রথযাত্রা আর হনুয়াকা বেটা

রথযাত্রা আর হনুয়াকা বেটা

তীব্র আঁচড়ে হাওয়া ফালাফালা করে
সাইরেন ছুটে গেল, অনেক ইতস্তত করে
ছেলেটা মুখ তুলে বলেই ফেললো,
-কাল তো আপনাদের রথযাত্রা,
কাল কি কাজে কেউ আসবে বাবু?

খাদানে মেশিন পিষ্ট হয়ে ত্যারাব্যাঁকা
বাবাটা মরে গেছিল সেই থেকে
আজ নয় কাল, কাল নয় পরশু …
টেবিলের তলা থেকে কিলবিলে হাত
কেবলই বেরোয়। এন্ডিগেন্ডি গুলোর পিঠে
পেট ঠেকে থাকা খড়িওঠা শরীর,
মা টাকে প্রায়ই রাত পার করে বিধ্বস্ত
হাতে মুখে জল দিয়েই ছুটতে হয় দুমুঠো
সেদিনের মতো জোগাড় হয়েছে তার,
আবার জোগাড়ে আরোও এক রাত।

হনুয়াকা বেটার বছর পরিক্রমা
থমকে গিয়েছে কবেই
বছর মাস দিন একাকার হয়ে
সেঁধিয়েছে পাকস্থলীতে,
মাসীর বাড়ী-পিসির বাড়ী
হাওয়ায় উড়ছে কোটি স্বর্ণমুদ্রা,
পাকড়াও রে বুরবাক!
সাইরেন বাজিয়ে গাড়ি ছুটতেই
থাকে জাতির স্বার্থে।

নতুন বিগ্রহ, আসছে পুজোর সেল,
জনকল্যান সূচী, স্টুডিওতে হুল্লোড়ি গমক
নির্বিকার ছুটে যায়,
হনুয়ারা তাকায়,
দেখতেই থাকে ফ্যালফ্যাল
তার বাইরের পৃথিবীকে।
—————-

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

2 thoughts on “রথযাত্রা আর হনুয়াকা বেটা

  1. * ভালো থাকুন প্রিয় কবি।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।