এক সময় আমার জীবনে কাকতালীয় ঘটনা ঘটলো। অনেক রাতে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। উদ্দেশ্য ঢাকা কিন্তু ঐ সময় সেখান থেকে গাড়ি পাওয়া যায় না। সবাই বলছিল ভোরে যেতে কিন্তু ভোরে আসলে সকাল ৯টায় অফিসে ঢুকতে পারবো না তাই রাতেই বের হলাম। অনেক্ষণ অপেক্ষা করে যখন বাসার দিকে ফিরছিলাম তখন দূর থেকে একটি গাড়ির আলো দেখে দাড়িয়ে গেলাম। গাড়িটি ঠিক আমার কাছে এসে দাড়িয়ে গেল। মনে হলো আমাকেই নিতে এসেছে। আমি কিছুই না বলে উঠে পড়লাম এবং যথারীতি ৯টার অফিস ধরলাম।
আরেকদিন গাজীপুর থেকে বাসে উঠে টংগীতে হিউজ জ্যামে পড়লাম। তখন অফিস ছিল ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট এর কাছে। অফিস টাইম ৯টা ৬টা হলেও সেদিন শিপমেন্ট থাকায় ফাইনাল ইনস্পেকশন চলছিল তাই অফিস থেকে বের হতে রাত দশটা হয়ে গেল।
টংগীতে জ্যামে পড়ে বুঝলাম আজ বাসায় ঢোকা যাবে না কারণ বাড়িওয়ালা এমন শক্ত যে ১১টা বাজলে গেট বন্ধ করে দেয়, প্রেসিডেন্ট আসলেও খুলবে না এমনই ভাব। হঠাৎ ভাবলাম ইশ! যদি জ্যাম টা ছুটে যেত! স্ত্রী ফোন করে জানতে চাইলো, কোথায় আছি- আর কতক্ষণ লাগবে? মুহুর্তেই জ্যাম উধাও! ঠিক ১১টা বাজার ৫ মিনিট আগে বাসায় ঢুকলাম।
তারপর একের পর এক যখন কাকতালীয় ঘটনা ঘটতে শুরু করলো তখন এক গুণী জনের কাছে গিয়ে সব খুলে বলার পর জানতে চাইলাম এমন ঘটনা ঘটছে কেন? এই কাকতালীয়র কাক আমাকে ছাড়ছে না কেন? তখনও আমি টুকিটাকি কবিতা লিখতাম তাই আমার কাছে মনে হয়েছিল হয়তো আমি এক জন কাক টাইপের কবি তাই কাক আমায় ছাড়ছে না।
উক্ত গুণী জন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, এমন কাকতালীয় ঘটনা অনেকের জীবনেই ঘটে থাকে তবে বেশি ঘটলে এটা আর কাকতালীয় থাকে না।
আমি জানতে চাইলাম, বেশি ঘটলে ওটা কি হয়?
উনি একটু মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন, তখন ওটা ময়ুরতালীয় ঘটনা হয়ে যায়।
আজ কবিতা ক্যাফেতে যাওয়ার কথা ছিল। বাসে ওঠার পরই ঘুমিয়ে গেলাম। হঠাৎ চোখ খুলে দেখি শাপলা চত্ত্বর। আমি টপ করে নেমে গেলাম। অনেক দিন ধরে আমার এক সাংবাদিক বন্ধু তাঁর অফিসে যেতে বলছিল কিন্তু যেতে পারছিলাম না। তাই মনে হয় আজ ওর অফিসে কাকতালীয় ভাবে দেখা হওয়ায় জন্যই বাসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
ওর অফিস থেকে বের হতে রাত সোয়া ৮টা হয়ে গেল। তারপর সি এন জি চালিত থ্রি হুইলার নিয়ে সোজা কাঁটাবন এলাম কিন্তু সব অপরিচিত মনে হতে লাগল।
কতবার কবিতা ক্যাফেতে এসেছি কিন্তু আজ খুঁজেই পাচ্ছি না।
আমার ভেতর থেকে কে যেন বলে উঠলো, সোজা যেতে থাক। আমি সোজা কিছু দূর এসে বুঝলাম অনেকটা দূরে হাতিরপুল বাজারের কাছাকাছি এসে পড়েছি।
মুহুর্তেই উল্টো দিকে ঘুরতেই দেখলাম ৫/৬ জন ছেলে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে কার যেন কথা মনযোগ দিয়ে শুনছে। মনে পড়ে গেল এরিষ্টটলের জীবনীতে পড়েছিলাম, উনি বিভিন্ন রাস্তায় রাস্তায় বসে কথা বলতেন আর তাঁর ভক্তরা দাঁড়িয়ে শুনতেন।
আমি একটু থমকে দাঁড়ালাম। কাছে গিয়ে দেখি উনি আর কেউ নন, আমাদের প্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণ।
আমিও দাঁড়িয়ে উনার কথা শুনতে লাগলাম। ঘন্টা খানেক পর তিনি চলে গেলেন। যাওয়ার আগে আমার নাম জানতে চাইলেন এবং কোথায় থাকি তা জানতে চাইলেন।
ওখানে কবি এবং ফিল্ম মেকার ডঃ মাসুদ পথিক ছিলেন যিনি আমার পূর্ব পরিচিত।
লিখাটি পড়ে খুব খুশি হয়েছি মি. ইলহাম। অভিনন্দন প্রিয় মানুষ।
আমাদের অসামান্য গুনধর কবি নির্মলেন্দু গুনের সান্নিধ্যে আসার ময়ূরতালীয় ক্ষণটিকে সাধুবাদ।
আমাদের অনেকের জীবনে এ ধরণের কাক কিংবা ময়ূরতালীয় ঘটনা ঘটে । তবে পার্থক্য হলো আপনার সুক্ষ দৃষ্টিতে তা ধরা পড়েছে ,আমাদের পড়েনি এবং আপনি চমৎকার রসবোধে তা প্রকাশ করতে পেরেছেন ,আমরা পারিনি । শুভকামনা।
আপনি ভাগ্যবান ইলহাম ভাই। দু'জনের ছবি দেখে খুব খুশি হলাম।
প্রিয় কবি আর আপনি পাশাপাশি দুজন। আমার ভীষণ ভাল লাগছে ইলহাম দা। অভিনন্দন।
তাল গাছে যেই কাক বসলো অমনি একটা তাল ফল মাটিতে পড়লো। কাকের শরীরের ওজন তাল পড়ার কারণ হিসেবে বিবেচিত হলো। এই তাল পড়ার সব কাহিনি সাধারণত মনে ধরে। আপনার লেখার তালগুলোর কাহিনিও তালময় সুগন্ধির লেগেছে।
আমারও অনেকগুলি তাল পড়ার কাহিনি আছে; কোন কোনটায় ভয়াবহতা ছিল। কবি নির্মেলেন্দুর সাথে দেখা হওয়া পার্টটুকু পড়ে শামছুর রাহমানের কথা মনে পড়লো। বেশ কবার দেখেছি। চেয়ারে বসে আছেন, আমি কিশোর এক মহাকবির বদলে এক মহারাজকে অবাক হয়ে দেখছিলাম।
মুগ্ধ হয়ে পড়লাম।
* শুভ কামনা সবসময়>>>

