শরতের আগমনী-পূজোর কবিতা সংকলন
দশম পর্ব- পূজোর কবিতা-১০
কবি-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
শরতের কাশফুলের অপরূপ শোভা চোখে পড়ে। ভাদ্র ও আশ্বিনমাসে সাদা সাদা তুলোর মতো মেঘে ছেয়ে যায় আকাশ, মাঝেমধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়ে সেই মেঘ আরও হালকা হয়, আরও সাদা হয়। সে মেঘের ছায়া পড়ে নদীর ধারে, কাশবনে। মেঘ, আকাশ আর কাশফুলের ছায়া পড়ে নদীর নীলজলে। অজয়ের দুইধারে কাশফুলের শোভা অতি মনোহর।
অজয়ের দুইধারে ফোটে কাশ-কুশ, ঘরের আঙিনায় ফোটে শিউলি বা শেফালি, খাল-বিল-পুকুর-ডোবায় থাকে অসংখ্য জলজ ফুল, শাপলা, শালুক ইত্যাদি। সরোবরে বিকশিত হয় কুমুদ-কমল। মধুলোভে তাই ছুটে আসে অলির দল। ফুলের সুবাসে চৌদিক ভরে ওঠে। নদীতীরে কাশফুল শোভা দেয়। পূজো এসে গেল। এলো খুশির রঙে রাঙিয়ে তোলার দিন। আসুন, আমরা সকলেই পূজোর রঙে হৃদয় রাঙিয়ে তুলি।
এমন শরতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মতো আমরাও যেন বলে উঠি : ‘আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ/আমরা গেঁথেছি শেফালী মালা/নতুন ধানের মঞ্জরি দিয়ে সাজিয়ে এনেছি বরণডালা।’
শব্দনীড় ব্লগের সাথে যুক্ত সহৃদয় সকল লেখক-লেখিকা, কবি ও সাহিত্যিকগণকে জানাই শরতের শুভ্র শুভেচ্ছা ও শারদীয়া অভিনন্দন। সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু।
শরতের আগমনী-পূজোর কবিতা সংকলন
দশম পর্ব- পূজোর কবিতা-১০
কবি-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
শরতের সোনা ঝরা নির্মল কিরণ,
তরু শাখে বিহগের মধুর মিলন।
প্রভাতপাখির গান শুনি কান পেতে,
সুমধুর গান শুনে প্রাণ উঠে মেতে।
রাঙাপথে সারি সারি চলে গরুগাড়ি,
সেই পথ গেছে চলে নদীঘাট ছাড়ি।
অজয়ের দুই কূলে শুভ্র কাশ বন,
কাশফুল শোভা হেরি হরষিত মন।
শেফালি মালতী যুঁথী, ফুটেছে টগর,
সরোবরে বিকশিত কমল নিকর।
সবুজ ধানের খেতে ঢেউ খেলে যায়,
শুভ্র মেঘ ভেসে যায় আকাশের গায়।
শরতের আগমনে প্রফুল্লিত মন,
কবিতায় লিখে কবি শ্রীমান লক্ষ্মণ।
শরতের মতো অসামান্য লাবণ্যবতী শিউলি রাজকন্যা হয়েও জনমদুঃখী। রাজকন্যার নাম পারিজাতক। ভালোবাসল সূর্যকে। কিন্তু সূর্যের প্রেমের শঠতা সহ্য করতে না পেরে দেহত্যাগ করে। তার দেহত্যাগের স্থানে জন্ম নিল একটি গাছ। ফুটল ফুল, মাখন-সাদা পাপড়ির সঙ্গে কমলা রঙের অতুলনীয় বোঁটা। কিন্তু সূর্যের প্রতি অভিমানে ভোরে তার ওঠার আগেই শিউলি ঝরে যায়। বহু রমণীতে আসক্ত পুরুষেরা শিউলির আত্মত্যাগের খুব প্রশংসা করে। বলে, শিউলি মহীয়সী, শিউলি আদর্শ নারী। পুরুষশাসিত সমাজে নারীর সম্মান এ রকমই। শিউলি রাতের হাওয়া মাতিয়ে রাখে। বাঙালির মর্মে শিউলি অচ্ছেদ্য বন্ধনে বাঁধা পড়ে আছে। নামটিও স্নিগ্ধতার প্রতীক। শেফালিকা; শেহালিকা ; শেফালি; শিউলি।
রবীন্দ্রনাথ শিউলিকে বলেছেন ‘প্রশান্ত শিউলি’। নজরুলও গানে ‘সন্ধ্যায় ফোটা ভোরে ঝরা’ শিউলির দুঃখের কথা গেয়েছেন। কালিদাস শরতের চাঁদের সঙ্গে শিউলির সম্পর্ক দেখিয়েছেন কবিতায়। একালের পাঠিকা ও পাঠক কী চোখে দেখছেন? শিউলির বৈজ্ঞানিক নামেও সেই বিষাদ, দুঃখ। নিকেটন্থাস্ আরব্রস্ট্রেস্টস্। নিকেটন্থাস্ অর্থ রাতের ফুল।
ওপরের উপকথাটি ভারতীয়। একই রকম গ্রিক উপকথাটি হলো : এক রাজকন্যা, অসাধারণ তার রূপলাবণ্য। রাজকন্যা ভালোবাসল দীপ্তিমান সূর্যকে। সূর্যের প্রেমে রাজকন্যা মাতোয়ারা। এমন ঐকান্তিক প্রণয়ীকে সূর্য একসময় ত্যাগ করল। বঞ্চিত রাজকন্যা অপমানে আত্মহত্যা করল। রাজকন্যার চিতার ছাই থেকে জন্ম নিল এক অনুপম বৃক্ষ। সেই গাছের শাখায় শাখায় রাজকন্যার সব দুঃখ ফুটল ফুলে ফুলে। তার আশ্চর্য হৃদয়ের সব সৌন্দর্য ও লাবণ্য উদ্ভাসিত হলো বর্ণে-গন্ধে-সুষমায়। কিন্তু ফুটল রাতের আঁধারে, সবার অগোচরে। কারণ সূর্যের প্রতি তার প্রবল ঘৃণা, প্রচণ্ড বিতৃষ্ণা। ভোরের আকাশে সূর্য দেখা দিতে না দিতে সে ঝরে পড়ে। ঘৃণা ও লজ্জায় মুখ ঢাকে মা ধরণীর প্রিয় কোলে। পৃথিবীতে তার শেষ আশ্রয় মা তো আছে, মা-মা-মা।
এই আমাদের শরতের রাজকন্যা শিউলি ফুল। এক রকম শিউলি সারা বছর ফোটে, অন্যটি শরৎ মাতিয়ে রাখে। রবীন্দ্রনাথের ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে শরৎ ঋতু নিয়ে ২২টি গান আছে। আবার সুপ্রাচীন কাল থেকে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে শিউলির পাতা, ফুল, ছাল, বীজের গুঁড়া জ্বর, আমবাত, কোমরের বাত, গৃধ্রসী, কৃমি, খুশকি ও মেদ কমার নিদান আছে।
প্রাচীনকালে রাজারা রাজ্য জয় করতে ছুটত শরৎকালে। পদ্মা-যমুনা-মেঘনার চরে কাশফুলের বৈভব ফোটে শরতের বায়ু তরঙ্গে। এ সময় শুরু হয় স্বর্ণতন্তু পাট সংগ্রহ। আর নৌকাবাইচ। শরতের চাঁদনি রাতে নৌকাভ্রমণ প্রায় ভুলতেই বসেছি। গ্রামগঞ্জের মানুষ এখনো সম্পূর্ণ ভুলতে পারেনি। শরতের রাতের মায়া আলাদা। চাঁদেরও ইচ্ছা ও ভালোবাসা আছে। নিঝুম রাত বেয়ে আসে দুঃখ, ভালোবাসা, বেদনা আর সুখের অনুভবরা। একাকীত্ব নিয়ে আসে অনুভব। চাঁদ বলে দিতে জানে মনের ইচ্ছাগুলোর কথা। যে কথা মনের গভীরে জমে থাকে, বেরিয়ে আসার সময় পায় না বলে রাতের অপেক্ষায় থাকে। শরতের রাতের মায়ার। চাঁদের একচক্ষু চশমায়, চাঁদ হলো রাতের আকাশের চোখ। মানুষের দুটি চোখ, মাছির শত শত চোখ, আরব্য রজনীতে আছে একচক্ষু দৈত্য, প্রেমের চোখও একটি; শরতের রাতেরও একচক্ষু চাঁদ আছে।
আমার পূর্ব-প্রকাশিত অন্য একটি শরতের আগমনী কবিতা
শরতের আগমনী
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
শরতের সোনারোদ দোলা দেয় মনে,
ফুটিল কমল কলি কমল কাননে।
কমল কাননে ফোটে কুমুদ কমল,
মধুলোভে আসে ছুটে যত অলিদল।
ভোরের বেলায় ঝরে নিশির শিশির,
কাশফুলে ছেয়ে আছে অজয়ের তীর।
অজয়ের নদীজলে মাঝি নৌকা বায়,
যাত্রীরা নৌকায় বসে পার হয়ে যায়।
শরতের সাদামেঘ গগনেতে ভাসে,
সবুজ ধানের খেতে সোনারোদ হাসে।
সোনাঝরা রোদ হাসে আকাশের গায়,
রাখাল বাজায় বাঁশি তরুর ছায়ায়।
আশ্বিনেতে দুর্গাপূজা ভারি ধূম হয়,
পূজার খুশিতে নাচে সবার হৃদয়।
শরতের আগমনী-পূজোর কবিতা সংকলন দশম ( শেষ পর্ব) – পূজোর কবিতা-১০ প্রকাশিত করা হলো। এরপর আমার পরবর্তী কাব্য “ যা দেবী সর্বভূতেষু…… মহিষাসুরমর্দিনী” আগামীকাল থেকে পর্বে পর্বে প্রকাশিত হবে। সকলের সহযোগিতা কাম্য।
সাথে থাকবেন- এটা প্রত্যাশা করি। জয়গুরু!
শরতের সোনারোদ দোলা দেয় মনে,
ফুটিল কমল কলি কমল কাননে।
কমল কাননে ফোটে কুমুদ কমল,
মধুলোভে আসে ছুটে যত অলিদল।
দশম পর্বটিও অসাধারণ একটি উপহার বলতে পারি মি. ভাণ্ডারী।
শুভ মহালয়ার আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই।
জয়গুরু!
পূজো এসে গেল। খুশির রঙে রাঙানো দিন। আমরা সকলেই যেন পূজোর রঙে হৃদয় যেন রাঙিয়ে তুলি। আনন্দঘণ এই পরিবেশে আমাদের ভার্তৃত্ববোধকে জাগিয়ে তুলি।
শুভ মহালয়ার আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই।
সাথে থাকুন, জয়গুরু!
আপনাকেও জানাই শরতের শুভ্র শুভেচ্ছা ও শারদীয়া অভিনন্দন। সাথে থাকুন কবি।
শুভ মহালয়ার আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই।
সাথে থাকুন, জয়গুরু!
শুভ মহালয়ার আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই।
সাথে থাকুন, জয়গুরু!
শরতের আগমনে পূজোর মাদল বাজে। ছড়িয়ে দিতে চাই ভালোবাসা ভালোবাসা।
শুভ মহালয়ার আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই।
সাথে থাকুন, জয়গুরু!
পদ্মা-যমুনা-মেঘনার চরে কাশফুলের বৈভব ফোটে শরতের বায়ু তরঙ্গে। শুভ শারদীয়া।
শুভ মহালয়ার আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই।
সাথে থাকুন, জয়গুরু!
শরতের শুভেচ্ছা নিন কবি দা।
শুভ মহালয়ার আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই।
সাথে থাকুন, জয়গুরু!