দ্য ফার্স্ট কিস : মামুনের অণুগল্প ৪২৪

এক মেয়ে আর এক ছেলের সাথে কঠিন সম্পর্ক ছিলো। ১৪ বছর আগে তাদের কিভাবে যেন বিচ্ছেদ হয়ে যায়। একটা যুক্তিযুক্ত কারণ ছিলো। পারিবারিক, সামাজিক.. আজ তার স্মরণের কিছু প্রয়োজন নাই।
.

১৪ বছর পরে মেয়েটার ক্লাসমেটদের মধ্যে একজনের সাথে এই ছেলেটা ওই মেয়েটার কিছু মিল পেয়ে যায়। ঠিক কোথায় এই মিল তা ছেলেটাই ভালোভাবে জানে না। বন্ধুদের আড্ডায় তাদের পরিচয় হয়েছিলো। কোনো বন্ধুর মাধ্যমে। তাদের চলাফেরা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন সার্কেলে। না পেশা, না নেশা – তাদের কিছুই এক ছিলো না। তবু একটা শক্ত সম্পর্ক হলো। একে অন্যের অনুভুতিগুলি তারা প্রায় একইভাবে অনুভব করতে পারতো। তাদের মধ্যে একটা কমন প্রয়োজন বোধ জানান দিলো। বন্ধুরা তা বুঝলো। কিন্তু এবারও ছেলেটার সম্পর্কটা সেই পরিবার, সমাজ আর রীতি নীতির প্যাঁচে পড়ে গেলো।
.

সম্পর্কের অল্প দিনের মধ্যেই মেয়েটি ছেলেটির শহরে আসে। এখানে সে নিজের পরিবারের সাথে মনে মনে নিঃসঙ্গ অবস্থায় থাকে। জীবন যে যার মত যাপন করে যেতে যেতেও লোকে কখনো অপ্রত্যাশিত ভাবে মুখোমুখি হয়ে যায়।
.

একদিন হঠাৎ দেখা হয়ে যায় তাদের। রেল স্টেশনে মেয়েটিকে ঢাকার ট্রেনে তুলে দেয়ার জন্য ছেলেটি তার সাথে আসে। তুর্ণা নিশিথায় রাত সাড়ে এগারোটার ট্রেনে। বিদায়ের বেলায় ছেলেটির বুক পুড়ে যায়, স্মৃতিরা উড়ে.. আর বিষণ্ন গোধুলিবেলায় অনুভূতিগুলো হারিয়ে যায় কোনো এক নিরন্নলোকে। এমন সময়গুলোতে মন যতটা মুখর, মুখে যদি তার কিছুমাত্র প্রকাশ করা যেতো! আগের উদ্দাম সময়ে মেয়েটির শুধু হাত ধরে থাকতে ভালোবাসতো ছেলেটি। মেয়েটির কত ইচ্ছে ছিলো ছেলেটি ওকে একটু আদর করুক… ওর ঠোঁটে একটা দীর্ঘ চুম্বন করুক।
.

আজ বিদায় বেলায় মেয়েটির মনে সেই ইচ্ছে এলেও সে প্রকাশ করে না। কিন্তু কিভাবে যেন ছেলেটি বুঝে যায়। রাতের রহস্যলোকে ভরা রেল স্টেশনে অনেক মানুষের ভীড়ে এক জোড়া মধ্যবয়স্ক নরনারী, ট্রেন ছেড়ে দেয়ার সময়ে সবার অলক্ষ্যে একে অন্যের খুব কাছে আসে… কল্পনায় ওদের একের ঠোট অন্যের সাথে মিশে যায়। বিদায় বেলায় একটা দীর্ঘ চুম্বন বিদায়ী শুভেচ্ছা হয়ে থাকে । এই ট্রেন কত বাঁকে কতবার বেঁকে আরেক অন্য স্টেশনে নিয়ে নামাবে এর যাত্রীকে। সে যদি এই স্টেশনে ফিরেও আসে সেদিন এই মানুষটা এই স্টেশনে থাকবে?
.

হয়তো এ জীবনে এই মুহূর্ত আর আসবে না। চলে যাওয়া সময় কি কখনো ফিরেছে?

#দ্য_ফার্স্ট_কিস_মামুনের_অণুগল্প_৪২৪

মামুন সম্পর্কে

একজন মানুষ, আজীবন একাকি। লেখালেখির শুরু সেই ছেলেবেলায়। ক্যাডেট কলেজের বন্দী জীবনের একচিলতে 'রিফ্রেশমেন্ট' হিসেবে এই সাহিত্যচর্চাকে কাছে টেনেছিলাম। এরপর দীর্ঘ বিরতি... নিজের চল্লিশ বছরে এসে আবারো লেখালখি ফেসবুকে। পরে ব্লগে প্রবেশ। তারপর সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে 'অপেক্ষা' নামের প্রথম গল্পগ্রন্থ দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বইমেলা ২০১৭ তে তিনটি গ্রন্থ- 'ছায়াসঙ্গী'- দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, 'ঘুঙ্গরু আর মেঙ্গরু'- উপন্যাস এবং 'শেষ তৈলচিত্র'- কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাহিত্যের প্রধান তিনটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নাম রেখেছি। কাজ চলছে ১০০০ অণুগল্প নিয়ে 'অণুগল্প সংকলন' নামের গ্রন্থটির। পেশাগত জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পোষাক শিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছি। লেখার ক্ষমতা আমি আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখেই যেতে হবে আমাকে।

4 thoughts on “দ্য ফার্স্ট কিস : মামুনের অণুগল্প ৪২৪

  1. অসাধারণ অণুগল্প উপহার দিয়েছেন মি. মামুন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    1. গল্পটি পড়ার শুভেচ্ছা রইলো, ভাইয়া।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

  2. চলে যাওয়া সময় ফেরেনা কখনও গল্প দা। সার্থক অণুগল্প। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    1. জি দিদি, মানব জীবনে এটাই আক্ষেপ। কারণ প্রকৃতিগত ভাবে মানুষ সঠিক সময়ে ঠিক কাজটি করেনা।

      ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা রইলো…https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।