে-
অন্ধত্বে আত্মস্থ হয়ে উঠা মানুষ গুলো একে একে ধারণ করে
বিশেষ বিশেষণ,
অন্ধত্ব জুড়ে থাকে তাদের জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে…
এবং কি তাদের যা কিছু অর্জন,
যা কিছু ত্যাগ- বিসর্জন, উপমা, উপাধি থাকে
সর্বত্রই এই অন্ধত্বের জয় জয়কার অবাধ বিচরণ!
যে যত বেশী অন্ধ সে তত বেশী সফল
পৃথিবীতে অন্ধত্ব বরণ করা ছাড়া আর কোন নিস্তার নাই…

পার্থক্য কেবল জন্মান্ধ মানুষের
জন্মান্ধের কাছে দিন রাত সবিই সমান অন্ধকার
অন্ধকার তার কাছে স্বচ্ছ দিনের মত, সে তো জানে না স্বচ্ছ দিন কি!
আলোর স্বাদ তার কাছে নিছক শব্দ স্বর
শব্দই তার আলো…
সে বোঝে উত্তাপ, হিমাদ্র,
বৃষ্টি তার কাছে স্রেফ রিমঝিম; আর্দ্র- অনার্দ্র রাত
বাতাস, তাকে ছুঁয়ে জানিয়ে দেয় ফুলের প্রকার ভেদ, নদীর রূপ,
নারীর বিশুদ্ধতা
আশ্চর্য হচ্ছে- সেও হাতড়ে বেড়ায় প্রতিটি স্থাবর অস্থাবর
দারুণ এক অন্ধ বিশ্বাসে…
জন্মান্ধের কাছে অন্ধ-বিশ্বাস ছাড়া আর কি উপায় আছে?

অথচ-
আমরা হতভাগ্যরা প্রতিদিন অন্ধ হচ্ছি!
অন্ধের মত হাতড়ে বেড়াচ্ছি
নতুন নতুন গন্ধ, সুখ… প্রতিদিন বদলাচ্ছি সুশীল মুখোশ!
আসক্তির অন্ধত্বে জেগে আছি উন্মুখ…আক্রোশ; তৃষ্ণার্ত চাতকের মত
না পারছি দাড়াতে বিশেষ কোন এককে
না পারছি বসতে নিশ্চিন্তে…কেবলই ঘুরপাক খাচ্ছি
ঘুরে ফিরে একিই বৃত্তে!

চাপা

চাপা ক্রোধে
চপলা চাপাতি উন্মত্ত করি নৃশংস নৃত্যে
যতক্ষণ না
দ্বিখণ্ডিত হচ্ছে কাধে চাপানো ক্রোধানল…
শানিত বুকে
শোণিতের শীৎকার
মুখরিত শ্লোগান চাপিয়ে
নিংড়ে তুলি অতলের শেকড়, আসল অস্তিত্ব!
প্রাগৈতিহাসিক নিস্তব্ধতায় চেপে থাকা ঝড়
মুখোমুখি বেধড়ক হাঙ্গামা, অজস্র শব্দ-স্বর….

নিড়ানি পেয়ে উঠে আসে বিবস্ত্র যুগ
কালের গহ্বরে ডুবন্ত আবেগ, পুরনো অসুখ!

হয়তো আমি নির্বোধ
বুঝিনা কিছু
এবার বেরিয়ে পড়বো অনন্তের পথে
তোরা আসিস না কেউ
এদিকে ফিরেও তাকাস না কেউ
আমি একা চলতে চাই.. একদম একা
আমার সহ্য হচ্ছে না ক্রোধ!…

২১/৯/২৩

আদরে আপ্লুত

dd

ছাই রঙা মাঠের কোমর্য জুড়ে
কিলবিল করে উঠে শিশিরমন্ডিত শস্যফুল,
আশ্চর্য এক নিসর্গ ধ্বনিতে নেমে আসে সূর্যকণা-
ঐশ্বরিক আদরে আপ্লুত প্রজাপতি, পতঙ্গকুল।

আজ তবে ভেস্তে যাক যাবতীয় নিয়ম-নখর
স্নান ঘরে পড়ে থাক বাসি কাপড়,
মহুয়ার ঘ্রাণ মেখে চলো ছুঁয়ে আসি নন্দিত উদ্যান।

কালকেউটের বাসর

dau

আমি আর কই যামু-
যহন আমারে চিনে না আমার খেতি জমিন
যহন আমারে সে ফিইরা চাহে না, কাদা জলে
মাখতে দেয়না- গড়তে দেয়না কস্তূরী হরিণ…
আমি এখন কোন ক্ষেতে চালামু হালের লাঙ্গল
চাষের কলা কৌশল মেনে চিনে- কোন আশায়
দিমু নিড়ানি সাফ করমু আগাছার জঙ্গল;
আমি না হয় মগ্ন আছিলাম নিশান্তের ধ্যানে-
শ্রাবণে গানে জলধির নৃত্যে
তাই বইলে-কি জমিন ভুলিতে পারে, বেগানা কৃষাণের মদমত্তে!
এখন জমিন জোড়া বধ্যভূমি- বুকের ধন ছেঁড়া স্বপ্ন সমাধি
কান্নার গহীনের বাদ্য বাজে, বাজে শঙ্খধ্বনির মর্মর
রাতের পাখীদের ক্ষুধার্ত শীৎকার- মত্ত শুধু কালকেউটের বাসর!

আমি কোন খানে পামু আশ্রয়, কারে করমু পথের সাথী
যেখানে বেবাকতেই কয় তপ্ত কথা- তয়, কে হইবো অগতির গতি
কে চাইবো ফিরে- অহন
কে বুঝবো এই অধম নাখান্দা নালায়েক (অ)কবির মন
ভিটে বাস্তু হারা- দুদণ্ড ঠাই নাই যার
পথের দিশা হারা- বুকে খণ্ড বিখণ্ড মেঘ, বিচ্ছিন্ন আবেগ
বাড়িয়ে চলিছে সংকট!
কলিজা পোড়া গন্ধ নির্গত দীর্ঘশ্বাসে
বুঝতেইতো পারিনি তুলোর মতন মেঘে- তুষের আগুন পুষে রেখেছে!

৭.৭.১৭

ষোলকলা কৌশল

আমি অকর্মা বলে- বাকীরা লুটাইতো গাছে ছড়ার মুনাফা সুকৌশলে। বরই পাকলে বরই, জাম পাকলে জাম, গাছে ছড়তে পারতাম না বলে ঢিল ঢাল ছুড়ে যা পড়তো তাই খাইতাম।
ওরা মচকা মেরে খেতো কচকচে পেয়ারা, কাঁচা আম।
…তলায় থেকে আমি হুদাই চিল্লাইতাম।

শীতের মৌসুমে আমাদের খেজুর গাছ খোদাই হতো। গাছির বাটালের ধারে সব ক’টা খেজুর গাছ তৈরি হতো পরিপাটি রমণীর সাজে, চেঁচে চেটে যাদের গ্রীবার নিচে চাঁদের মত চকচক করতো উজ্জ্বল মোহনা, সিনা সন্ধি, যেখান থেকে ঝরতো ফোঁটা ফোঁটা রসের ধারা। আমি ঐ একটা গছেই চড়তে পারতাম, খোপ বেয়ে বেয়ে। রসের লালসায় সকাল সন্ধ্যা হতাম উন্মুখ, নিকষ বরষায় প্রেতে দিতাম জিহ্বা, লুটাইতাম গাছে চড়ার সুখ।

রোজ রোজ।
আমিও করতাম মধুবালার খোঁজ। যার জন্যে- জাগতো মালতী লতার দোলা, কোকিলার সুরে গাইতাম গান, ডাকতাম গোপনে- মোহন জলে, হংসমিথুন লীলায়, অবিরাম তই তই বোলে।
এই মর্ম জ্বালা। সাপ লুডু খেলা। তুরুপের তাস। চড়াই উৎরাই ফেরিয়ে শিখি আরোহণ। ষোলকলা কৌশল। রসে- কষে মাখামাখি, চিনি সাধের জীবন।

আমাকে ঋণী করো

da

এসো,
আমাকে ঋণী করো
মনে প্রাণে
যৌবনে প্লাবনে
করো ঋণে ঋণে জর্জরিত,
বিদীর্ণ করো
অঙ্গার করো
করো জীর্ণ কুন্তল, নিষ্প্রভ;
বিবাগী করো
উদগ্রীব করো
এই জন্মে যা শোধ অসম্ভব!
করো ঘায়েল
রুদ্ধ পায়েল
ঋণের শৃঙ্খলে হই দেউলিয়া প্রেমিক
প্রেমে- উদ্যমে
গুপ্ত সঙ্গমে
তোমাতেই করো সুরলিয়াজমের সৈনিক!

.
দাউদুল ইসলাম।

বধির হয়ে যাও

পরমা প্রকৃতিতে
ডুবে যাও
কৃতজ্ঞতায় নতজানু থেকে
তলিয়ে যাও..
মিলিয়ে মিশে যাও
মৌন শিলাস্তরের বুকে,
অশ্রু পতনে, রুধীরাক্তের হিমাঙ্কে
শূন্য হয়ে যাও…
বিলিয়ে দাও আপনাকে
অমিয় মধুরত্বে
… তারপর বধির হয়ে যাও!

নির্ঝর ঝর্না

নির্ঝর ঝর্না
অভিমানে ভুলেছে প্রাণচর্চা, সুরের মূর্ছনা;

ভোমরা মেলেছে ডানা,
ফুলেরা লুকিয়েছে পাতার ঘোমটায়…
মিটিমিটি হাসছে শ্যামা প্রথম যৌবনা।

পাথর গলিয়ে নামছে বরফের স্রোত
বুকে হিমালয় কন্যার গুপ্ত প্রেম….
দহনের তোরণ ফেরিয়ে ভিড়ছে সবুজ স্মরণ,
বহুকাল আগের চুম্বন স্মৃতি, প্রবল বরিষণ!

আয়োজন যজ্ঞে ব্যতিব্যস্ত সমস্ত পক্ষিকূল,
আরণ্যক মন্থনে –
আগামী বসন্তে এখানে প্রজাপতির মেলা বসবে
ফিরবে সাঁইজির, একতারা,রবিশংকরের তবলা
ভাবের চুলে জাগবে দোলা..
থাকবে প্রাণের রসদ, অমর্ত্য ভরতনাট্যম…

কেউই জানবেনা একান্ত গোপনে
ঝর্নার নির্ঝরে উন্মত্ত হবে- একটি দৈব সঙ্গম!

… তারপর একটি ফুৎকার

da

নরক থেকে উঠে আসছে
দাহ্য উত্তাপ
তেজস্বী রোদ্দুরে
নামছে গনগনে রশ্মি
নিটোল বৃক্ষ, নীরব
গোমড়ামুখো পত্র পল্লবে
জমেছে
পৃথিবীর সমস্ত কায়া কালিমা;
বায়ুশূন্য
গনগনে আকাশে জ্বলজ্বলে উষ্মা
চোখ রাঙাচ্ছে মানুষের চারণভূমে
মানুষের পাপে
মানুষের ঘৃণায়
অবর্ণনীয় অভিশাপে!..
যেনো
মৃয়মান হয়ে আসছে পৃথিবী
থেমে যাচ্ছে পাখিদের কোলাহল
উধাও বন,বৃক্ষরাজি,তৃণের জঙল
চুকে যাচ্ছে –
জীববৈচিত্র্যের আনাগোনা
মিছে লেনদেন
পতঙ্গভুক
মানুষের মোহ মায়া
চিরন্তন ক্ষুধা তৃষ্ণা… আজন্ম আকাঙ্খা!
রুধীরাক্তের উত্থান-পতনে বিবর্ণ সমুদ্র
বিদীর্ণ চাতালে
ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ আত্মহুতি দিতে দিতে
জানিয়ে যাচ্ছে অতলান্ত কাহিনী!..
নির্ভার দুগ্ধ শিশুরা
মাতৃস্তন থেকে মুখ তুলে হাসছে
নিঃশেষের বাকে…
রতিমগ্ন সুখ ত্যাগ করে
রাতের অন্ধকার হাতড়াচ্ছে নবদম্পতি!
নির্ঝর ঝর্ণার স্মৃতি বুকে
দাড়িয়ে থাকা পর্বতশৃঙ্গ, লুপ্ত চোখে
অনন্তের হাহাকার…
বাকী শুধু
ইস্রাফিলের শিঙার গর্জে উঠা!
শুধু একটি ফুৎকার
কেমন হবে সেই ধ্বনি? সেই দুর্মার
ধ্বংসের বীভৎসতা!…

মৃত আত্মারা
দৌড়াচ্ছে উল্কাপিণ্ডের মতো
ঝড়ের বেগে দৌড়াচ্ছে জীবন্ত প্রজাতিরা…

কেউ-ই আর মানুষ নয়
না পশু
না পাখি, জীব জন্তু
অবশেষে সকল আত্মা মিশবে এক মোহনায়
সবার হাতে আমলনামা
কৃতকর্মের ফিরিস্তি দেখে সে-ই কি চিৎকার;
ক্রোধে, শোধে
আর্তনাদে গলবে আগ্নেয় লাভা!…

যার পাদদেশে
অথবা গহ্বরে অনন্তকাল পুড়বে দুর্ভাগারা!

.
১/৬/২৩

অঞ্জলি লহো হে কবি…

3017

30095 যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে, অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে –

কাজী নজরুল ইসলাম (মে ২৫, ১৮৯৯ – আগস্ট ২৯, ১৯৭৬), (জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬ – ভাদ্র ১৪, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ), অগ্রণী বাঙালি কবি, বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, সংগীতস্রষ্টা, দার্শনিক, যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকার সঙ্গে সঙ্গে প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক, দেশপ্রেমী এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি। আজ তাঁর ৪৬ তম প্রয়াণ দিবস।

পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ – দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে –- কাজেই “বিদ্রোহী কবি”। তাঁর জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে প্রতি বৎসর উদযাপিত হয়ে থাকে।

নজরুল এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়। স্থানীয় এক মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজও করেছিলেন। কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতে যেয়ে তিনি কবিতা, নাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এসময় তিনি কলকাতাতেই থাকতেন। এসময় তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। প্রকাশ করেন বিদ্রোহী এবং ভাঙার গানের মত কবিতা; ধূমকেতুর মত সাময়িকী। জেলে বন্দী হলে পর লিখেন রাজবন্দীর জবানবন্দী। এই সব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। ধার্মিক মুসলিম সমাজ এবং অবহেলিত ভারতীয় জনগণের সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক ছিল।

3023

তার সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালবাসা, মুক্তি এবং বিদ্রোহ। ধর্মীয় লিঙ্গভেদের বিরুদ্ধেও তিনি লিখেছেন। ছোট গল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। বাংলা কাব্য তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন। এটি হল ইসলামী সঙ্গীত তথা গজল। এর পাশাপাশি তিনি অনেক উৎকৃষ্ট শ্যামাসংগীত ও হিন্দু ভক্তিগীতিও রচনা করেন। নজরুল প্রায় ৩০০০ গান রচনা এবং অধিকাংশে সুরারোপ করেছেন যেগুলো এখন নজরুল সঙ্গীত বা “নজরুল গীতি” নামে পরিচিত এবং বিশেষ জনপ্রিয়।

মধ্যবয়সে তিনি পিক্‌স ডিজিজে আক্রান্ত হন। এর ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। একই সাথে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকা আসেন। এসময় তাকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয়। এখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।।

3014

শ্রদ্ধেয় মরহুম কবি কাজী নজরুল ইসলামের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।

শ্রদ্ধার সাথে তাঁকে স্মরণ করছি, এবং তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। সেই দিনের সেই দুখু মিয়া যদি পৃথিবীতে না আসতেন, তবে সম্পদশালী বাংলা সাহিত্য তাঁর বিপুলাংশের ঐশ্বর্য্য, সাহিত্যের রত্নভান্ডার হতে বঞ্চিত হতো।

আল্লাহ উনাকে জান্নাত নসীব করুন।

লেখকঃ দাউদুল ইসলাম
( কবি ও প্রাবন্ধিক )

নবীন সুর ও সংগীতে

da

… এভাবে ফিরে আসে অতীত,
প্রাচীন ঘোর
নামে শৈল প্রপাত
অন্তরে রঙ্গীন প্রভাবরি ভোর।
সহস্র রজনী কাটে নির্ঘুম
কেটেকুটে রচিত হয় কবিতা
কাটে দ্বিধা, সুধা… স্বপ্নচারিতা
কাটেনা কেবল-
তোমাকে দেখার নেশা…. শ্রুতি মনোহর!

এই যে বাজছে শুনি
শঙ্খের চুম্বনে তুমুল শঙ্খ ধ্বনি,
ধ্রুপদ রাগ,
সমুদ্র মন্থনে জেনে গেছি
তোমার সনে আগুনের গোপন প্রণয়!
জলও খুজে অতল
নবীন সুরে বুঝে বিরল সংগীত
আমিই কেবল খুঁজিনি জীবন
চিনতে যাই নি আসল- নকল।

গোপন সুর

br

বৃষ্টি.. পতনোন্মুখ পরাগকে উসকে দেয়
স্খলনের নেশা, লাজুক রেণু ঝেড়ে
ধূম্রল আড়ালে খুলে দেয় সঙ্কোচের ফটক,
কামান্ধ প্রলয়ের সৌষ্ঠবে বাজে বজ্রনিনাদ,
তুলে নেয় আদ্রক চুম্বন
ঘামের ঝর্নায় রচনা করে সায়েরি, প্রেম-প্রবাদ!

রাগিনীর অক্ষিসারে জ্বলজ্বলে কবিতা,
বৃষ্টির নন্দনে একাকার নদীটির আপন নাগমা
একজীবনের সমস্ত ব্যাকুলতা বয়ে
হয়েছে পরিনিতা খরস্রোতা!..

দহনের পরিক্রমা আর-
অজস্র উন্মাষিক মেঘের পাহাড় ডিঙিয়ে
নিশি ক্লান্ত বকের চোখে এঁকে দেয় পূর্ণিমা চুম্বন!…

কবিতার কবি’রাও উন্মত্ত হ্রেষা
ছন্দবদ্ধ শৃঙ্গারে আজকাল ঠিক পুষে না যাদের
ছুটে চলে দূর.. সমুদ্দুর..
ধ্রুপদী বুকে প্রলুব্ধ আলিঙ্গন তৃষ্ণায় আকণ্ঠ মন
স্বর্গীয় হুরেরাও
পুরুষের তাম্রতামাটে ঠোঁটে খুঁজে জীবনের গোপন সুর।

.
দা উ দু ল ই স লা ম।
১৮/৮/২৩

আত্মহুতি

dau

আমি চলে যাচ্ছি প্রস্থানের পথ ধরে, নিজেকে নিয়ে যাচ্ছি বাধ্যতামূলক অবসরে…
তুমি থাকো… দিগ্বিজয়ের নেশায় বুদ হয়ে আরো কিছু স্বপ্ন আঁকো…। তুমি একা নও জৌলুস ভরা জলসায় ; তোমাকে রেখে যাচ্ছি ভীড়ের নিভৃতে!

অনেকেই ফিরে গেছে আঁধার বনে, কেউ কেউ বেছে নেয় নির্বাক-ধূসর শূন্যতা ; কেউ কেউ অগ্নিপথ কিংবা খরস্রোতা নদী, জানো নিশ্চয়ই বেচে থাকা মৃত্যুর মতো সহজ নয় ; কষ্টের দুর্গম পারাপারে কখনো কখনো খুইয়ে যায় আজন্ম কালের স্বপ্ন!

তবুও কবিতা রচিত হয়
অনেক পাখিরা তাদের উষ্ণীষ বগলে আগলে রাখে অবহেলিত কবির কবিতা! অনেক রাখাল ক্লান্ত দুপুরে বাঁশির সুরে ফিরিয়ে আনে নির্লিপ্ত বাউলের মন। এমন উদাস যাপনে আরো কিছুকাল অতিবাহিত হোক তোমার নিঃসঙ্গ জীবন!..

আমার প্রস্থান তোমাকে ভেঙে যাওয়া মৌচাকের রানী মৌমাছির মতো উত্তেজিত করুক
আমি চাই.. পৃথিবীর তাবত কবিরা জানুক –
সর্বভুক একটি গ্রাস তছনছ করে দিয়েছে আমাদের যৌথ উদ্যান….
যেই ইতিহাসের মর্মরে গুঞ্জরিত হচ্ছে অজস্র ঘাসফুলের করুণ আত্মহুতি!….

আজ রোদনের দিন

3

আজ রোদনের দিন
অশ্রুত কজ্জলে শোকের সাগরে ভাসার দিন
প্রাণের বাঁকে সহস্র ‘রাব্বির হাম হুমা’…
কামনার দিন!
ইস্পাত কঠিন চেতনায় পুনঃশপথে লীন হবার দিন!..

স্মরণ করো সেই ধ্বনি,
চিৎকার- বুকে ছিলো রক্তের জোয়ার
স্মরণ করো সেই তর্জনী, দরিয়ার গর্জন
আরক্ত হুংকার-
ভিড়ছে তরঙ্গ উর্বশী ফণায়, জনস্রোত ;
প্রকম্পিত আসমান জয় বাংলার গানে
সোনালী বয়ানে উদ্বেলিত জনতা
রেসকোর্স ময়দানে পিতার কণ্ঠে রচিত মহান স্বাধীনতা!

স্মরণ করো তীক্ষ্ণ ধার
স্মরণ করো সেই তৃষ্ণা, উষ্ণীষ আঁধার –
চব্বিশ বছর পূর্বে প্রাণের মননে লালিত
স্বাধীন বাংলার বুননকৌশল..
যার ফলিত পুষ্পোদ্যান ছারখার করেছে
দুধকলায় পোষিত সাপ
পনের আগষ্ট পচাত্তরে, শিখরের সিড়ি রুদ্ধ করে
জাতির কপালে এঁকে গেছে কলঙ্কের ছাপ!
স্মরণ করো সেই অশোধিত ঋণের ভার
রক্তে ডুবা তৃণের শীৎকার!..

আরো করো স্মরণ, আরো শ্রদ্ধা
দাও অঞ্জলি জাতির পিতার চরণে
যার ঋণ শোধানো অসম্ভব
তাকে শ্রদ্ধা স্বরণের ছেয়ে বেশি কিইবা দেয়ার আছে…
পৃথিবীর কাছে যার বেহিসাব পাওনা
রেখে
দিয়ে গেলো স্বাধীন শিরোস্ত্রাণের অধিকার
তাঁকে অমর্যাদা করার স্পর্ধা তাদেরই আছে
যারা নিজের জন্মকে করে অস্বীকার!..

.
১৫/৮/২৩