যখন রোম পুড়ছিল…

যখন রোম পুড়ছিল

আমার একলৌতা পার্লার ফেরত বউ
ঝাঁ চকচকে কিচেনে সদ্য বারবিকিউ থেকে আনা
বিরিয়ানি আর চিকেন মুঘলাইএর ফয়েল
খোলায় ব্যস্ত ছিল,
এক মনে নিজের চোদ্দো বাই আঠেরোর বেডরুমে
আমারই ফ্যাশন দুরস্ত মেয়ে নিজস্ব নখের ডগায়
চিত্রবিচিত্র রঙের কারিকুরি লাগাচ্ছিল
কেয়া শেঠের সাড়ে পাঁচশো প্যাক,
আর আমি লাখ দামী সোফায় শরীর ডুবিয়ে
ব্ল্যাকডগে মৃদু চুমুক দিতে দিতে দেখছিলাম আইপিএল।

রোমিও সম্পর্কে যথাযথ কৌতূহল থাকায়
রোম আমাকে কিম্বা আমাদের পরিবারে কক্ষনো
দখলদারি করতেই পারে নি।

পৃথিবী গোল কিম্বা ডিম আমার পিতৃপিতামহের
সাবলীল জীবন দর্শনে তার বিন্দুমাত্র ছাপ ছিল না,
আসলে কিভাবে দরজা বন্ধ করতে হয়, আমরা জানি।

ঔপনিবেশিক সময়ে আমার পরিবারের কেউ
বিপ্লবী হয় নি ভুল নিবেশে,
ভাষা, খাদ্য, নকশাল এটসেট্রা এটসেট্রা ফালতু বুজরুকি
আমরা ডাস্টবিনে ফেলেছি অবলীলায়;
তাই একা আমিই কোটিতে হাঁটি, পা ফেলি রূপোলি
রূপোপজীবি মসৃণ রাস্তায়।

রাস্তায় ঝাঁকেঝাঁকে ইঁদুর অথবা বেজন্মা ছুঁচো
আমাদের দুশ্চিন্তার কারন হয় না হে সেলুকাস!

যখন রোম পুড়ছিল …
পুড়ুক –
রাস্তার ইঁদুরের পালে পালে লাফাচ্ছিল সমুদ্রে …
লাফাক –

আমার বা আমাদের গোলকে জ্বলন্ত রোম অবাঞ্ছিত ক্ষত।

© soumitrachakraborty

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

16 thoughts on “যখন রোম পুড়ছিল…

  1. অসাধারণ কবি সৌমিত্র চক্রবর্তী। আপনি দারুণ লিখেন।  

  2. আমাদের গোলকে জ্বলন্ত রোম অবাঞ্ছিত ক্ষত। মূল্যবান কথা কবি সৌমিত্র চক্রবর্তী।

  3. সৌমিত্রদা,
    কবিতার সারমর্ম তো ভালোমত বুঝলাম না। ব্লগের সবাই জাত কবি, আর এদিকে আমি কবিতা বুঝি কম। কি যে সমস্যায় আছি….

    [রোম পোড়ার সময় আমিও আইপিএল দেখছিলাম]
    https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_mail.gif

    1. হাহাহা নিজু ভাই। আমার এলেবেলে লিখা শুধু পড়ুন বুঝে নেবোর প্রয়োজন নাই। :)

  4. কবিতাটার সবগুলো এলেমেন্টস ভীষণ উন্নত লেগেছে। বিশেষ করে এর পরিপক্ক বুনন, ভাবকল্প, আধুনিক অবয়ব এবং শেষের চমক!

    কবিতা পড়ার সুখ অনেক সময় প্রিয়তমার খোঁপায় বেলিফুল দেখার মতো লাগে!  অসাধারণ এই কবিতায় সেই সুখ পেলাম! 

     

    1. অনেক ধন্যবাদ প্রিয় ডেজারট ভাই। আপনার মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

  5. আমরা ডাস্টবিনে ফেলেছি অবলীলায়;
    তাই একা আমিই কোটিতে হাঁটি, পা ফেলি রূপোলি
    রূপোপজীবি মসৃণ রাস্তায়।

    মনের কথাগুলো আপনার কবিতায় ভেসে উঠে শ্রদ্ধেয় দাদা। আপনার লেখা কবিতা পড়ে এই সমাজের বিলাসিতা প্রেমীদের থেকে একটু দূরে আকতেে ইচ্ছে করছে।

  6. "ঔপনিবেশিক সময়ে আমার পরিবারের কেউ বিপ্লবী হয় নি ভুল নিবেশে, ভাষা, খাদ্য, নকশাল এটসেট্রা এটসেট্রা ফালতু বুজরুকি আমরা ডাস্টবিনে ফেলেছি অবলীলায়; তাই একা আমিই কোটিতে হাঁটি, পা ফেলি রূপোলি রূপোপজীবি মসৃণ রাস্তায়।"

     

    ভিন্ন স্বাদের চমৎকার অভিজাত একটি কবিতা পড়লাম ।প্রতিটি ছত্রেই অসাধারণ স্বকীয়তা, মনোমুগ্ধকর উপস্থাপন সত্যিই মনে রাখার মতো  ।              

    1. বিনীত শুভেচ্ছা কবি বোন রুকশানা হক। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

  7. শব্দ ও ভাষার অপূর্ব সমন্বয় কবিতাটিকে হৃদয়গ্রাহী করে তুলেছে।
    কবিতা পাঠে মুগ্ধ হলাম। প্রিয়কবিকে আন্তরিক প্রীতি
    ও শুভেচ্ছা জানাই। সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
    জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু!

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।