রাষ্ট্রদ্রোহী
: পুলিস বাপু, বুদ্দার বাপকে ছাড়িয়া দে। বাপু, মাতাল মানুষটারে মাফ কারিয়া দে।
: ছাইড়া দিমু? মাফ করুম! হারামজাদার নামে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা হইবো। নিশ্চিত চৌদ্দ বছরের জেল।
: পুলিস বাপু, দয়া কর। কি কাহিতে কি কাহিছে, মাতালের কি হুশ আছে?
: হুশ নাই! বাইনচোতের বাচ্চা জাতে মাতাল তালে ঠিক। পিটায়া হারামজাদার মুখ বন্দ করাইতে পারলাম না।
: বাপু! হামি এক হাজার টেকা আনছি। তুহারা চা সিরগেট খাবি। ছাড়িয়া দে বাপু।
: এক হাজার টাকা দিয়া কি বাল ছিড়ুম! রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা। পাচ হাজার টাকার কমে ছাড়ন যাইবো না।
: বাপু, হামরা গারীব মানুষ। সারাদিন গান্ধা সাফ করি। এত্তো টেকা কুথায় পাবো রে!
: মদ গিলার টাকা পাও, পুলিশরে দিবার টাকা নাই!
: পুলিস বাপু, তুই হামার বাপ লাগিস। দয়া কর। বুড়া মানুষটারে ছাড়িয়া দে।
: আমিতো ছাড়তেই চাই। টাকা আন ছাইড়া দেই। বুইড়ারে সারা রাইত কনস্টেবল আর দারোগা মিলা পিটাইলে সকালে কি জিন্দা থাকবো!
: কি কাহিস বাপু! মারিসনা রে বাপু, দোহাই মারিস না।
: জিন্দা থাকলে কাইল কোর্টে তুলুম। কোর্টে পাচশো টাকা দিয়া উকিল ধরিছ। দেখি উকিলের কোন বাপ চৌদ্দ বছরের জেল ঠেকায়!
বুদ্ধার মা থানার বারান্দার গিয়ে বসেন। উপায়হীনতায় বিমর্ষ। চোখ ছলছল। দশ বিশ টাকা করে জমানো একহাজার টাকা মুঠোর ভিতর শক্ত করে চেপে রাখেন। বয়সী চামড়ার ভাজগুলো টানটান হয় আর শীর্ন হাতের শিরা উপশিরাগুলো ফুলে ওঠে। পাচ হাজার টাকা যোগাড়ের কঠিন হিসাব মিলাতে মগ্ন হন।
লকআপে মার খাওয়া বুদ্দার বাপ মাতাল স্বরে চেচিয়ে চেচিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহীতা করেই যাচ্ছেন, “তুহারা টিভিতে মিনিস্টর দেখিস! মিনিস্টর কুথায়? হামিতো খালি মেনহোল দেখি রে, গান্ধা ভড়া মেনহোল দেখি। মেনহোলের ঢাকনি ফাইটা গান্ধা বাইড়ায়। মাগার হামি মিনিস্টরগো মুখ চোখ নাক কান দিয়া উপসায়া উপসায়া হাজার হাজার মেনহোলের গান্ধা বাইড়াতে দেখি। তাগো সারা শরীর দিয়া গলগল কারিয়া বায়া বায়া গান্ধা পড়ে। হামি হামার সাত্তুর বছরে এতো গান্ধা দেখি নাই। ভগমানের কিরা এতো গান্ধা দেখি নাই..’
কিছুক্ষণ গোঙায় বুদ্ধার বাপ, তারপর আবার রাষ্ট্রদ্রোহিতা শুরু করে-
‘মাগার, পুলিস বাপুগো মুখে গান্ধা নাই, তাগো দাতে মানুষের গোশতো লাইগা আছে, কাচা কাচা গোস্তের টুকরা আর কালা কালা জামাট খুন লাইগা আছে। তুহারা মিনিস্টর দেখিস, মিনস্টর কুথায়? হামি মেনহোল দেখি… মিনিসটারগো চোখে মুখে নাকে কানে মাগজে আর দিলে হাজার হাজার মেনহল দেখি …. গান্ধা ভরা হাজার হাজার মেনহল….”
#গ্রন্থ: লেজ
#লেখক: আবু সাঈদ আহমেদ
অসাধারণ।
হৃদয় স্পর্শ করা লেখা।