দেহ-আত্মার সমষ্টি মানুষ। তাই নিছক দৈহিক চাহিদা পূরণ করা গেল মানেই জীবন সুন্দর ও সার্থক হয়ে গেল এমনটা ভাবলে হিসাবে ভুল হবে। আত্মাকে বাইরে রেখে জীবনের সমীকরণ মিলবে না।
গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন- পিপাসার সমান কোনো নদী নেই। আসলে দৈহিক চাহিদার কোনো শেষ নেই। দেহকে যত দেওয়া হবে তার চাহিদা তত বাড়বে। একটা মানুষ যদি সম্পূর্ণ দেহসর্বস্ব বস্তুবাদী জীবে পরিণত হয় একটা আস্ত পৃথিবী দিয়ে দিলেও তার চাহিদায় ভাটা পড়বে না। এই সীমাহীন চাহিদা পূরণের সাধ্য কারও নেই। এ কারণেই প্রকৃতি দেহকে নিয়ন্ত্রণের জন্য আত্মার ব্যবস্থা রেখেছে। দেহ নামক রথের সারথী হচ্ছে আত্মা।
দেহ চায় ভোগ-বিলাস, আত্মা চায় সংযম। দেহ চায় কেবলই ইন্দ্রীয়সুখ, আত্মা চায় পরম কল্যাণ। দেহ চায় ব্যক্তিস্বার্থ, আত্মা চায় আত্মত্যাগ। দেহ আদর্শহীন, লক্ষ্যহীন, গন্তব্যহীন। আত্মা ন্যায় ও সত্যের প্রতিভূ, তার লক্ষ্য আছে, গন্তব্য আছে। দেহ নশ্বর, সে ভাবে মরে গেলেই সব শেষ, যা ভোগ করার এখনই করতে হবে। অন্যদিকে আত্মা অবিনশ্বর। সে জানে পৃথিবী তার আসল ঠিকানা নয়। সে পরমাত্মার অংশ। যেখান থেকে সে এসেছে সেখানে ফিরে যাওয়াই তার লক্ষ্য। সেই পরমাত্মায় লীন হবার পথ ভোগে নেই, সে পথ নিহিত ত্যাগে। এ কারণে দেহ সুখ পায় ভোগে, আত্মা সুখ পায় ত্যাগে। দেহের সুখ ক্ষণস্থায়ী ও অপ্রাকৃতিক, আত্মার সুখ চিরস্থায়ী ও প্রাকৃতিক।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে আমি দেহকে মোটেও গুরুত্ব দিচ্ছি না। আসলে তা নয়। দেহ ছাড়া আত্মা অচল। আত্মা চায় পরমাত্মায় বিলিন হতে। আত্মা থেকে পরমাত্মা পর্যন্ত পৌঁছতে যে পথ, সে পথের বাহন হচ্ছে দেহ। দেহের কারণে আত্মার অপমৃত্যু ঘটে এটা যেমন সত্য, একইভাবে এটাও সত্য যে, দেহ ছাড়া আত্মার উন্নতি সম্ভব নয়। কীভাবে ও কোন পথে দেহ নামক রথকে পরিচালিত করলে আত্মা পরমাত্মার সন্ধান পাবে তারই বিধিবদ্ধ সিস্টেম হচ্ছে ধর্ম।
ধর্মে দেহ ও আত্মার সমান গুরুত্ব। কারণ দেহ যিনি সৃষ্টি করেছেন, আত্মা যিনি সৃষ্টি করেছেন, ধর্ম সেই পরমাত্মারই সৃষ্টি। তিনি জানেন দেহ কী চায়, একইসাথে জানেন কীভাবে সেই চাওয়াকে প্রশমিত করা সম্ভব। তিনি জানেন দেহ কেন অন্যায় করে, অমঙ্গল করে, একই সাথে এও জানেন- কীভাবে সেই অন্যায় ও অমঙ্গল থেকে তাকে ফেরানো সম্ভব। দেহকে ন্যায় ও সত্যের উপর অটল রাখার জন্য আত্মাকে কী ভূমিকা পালন করতে হবে সেটাই ধর্মের মূল বিষয়বস্তু। ধর্ম আর কিছু নয়, ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যার পার্থক্যটা জানিয়ে দেয়।
আত্মা যদি তার নিজ ক্ষমতাবলে দেহকে সত্য ও ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখে তাহলে ভয় নেই। সে সফল হবে। আর যদি দৈহিক ইন্দ্রীয়সুখের কাছে ন্যায় ও সত্য পরাজিত হয়, তবে আত্মা তার শক্তি হারায়। যত সময় যায় দেহ ততই আত্মার আকর্ষণী বলয়ের বাইরে চলে যায়। এক সময় আত্মার মৃত্যু ঘটে। দেহের চাহিদা পূরণই মানুষের জীবনের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়, একটা আস্ত পৃথিবীও যে চাহিদা পূরণ হবার জন্য যথেষ্ট নয়।
গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন- পিপাসার সমান কোনো নদী নেই। আসলে দৈহিক চাহিদার কোনো শেষ নেই। দেহকে যত দেওয়া হবে তার চাহিদা তত বাড়বে। একটা মানুষ যদি সম্পূর্ণ দেহসর্বস্ব বস্তুবাদী জীবে পরিণত হয় একটা আস্ত পৃথিবী দিয়ে দিলেও তার চাহিদায় ভাটা পড়বে না। এই সীমাহীন চাহিদা পূরণের সাধ্য কারও নেই। এ কারণেই প্রকৃতি দেহকে নিয়ন্ত্রণের জন্য আত্মার ব্যবস্থা রেখেছে। দেহ নামক রথের সারথী হচ্ছে আত্মা।
ভাবিয়ে তুলেছেন প্রিয় লেখক! আপনার মূল্যবান পোস্ট পড়ে শুধু ভাবতেই লাগলাম। জয় হোক মানবতার। শুভকামনা আপনার জন্য।
আত্মাকে বাইরে রেখে জীবনের সমীকরণ মিলবে না। এই কথাটির সাথে আমি পূর্ণমত।
দেহ নশ্বর, সে ভাবে মরে গেলেই সব শেষ, যা ভোগ করার এখনই করতে হবে। অন্যদিকে আত্মা অবিনশ্বর। সে জানে পৃথিবী তার আসল ঠিকানা নয়। সে পরমাত্মার অংশ। যেখান থেকে সে এসেছে সেখানে ফিরে যাওয়াই তার লক্ষ্য।
সুন্দর আলোচনা করেছেন। আপনার উপস্থাপনা বরাবরই সহজ এবং বোধগম্য হয়।