টিভি চ্যানেলগুলোর সাংবাদিকদের অতিরিক্ত ‘স্মার্টনেস’ আমজনতার বিরক্তির কারণ।
সাংবাদিকতায় আসার পরে আমি আমার দুই বাবু এবং বউয়ের সাথে সেভাবে সময় দিতে পারি না। নিউজ এডিটিং এ আমার সারা রাত কেটে যায়, দিনে অর্ধ দিবস ঘুমাই, এরপর ফিল্ডে নিউজের কাজে সময় পার হয়।
তবে ঈদের সময় চারজন একত্রিত হয়ে ঈদের নাটক দেখি আমরা। আর শুধু এই সময়গুলিতেই আমার টেলিভিশনের সামনে যাওয়ার সুযোগ। এছাড়া নিউজের জন্য কিংবা বিনোদনের জন্য টেলিভিশনের দ্বারস্থ হইনা আমি। অনলাইন পোর্টাল আর ইউটিউব আমার নিউজ এবং বিনোদনের খোরাক মিটায়।
এরকম এক ঈদে দুই কন্যা আর মেকুরাণীকে সাথে নিয়ে টিভি দেখছিলাম। হাতে রিমোট কন্ট্রোল… উদেশ্য বিহীন একের পর এক চ্যানেল পাল্টানো। ঈদে বাড়ী ফেরা মানুষদেরকে নিয়ে প্রতিটি চ্যানেলেই কিছু না কিছু নিউজ করছে। GTV নামের একটি চ্যানেলে এসে থামলাম। খবর পাঠিকা আমাদেরকে তাদের নিজস্ব প্রতিনিধি যিনি গাবতলী বাস স্ট্যান্ডে রয়েছেন, তার মাধ্যমে আমাদেরকে সেখানের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানানোর জন্য সাথে থাকতে বললেন। আমরা চারজন সাথেই রইলাম। ইনসেটে সেই প্রতিনিধিকে দেখছি… কানে ব্লু-টুথ হেডফোন। খবর পাঠিকা বলে চলেছেন, ‘…আপনি কি আমাকে শুনতে পাচ্ছেন?’ আমরা সাভারের বাসায় বসে তার কথা টিভি সেটের ভিতর দিয়ে স্পষ্ট শুনতে পেলাম। অথচ গাবতলীতে GTV’র নিজস্ব প্রতিনিধি কিছুই শুনতে পাচ্ছেন না!
প্রায় মিনিট দুই-আড়াই এর মত ইনসেটে ওই প্রতিনিধি কানের ব্লু-টুথ চেপে দাঁড়িয়ে থাকলেন… খবর পাঠিকা বেকুবের মতো এই সময়টা বার বার , ‘আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?’ বলে যেতে থাকে। আমার দুই কন্যা খুব মজা পায়। আর ওদের আনন্দ দেখে আমরা দু’জনও ::
এরপর আর একটি চ্যানেলের একজন প্রতিনিধির কথা বলার স্টাইল দেখে আর একবার হাসির পর্ব। সেই লোক কথা বলার সময় দুটি শব্দ বলার পরই ‘অ্যা’ … উম্ম… ইয়া’ এভাবে কথা বলছিলেন। মনে হচ্ছিল ছাগল প্রজাতির কোনো একজনের নিবিড় তত্ত্বাবধানে কিছুদিন কাটিয়ে এসে ‘ম্যা’ এবং ‘ব্যা’ ভাষায় সুদক্ষ হয়েছেন তিনি।
আমাদের দেশীয় চ্যানেলগুলো দেখতে বসে এ ধরণের বিভিন্ন হাস্যরসে মাখামাখি হতে হয়। অনেক সময় নিজের কাছে খারাপও লাগে। সেই বিটিভির আমলে কত সুন্দর সুন্দর নাটক দেখতাম… ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানগুলোতে সত্যিকারের বিনোদনের ছোয়া থাকতো। নাটকের কলাকুশলী এবং নির্দেশনার মান অনেক উন্নত ছিল… নাটকের বিষয়বস্তু ছিল রুচিকর ও জীবনধর্মী। এখনো যে যাচ্ছেতাই নাটক বানানো হচ্ছে তা নয়। তবুও সেই অ্যানালগ যুগের নাটকগুলিতে আনন্দ কেন জানি বেশী পেতাম। আজ এই ডিজিটাল যুগের কারিগরী উৎকর্ষতায় নিয়ন্ত্রিত সকল সুযোগ সুবিধার মধ্যেও নির্মিত নাটক-সিনেমাতে কেন জানি প্রাণ নেই।
আর ৫ মিনিট নাটক বা অন্য কিছু দেখালেই দশ মিনিট যদি অ্যাড দেখতে হয়, তবে সেরকম অনুষ্ঠান দেখার জন্য আমি কখনোই লালায়িত ছিলাম না। এক সময় শুধুমাত্র ষ্টার মুভিজে হলিউডের ফিল্ম দেখে সময় কাটাতাম। এর প্রধান কারণ ছিল তখন এই চ্যানেলটিতে একটানা ফিল্ম দেখাতো। কোনো ব্রেক ছিল না। আর এখন সেটাও গতানুগতিকতার বৈতালিক প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়েছে।
ইদানিং ভারতীয় চ্যানেলগুলোর বিরুদ্ধে বিষোদগার দেখতে পাচ্ছি। এই চ্যানেলের দ্বারা এই ক্ষতি হচ্ছে, ওটার দ্বারা সেটা হচ্ছে। তাই সেগুলো বন্ধ করে দেবার পক্ষে ফেসবুকে জনমত গড়ে উঠেছে… বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এটা একটা ভালো দিক নিঃসন্দেহে। কিন্তু ওগুলোর সাথে সাথে আমাদের দেশীয় চ্যানেলগুলোর মান আরো ভালো করার জন্য… সিনেমা হলগুলোতে দর্শক টানার মতো মানসম্মত ছবি বানানোর জন্যও একটা আন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়োজন। হুমায়ুন আহমেদ পরবর্তী সময়টিতে হুমায়ুন আহমেদ এর মতো না হোক, তাকে অনুসরণ করে একই মানের কিছু তো দর্শকদেরকে উপহার দেয়া যেতে পারে।
জানি না সামনের দিনগুলোতে কি অপেক্ষা করছে। কিন্তু ভালো কিছুই আশা করছি… সবসময় এটাই করা উচিত।
‘…আপনি কি আমাকে শুনতে পাচ্ছেন?’ আমরা সাভারের বাসায় বসে তার কথা টিভি সেটের ভিতর দিয়ে স্পষ্ট শুনতে পেলাম। অথচ গাবতলীতে GTV’র নিজস্ব প্রতিনিধি কিছুই শুনতে পাচ্ছেন না!" কথা সত্য মি. মামুন। আমি বগুড়া থেকেও শুনেছি।
আসলে আমাদের মিডিয়া গুলোর আচরণ সব সময় নেগেটিভ, বাড়াবাড়ি টাইপের
বিশেষ নির্বাচন। এই সম্মানের লেখা গুলো আমি অন্য সব লেখা শেষ করে পরে পড়তে আসি। সকালে এসেই তরতরিয়ে নিচে নেমে গিয়েছিলাম। এখন আপনার পোস্টে। এখানে বেশ কিছুক্ষণ থাকবো। ধীরে ধীরে পড়বো।
সময়োচিত লিখেছেন গল্প দা। বিজ্ঞাপন আর নিউজ প্রেজেন্টেটরদের অসম্ভব বাড়াবাড়ি টিভি দেখা এখন বিরক্তির হয়ে উঠছে। ভারতে অবশ্যি নিউজ চ্যানেল গুলো আলাদা। সামাজিক শো'তে বিরক্ত লাগে বিজ্ঞাপন। আর এমন কিছু চ্যানেল আছে যেখানে নিউজ তো নয়; মনে হয় প্রেজেন্টেটর হালুম বলে ভয় দেখাতে এসেছে।
* যথার্থ…
সময়োচিত লিখা।

