গুড়া মাছ জাতীয় উপাধি না পাওয়ায় দুঃখ!
একদিন সকালবেলা বাজারে গেলাম। পকেটে বেশি টাকা নেই! অল্প টাকা বেতনের চাকর আমি। বেশি টাকা আর থাকবে-ই-বা ক্যামনে! তবু যা আছে দুইজনের সংসারের দু’এক দিনের বাজার করারমত টাকা সাথে ছিলো। বাজারে গিয়ে আগেই মাছ বাজারে ঘুরা-ঘুরি করছি, দেখছি এবং কোন মাছের দাম কত জিজ্ঞেসও করছি। চোখ গেলো জাতীয় ইলিশ মাছের দিকে। যাকে অনেকেই আদর করে বলে রূপালি ইলিশ। ভয়ে ভয়ে মাছ বিক্রেতার সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “ভাইজান কেজি দরে, নাকি পিস্?”
মাছ বিক্রেতা বললেন, “আপনি যেভাবে নিতে চান, সেভাবেই আছি! প্রতি পিস্ ৫০০ টাকা, আর কেজি দরে ১০০০ টাকা।”
মাছ বিক্রেতার কথা শুনে বললাম, “না ভাই, এমন দরে আমার পোষাবে না! পার-পিস্ ২৫০ টাকা হলে আমাকে এক পিস্ দিতে পারেন। নাহয় আমি গুড়া মাছই নিয়ে নিবো। জাতীয় ইলিশ টাকাওয়ালারাই খেতে থাকুক। আমরা নাহয় গুড়া মাছের সাথেই থাকি।”
মাছ বিক্রেতা আর আমার কথায় মাছ দিল না, আমিও এতো টাকা দামের ইলিশ মাছ নিলাম না।
এরপর ইলিশ মাছের সামনে থেকে গুড়া মাছের দিকে গেলাম। টাটকা গুড়া মাছ দেখে মনটা মুহূর্তেই ভরে গেল। গুড়া মাছগুলো শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড় দাসের গাও, আর লাঙলবন্ধ এলাকার খাল- বিলের। দামাদামি না করে ৫০ টাকার গুড়া মাছ নিয়ে নিলাম। সাথে নিলাম গুড়া মাছের সাথে কাঁচা তরকারি যা লাগে। বাসায় এসে ভাবছি জাতীয় ইলিশ মাছ নিয়ে। মনে পড়ে গেল ইলিশের জাতীয় উপাধি পাবার আগের অবস্থার কথা। একসময় এই বঙ্গদেশের মানুষে ইলিশ মাছ বেশি খেত না, ডায়রিয়া, কলেরা হবার ভয়ে। একসময় হয়েছেও অনেক! তখনকার দিনে এখনকার মতন ডায়রিয়া, কলেরা রোগের তেমন কোনও চিকিৎসা ছিল না।
কোনও কারণে যদি কারোর ডায়রিয়া বা কলেরা হতো, তো সেই কলেরা রোগ গ্রামের পর গ্রাম ছড়িয়ে পড়তো। ডায়রিয়া বা কলেরা রুগী শরীরের পানি শূন্যতা হয়ে মারা যেতো। এই রোগ দেখা দেওয়ার আগে কলেরা আক্রান্ত গ্রামের কেউ যদি ইলিশ মাছ খেত, তাহলে ডায়রিয়া বা কলেরা হবার দোষ এই ইলিশের উপর পড়তো। তাই সেসময়ে ডায়রিয়া বা কলেরা রোগের ভয়ে কেউ বেশি ইলিশ মাছ খেত না। যদিও খেত, তো মনের ভেতরে ডায়রিয়া বা কলেরা রোগের ভয়ে ভয়েই খেত। এতকিছুর পরও, আগেকার সময়ে ইলিশ মাছের স্বাদের জন্য আলাদা একটা সুখ্যাতি ছিল। তা হলো, মাছের রাজা ‘ইলিশ’। বর্তমানের এর সাথে যোগ হয়ে গেল বাড়তি উপাধি, জাতীয় মাছ ‘ইলিশ’।
আগের মতো ডায়রিয়া বা কলেরার ভয় আর এখন বঙ্গদেশের কারও নেই! ডায়রিয়া বা কলেরা রোগের ভাব যদি কারও হয়ে যায়, তো দুই একটা ওরস্যালাইন খেতে পারলেই ডায়রিয়া বা কলেরা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু মাছের রাজা ইলিশ জাতীয় উপাধি পাবার পর থেকে আর বড় সাইজের ইলিশ মাছের সামনে গরিব মানুষ ভিড়তে পারে না। ইলিশ মাছ জাতীয় উপাধি পাবার পর যেমন বেড়েছে তাঁর অহংকার, তেমন বেড়েছে ইলিশের দাম! ওর কদর বেড়েছে দেশের বিভিন্ন উৎসব, আচার- অনুষ্ঠানেও। সেসবের মধ্যে বেশি কদর দেখা যায় বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখে। এদিন গরিবের পান্তাভাতের সাথে থাকে জাতীয় ইলিশের বাহারি আয়োজন।
এসবের কারণে ইলিশ মাছ দেশের গরিবের জন্য একরকম নিষিদ্ধ হয়ে গেছে বলে মনে হয়! আবার এই ইলিশ মাছ অনেক ডাক্তার অনেক রুগীদের জন্য এমতেই নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু যেই ডাক্তার বাবু রুগীকে ইলিশ মাছ খেতে বারণ করেছে, সেই ইলিশ মাছ সবসময় থাকে ওই ডাক্তার বাবুদের খাবারের তালিকায়। আবার অনেক সময় রাষ্ট্রীয় অতিথিদের খাবারের তালিকায়ও থাকে জাতীয় ইলিশ। এদিকে বর্তমানে জাতীয় ইলিশ ১কেজি ওজনের মাছগুলো চলে যায় দেশের বাইরে। আর যা থাকে সেইগুলো থাকে বড়লোকদের দখলে। দেশের গরিব মানুষের জন্য জোটে ঝটকা ইলিশ। যাকে বলে ইলিশ মাছের বাচ্চা।
এসব দেখে একা একা ভাবতে থাকি জাতীয় উপাধি ইলিশ মাছ কেন পেলো? ইলিশের তো মাছের রাজা একটা উপাধি ছিলই! এই জাতীয় উপাধি ইলিশ মাছকে না দিয়ে যদি গুড়া মাছকে দেওয়া হতো, তাহলে মনে হয় ভালো হতো। করণ এই গুড়া মাছ খেলে কোনপ্রকার রোগব্যাধি হয় না। বরং উপকারই হয়ে থাকে এবং সবসময় সব জায়গায় পাওয়া যায়। গুড়া মাছ কম দামে ধনী গরিব সবাই কিনতে পারে, খেতেও পারে। এই গুড়া মাছ একদিকে যেমন সুস্বাদু, অন্যদিকে অধিক পুষ্টিকরও। শুধু তা-ই নয়! গুড়া মাছের আরও অনেক গুন আছে বলে জানা যায়। এতো গুন থাকা সত্ত্বেও এই গুড়া মাছকে জাতীয় উপাধি দেওয়া হলো না। দেওয়া হলো মাছের রাজা ইলিশকে। দুঃখ শুধু এখানেই থেকে যায়।
লেখা একান্ত অনুভূতিতে প্রকাশ করা হলো।
লিখাটি পড়লাম মি. নিতাই বাবু। লিখাটি যে একান্ত ব্যাক্তি চিন্তা-প্রসূত সেটা একবার পড়লেই বোঝা যায়। ভালো ব্যবচ্ছেদ ঘটিয়েছেন মনে হলো। গুড়া মাছকে সেরা বা জাতীয় মাছের স্বীকৃতি দিলে ৫০ টাকায় পাবার সম্ভাবনাও সম্ভবত হাওয়া হয়ে যেতো।
তা মনে হয় হতো শ্রদ্ধেয় কবি দাদা। আমরা জাতে বাঙালি তো, তাই!
আপনার মূল্যবান মন্তব্যে অত্যন্ত খুশি হয়েছি শ্রদ্ধেয় কবি দাদা। শ্রদ্ধার সাথে রইল অশেষ কৃতজ্ঞতাও।
গুড়া মাছেরও তো দাম কম দেখি না। ছোট বেলায় এক পোয়া আধা কেজীর নিচে কেনা হতো না, এখন প্যাকেজ নয়তো গামলা চুক্তি। ইলিশও কেজি দর বা হালি ভাও। যে দিক দিয়েই যাই না কেন, আমার কাছে দাম কম মনে হয় না। জাতীয় বীরের খেতাব যে মাছকেই দিন না কেন লাভ নাই।
বর্তমান গুড়া মাছের দাম যা আছে, তা ধনী গবিবের সাধ্যমতই আছে দাদা। ইলিশ তো বর্তমানে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সমবেদনা প্রিয় কবি দা। যে যায় লন্কায় সেই হয় রাবণ।
মাছলিও তাই।
তা আপনি ঠিক বলেছেন শ্রদ্ধেয় কবি রিয়া দিদি। আমাদের লঙ্কাপুরীতে রাবণ তো আমরাই।
একান্ত একান্ত অনুভূতি বিশ্লেষণ পড়লাম দাদা নিতাই বাবু। যুক্তিযুক্তই মনে হলো।
সেদিনের বাস্তব ঘটনা শ্রদ্ধেয় দিদি। তা ছাড়া, সত্যি বলতে কি, ইলিশের দামের কারণে অনেক যাবত ইলিশ মাছ খাওয়া হয় না। সেদিন ভেবেছিলাম ছোট হলেও একটা জাতীয় ইলিশ মাছ বাসায় নিবো! কিন্তু দামের কারণের আর নেওয়া হলো না। মনের আশা মনেই থেকে গেল!
দুঃখ নেবেন না নিতাই বাবু। গুড়া মাছকেই জাতীয় উপাধি দিয়ে দিন। ১নং ভোট।
ভোট দিলেও হবে না শ্রদ্ধেয় কবি দাদা। কারণ, মাছেদের মধ্যে গুড়া মাছও আমাদের মতো কপালপোড়া, তাই।
যথার্থই লিখেছেন। বেশ ভালো লাগলো।