ইলহাম এর সকল পোস্ট

এই জনমের আগে

শীতের মধ্য রাত
রাতজাগা পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দে
ঘুম ভেঙে যায়
মনে পড়ে যায় এই দেশে এই পথে
এসেছিলাম এর আগে
এই জনমের আগে
আরো একবার শতবার কিংবা সহস্রবার।

এই আনাচের ক্ষেত
এই ধুন্দল মটর মশুর ডালের ক্ষেত পেরিয়ে
এই জলাশয়ে জাগ দেয়া পাট শুকানোর গন্ধ নিয়ে
এই গোধুলী সন্ধায় ধোঁয়াটে কুয়াশা চাদরের
মাঠ দেখতে দেখতে
এই বড়াল ব্রীজ চাটমোহর ঈশ্বরদী পেরিয়ে
চলে গেছি সুদূর দিনাজপুেরে,
দেখা হয়েছিল সেখানে
ক্যাডাভিয়ার সাথে,
কথা হয়েছিল তার সাথে, তাহার সাথে
উষ্ণ নিশ্বাস ছেড়ে বলেছিল সে আমারে
এক পৃথিবী ভালোবাসা দিলাম আজ তোমারে।

সেই রাতে ডানা ঝাপটিয়েছিলো এক রাতজাগা পাখি
দেখেছিলাম আমরা মেলে আমাদের চারিটি আঁখি
ভয় পেয়েছিলো সে রাতে আমার ক্যাডাভিয়া
চারিদিকে ছিলো অন্ধকারের বিমূর্ত ছায়া
তাকিয়েছিলো ক্যাডাভিয়া সেই রাতে নক্ষত্রের পানে
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলেছিলো আমার কানে কানে
চলে যেয়ো না কখনো তুমি আমাকে ছেড়ে
কেউ যেনো তোমাকে নেবে আমার থেকে কেড়ে।

দিয়েছিলাম কথা আমি তারে, তাহারে
যাবো না কখনো আমি তোমাকে ছেড়ে
রাখতে পারনি আমি সে কথা তার, তাহার
তাইতো ফিরে আসি আমি বারেবার
বহু দেশ ঘুরে ঘুরে খুঁজেছি তারে
পাইনিকো দেখা তারে, তাহারে
হয়তো বা কোন এক বলাকার বেশ ধরে
কিংবা কখনো আকাশে বালিহাঁসে ভর করে
মনে পড়ে যায় এই দেশে এই পথে
এসেছিলাম এর আগে
এই জনমের আগে
আরো একবার শতবার কিংবা সহস্রবার।

এই জনমের আগে

resize

শীতের মধ্য রাত
রাতজাগা পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দে
ঘুম ভেঙে যায়
মনে পড়ে যায় এই দেশে এই পথে
এসেছিলাম এর আগে
এই জনমের আগে
আরো একবার শতবার কিংবা সহস্রবার।

এই আনাচের ক্ষেত
এই ধুন্দল মটর মশুর ডালের ক্ষেত পেরিয়ে
এই জলাশয়ে জাগ দেয়া পাট শুকানোর ঘ্রাণ নিয়ে
এই গোধুলী সন্ধায় ধোঁয়াটে কুয়াশা চাদরের
মাঠ দেখতে দেখতে
এই বড়াল ব্রীজ চাটমোহর ঈশ্বরদী পেরিয়ে
চলে গেছি সুদূর দিনাজপুরে
দেখা হয়েছিল সেখানে
ক্যাডাভিয়ার সাথে
কথা হয়েছিল তার সাথে, তাহার সাথে
উষ্ণ নিশ্বাস ছেড়ে বলেছিল সে আমারে
এক পৃথিবী ভালোবাসা দিলাম আজ তোমারে।

সেই রাতে ডানা ঝাপটিয়েছিলো এক রাতজাগা পাখি
দেখেছিলাম আমরা মেলে আমাদের চারিটি আঁখি
ভয় পেয়েছিলো সে রাতে আমার ক্যাডাভিয়া
চারিদিকে ছিলো অন্ধকারের বিমূর্ত ছায়া
তাকিয়েছিলো সেই রাতে সে নক্ষত্রের পানে
কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলেছিলো আমার কানে কানে
চলে যেয়ো না কখনো তুমি আমায় ছেড়ে
কেউ যেনো তোমায় নেবে আমার থেকে কেড়ে।

দিয়েছিলাম কথা আমি তারে, তাহারে
যাবো না কখনো আমি তোমায় ছেড়ে
রাখতে পারনি আমি সেই কথা তার, তাহার
তাইতো ফিরে আসি আমি বারেবার
বহু দেশ ঘুরে ঘুরে খুঁজেছি তারে
পাইনিকো দেখা তারে, তাহারে
হয়তো বা কোন এক বলাকার বেশ ধরে
মনে পড়ে যায় এই দেশে এই পথে
এসেছিলাম এর আগে
এই জনমের আগে
আরো একবার শতবার কিংবা সহস্রবার।

একটি মহাকাব্য লিখবো বলে

বিমূর্ত এক ঘোর অন্ধকারে
হেঁটেছি আমি পঁয়ত্রিশ বছর ধরে
একটি হৃদয়ের আশ্রয় পাবো বলে
যে হৃদয় এ হৃদয়ের কথা বলে

যে চোখ এ চোখে দৃষ্টি দিলে
বুঝে নেবে কি ব্যাথা এ অশ্রু জলে
এ জল কেন যে জ্বলে পুড়ে জ্বলে
এ হৃদয় কেন যে অন্তর দহনে জ্বলে

দেখেছিলাম তারে আমি এক কবিতার আসরে
দিয়েছিল উকি অযুত প্রেম আধো-আলো আধাঁরে
ফেলে আসা তিন যুগ অন্ধকারে
অংশু জেগেছে নিমগ্ন মধ্য রাত-দুপুরে

দেখেছিলাম সেই রাতে আমি তারে এ মন প্রাণ ভরে
তাকিয়েছিলাম আমি দু চোখে তার তাই বারে বারে
পঁয়ত্রিশ বছরেও আসেনি যে ভালোবাসা
তার সে চাহনিতে ছিল সেই মায়াবী আশা

তুলেছে সে এ হৃদয়ে এক অদ্ভুত ঝড়ো হাওয়া
যে ঝড়ে গেছে উড়ে সব অবহেলা আর না পাওয়া
পঁয়ত্রিশ বছরের প্রেমহীন ক্ষত জ্বালা যন্ত্রণা
গেছে উড়ে নিরবে নিভৃতের অশ্রু ব্যাথা বোবা-কান্না

জেনেছিল কি সে এ হৃদয়ের কথা
বুঝেছিল কি সে চোখের ভাষা

হয়তো তুলেছে ঝড় তার মনে অন্যজন আরেক জন
জানে কি সে তার তরে কাঁদে এ হৃদয় মন সারাক্ষণ

চাই শুধু একটি বার মুখোমুখি বসবার সাথে তার
তিন যুগের কথা আছে যে জমে তার সাথে বলবার

বসবে কি সে একান্ত নিবিড়ে শুধু আমার পাশে!
নীল সমুদ্র যেখানে মিশে গেছে নীল আকাশে!

একটি বার শুধু মেশাবো আমার অশ্রু জল তার অশ্রু জলে
জলে জল মিলিয়ে জ্বলে পুড়ে জ্বলে জ্বলে
একটি অবিনশ্বর মহাকাব্য লিখবো বলে।

সেই হাত

তারপর একদিন শেষ হয়ে যাবে নতুন দিনগুলি
তুমি দাঁড়াবে গিয়ে পুরাতন মানুষদের ভীড়ে
ক্ষয়ে যাবে শরীরের সব শক্তি, ঝাপসা মনে হবে পৃথিবী
হাটতে গিয়ে বুঝবে শরীর অনেক ক্লান্ত
আকাশের নীল কিংবা একটি গোলাপকে দেখবে নতুন করে
বড় অচেনা মনে হবে সব মানুষকে
হয়তো অবাক করা শ্রান্ত চোখে নিষ্পলক খুঁজবে একটি হাত
যে হাত বড়ই আপন
যে হাতে হাত রেখে হাসিমুখে মৃত্যুকে করা যায় আলিঙ্গন
মহাকাল স্বাক্ষী থাকুক
সেইদিন যদি একটিবার ডাকো আমায়
যদি বেঁচে থাকি
তুমি পাবে এই হাত তোমার হাতে
যে হাতে হাত রেখে নির্ভয়ে ঘুমানো যায় সময়ের স্বপ্ন স্রোতে।

আগস্ট এলে আমি কি যেন হারিয়ে ফেলি

a04d160

আগস্ট এলেই গভীর রাতে আমার ঘুম ভেঙে যায়
প্রতি রাতেই ঘুম ভেঙে যায়।
জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছি
আঘাত পেয়েছি
অবহেলা পেয়েছি
অল্প শোকে হয়েছি কাতর
অধিক শোকে হয়েছি পাথর
সসীম শোকে হয়েছি নিথর
অসীম শোকে হয়েছি নিষ্ঠুর
আর আগস্ট এর শোকে হয়েছি বিমূঢ়।

আগস্ট এলেই কি যেনো একটা হারিয়ে ফেলি,
হয়ে যাই হতভম্ব, নির্বাক
হয়ে যাই হতবুদ্ধি, হতবাক
আগস্ট এলেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি।

হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো,
মুয়াজ্জিনের সুমধুর আযানের ধ্বনি
সাথে সাথেই ব্রাশফায়ারের গুলির শব্দ
গুলি আর আযানের ধ্বনির মিশ্রণ
এক অজানা ভয় এবং ক্ষোভের বিস্ফোরণ।

আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম কে যেনো বলে উঠলো,
“এই মাত্র ওরা আমাকে নিচতলার ড্রয়িং রুমে গুলি করলো”
ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায় আমার জানা ছিলো,
বুঝলাম এটা শেখ কামালের কণ্ঠ।

আমি বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠলাম,
ঘড়িতে এখন ভোর চারটা পঁয়তাল্লিশ।
কত তারিখ আজ?
মোবাইলের ক্যালেন্ডার দেখলাম
আজ ১৫ই আগস্ট
কত সাল এটা ?
আবারো মোবাইলের ক্যালেন্ডার দেখলাম
এটা উনিশ্য পঁচাত্তর সাল।

একটি ভারি নারী কণ্ঠ ভেসে এলো,
“বিচার করো”
“বিচার করো”
আরে ! এটা কী বঙ্গমাতার কণ্ঠ না?
আবারো মোবাইলের ক্যালেন্ডার দেখলাম
এটা উনিশ্য পঁচাত্তর সাল।
মুয়াজ্জিনের কন্ঠে তখন “হাইয়া আলাস ছলা”
সাথে সাথেই আবারো বিস্ফোরিত বারুদের গোলা।
এবার দুটি কন্ঠ ভেসে এলো,
“আমরা শেখ নাসের এবং শেখ জামাল বলছি”
আমি বললাম, জ্বি বলুন,
“বিচার করো”
“বিচার করো”
আমি কি যেনো একটা হারিয়ে ফেললাম।

আমি হতভম্ব, নির্বাক
আমি হতবুদ্ধি, হতবাক
আমি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললাম
বিছানায় পড়ে গেলাম।

একটু তন্দ্রা আসতেই দুটো নারী কণ্ঠ ভেসে এলো,
“আমরা সুলতানা কামাল এবং রোজী জামাল বলছি,
ওরা এই মাত্র আমাদের গুলি করলো”

আজ কত তারিখ?
এটা কী মাস?
কত সাল এটা?
বিছানা থেকে উঠে লাইট জ্বেলে
দেয়ালে ঝোলানো কাগজের ক্যালেন্ডার দেখলাম
১৫ই আগস্ট উনিশ্য পঁচাত্তর সাল।
মুয়াজ্জিনের আযানের শেষ কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে
গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত কে যেনো সিঁড়ি থেকে নিচে পড়ে যাচ্ছে !
আমি কি যেনো একটা হারিয়ে ফেললাম।

আবার বেশ কয়েকটি কণ্ঠ পর পর ভেসে এলো,
“আমি ধানমন্ডি তেরোর এক থেকে শেখ ফজলুল হক বলছি,
এইমাত্র আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সহ আমাকে মেরে ফেলেছে”
“মিন্টু রোড থেকে আমি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বলছি
এই মাত্র আমাকে এবং আমার স্ত্রী সহ তেরো জনকে ব্রাশ ফায়ার করেছে”

আমি আর বিছানায় থাকতে পারলাম না
একটু আগেই আযানের সুমধুর ধ্বনি
মিশে হয়ে গেছে অস্ত্রের ঝনঝনানি
উঠে দাঁড়াতেই শৈশব পেরিয়ে আসা এক কিশোরের কণ্ঠ,
“প্রতিশোধ নিন”
“প্রতিশোধ নিন”
আমি নিশ্চিত এটা শেখ রাসেলের কণ্ঠ।

আমি উঠে ওজু করে
ফজরের নামাজ পড়তেই
বুকের ভেতর এক ভয়ঙ্কর আগুনের
লেলিহান শিখা জ্বলে উঠলো
শরীরের সব লোম দাঁড়িয়ে গেলো
প্রতিশোধের আগুন জ্বলে উঠেছে আমার শরীরে
একাত্তরের সকল মুক্তিযোদ্ধার সাহস এখন আমার ভেতরে
অদম্য দুর্বার প্রলয়ংকরী এক মহাশক্তির স্পন্দন শরীরের ভেতরে।

না – আমি আর কাঁদবো না
চুয়াল্লিশ বছর বাঙালিরা অনেক কেঁদেছে
চোখের সমস্ত পানি আজ শুঁকিয়ে গেছে
বাঙালিরা এখন আর কাঁদবে না
বাঙালিরা আজ শোককে শক্তিতে পরিনত করেছে
এবার প্রতিশোধ প্রতিরোধ বিচারের পালা
শোক কাটিয়ে এবার ঘুরে দাঁড়ানোর পালা
এবার জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণের পালা
বাঙালিদের এবার সোনার বাংলা গড়ার পালা।

হঠাৎ একটি প্রবল ভারী কন্ঠ – যেখানে বজ্র কণ্ঠের রেশ রয়ে গেছে,
আমি উঠে দাঁড়াতেই তিনি বললেন, বসো।
আমি বললাম, প্রিয় জাতির পিতা – আপনি কেমন আছেন?
তিনি বললেন, “আমি জানি ২১ বছরে ৪২ বছর পিছিয়ে গেছে আমার সোনার বাংলা কিন্তু আর দেরি করো না- তোমরা আমাকে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে- এবার দ্রুত প্রতিশ্রুতি পুরণ করো”

আমি বিছানায় শুয়ে পড়লাম
একটু তন্দ্রা আসতেই আবার সেই কিশোরের কন্ঠঃ “প্রতিশোধ নিন – প্রতিশোধ নিন”
আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম,
“প্রতিশোধ নেবো-আমি প্রতিশোধ নেবো-তোমরা আমেরিকা কানাডা লিবিয়া যেখানেই পালিয়ে থাকো আমি আসছি প্রতিশোধ নিতে – আসছি……।”

আমার ছোট মেয়ে কণ্ঠ ভেসে এলো, “বাবা কি হয়েছে?”
আমি চোখ মেলে দেখি আমার ছোট মেয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি জানতে চাইলাম, আজ কত তারিখ?
আমার মেয়ে বললো, আজ ১৫ই আগস্ট
এবার জানতে চাইলাম, এটা কতো সাল?
উত্তর দিলো দুই হাজার উনিশ সাল।

উত্তর খুঁজে পাই না

3fe35

কেন তোমাকে ভালোবাসি
এর উত্তর খুঁজে পাইনা
তুমি শ্যামলী – গৌর গড়ন হলেও
মুগ্ধ হবার কারণ খুঁজে পেতাম
অর্থ বিত্ত ছোটবেলা থেকেই আমাকে টানে নি
এই বিষয়ে অনাগ্রহের কারণ আমি খুঁজতেও যাই নি
তাহলে আগ্রহ আছে কিসে?
আগ্রহ? ভাবতেই হাসি পায়
কে এই পৃথিবী নামক পাগলা গারদ বানিয়েছে!
কোন পাগল মানুষ বানিয়েছে
মন বানিয়েছে
প্রেম দ্রোহ সংঘাত যুদ্ধ হত্যা এবং জন্ম মৃত্যু খেলা বানিয়েছে
তা বানাক, কিন্তু আমি কেন তোমাকে ভালোবাসি এর উত্তর খুঁজে পাই না।

তোমার দেহ দেখে কিছুটা কামভাব জাগে
তবে তা এতো অল্প যেনো সপ্তাহে একবার বা দুইবার তার বেশি না
আমি পুরুষ, সিদ্ধ পুরুষ নয় – একেবারে জাগবে না এটা মিথ্যা কথা
কিন্তু এতোটুকু কামভাব তুমি না হয়ে অন্য নারী হলেও জাগতো
তাহলে কেন আমি তোমাকে ভালোবাসি
এর উত্তর খুঁজে পাই না।

আচ্ছা! তোমাকে ভালোবাসতে হবে কেন
ভ্রান্ত বিশ্বাস ভেবে নিয়ে বিশ্বাসকে সংশোধন করেছি বহুবার
ভুল ভালোবাসা মনে করে ঘষে ঘষে মন থেকে মুছে দিয়েছি
কিন্তু কেন বেশিদিন ভুলে থাকতে পারি না
কেন মন থেকে চিরতরে মুছে দিতে পারি না
এর উত্তর খুঁজে পাই না
কেন আমি তোমাকে ভালোবাসি
এর উত্তর খুঁজে পাই না।

ভাবের অভাব

12-Habits

এখন এখানে ভাতের অভাব নাই
শুধুই ভাবের অভাব দেখতে পাই
ভাতের অভাব নাই টাকার অভাব
চুরি করে চোর হয়ে গিয়েছে স্বভাব
কত টাকা প্রয়োজন তাও জানা নাই
এখন এখানে ভাতের অভাব নাই।

আড়ি ভাব আড়ি ভাব সেই ভাব নাই
হৃদয়ে হৃদয়ে হৃদ্যতা স্নিগ্ধতা নাই
এখন হৃদয়ে টাকার ঝংকার পাই
চাহনিতে টাকা চোখের পলকে টাকা
মায়ার ভিতরে টাকা সুদ ঘুষে টাকা
চাকরিতে টাকা ব্যবসা হলেও টাকা
হালাল হারামে টাকা সাদা কালো টাকা
যেখানে যেভাবে পারো ধরো মারো টাকা
নইলে জীবন হবে অহেতুক ফাঁকা।

এখানে এখন টাকার অভাব নাই
এখানে এখন ভাতের অভাব নাই
শুধুই ভাবের অভাব দেখতে পাই
অভাবে স্বভাব বলে আর কিছু নাই
স্বভাবে অভাব শুধুই দেখতে পাই
অভাব স্বভাব আর যাই কিছু বলি
ভাবের অভাব সব বাড়ি ওলি গলি
এখন এখানে ভাতের অভাব নাই
কেবল ভাবের অভাব দেখতে পাই।

.
ছন্দঃ মাত্রাবৃত্ত
পর্বঃ ৬ + ৬ + ২
মাত্রাঃ ১৪
অনুপ্রাসঃ ভাব ( বৃত্তানুপ্রাস)
রুপকঃ ভাব
স্তবকঃ ৬ + ৯ + ৯
পঙতিঃ ২৪

সহস্র জনমের প্রেম

সমস্ত ব্যস্ততা শেষে গভীর রাত্রিতে স্মার্ট ফোন বাম হাতে
তার হাসি মাখা মুখ বার বার দেখি ফেসবুকে অন্তর্জালে
কিন্তু এখন একটা কবিতা লিখতে হবে এই মধ্য রাতে
সনেট লিখতে হবে ছন্দ ব্যাকরণ মেনে এ নিশুতি কালে
কাগজ কলম নেই; রাফ নেই; লিখে যাচ্ছি টাইমলাইনে
কাগজ আমার স্মার্ট ফোন; কলম ডান হাতের তর্জনীতে
বড়জোর আমি করতে পারবো এডিট তাও অনলাইনে
বাইশ মাত্রার মহাপয়ার হবে কি রচিত এ রজনীতে?

অষ্টক গেলো ষষ্টক এলো আসল কথাইতো হলো না বলা
সহস্র জনম ভালোবেসে একসাথে এখনো হলো না চলা
বার বার পৃথিবীতে ফিরে এসে এসে তোমার প্রেমেই পড়ি
তোমার জন্যই জনমে জনমে কবি হয়ে লেখালিখি করি
তবে আরও সহস্র জনম হয়তো আমাকে আসতে হবে
আসবোই আমি অপুর্ণ প্রেমের সাধ যতদিন রবে ভবে।

সনেট
অক্ষরবৃত্ত
৮ + ১৪ = ২২ মাত্রা
কখকখঃ গঘগঘঃঃ ঙঙচচছছ

পাগল

সংগমের অনুভুতির মতোই
এক অনন্য অনুভুতি নাকি মারিজুয়ানায়
সে অনুভুতি নাকি মদেও পাওয়া যায়
ধার্মিকরা তেমন অনুভুতি নাকি নামাজেই পায়
কেউ কেউ পবিত্র কোরানেও এক অনন্য অনুভুতি পায়।

কিন্তু তুমি আশ্চর্য হবে এই কথা শুনে যে,
শতভাগ মিথ্যে কথা বলা হয় পবিত্র কোরান ছুঁয়ে আদালতে
আর শতভাগ সত্য কথা বলা হয় মাতালের পানশালায়।

তাহলে কখোন কোথায় কোন অনুভুতি,
অনুভুতি বলতে যদি আসলে সময়কে বুঝায়
তাহলে সত্য মিথ্যা নির্নয় পাগলামির শামিল
পাগল?
হ্যা পাগল ছাড়া সৃষ্টি হয় না
স্বাভাবিক আসলে স্বাভাবিক
সৃষ্টি অস্বাভাবিক,
সৃষ্টি।
ভগবান?
সেতো মহাপাগল
মহাবিসশ্ব নিয়ে পাগলামি করছে।

অথবা মাঝেমধ্যে একটু অস্বাভাবিক হও, পাগল হও।

আলাপন -৬০

indexa

ক্রিং ক্রিং……ক্রিং ক্রিং (ফোন বাজছে)
অথৈঃ হ্যালো
রিমনঃ কি করছেন
অথৈঃ “গানস অন রোজেস” এর “নভেম্বর রেইন” গানটি শুনছি
রিমনঃ বাহ! দারুণ একটা গান। অসাধারণ লিরিক্স। গিটারের অপুর্ব এক সলো আছে এই গানে।
অথৈঃ “ডায়ার স্ট্রেইটস” এর “সুলতান্স অব সুইং” শুনেছেন?
রিমনঃ কেন নয়? এই গানে ক্লাসিক এক গিটার সলো বাজিয়েছেন মার্ক নফলার।
অথৈঃ হ্যা, দারুণ গিটার সলো। একেবারে ক্লাসিক…….তা আমাকে মনে পড়লো বুঝি?

রিমনঃ ফোন করেছি একটা কথা বলার জন্য।
অথৈঃ হ্যা বলুন
রিমনঃ আপনার হাসি মাখা মুখটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ডিলিট করে একটি গম্ভীর মুখের ছবি দিলে ভালো হবে।
অথৈঃ কেন বলুন তো!
রিমনঃ ওই ছবিটা দেখলে আমি আপনার ওপর রাগ করতে পারি না।
অথৈঃ আপনি আমার ওপর রাগ করতে চান কেন
রিমনঃ আপনাকে ভুলে যেতে চাই তাই আপনার ওপর আমি রেগে থাকার চেষ্টা করি কিন্তু যতোবার ওই ছবিটা দেখি ততোবার আমি রাগ করতে ভুলে যাই।
অথৈঃ কেন ভুলে যেতে চান আমাকে?
রিমনঃ আপনাকে ইনবক্স করে জানতে চেয়েছিলাম – কেমন আছেন। তিন মাস হয়ে গেলো কিন্তু আপনি উত্তর দেন নি। মনে মনে হয়তবা ভাবছেন…..ও আর এমন কি কবি যে তার ইনবক্সের উত্তর দিতে হবে? এইসব কবিরা……

অথৈঃ বাংলার রবীন্দ্রনাথ আর ইংলিশ শেক্সপিয়ারকে কতটুকু পড়েছে কে জানে……
রিমনঃ জন কীটস, পিবি শেলি কিংবা পাবলো নেরুদা…..
অথৈঃ অথবা অক্টাভিওপাজ তো পড়েছে বলে মনেই হয় না…..পারস্য প্রতিভা……
রিমনঃ কিংবা ওয়ার্ল্ড লিটারেচার কতোটুকু জানে কে জানে…….
অথৈঃ শুধু অন্তমিল মিলিয়ে লিখলেই যে……
রিমনঃ কবিতা হয়ে যায় না তা এইসব কবিরা বুঝে কিনা………?
অথৈঃ ছন্দ, মাত্রা, পর্ব, রুপক, অনুপ্রাস…….
রিমনঃ অথবা কবিতাকে কি করে অলংকার পরাতে হয় তা জানে কিনা…….

অথৈঃ না, মানে….
রিমনঃ কবিতায় যে দর্শন থাকে তাও বোধহয় জানে না
অথৈঃ ইয়ে মানে…….
রিমনঃ শপেনহার, বার্গসা বা হেগেলের দর্শন এইসব কবিরা পড়েছে কি?……..
অথৈঃ না, তা না, আসলে আমি……
রিমনঃ রুবাই, সিজো, কাসিদা, হাইকু, লিমেরিক এইসব কবিরা লিখতে জানে কি?…..
অথৈঃ আসলে আপনাকে আমি এমন মনে করিনি
রিমনঃ না, আমি আসলে কবি কিন্তু প্রতিষ্ঠিত কবি হবার ইচ্ছে নেই
অথৈঃ কিন্তু আমিতো আপনার একটি কবিতা আবৃত্তি করেছি
রিমনঃ সেটাতো অনেক অনুনয় বিনয় অনুরোধ করার পর করেছেন কিন্তু আপনি অনেক ভালো আবৃত্তি শিল্পী

অথৈঃ তাই নাকি
রিমনঃ আমার কবিতার অল্পপ্রাণ মহাপ্রাণ ধ্বনির সঠিক উচ্চারণ, নাসিক্য বর্ণের সঠিক উচ্চারণ, তাল, লয়, প্যাটার্ন অব ডেলিভারি, ক্লাইম্যাক্স এন্টিক্লাইম্যাক্স অসাধারণ ভাবে করেছেন।
অথৈঃ বাহ! আপনি দেখছি আবৃত্তিও বুঝেন
রিমনঃ কেন নয়? এখনকার কবিরা আবৃত্তিও করতে জানে
অথৈঃ হুম, এখনকার কবিরা স্মার্ট কবি
রিমনঃ পাঞ্জাবি-পায়জামা, ঝোলানো ব্যাগ আর চটি স্যান্ডেল ছেড়ে এখনকার কবিরা জিনস প্যান্ট, পোলো শার্ট আর কেডস পরতে জানে
অথৈঃ কিন্তু ব্যাগে যে কবিদের খাতা কলম বই লাগে!
রিমনঃ ওগুলো এখনকার কবিরা স্মার্ট ফোনেই সেরে ফ্যালে।
অথৈঃ তাইতো দেখি ইদানীং

রিমনঃ আচ্ছা, যেদিন আমাদের আবৃত্তি প্রশিক্ষকের অফিসে আমাদের সকলের ইনভাইটেশন ছিলো সেদিন আপনি আমাকে কিছু একটা বলতে গিয়েও বললেন না। সেই কথাটা কি আজ বলবেন?
অথৈঃ যেটা বলতে চেয়েছিলাম সেটা আসলে অবাস্তব এবং অসম্ভব তাই বলি নি
রিমনঃ আসলে অনেক বাস্তব বিষয়কে আমরা অবাস্তব হিসেবে ধরে নেই এবং অনেক সম্ভব ব্যাপারকে আমরা অসম্ভব মনে করি
অথৈঃ বিয়ে হওয়ার পরে, স্বামী সন্তান সংসার হওয়ার পরে যদি অন্য কাউকে ভালোবাসতে মন চায়। যদি মনে হয় অন্য কাউকে মনের কথা বলা যায়। যদি মন হয় জীবনে বড় ভুল হয়ে গেছে। যদি অন্য কাউকে খুব করে কাছে পেতে ইচ্ছে করে তাহলে কি করে তা সম্ভব?

রিমনঃ সকালের সূর্যটাই দুপুর এলে রৌদ্র হয়ে যায়। দুপুরের রৌদ্র যদি কারো ভালো লাগেও তাহলে সমাজের বিধি মানতে গিয়ে তাকে ছাতা খুলে মাথার উপর ধরতে হয়। কিন্তু দুপুরের রৌদ্রকে ভালোবাসাতে কোনও অপরাধ নেই। শুধু ছাতার আড়ালে থেকেই রৌদ্রকে ভালোবাসতে হয়। কেবল ওই রৌদ্র গায়ে মাখতে গেলেই সমাজের সব বিধি নিষেধ।

অথৈঃ কেন যে বিধাতা কখনো কখনো সঠিক সময়ে ভুল কাজ করে থাকেন আর ভুল সময়ে সঠিক কাজটি করে থাকেন! কেন যে বিধাতা কঠিন বাস্তবতা নিয়ে খেলেন, হাসেন, নিশ্চুপ থাকেন তা মানব জগতের কেউ কি বুঝতে পারে? হায় বিধাতা, তোমাকে আর কতকাল মানবজাতি খুঁজে খুঁজে বেড়াবে? হায় বিধাতা, আমার জীবনে কেন তুমি সেই সঠিক সময়ে ভুল কাজটি করলে।

কালো আগুন

অথবা জাইগোট এর জাত কি
শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু হিন্দু নাকি মুসলিম
কিংবা যে শিশুটি নিষিদ্ধ পল্লীতে জন্ম নিয়ে
জানতে পারে না কে তার পিতা
কিবা তার পিতার ধর্ম
ক্ষুধা নিবারনের জন্য দেহ বিক্রি করাই ছিল
জন্মদাত্রী মাতার ধর্ম
এবং কেউ কখনো হাত ধরে নিয়ে যায়নি মসজিদে
কেউ শোনায়নি পুরোহিতের পুরাণ পাঠ
দেখায়নি যীশুর ক্রুশবিদ্ধের ছবি,
বড় হয়ে সেই শিশুটি জেনে নেয়
ধর্ম কেবল এক জন্মগত অভ্যাস,
তারপর একদিন সব জানে
এবং এও জানে কেন যীশুর পিতাও প্রশ্নবিদ্ধ।

এরই মধ্যে ওদিকে গভীর রাতে
কেওক্রাডাং পর্বতের গুহায়
আবারো আকাশ থেকে নেমে আসতে চায় আকাশদূত,
অত:পর গুহার ভিতরে থাকা কেউ একজন বলে ওঠে
এসো – নেমে এসো হে আকাশদূত
এই পৃথিবীর পরে
শুধু আর একটিবার, শুধু এইবার
নেমে এসো আবার।
নিয়ে এসো আকাশের অনুশাসন বাণী
দৈব বাণী আর মানব জীবনের মূলসূত্র, আদর্শ বাণী
এবং বিধিনিষেধ, বিধিবিধান
পাপ থেকে মুক্তো হওয়ার উপাখ্যান
এবং সকল মানুষের জীবনের বিধান।

আর যদি না আসো নেমে তুমি
হে আকাশদূত!
আমি নিজেই রচনা করবো সেই মহাগ্রন্থ
সেই মহাশাস্ত্র যা মানব জীবনের চলার পথ
তারপর তা প্রকাশ করে দেবো মানুষের মাঝে
এবং বলবো এই হলো আকাশ থেকে নেমে আসা
বিধির বিধান – এই হলো মানব জীবনের জীবন বিধান
মেনে নাও, অনুসরণ করো – তাতেই রয়েছে পরিত্রাণ
রয়েছে মৃত্যুহীন জীবন – পাবে ভালো ভালো খাবার আর পবিত্র সংগিনী।
আর যদি মেনে না নাও হে মানবকূল
জেনে রেখো
কালো আগুনের উত্তাপে পুড়বে অথচ মরবে না
শুধুই কালো আগুন আর শুধুই কালো আগুন।

আঁধার

index

অন্ধকার গুহা আমি একা
চারপাশে কেউ নেই
পৃথিবীর ভিতরেই
হিমযুগ ফিরে আসে
রঙিন পৃথিবীর আগে
সাদাকালো পৃথিবী
ঘড়ি নেই সময় আছে
আমার দেহ আছে
দেখতে পাই না কিছুই
অন্ধকার চারিদিকে ঘোর অন্ধকার

আমি জীবিত
এই পৃথিবীতে
আমি একা
অন্ধকার
সময়
আমি জীবিত আমি মৃত নই
প্রাণী নেই পানি নেই তৃষ্ণা নেই
বুঝতে পারি বুঝাতে পারি না

জেনেছি তবুও জানি না
সুর্য নেই
বাতাস আছে আলো নেই
এই রকম সময়ে
আদম এসেছিল একা
আমি আদমি
এখান থেকে বের হবার পথ নেই
পথ নেই?
পথ আছে একটু দূরে
আলো আছে প্রাণী আছে মানুষ আছে
এটা রাত্রি নয় স্বপ্ন নয়
পরকাল নয়
এটা বাস্তব
আমি জীবিত আমি মৃত নই
অন্ধকার –
আলো নেই আলো আছে দূরে
প্রাণ নেই প্রাণী আছে দূরে
এটা কোথায়
এটা পৃথিবী
শব্দ কিসের
শব্দ নেই বাতাস নেই
আমি মৃত নই
বেহেস্ত দোযখের মাঝামাঝি এটা নয়
কবরের অন্ধকার এটা নয়
আলো আছে বাতাস আছে
আমার দেহ আছে প্রাণ আছে আমি মৃত নই
মনে পড়ে
ছোটবেলার কথা
অতীতের কথা
তার কথা তাহার কথা
অতীতে ফেরার পথ নেই
ভবিষ্যতে যাবার পথ নেই
অতীত ভবিষ্যৎ কিছুই নেই
শুধু আছে বর্তমান
অন্ধকার আঁধার চারিধার।

পঞ্চাশ

আমি ভাবতেই পারছি না কখন পঞ্চাশ বছর হলো,
এইতো সেদিন পটুয়াখালীতে
বাবা ডেপুটি জেইলর ছিলেন-
গ্রাম ফেলে আসা চাচা আমাদের বাসায় থেকেই
মাদ্রাসায় পড়তেন-
দাদা দাদি ফুপুও ছিলেন আমাদের বাসায়।

এইতো সেদিন রাজশাহী বগুড়া দিনাজপুর কুষ্টিয়ায়
সরকারী কোয়ার্টার্সে শৈশব কাটালাম-
আর খুলনা যশোর কুমিল্লায় যৌবনকাল-
তারপর ঢাকা বিয়ে চাকরি সংসার কিন্তু,
আমি বুঝতেই পারছি না এরই মাঝে চলে গেছে পঞ্চাশটি বছর-
এরই মধ্যে পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করেছে পঞ্চাশবার,
নিজেকে প্রদক্ষিণ করেছে
আঠারো হাজার দুইশত পঞ্চাশবার,
অথচ মাত্র পঞ্চাশবার
অথবা পঞ্চাশটি বছর
পঞ্চাশটি বৈশাখ
পঞ্চাশটি বসন্ত
সত্য যে এর মাঝে দশটি বছর আমি ছিলাম না।

শৈশব থেকেই বাবা মসজিদে নিয়ে যেতেন-
বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটায় মার্কাজ মসজিদ –
শুরু হতো তাবলীগ জামাতের বয়ান-
এ জীবন জীবন নয়
মৃত্যুর পরে এক মৃত্যুহীন জীবন
এ নারী নারী নয়
অপেক্ষা করছে সত্তুর হাজার বেহেস্তি হুর
যারা সমুদ্রে থুথু ফেললে
সমুদ্রের লবণাক্ত পানি
মধুর চেয়েও সুমিষ্ট হয়ে যায়,
আকাশে উড়ে চলা পাখিটি
আকস্মিক ভুনা গোস্ত হয়ে মুখের সামনে চলে আসবে।

অত:পর তিন চিল্লা ছয় চিল্লা নয় চিল্লা
এবং শুরু হলো অবজ্ঞা এবং অনীহা
পৃথিবীর প্রতি অবজ্ঞা
টাকা পয়সা গাড়ি বাড়ির প্রতি অবজ্ঞা অনীহা
হুরের লোভে একাধিক নারী-সংগমের প্রতি অনীহা

কিন্তু কি লাভ হলো-
এইভাবে ভালো থেকে-
যৌবনে নারীবিদ্যা না শিখে-
কি লাভ হলো দারু পারুর স্বাদ না নিয়ে।
আজ কেন মনে হয় এইসব অবদমিত
ইচ্ছেগুলো পুরণ করি,
তা না হয় করলাম
কিন্তু জৈষ্ঠের পাকা পেপে আর মাঘের পাকা পেপে কি এক স্বাদ হয়?
এ জীবন নিয়ে বড় কষ্ট হয় আক্ষেপ হয়
তিন ছয় নয় চিল্লা কিংবা মাগরিবের বয়ান
আমার যৌবন ফিরিয়ে দেবে না
সত্তুর হাজার হুরের একজনকে স্বপ্নেও দেখলাম না
আমার শৈশব কৈশোর যৌবন
চুরি করেছেন আমার পিতা এবং কিছু ধর্মগুরুরা
পিতার জীবন চুরি করেছেন তার পিতা এবং ধর্মগুরুরা।

সময় এখন আমার হাতে ধরা দিয়ে বলে
চট করে দশ কাটলে ফট করে তুমি ষাট
তারপর এদিকে মাত্র দশ কিন্তু তুমি পুরো সত্তুর
তার ওপারে গেলেও যেতে পারো
কিন্তু তারপরই থুরথুর।

সময় পঞ্চাশে এসে একবার পিছু ফিরে তাকালো
চল্লিশ কিছু একটা বলেছিল
কিন্তু আমি বলেছিলাম কেবল অর্ধেক,
আরো অর্ধেক – দ্রুত চলো।

পঞ্চাশ
হায় পঞ্চাশ
কি অবাক করা পঞ্চাশ
কি আক্ষেপের পঞ্চাশ

সাবাস পঞ্চাশ!
সচেতন হওয়ার পঞ্চাশ
ঘুরে দাঁড়ানোর পঞ্চাশ

হে জ্ঞানী পঞ্চাশ
নিজেকে জানার পঞ্চাশ
মানুষ হওয়ার পঞ্চাশ।

বুকের বাম আলিন্দে

এবং যখন আমি বলি
কবিতা বুঝার বিষয় নয়
উপলব্ধি করার বিষয় –
তখনি কেবল পড়ন্ত বিকেলের
নীল পাখির কণ্ঠের গানের সুরের ভিতর থেকে
বেরিয়ে আসে এক সূর্যহীন বর্ষার দুপুর।
অথচ লেগস্পিন বলের মতো
আকস্মিক বাঁক নিয়ে
তুমি আঘাত হানলে
আমার হৃদয়ের মিডিল ষ্ট্যাম্পে-
শুরু হলো দ্বিতীয় ইনিংসের খেলা-
তথাপি তুমি সমুদ্রস্নানে গেলে
সমুদ্রের নীল সৌন্দর্য হয়ে
তীব্র ইনসুইং বলের মতো গতিতে
ঢুকে পড়বো তোমার বুকের বাম আলিন্দে।