“বন্ধু কি খবর বল- কতদিন দেখা হয় নি”…

বন্ধু

“বন্ধু কি খবর বল- কতদিন দেখা হয় নি”…

একটি ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে প্রতি রাতে ঘুমোতে যাবার আগে তার দাদাই এর পায়ের কাছে বসে কৃতজ্ঞতা জানাত। “থ্যাঙ্কিউ গড, ফর রেষ্ট এন্ড ফুড এন্ড লাভিং কেয়ার, এন্ড অল দ্যাট মেকস দ্যা ডে সো ফেয়ার। লাভ ইউ গড!” আর দাদাই তো চমকে উঠতেন আর বলতেন ‘ওরে আমাকে নয় সর্বময় কর্তার কাছে প্রার্থনা জানা’, আর সেই মেয়েটি বলত তুমিই তো সেই কর্তা। আমি আর কাউকেই চিনি না। তখন দাদাই ছিল তার একমাত্র বন্ধু।

মনে হয় এইতো সেদিন প্রথম যখন দাদাই এর হাত ধরে স্কুলে যাওয়া, চার বছরকে ছ বছর বানিয়ে ক্লাস ওয়ান। সে কি কান্না! কিছুতেই থামতে চায় না। ক্লাস টিচারের শাড়ির আঁচলে চোখ মুছেও শেষ হয়নি চোখের জল। কিন্তু ক’মূহূর্ত পরেই তো সব ভুলে গিয়ে মেতে ওঠা। সে তো শুধু বন্ধুদের পেয়ে। স্কুলে যেতে কখনোই খারাপ লাগতো না। একদিনও স্কুল ফাঁকি দিতে ভালো লাগতো না। সবাই বলবে আহা ! কি ভাল মেয়ে। আসলে তো মূল কারন ছিল বন্ধুরা। আগের দিন পড়া গল্পের বই, সারা মাঠ দাপিয়ে বেড়ানোর ইতিহাস- এসব কিছু হজম করানো জন্য চাই বন্ধু। তার উপর আছে টিফিনের ফাঁকে নানা খেলা।

কলেজের সময়টা খুব অল্প মাত্র তিন বছর। তারও পরে মাস্টার্স দুবছর। কোন মতে ক্লাস শেষ করে ছুট দিতাম কফি হাউসে, না হলে হাতিবাগানে। সব বন্ধুরা মিলে হাত ধরেই হাঁটতাম। মানুষ ফিরে তাকাতো। কিন্তু আমরা থোড়াই কেয়ার করি। সব সময় ব্যগে হয়তো টাকা থাকতো না। তাতে কি, শখ তো আটকে থাকে না। একদিন আমাদের বন্ধুরা মিলে কিছু একটা খেতে ইচ্ছে হলো। আমাদের ব্যাগ ঘেঁটে যা টাকা পেলাম তাতে একটাই কেনা যায়। ব্যাস তাই করা হলো। ওই একটা খাবার আমরা সব বন্ধুরা ভাগ করে করে খেতাম। এখনতো ইচ্ছে করলেই আইসক্রীম বা ফুচকা, বা যা খুশি খেতে পারি কিন্তু বন্ধুদের সাথে ভাগ করে খাওয়ার সেই স্বাদটা আজ আর পাই না।

বন্ধু, তোদের অভাবে হয়তো।

আজ সারাদিন ভীষণ একা লাগছিলো। স্মৃতির রাজ্যে বারবার উঁকি দিচ্ছিলাম। এই তো সেইদিনের কথা … ক্লাস সেভেন, এই পয়লা বৈশাখেই তো হাত, পা কেটে, অনেক চেষ্টা করে সাইকেল চালাতে শিখেছিলাম। তোরা না থাকলে আমার সাইকেল চালানো শেখাই হতো না।

বন্ধু নিয়ে এত কথা বললাম কিন্তু আমি জানি না আসলে বন্ধু কাকে বলে? কারণ বারবার মনে হয় Friendship is nothing but a name. আবার ভাবি সত্যিই কি তাই? বুঝে পাই না। তবে কি ভালবাসা আর মমতাকেই আমরা আদর করে বন্ধুতা বলে ডাকি?

প্রতিদিন সূর্য উঠে আবার সূর্য অস্ত যায় একই নিয়মে। কোন দিন এর ব্যাতিক্রম হয় না। শুধু এক জায়গায় ব্যাতিক্রম হয়, আমার জীবনের প্রতিদিনের সূর্য আলাদা আলাদা ভাবে উঠে আর আলাদা ভাবে ডুবে যায়। কখনো কখনো কালো মেঘে ঢাকা পড়ে জীবনের সূর্যটা ফলে আড়ালে থেকে যায় রোদ আবার কখনো সূর্য তার প্রবল তাপে ঝলসে দেয়, লণ্ডভণ্ড করে দেয় সব কিছু। ভীষণ ভাবে ভেঙে যাই, টুকরো হয়ে যাই।

আবার যদি ফিরে পেতাম সেই সময়টা। সত্যি বলছি দুষ্টুমি করে বকুনি খেয়ে কারোর উপর রাগ বা অভিমান করতাম না। বন্ধুদের সাথে একটুও ঝগড়া করতাম না, একটুতেই অভিমান করে বসে থাকতাম না।

আজ আমি ভীষন অনুভব করতে পারি আমার সেই সব বন্ধুদের অনুপস্থিতি। সেই সব দুষ্টুমির দিনগুলো। আজ একটা জিনিস স্পষ্ট বুঝি তা হল, আমরা যতই বড় হই না কেনো, যতই বড় চাকরি করি না কেন, সেই ছোটবেলার বন্ধুরা একই রকম থাকে। আমাদের মনে। শুধু আমাদেরই জন্য।

বন্ধু তোদের কাছে আমার অনেক ঋণ …

8 thoughts on ““বন্ধু কি খবর বল- কতদিন দেখা হয় নি”…

  1. যথেষ্ঠ নস্টালজিক হলাম বন্ধু রিয়া রিয়া। " আমরা যতই বড় হই না কেনো, সেই ছোটবেলার বন্ধুরা একই রকম থাকে। আমাদের মনে। শুধু আমাদেরই জন্য।" https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    1. একদম তাই, আমরা বারবার আমাদের ছোটবেলা ফিরে পেতে চাই… তাছাড়া আজকাল তো বন্ধু সেজে এসে পিঠে ছুড়ি মারার লোকও কম নেই তাই.. প্রকৃত বন্ধু বিরল। ভীষণ ভালো থাকবেন বন্ধু ..

  2. দিদি আমারও এমনটি হয় যেনো বুকটা উহু করে উঠে

    আবার যদি ফিরে পেতাম সেই বন্ধু সেই ক্ষণ আহা———

    1. সেটাই কবি দা। আর কি ফিরে পাওয়া যাবে ফেলে আসা দিন গুলো!! :(

  3. মনে পড়ে পেছনের কথাগুলো, স্মৃতির চাদরে মোড়া কতশত গল্প।

    1. স্মৃতির চাদরে মোড়া কতশত গল্প। ফেরেনা কেউ।

  4. আসলেই বন্ধুদের কাছে অনেক ঋণ। তারপর কে কোথায় চলে যায়। চমৎকার লেখা।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।