পোষ পার্বণ
আজকের দিনটা এলেই মন ছুটে চলে যায় সেই ছোটবেলায়। বড় হয়েছি যৌথ পরিবারে। প্রতিটি পার্বণের ছিলো আলাদা আলাদা আনন্দ। এই মকরসংক্রান্তি এলেই বাড়িতে সাজো সাজো রব পড়ে যেতো। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠিয়েই স্নানের পর্ব শেষ করে দিতো বাড়ির লোকজন। তারপর রান্নাবান্না সংক্ষেপে সেরে নেওয়া হতো। ভোরবেলা উঠে ঠাম্মা চাল ভিজিয়ে রাখতেন। আমাদের তখন মিক্সার গ্রাইন্ডার ছিলো না। শিল নোড়াই ভরসা। মা, বড়মা সারা দুপুর ধরে সেই ভেজানো চাল বাটতেন। কত পিঠে হবে, পাটি সাপটা, গোকুল পিঠে, মুগপুলি, রাঙা আলুর পান্তুয়া নারকেল পুর দিয়ে, দুধ পুলি, সরু চাকলি, আসকে পিঠে, সেদ্ধ পিঠে, নতুন গুড়ের পায়েস, আরও কত কি! বিকেলে ঠাম্মার সাথে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে খাটালে যেতাম খাঁটি দুধ আনতে। সেইদিন দুধ পাওয়া মুশকিল হতো বলে, আমাদের রোজকার গয়লা চাচাকে বলে রাখা হতো দুধের জন্য। দুধ নিয়ে এসে সন্ধ্যেবেলা ঠাম্মা বসতেন পিঠে বানাতে। সন্ধ্যেবেলা থেকেই কত মানুষজন আসবে বাড়িতে পিঠে খেতে। কাকার বন্ধুরা, বাবার বন্ধুরা। আশেপাশের বাড়িতেও দেওয়া নেওয়া হতো পিঠে। আমরা ভাইবোনেরা যে ভীষণ পিঠে ভক্ত ছিলাম তা কিন্তু নয়। আমাদের ওই হৈচৈ করাতেই আনন্দ ছিলো। রাতে খুব বকে মেরে হয়তো একটা পিঠে খাওয়াতে পারতো। তাও মিষ্টি পিঠে নয়। নোনতা পিঠে। এই ছিলো আমার বাবার বাড়ি যেখানে প্রতিটি নিয়ম মেনে চলা হয়। নিয়ম নিষ্ঠা ভরে পুজো করা হয়।
কুড়ি বছর বয়সে যখন আমার বিয়ে দেওয়া হলো দাশগুপ্ত বাড়িতে। ভীষণ ভয়ে ভয়ে থাকতাম না জানি এদের কতো নিয়ম থাকবে। যখন জানলাম দুর্গা পুজো, কালি পুজো ছাড়া এইসব পার্বণ জরুরী নয় এই বাড়িতে। আমি চিরদিনই ঘরকুনো। সমুদ্রে, পাহাড়ে, জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করি ভীষণ। কিন্তু এদিক সেদিক টই টই পছন্দের নয়। সেই আমি বিয়ের পরে একজন বন্ধু পেলাম আমার শাশুড়ি মা কে। তারপর বন্ধু হলেন আমার কাকা শশুর। একেবারে সমবয়সী বন্ধু যেন। আমার শাশুমা কে তিনি বলতেন ‘বৌদি রিয়া একেবারে খাঁটি সোনা, ওকে যে একবার চিনতে পারবে, সে ওকে ভালো না বেসে থাকতেই পারবে না।’ আমাকে বলতেন, ‘এভাবেই মনটাকে সরল রেখো রিয়া, নিষ্পাপ মন তোমার।’ তারপর বন্ধু হলেন কাকি শাশুড়ি মা। মালপোয়া, পাটিসাপটা, মাছের নানান পদ, কোন মাছে পেঁয়াজ, রসুন দেবে আর কোন মাছ কালোজিরে কাচালঙ্কা ফোড়ন দিয়ে রান্না হবে সব তাঁর কাছেই শেখা। আমি সকালের জলখাবার না খেলে কাকুও খেতেন না, আমার শাশুমা আমাকে শিখিয়েছেন নিরামিষ সব পদ। বাড়ির সবথেকে ছোট বলে এদের স্নেহের প্রশ্রয় আমার বাড়ির বউ থেকে বাড়ির মেয়ে হয়ে ওঠা।
আজ এই পোষ পার্বণে যখন ঘরে বসে আছি মন খারাপ করে, কারণ প্রতি বছর এই দিনে বাবার বাড়িতে চলে যেতাম যে। এই বছর অশৌচ। কাকা মারা গেছেন যে। তাই এই বছর কোনো পুজো, অনুষ্ঠান হবেনা। তাই বাড়িতেই সামান্য আয়োজন যতটুকু শিখেছি আমার বটবৃক্ষদের কাছ থেকে তারই কিছু উদযাপনের চেষ্টা। যদিও সাঙ্ঘাতিক জ্বরের মধ্যে এইসব প্রচেষ্টা।
জীবনের কতো শতো গল্প স্মৃতি এভাবেই মানের কোণে লুকিয়ে থাকে।
সর্বোপরি আপনার জন্য অনেক শুভেচ্ছা প্রিয় শব্দ বন্ধু।
সত্য বলেছেন প্রিয় বন্ধু। ভালো থাকুন।
আহারে দিদি, মা বেঁচে নেই! স্ত্রীর সময় নেই! পুলি পিঠা আর পাটি সাপটা কে বানিয়ে খাওয়াবে ? আপনার পোস্টের ছবি দেখেই দুধের স্বাদ ঘোলে মেঠালাম দিদি। আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ।
আশীর্বাদ রাখি দাদা। সব মিলিয়ে অনেক ভাল থাকুন।
পোষ পাবণ এর লোভ দেখালেন দিদি
লোভ নয় কবিবাবু; জীবনের গল্প শেয়ার করেছি। ভাল থাকবেন।
ফেলেআসা ছেলেবেলায় ফিরে গেলাম।
লিখতে লিখতে আমিও যে ফিরে গিয়েছিলেম সেই অতীতে প্রিয় মন দা।
অসাধারণ স্মৃতিচারন। শুভকামনা।
আপনার জন্যও শুভেচ্ছা অয়েজুল দা।
স্মৃতির গহীনে দিলাম ডুব! আহা!
খুশি হলাম বাবু দা।
এমনিভাবেই আপনজনদের নিয়ে সুখী জীবনযাপন করুন সবসময়। ভরপুর শুভেচ্ছা রইলো।
ধন্যবাদ অর্ক দা।
আর পাটিশাপটা আমার খুব প্রিয়। আমার খুব অল্প প্রিয় খাবারের তালিকায় এটা অন্যতম। ঢের খেয়েছিও জীবনভর। তাই সহযেই ছবিটা আকৃষ্ট করতে পারলো।
আরেকবার শুভেচ্ছা ও আপনার নতুন লেখার অপেক্ষায় রইলাম।
আজ নতুন লেখা রয়েছে অর্ক দা। আসবেন।