চোর_এবং_নাকফুল_মামুনের_অণুগল্প

[আসুন, আজ একজন চোরের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই আপনাদের। গল্পটি রি-পোষ্ট….।। ]

অন্ধকারের ও কী নিজস্ব কোনো আলো থাকে? কেন জানতে চাইছি?
বলছি, একটু পরেই।
.
এক লোড শেডিং এর রাত। মফঃস্বল শহরের ছোট্ট একটা প্ল্যাটফর্ম। শেষ ট্রেন দাঁড়ানো। অল্প কিছু যাত্রী ওয়েটিং রুমে। এদের বেশীরভাগই বরযাত্রী। মশার আক্রমন থেকে নিজেদের বাঁচাতে ব্যস্ত সবাই। বিরক্ত, বিব্রত আর ঘরে ফেরায় উন্মুখ।
.
ওয়েটিং রুম ছাড়িয়ে কালো ধাতব বিবর্ণ বয়স্ক ট্রেনটির অবয়ব অন্ধকারেও কিভাবে যেন চোখে পড়ে। এজন্যই বলছিলাম অন্ধকারেরও বুঝি নিজস্ব কোনো আলো থাকে। ব্রডগেজ দু’সারি লাইনের ওপারে একটা প্রাচীন চাম্বল গাছ। ওটার পিছনে চোরের মতো লুকানো আমি। নির্নিমেষ চেয়ে আছি ওয়েটিং রুমের খোলা দরোজার দিকে।
.
এক প্রবাসী ভদ্রলোকের হাত ধরে যখন স্টেশনের মূল গেট দিয়ে সুস্মিতা হেঁটে আসলো, বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না – স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো। এত দূর থেকেও দেখলাম ওর বিষণ্ন নাকফুল নির্নিমেষ চেয়ে আছে আমার পানে… দীর্ঘক্ষণ আমি জগত সংসারের সকল আলোআঁধারি ভেদ করে দেখতেই লাগলাম!
.
রাতের ট্রেনের দীর্ঘ হুইসেল বিষাদের সুরভি মেখে মেখে, বাতাসে ভেসে ভেসে আরও বিষণ্ণ করে তুলেছিলো সে রাতের কুহকী প্রহর! সেই থেকে বিষণ্নতার প্ল্যাটফর্মের একমাত্র স্টেশনমাস্টার এই আমি!
.
অনেক কিছুই করার ছিলো আমার। ছিলো অনেক কিছুই দেবার। ছিলো না কেবল কারও কাছ থেকে কিছুই চাওয়া-পাওয়ার অধিকার। কারণ ঐ যে আগেই বলেছি, চোরের মতো ছিলাম। লুকোনো স্বভাব নিয়ে এক জীবনে সেভাবে কখনোই সামনে আসতে পারলাম না আমি!
.
সেই থেকে এক চোরের অনুভবে-কল্পনায় একটি নাকফুল, নৈশব্দের প্রহরগোনা ভালোলাগায় ছুঁয়ে ছুঁয়ে আজও বিষণ্নতায় ছুঁয়ে যাওয়া একটি রংগীন চাদর! যার বর্ণে বর্ণে লুকোনো এক বিচ্ছিন্ন অতীত.. যা ক্রমশঃ শীতের নরম রোদের মায়াবী কোমল আদর হয়ে অন্তর্চক্ষু বুজিয়ে দিয়ে যায়!
.
সেই থেকে শূন্যতায় ডুবে আছি আমি
যার বুক জুড়ে
শুধু তুমিই
শুধু তুমি!

.
‘পিরিতি আরতি পিরিতি সারথি, পিরিতি গলার মালা রে…।’

আহ হারে পিরিতি! বিষম পিরিতি 😀
.

কতটা ভালোবাসি – বলাই হলো না তাকে।।

#চোর_এবং_নাকফুল_মামুনের_অণুগল্প

মামুন সম্পর্কে

একজন মানুষ, আজীবন একাকি। লেখালেখির শুরু সেই ছেলেবেলায়। ক্যাডেট কলেজের বন্দী জীবনের একচিলতে 'রিফ্রেশমেন্ট' হিসেবে এই সাহিত্যচর্চাকে কাছে টেনেছিলাম। এরপর দীর্ঘ বিরতি... নিজের চল্লিশ বছরে এসে আবারো লেখালখি ফেসবুকে। পরে ব্লগে প্রবেশ। তারপর সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে 'অপেক্ষা' নামের প্রথম গল্পগ্রন্থ দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বইমেলা ২০১৭ তে তিনটি গ্রন্থ- 'ছায়াসঙ্গী'- দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, 'ঘুঙ্গরু আর মেঙ্গরু'- উপন্যাস এবং 'শেষ তৈলচিত্র'- কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাহিত্যের প্রধান তিনটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নাম রেখেছি। কাজ চলছে ১০০০ অণুগল্প নিয়ে 'অণুগল্প সংকলন' নামের গ্রন্থটির। পেশাগত জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পোষাক শিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছি। লেখার ক্ষমতা আমি আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখেই যেতে হবে আমাকে।

10 thoughts on “চোর_এবং_নাকফুল_মামুনের_অণুগল্প

  1. গত রাতেই পড়েছি গল্পটা কিন্তু মোবাইলে বলে কিছু লিখতে পারিনি। আপনার লেখা সবই আমি পড়ার চেষ্টা করি হঠাত কাজের চাপে বা অন্য কোন কারনে যদি ২/১টা বাদ যেতেও পারে। লেখার মধ্যে দারুন সব মুন্সিয়ানার ছাপ স্পষ্ট শব্দ এবং প্রকাশ কৌশল অত্যন্ত চমতকার।

    1. আপনার অনুভব জেনে খুব ভালো লাগলো। অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয় খালিদ ভাই।

      শুভেচ্ছা… https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

  2. একটি নাকফুল, নৈশব্দের প্রহরগোনা ভালোলাগায় ছুঁয়ে ছুঁয়ে আজও বিষণ্নতায় ছুঁয়ে যাওয়া একটি রংগীন চাদর! https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    1. গল্পটি পড়ে বরাবরের মত আমাকে প্রেরণা দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।

      শুভ সকাল।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।