নির্বাচন কি তাহলে ইনকা সভ্যতার মতই ইতিহাস !!

ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলে খুব পরিচিত একটা জায়গার উপর বিশেষ প্রতিবেদন দেখছিলাম। ‘মাচু পিচু, লস্ট সিটি অব ইনকাস’। আগ্রহটা এ জন্যেই নয় যে ঐ হারানো শহরে দু’বার গিয়েছিলাম। আমার জন্যে মাচু পিচুর দুর্বলতা অন্য কারণে। এন্ডিস পর্বতমালার বিপদজনক উচ্চতার ঐ শহরে আমি আমার হবু স্ত্রীকে আংটি দিয়ে প্রপোজ করেছিলাম। ওখান হতেই শুরু হয়েছিল আমাদের সংসার যাত্রা। আট আশ্চর্যের অন্যতম আশ্চর্য এই শহরের উত্থান ও পতনের সাথে জড়িয়ে আছে ইনকাদের উত্থান ও পতন। অবাক, বিস্ময় ও কষ্ট নিয়ে দেখছিলাম অনুষ্ঠানটা। কলোনিয়াল স্প্যানিশদের পৃথিবীর এ অংশে পা রাখার সাথে লেখা হয়ে যায় ইনকারের begging of the end!

অনুষ্ঠান শেষ করে ফেইসবুকে ঢুকতেই চোখে পরল আজাদ কাশ্মীর জামান ভাইয়ের দুটো ছবি এবং সাথে কয়েক লাইনের কিছু লেখা। অনেকের মত আমিও জামান ভাইয়ের ছবির ভক্ত। বেশকিছু ছবি ব্যক্তিগত আর্কাইভে জমা রেখেছি দুর্লভ ছবি হিসাবে। ছবি দুটোর স্থান একটা স্কুল। সময় ও উপলক্ষ উপজেলা নির্বাচন। বগুড়া শহরের নারুলী উত্তরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছবি। জামান ভাইয়ের হিসাবে ঐ স্কুল সেন্টার এলাকার অন্যতম বড় ভোটকেন্দ্র। প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ভোটার ভোট দিতে আসে এ সেন্টারে। হিসাব মতে সকাল ৯টা পর্যন্ত ভোট পরেছে সর্বমোট ১টা। সকাল ১১টার পর তোলা ছবির প্যানোরমা অনেকটা খা খা করা মরুভূমির মত। কোথাও কেউ নেই! জামান ভাই নিজেও ভোট দিতে যাননি।

ইনকা সভ্যতার উত্থান পতনের সাথে বগুড়ার নির্বাচন কেন্দ্র গুলিয়ে ফেলা অনিচ্ছাকৃত ছিলনা। অভাব, অনটন আর সমস্যা জর্জরিত আমাদের দেশে নির্বাচন সবসময়ই ছিল একটা অঘোষিত উৎসব। এ উৎসবে ৯০ বছর বয়স্ক বৃদ্ধ-বৃদ্বারা পর্যন্ত যোগ দিত মনের আনন্দে। গ্রামের দিকে এই উৎসবের ব্যাপ্তি ছিল আরও ব্যাপক। রিক্সা, ঠেলাগাড়ি, মোটরগাড়ি চেপে সকাল হতে শুরু হতো ভোটারদের আগমন। ভোটকেন্দ্রের আশপাশে স্থাপিত নির্বাচনী ক্যাম্পগুলোতে বেলা গড়ানোর সাথে সাথে বাড়তে থাকতো উত্তেজনা। সন্ধ্যায় একদল ঘরে ফিরত হাসিমুখে, পরাজিত দলের ক্যাম্পে নেমে আসতো সব হারানোর কষ্ট। হেরে যাওয়া দলের ক্ষণস্থায়ী হাঙ্গামাও ছিল নির্বাচনেরই অংশ। ভালমন্দ মিলিয়েই আয়োজিত হত নির্বাচনী নাটক। দিনশেষ মানুষ ঘরে ফিরে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতো নির্বাচনী ফলাফল। এবং অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকতো সামনের নির্বাচনের। কোথায় গেল এসব!

জনাবা শেখ হাসিনা বাকশালের উপর কিছু কথা বলেছেন গতকাল। এক কথায় হতাশাজনক ও ভীতিকর। প্রশংসা করে বলেছেন রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় এর প্রবর্তন ছিল সময়োচিত। যে জাতি তার নিজ ভাষার কথা বলার অধিকার রক্ষার জন্যে রুখে দাঁড়িয়েছিল, সে জাতি একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে এসে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থার বিপক্ষে মুখ খুলতে কেমন যেন বোবা হয়ে গেছে। অবস্থাদৃষ্টে মন হচ্ছে চেতনার জিয়নকাঠি বুলিয়ে জাতিকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছেন শেখ হাসিনা। এখানে কেউ আর কথা বলেনা। গোটা দেশকে মনে হয় আটরশী পীরের মাজার। আর শেখ হাসিনা ও তার পরিবার এর খাদেম।

দেশ হতে জনগণের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন কি তাহলে ইনকা সভ্যতার মতই ইতিহাসে ঠাঁই নিতে যাচ্ছে?

7 thoughts on “নির্বাচন কি তাহলে ইনকা সভ্যতার মতই ইতিহাস !!

  1. অভাব, অনটন আর সমস্যা জর্জরিত আমাদের দেশে নির্বাচন সবসময়ই ছিল একটা অঘোষিত উৎসব। ভালমন্দ মিলিয়েই আয়োজিত হত নির্বাচনী নাটক। দিনশেষ মানুষ ঘরে ফিরে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতো নির্বাচনী ফলাফল। এবং অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকতো সামনের নির্বাচনের। কোথায় গেল এসব! ___ সব হারিয়ে গেছে স্যার। :(

  2. বাংলাদেশ হতে জনগণের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন কি তাহলে ইনকা সভ্যতার মতই ইতিহাসে ঠাঁই নিতে যাচ্ছে? কে কতটা জানে জানিনা, আমার প্রশ্ন কেন এমনটা হচ্ছে। তবে কি বাংলাদেশে বাকশাল শবইটর একবিংশ শতকের নতুন মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে? এতে জনতন্ত্র গণতন্ত্র বিপণ্ন হবে সেটা কেউ বুঝছেন না? কেন চলতে দিচ্ছেন এমন শাসন ব্যবস্থা? দুঃখজনক। 

  3. আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন আমার প্রিয়জন

  4. এই তাহলে বাংলাদেশে চলমান ভোটাভুটিতে মানুষের উত্তর। আরও নিষ্ঠুর পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। :(

  5. আমাদের নাগরিক অধিকারটুকুও ডাকাতি করে নেয়া হয়েছে।  

  6. অপশাষনের এই শাসকগোষ্ঠিকে আমরা কখনই ভালো বলতে পারি না।

  7. ভোটের প্রতি আমাদের দেশের মানুষ কেমন যেন বিতৃষ্ণা বিতৃষ্ণা ভাব দেখাচ্ছে। তবে এবিষয়ে কিছু ব্যতিক্রমী মন্তব্যও করতে চাই না। কারণ, যদি আবার কারোর জাত যায়, তাই।

    লেখককে ধন্যবাদ। 

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।