মামুনের_অণুগল্প_রঙ_ঢং

নিজেদের আঠারোতম বিবাহ বার্ষিকী কিভাবে উদযাপন করবে, ভেবে ভেবে দিশেহারা শিহাব। আগামি কাল অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে। আজ ঘন্টা দুই বাকি থাকতেই বাসায় চলে এলো। কণাকে বেশ সারপ্রাইজ দেয়া যাবে।

নিজের ফ্ল্যাটে উঠার সময় সিঁড়ি দরোজায় একটু থামে। ঠোটের কোণে রহস্যময় হাসি ঝুলে থাকে। মনের ভিতরেও কেমন এক প্রফুল্লতা! আজকাল এই বাজারে কোটি টাকা দিয়েও কি একে কেনা যায়? তারপর ও কিভাবে যেন ওগুলি বিরাজ করে।

কণাকে যখন বলে,
– এবারে চলো ম্যারিজ ডে টা থার্টি ফাস্টে সবার সাথেই মিলে ‘সেলিব্রেট’ করি!

কণা শিহাবকে দেখে। ওর দৃষ্টিতে কাকচক্ষু জলের ছায়া দেখতে পায় শিহাব। আরো কি কি যেন রয়েছে। অবোধ্য কিছু অনুভবের মাঝে দাঁড়িয়ে শিহাব কণার উত্তরের প্রতীক্ষায়। হাল্কা পাতা ঝরার শব্দের সাথে একটু উষ্ণ কিছু বাতাসে ভেসে বেড়ায়। শিহাবের কাছে এমনই মনে হয়।

কণা কি দীর্ঘশ্বাস গোপন করার চেষ্টা করলো। নি:শ্বাস দূরত্ব দু’জনের মাঝে। কণার কথাগুলো যেন দূর নক্ষত্রের বুকের গভীর থেকে ভেসে এলো,
– আমার এতো রং লাগে নাই মনে। ঢং করার সময়ও নাই। কিছুই করা লাগবে না। তোমার অফিস আছে না?

ধাক্কা খায় শিহাব। ভিতরে বাহিরে। মনের গভীরে যে মন থাকে, সেখানেও। নিজের সব থেকে কাছের মানুষের কাছ থেকে, নিজেদের বিশেষ এই দিনটি নিয়ে- এমন নিঃস্পৃহ জবাব আশা করে নাই সে। একটু ব্যথিত হয়। কণাও শিহাবের মিইয়ে যাওয়া চেহারা দেখে। ভিতরে বাহিরে সে ও ভাংতে থাকে। অবশ্য এই আঠারো বছরে অনেক কিছু নিয়ে ভেংগে ভেংগে যদি মনটার অবশিষ্ট কিছু এখনো থেকে থাকে।

নিজের রুমে কাপড় পাল্টানোর সময় শিহাব কণার এই ব্যবহার নিয়ে ভাবে। বেশী কি দেরী হয়ে গেছে? আঠারো বছর তো কম দীর্ঘ নয়। কতটা দীর্ঘ? দূরত্ব হবার মত কি?

নিজের প্রিয় নারীর রহস্যময়তার অবগুন্ঠন অন্য সময়ে চোখে ধরা না পড়লেও, আজ স্ফটিক স্বচ্ছ হয়ে শিহাবের চোখে ধরা দেয়। পিছনের সময় ওর সামনে দৃশ্যমান হয়। নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত শিহাব… একা কণা দিনের পর দিন, রাতের বুকে দীর্ঘ রাত, নি:সংগ ভোরে শিশিরের উপর কণার একার পদচিহ্ন… হাত ধরার ইচ্ছে হলেও কণার ধরবার মত একমাত্র হাতওয়ালা মানুষটি তখন নিজের হাত নিয়ে বড্ড ব্যস্ত!

তবে কণা একা ছিল সময়ের প্রয়োজনে। আজ যখন সেই প্রয়োজন মিটিয়ে শিহাব একটু সুস্থির- কর্পোরেট জীবন থেকে সময় বের করার মত যোগ্যতার অধিকারী- ধরবার মত হাত দুটি কেন যেন বড্ড নিস্পৃহ!

অনেক দেরী হয়ে গেলো.. জীবনের রং ঢং কি নির্দিষ্ট সময়কে ঘিরে করতে হয়?

জানা নেই শিহাবের।

অনেক দেরি হয়ে গেছে একজন শিহাবের.. একজন কণার কাছে আসতে। কিন্তু একেবারেই কি শেষ হয়ে গেছে? জীবন তো এখনো আছে। আর যতক্ষন জীবন- ততোক্ষণ রং ঢং করার সুযোগ।

মরে গেলে করবার মতো কি থাকে আর?

পায়ে পায়ে কণার কাছে আগায় শিহাব। নারীর হৃদয়! যতই ভাংগুক, আবার জোড়া লাগেই। ভালোবাসার প্রলেপ সকল দাগ মুছে ফেলে।

শিহাবের এই জিনিসটার কোনো কমতি নাই। ভালোবাসায় কানায় কানায় পুর্ণ এক পলাতক হৃদয়, রং ঢং করার জন্য ওর অভিমানী হৃদয়ের বড্ড কাছে চলে আসে…।।

#মামুনের_অণুগল্প_রঙ_ঢং

মামুন সম্পর্কে

একজন মানুষ, আজীবন একাকি। লেখালেখির শুরু সেই ছেলেবেলায়। ক্যাডেট কলেজের বন্দী জীবনের একচিলতে 'রিফ্রেশমেন্ট' হিসেবে এই সাহিত্যচর্চাকে কাছে টেনেছিলাম। এরপর দীর্ঘ বিরতি... নিজের চল্লিশ বছরে এসে আবারো লেখালখি ফেসবুকে। পরে ব্লগে প্রবেশ। তারপর সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে 'অপেক্ষা' নামের প্রথম গল্পগ্রন্থ দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বইমেলা ২০১৭ তে তিনটি গ্রন্থ- 'ছায়াসঙ্গী'- দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, 'ঘুঙ্গরু আর মেঙ্গরু'- উপন্যাস এবং 'শেষ তৈলচিত্র'- কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাহিত্যের প্রধান তিনটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নাম রেখেছি। কাজ চলছে ১০০০ অণুগল্প নিয়ে 'অণুগল্প সংকলন' নামের গ্রন্থটির। পেশাগত জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পোষাক শিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছি। লেখার ক্ষমতা আমি আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখেই যেতে হবে আমাকে।

6 thoughts on “মামুনের_অণুগল্প_রঙ_ঢং

    1. ধন্যবাদ রিয়া দিদি। আপনার ভালোলাগা আমার লেখার প্রেরণা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

  1. কণাও শিহাবের মিইয়ে যাওয়া চেহারা দেখে। ভিতরে বাহিরে সে ও ভাংতে থাকে। অবশ্য এই আঠারো বছরে অনেক কিছু নিয়ে ভেংগে ভেংগে যদি মনটার অবশিষ্ট কিছু এখনো থেকে থাকে।

    কথার অনুভব গুলোন আমাদের জীবন চরিতের সাথে অনেকের মিলে যাবে মহ. আল মামুন ভাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_smile.gif.gif

  2. শিহাব এর যাপিত জীবনে আমি যেন আমাকেই খুঁজে পাই। শুভেচ্ছা মি. মামুন।

    1. জেনে ভালো লাগলো ভাইয়া। শিহাবেরও নিশ্চয়ই ভালো লাগবে। ধন্যবাদ আপনাকে। শুভেচ্ছা…https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।