লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী এর সকল পোস্ট

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

টুসু গান (গীতি কবিতা) প্রথম পর্ব

টুসু গান (গীতি কবিতা) প্রথম পর্ব
কলমে-কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

টুসু উৎসব পালনের সময় পৌষ মাসের শেষ চারদিন চাঁউড়ি, বাঁউড়ি, মকর এবং আখান নামে পরিচিত। চাঁউড়ির দিনে গৃহস্থ বাড়ির মেয়েরা উঠোন গোবরমাটি দিয়ে নিকিয়ে পরিস্কার করে চালের গুঁড়ো তৈরী করা হয়। বাঁউড়ির দিন অর্ধচন্দ্রাকৃতি, ত্রিকোণাকৃতি ও চতুষ্কোণাকৃতির পিঠে তৈরী করে তাতে চাঁছি, তিল, নারকেল বা মিষ্টি পুর দিয়ে ভর্তি করা হয়। স্থানীয় ভাবে এই পিঠে গড়গড়্যা পিঠে বা বাঁকা পিঠে বা উধি পিঠে ও পুর পিঠা নামে পরিচিত। বাঁউড়ির রাত দশটা থেকে টুসুর জাগরণ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। মেয়েরা জাগরণের ঘর পরিষ্কার করে ফুল, মালা ও আলো দিয়ে সাজায়। সারারাত টুসুর জাগরণ হয়। টুসুগান গাওয়া হয়।

টুসুগান-১

টুসু কখন এলি?
শ্বশুর ঘরে বল না লো ক্যামন ছিলি?

শ্বশুর ভাল শ্বাশুড়ি ভাল গো
আর ভাল দেওর দুটি,
দেওরের দাদা ভাল গো
দুষ্টু আমার ননদী।

টুসু কখন এলি?
শ্বশুর ঘরে বল না লো ক্যামন ছিলি?

সকাল সকাল সবাইকে গো
চা করে খাওয়াই আমি,
নটা বাজল্যা জল খাবার দিই
আপিস যায় আমার স্বামী।

টুসু কখন এলি?
শ্বশুর ঘরে বল না লো ক্যামন ছিলি?

সারাদিন রান্না ঘরে গো
রান্ধা বাড়া সকাল হত্যে,
বর আমার আপিস থেকে গো
ঘর আসে 4টার মধ্যে।

টুসু কখন এলি?
শ্বশুর ঘরে বল না লো ক্যামন ছিলি?

সাঁঝ হলে বাতি জ্বালাই গো
আমাদের তুলসীথানে,
রাতের বেলা টুসু পূজা গো
সবাই মাতে টুসুগানে।

টুসু কখন এলি?
শ্বশুর ঘরে বল না লো ক্যামন ছিলি?

এখানে কিছু সংগৃহীত ও প্রচলিত সুরে
টুসুগানের সংকলন উদ্ধৃত করা হলো।

(১)
# চাল উলহাব রসে রসে
মুঢ়ি ভাজব রগড়ে
সতীন মাগি মইরয়েঁ গেলে
কাঠ চালাব সগড়ে
সতীন মইরল্য ভাল হল্য
ছাতির ভাত মর হেঁট হল্য
সতীন ছিল চৈখের বালি
তাই আগে অকে লিল

(২)
“টুসুর মাচায় লাউ ধরেছ্যে
ধরেছ্যে জড়া জড়া
হাত বাড়াঞে ধইরতে গেলে
পায় জড়া পানের খিলি
জড়া জড়া পানের খিলি
যাঁতি কাটা সুফারি…

(৩)
টুসুর চালে লাউ ধইরেছে
লাউ তুল্যেছে বাগালে
যবে বাগাল ধরা যাবি
বড়বাবুর হুজুরে
যখন বাগাল ধরা যায় মা
তখন হামরা বাঁধঘাটে
ঘাটের হল্যৈদ ঘাটে দিঞে
হামরা যাই মা দরবারে
দরবারে যে গেছলে টুসু
মকদ্দমায়ঁ কি হল্য
মকদ্দমায় ডিগরি হল্য
নীলমনি চালান গেল

(৪)
“উপরে পাটা তলে পাটা
তার উপরে দারোগা
ও দারোগা সইরাঞ বস গ
টুসু যাবেক পুরুল্যা
পুরুল্যা যে গেছলে টুসু মকদ্দমায় কি হল্য
মকদ্দমায় ডিগরি হল্য
নীলমনি চালান গেল”(এই দু ভাবেই গাওয়া প্রচলিত)

(৫)
রাত পোহালে আসে মকর।
ঘরে ঘরে পিঠার বহর
খাওয়াব করি তোকে আদর
কুনু কথা শুনব না গো শুনব না।
খাওয়াব করি কদর।
আসে মকর বছর বছর

“তদের ঘরে টুসু ছিল
দিন করি আনাগনা
কাইল ত টুসু চল্যে যাবে
হবে গ দুয়ার মানা”

রাত পোহালে আসে মকর।
কর তুরা টুসুর কদর
ঘরে ঘরে পিঠার বহর
আসে মকর বছর বছর।

1

পৌষমাসে পিঠেপুলি … সারাগাঁয়ে খুশির জোয়ার মকর পরবে করি সবারে আহ্বান (দশম পর্ব)

পৌষমাসে পিঠেপুলি … সারাগাঁয়ে খুশির জোয়ার
মকর পরবে করি সবারে আহ্বান (দশম পর্ব)
কলমে – কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

ঘরে ঘরে পিঠেপুলি ভারি ধূম হয়,
পৌষ সংক্রান্তি নামে সকলেই কয়।
সারারাত গড়ে পিঠে নাহিক বিরাম,
পিঠেপুলি উত্সবে মেতে উঠে গ্রাম।

প্রভাত সময় কালে নদীঘাটে ভিড়,
গরুগাড়ি এসে থামে অজয়ের তীর।
অজয়ের নদী ঘাটে মহা কোলাহল,
টুসু লয়ে আসে ঘাটে কুমারীর দল।

যাত্রীরা সিনান করে অজয়ের ঘাটে,
মেলা বসে নদীচরে সারাদিন কাটে।
ধর্মশীলা মেলা হয় সংক্রান্তি দিনে,
চুড়ি মালা বালা ফিতা সকলেই কিনে।

পৌষ সংক্রান্তি দিনে মহাধূম পড়ে,
যাত্রীদের কোলাহলে ঘাট যায় ভরে।
নদীতে মকর স্নান করে পূণ্যবান,
কবিতায় লিখে কবি লক্ষ্মণ শ্রীমান।

3

পৌষমাসে পিঠেপুলি … সারাগাঁয়ে খুশির জোয়ার মকর পরবে করি সবারে আহ্বান (নবম পর্ব)

পৌষমাসে পিঠেপুলি … সারাগাঁয়ে খুশির জোয়ার
মকর পরবে করি সবারে আহ্বান (নবম পর্ব)
কলমে – কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

পৌষমাস সংক্রান্তি মহা ধুমধাম,
পিঠেপুলি উত্সবে মেতে উঠে গ্রাম।
ঘরে ঘরে পিঠে হয় খুশির বাহার,
তিল পিঠে গুড় পিঠে হরেক প্রকার।

সারাদিন আনাগোনা আমন্ত্রিত জন,
সকলেই পিঠে খায় খুশিতে মগন।
খেজুরের গন্ধ ভাসে সারা গ্রামময়,
পিঠে খাও পেটভরে সর্বজনে কয়।

সরা পিঠে বাটি পিঠে সুস্বাদু আহার,
নলেন গুড়ের গন্ধ ভাসে চারিধার।
তিল চাঁছি নারকেল দিয়ে গড়ে পিঠে,
দুধ দিয়ে সিদ্ধ হলে লাগে খুব মিঠে।

কুমারীরা সকলেই বসে আঙিনায়,
টুসু পূজা করে সবে টুসুগান গায়।
সারারাত্রি টুসুগান রাত্রি জাগরণ,
কবিতা লিখিল কবি শ্রীমান লক্ষ্মণ।

2

গ্রাম বাংলার টুসু উৎসব … টুসুপূজা ও টুসুগান [দশম পর্ব – দশম পরিচ্ছেদ]

গ্রাম বাংলার টুসু উৎসব ……..টুসুপূজা ও টুসুগান
[দশম পর্ব – দশম পরিচ্ছেদ]
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

টুসু উৎসব পালনের সময় পৌষ মাসের শেষ চারদিন চাঁউড়ি, বাঁউড়ি, মকর এবং আখান নামে পরিচিত। চাঁউড়ির দিনে গৃহস্থ বাড়ির মেয়েরা উঠোন গোবরমাটি দিয়ে নিকিয়ে পরিস্কার করে চালের গুঁড়ো তৈরী করা হয়। বাঁউড়ির দিন অর্ধচন্দ্রাকৃতি, ত্রিকোণাকৃতি ও চতুষ্কোণাকৃতির পিঠে তৈরী করে তাতে চাঁছি, তিল, নারকেল বা মিষ্টি পুর দিয়ে ভর্তি করা হয়। স্থানীয় ভাবে এই পিঠে গড়গড়্যা পিঠে বা বাঁকা পিঠে বা উধি পিঠে ও পুর পিঠা নামে পরিচিত। বাঁউড়ির রাত দশটা থেকে টুসুর জাগরণ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। মেয়েরা জাগরণের ঘর পরিষ্কার করে ফুল, মালা ও আলো দিয়ে সাজায়।

পৌষ সংক্রান্তির আগের রাতে মেয়েরা গোবর দিয়ে পৌষ বুড়ি তৈরী করে সন্ধ্যেবেলায় প্রদীপ জ্বালিয়ে গান করতে করতে সারা রাত পৌষ আগলায়। এই পৌষ আগলানো মানে ফসল আগলানো। খেতে পাকা ফসল, পুরুষেরা রাতে সেখানে পাহারায় ফসল আগলানোতে ব্যস্ত। মেয়েরা তাই গৃহের রক্ষক, একা রাত জাগা যায় না। তাই দলবেঁধে উৎসব।

টুসু ঘরের মেয়ে, ফসল রূপী আবাদের দেবী। এই আরাধনা কবে থেকে চলে আসছে তার সঠিক তথ্য না পাওয়া গেলেও সম্রাট অশোকের আমলে এই একই ধরনের সমান্তরাল উৎসবের বর্ণনা পাওয়া যায় ধৌলি ও জৌগাডা শিলালিপিতে পাওয়া যায়। সমগ্র ধলভূম, বরাভূম ও মানভূমগড় জুড়ে একটা প্রচলিত কাহিনী শুনতে পাওয়া যায় কান পাতলেই। কাশীরাজের কন্যা টুসু ও ভাদু ইত্যাদি ইত্যাদি.. কান্তু গবেষনায় স্পষ্ট হওয়া গ্যাছে যে এই গল্প গল্পই।তার কোন সারবত্তা নেই কুড়মি সংস্কৃতি বা রুচির সাথে।

তাই এই ঘরের শস্যরূপী দেবীর কাছেই যত আবদার, অভিযোগ এবং তার কাছেই আনন্দের প্রকাশ। গানগুলিতে তারই প্রকাশ ঘটে।

# চাল উলহাব রসে রসে
মুঢ়ি ভাজব রগড়ে
সতীন মাগি মইরয়েঁ গেলে
কাঠ চালাব সগড়ে
সতীন মইরল্য ভাল হল্য
ছাতির ভাত মর হেঁট হল্য
সতীন ছিল চৈখের বালি
তাই আগে অকে লিল

#
“টুসুর মাচায় লাউ ধরেছ্যে
ধরেছ্যে জড়া জড়া
হাত বাড়াঞে ধইরতে গেলে
পায় জড়া পানের খিলি
জড়া জড়া পানের খিলি
যাঁতি কাটা সুফারি…

# ১) টুসুর চালে লাউ ধইরেছে
লাউ তুল্যেছে বাগালে
যবে বাগাল ধরা যাবি
বড়বাবুর হুজুরে
যখন বাগাল ধরা যায় মা
তখন হামরা বাঁধঘাটে
ঘাটের হল্যৈদ ঘাটে দিঞে
হামরা যাই মা দরবারে
দরবারে যে গেছলে টুসু
মকদ্দমায়ঁ কি হল্য
মকদ্দমায় ডিগরি হল্য
নীলমনি চালান গেল
বা

# ২ )”উপরে পাটা তলে পাটা
তার উপরে দারোগা
ও দারোগা সইরাঞ বস গ
টুসু যাবেক পুরুল্যা
পুরুল্যা যে গেছলে টুসু মকদ্দমায় কি হল্য
মকদ্দমায় ডিগরি হল্য
নীলমনি চালান গেল”(এই দু ভাবেই গাওয়া প্রচলিত)

রাত পোহালে আসে মকর।

“তদের ঘরে টুসু ছিল
দিন করি আনাগনা
কাইল ত টুসু চল্যে যাবে
হবে গ দুয়ার মানা”

গানে গানে টুসু নিরঞ্জন। রঙীন সুদৃশ্য চৌড়লে চাপিয়ে টুসুকে ভাসিয়ে দেওয়া হয় বড়ো জলাশয় বা নদীতে। সবেধন নীলমণি কন্যারত্নটিকে জলে ভাসিয়ে দেওয়ার সময়, গ্রাম্য রমণীদের সে কি শোকবিহ্বল চেহারা! অশ্রুসিক্ত বদনে তখন সেই মন খারাপের গান-

“আমার বড়ো মনের বাসনা,
টুসুধনকে জলে দিবো না।”
মকর পরবের অপরিহার্য অঙ্গ টুসু গান। মানুষের চিরন্তন আশা আকাঙ্ক্ষা প্রকাশিত হয় এইসব টুসু গানে। মানভূমের ভাষা আন্দোলনের উত্তাল তরঙ্গের দিনে মানুষকে সচেতন করার কাজে টুসু গানের এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে।প্রকৃত অর্থেই টুসু কুড়মিদের মহামিলনের পরব।

1

হেমন্তের গান গেয়ে … চাষী সব ধান কাটে হেমন্তের হিমেল কবিতা (দশম পর্ব)

1

হেমন্তের গান গেয়ে …. চাষী সব ধান কাটে
হেমন্তের হিমেল কবিতা (দশম পর্ব)
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

হেমন্তের রং লাগে মাঠে পাকা ধান,
ধান কাটে গেয়ে সবে হেমন্তের গান।
ধানকাটা হলে শেষ নিয়ে আসে বাড়ি,
ধানের বোঝাই নিয়ে চলে গরু-গাড়ি।

জল নিতে আসে বধূ অজয়ের ঘাটে,
নদীপারে মাঠে মাঠে চাষী ধান কাটে।
বেলা পড়ে আসে যবে সূর্য অস্ত যায়,
মাঠে ঘাটে ঝোঁপঝাড়ে আঁধার ঘনায়।

রবিবারে হাট বসে অজয়ের ঘাটে,
নদীঘাটে বেচাকেনা সারাদিন কাটে।
ক্রেতা বিক্রেতার ভিড় সারাদিন ধরে,
হাট ভাঙে যবে সবে ফিরে যায় ঘরে।

হিমের পরশ লাগে শীত লাগে গায়ে,
সাঁঝের আঁধার নামে নদীঘাটে বাঁয়ে।
দূরে কোথা বাজে বাঁশি ভরে ওঠে মন,
হেমন্তের কাব্য গাথা লিখিল লক্ষ্মণ।

বৃষ্টি নামে টুপুর টাপুর ……. প্লাবনে ভাসে দুইকুল আমার বর্ষণসিক্ত কবিতা (প্রথম পর্ব)

2

বৃষ্টি নামে টুপুর টাপুর ……. প্লাবনে ভাসে দুইকুল
আমার বর্ষণসিক্ত কবিতা (প্রথম পর্ব)
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

বৃষ্টি নামিল টুপুর টাপুর
অজয়ে আসিল বান,
খেয়া পারাপার বন্ধ আজিকে
বাঁধা আছে তরীখান।

জোয়ারের জলে হাসিছে অজয়
ভেসে যায় দুই কূল,
প্লাবনের জলে ভাসে তরুশাখা
ভেসে যায় তরুমূল।

নদীবাঁধ ভেঙে গাঁয়ে ঢুকে জল
চারিদিকে কোলাহল,
ঝড়ো হাওয়ায় নীড় ভেঙে যায়
কাঁপে বিহগের দল।

অশনি ভরা বিজুলির হাসি
অন্ধকার কাল মেঘে,
গুরু গুরু স্বরে গর্জিছে মেঘ
বায়ু বয় দ্রুত বেগে।

আষাঢ়ের মাসে ঝরিছে বাদল
নদীতে বন্যা প্রবল,
প্লাবনের জলে ভাসে গোটা গ্রাম
চারিদিকে শুধ জল।

শীতের স্নিগ্ধতায় শীতের সকাল …শীতে কাঁপে অজয়ের চর শীতের চাদরে ঢাকা আমার কবিতা (প্রথম পর্ব)

বিভাগ – কবিতা (স্ব-রচিত)
 শিরোনাম – শীতের সকাল
 কলমে – কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
 তারিখ – ২২.০১.২০২২

শীতের স্নিগ্ধতায় শীতের সকাল …শীতে কাঁপে অজয়ের চর
শীতের চাদরে ঢাকা আমার কবিতা (প্রথম পর্ব)
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শীতের সকালে যখন ঘন কুয়াশায় সবকিছু ঢেকে যায় তখন প্রকৃতিকে অপূর্ব সুন্দর মনে হয়। … কুয়াশার চাদর সরিয়ে সূর্য যখন উঁকি দেয় তখন স্নিগ্ধ আলোয় ঝলমল করে কুয়াশায় ভেজা প্রকৃতি। খুব অপরূপ লাগে কুয়াশা ঝরা শীতের সকাল।

2

শীতের সকালে কাঁপে অজয়ের চর,
নদীচরে শোভা দেয় সোনা রবি কর।
কুয়াশায় মুখ ঢাকা শীতের সকাল,
রাখাল চলিছে গোঠে নিয়ে গরুপাল।

উত্তরে হাওয়া বয় এলো আজি শীত,
নীড়ে নীড়ে পাখিসব গাহিতেছে গীত।
কাঁখেতে কলসী লয়ে গাঁয়ের বধূরা,
জল নিতে আসে সবে রাঙাশাড়ি পরা।

শীতের সকালে দেখি কাঁপে শালবন,
বনটিয়া শিস দেয় ভরে উঠে মন।
মহুলের বনে বনে পড়ে যায় সাড়া,
শীতের সকালে জাগে আদিবাসী পাড়া।

শাল পিয়ালের বনে পাখি ঝাপটায়,
আদিবাসী রমণীরা নাচে আর গায়।
মহুয়া নেশায় মত্ত আদিবাসীগণ,
শীতের সকাল কাব্য লিখিল লক্ষ্মণ।

মহাশিবরাত্রি ব্রতকথা ও কবিতা- প্রথম পর্ব

মহাশিবরাত্রি ব্রতকথা ও কবিতা। (প্রথম পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

download

মহাশিবরাত্রি হল হিন্দুধর্মের সর্বোচ্চ আরাধ্য দেবাদিদেব মহাদেব ‘শিবের মহা রাত্রি’। অন্ধকার আর অজ্ঞতা দূর করার জন্য এই ব্রত পালিত হয়। কুমারীগণ এইদিন সারাদিন উপবাসী থেকে শিবলিঙ্গে গঙ্গাজল, দুধ, বেলপাতা, ফুল দিয়ে পূজা করে থাকে।

শিবমহাপুরাণ অনুসারে, অতি প্রাচীনকালে বারাণসী তথা কাশীধামে এক নিষ্ঠুর ব্যাধ বাস করত। সে প্রচুর জীবহত্যা করত। একদিন শিকারে বেরিয়ে তার খুব দেরী হওয়ার ফলে সে জঙ্গলে পথ হারিয়ে রাতে হিংস্র জন্তুর ভয়ে এক গাছের উপর আশ্রয় নেয় । কোনো শিকার না পেয়ে সে হতাশ হয়ে গাছ থেকে একটা করে পাতা ছিঁড়ে নীচে ফেলতে থাকে । সেই গাছটি ছিল বেলগাছ । আর সেই বেলগাছের নীচে একটি শিবলিঙ্গ ছিল। সেদিন ছিল শিবচতুর্দশী অর্থাৎ মহাশিবরাত্রি। আর ব্যাধও ছিল উপবাসী। তার ফেলা বেলপাতাগুলো শিবলিঙ্গের মাথায় পড়ে এর ফলে তার শিবচতুর্দশী ব্রতের ফল লাভ হয় তার অজান্তেই। পরদিন ব্যাধ বাড়ী ফিরে এলে তার খাবার সে এক অতিথিকে দিয়ে দেয়। এতে তার ব্রতের পারণ ফল লাভ হয়।

এর কিছুদিন পরে সেই ব্যাধ মারা গেলে যমদূতরা তাকে নিতে আসে। কিন্তু শিবচতুর্দশী ব্রতের ফল লাভ হেতু শিবদূতরা এসে যুদ্ধ করে যমদূতদের হারিয়ে ব্যাধকে নিয়ে যায়। যমরাজ তখন স্বীকার করেন যে শিবচতুর্দশী ব্রত পালন করে এবং শিব বা বিষ্ণুর ভক্ত যেই জন, তার উপর যমের কোনো অধিকার থাকেনা। সে মুক্তিলাভ করে। এইভাবে মর্ত্যলোকে শিবচতুর্দশী ব্রতের প্রচার ঘটে।

কথিত আছে, আজ এই চতুর্দশী রাত্রে শিবের বিবাহ হয় পার্বতীর সাথে। তাই এই দিনে কুমারী মেয়েরা উপবাসী থেকে বিল্বপত্র, ধুতুরা, আকন্দ ও বেল শিবলিঙ্গে চাপিয়ে দুধ, ঘৃত, মধু আর গঙ্গাজল দিলে শিব সম পতি লাভ করে ।

images (1)

বাংলা কিশলয় কবিতা আসরের সকলকে জানাই পূণ্য মহা-শিবরাত্রির শুভেচ্ছা।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু!

মহা- শিবরাত্রি ব্রত ধর্মীয় কবিতা
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

images

শিব চতুর্দশী আজি পূণ্য শুভক্ষণ,
ফুলে ফুলে সুসজ্জিত মন্দির প্রাঙ্গণ।
মন্দিরেতে শিবলিঙ্গ শোভে মনোহর,
বিল্বপত্র ফুলমালা তাহার উপর।

ঘৃত মধু গঙ্গাজল গাভীদুগ্ধ লয়ে,
চলিছে কুমারী সব আজি দেবালয়ে।
পূত ঘৃত রসে দীপ জ্বলিছে চৌদিকে,
সুগন্ধি চন্দন ধূপ পুড়িছে সম্মুখে।

ঔঁ নমঃ শিবায়ঃ বলি গঙ্গাজল দিলে
নিশ্চয় জানিহ শিব সম পতি মিলে।
উপবাসী থাকে তাই কুমারী সকলে,
শিব সম পতি লভে বহু পূণ্য ফলে।

শিবের বিবাহ আজি মহা-শিবরাত্রি,
আনন্দেতে উঠে মেতে বিশাল ধরিত্রী।
শিবরাত্রি ব্রতকথা শুনে সর্বজন,
কবিতায় লিখে কবি ভাণ্ডারী লক্ষ্মণ।

এসো হে শুভ নববর্ষ-১৪২৮ …. আনো সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি নতুন বছরের নতুন কবিতা (চতুর্থ পর্ব)

এসো হে শুভ নববর্ষ-১৪২৮ …. আনো সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি
নতুন বছরের নতুন কবিতা (চতুর্থ পর্ব)
কলমে – কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

2

 

নববর্ষ নব সাজে আসে ধরণীর মাঝে
কত খুশি কত হাসি গান,
এসো পয়লা বৈশাখ হিংসা দ্বেষ দূরে যাক
দুঃখ শোক হোক অবসান।

 

আজি পয়লা বৈশাখে পাখি গায় তরুশাখে
কাননে ফুটিল ফুলকলি,
ফুল ফুটে ফুলবনে আসে মধু আহরণে
দলেদলে আসে ধেয়ে অলি।

 

আঙিনায় রোদ হাসে নতুন সকাল আসে
নতুন সূর্য দেয় কিরণ,
নব সাজে কিশোরীরা হেরি রূপ মনোহরা
নববর্ষে মধুর মিলন।

 

পূব আকাশের কোণ সাজে লোহিত বরণ
আবীর মাখানো রবি হাসে,
নতুন সূর্যের আলো চারিদিক লাগে ভালো
শিশির শুকানো দূর্বা ঘাসে।

 

অজয়ের নদীচরে দেখি কত শোভা ধরে
বর্ষে বর্ষে হরষিত মন,
বসন্ত ছাড়িল শ্বাস আসিল বৈশাখ মাস
কবিতায় লিখিল লক্ষ্মণ।

এসো হে শুভ নববর্ষ-১৪২৮ …. আনো সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি নতুন বছরের নতুন কবিতা (তৃতীয় পর্ব)

এসো হে শুভ নববর্ষ-১৪২৮ …. আনো সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি
নতুন বছরের নতুন কবিতা (তৃতীয় পর্ব)

কলমে – কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

2

নববর্ষ এলো ভাই সকলেই খুশি তাই
নতুন প্রভাত দেয় আলো,
আজি তরুর শাখায় পাখি সব গান গায়
নতুন প্রভাত লাগে ভালো।

রাঙাপথে গরুগাড়ি নদীঘাটে দেয় পাড়ি
এল আজি নতুর বছর,
ফুটিল কুসুম কলি ধেয়ে আসে যত অলি
গুঞ্জরণ করে নিরন্তর।

অজয়ের নদীচরে শালিকেরা খেলা করে
কুলু কুলু নদী বয়ে চলে,
অজয়ের নদীজল স্নিগ্ধ আর সুশীতল
ঘাট ভরে যাত্রী কোলাহলে।

কূলবধু নদী হতে জল নিয়ে রাঙাপথে
আসে ফিরে আপনার ঘরে,
শঙ্খচিল উড়ে যায় নীল আকাশের গায়
সব কিছু ভালো নতুন বছরে।

নতুন বছর আজি সকলেই এলো সাজি
করিতে শুভ নববর্ষ বরণ,
হৃদয়ে পুলক জাগে দেহে মনে রং লাগে
কবিতায় লিখে শ্রীলক্ষ্মণ।

এসো হে শুভ নববর্ষ-১৪২৮ …. আনো সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি নতুন বছরের নতুন কবিতা (দ্বিতীয় পর্ব)

এসো হে শুভ নববর্ষ-১৪২৮ …. আনো সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি
নতুন বছরের নতুন কবিতা (দ্বিতীয় পর্ব)

তথ্য সংগ্রহ ও কলমে-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

ও

নব আনন্দে জাগো আজি, বৈশাখের প্রথম পুণ্য প্রভাতে।
সব জ্বালা যন্ত্রণা যাক মুছে, আসুক এক নতুন ভোর।
এসো হে বৈশাখ ! এসো হে নতুন এসো নবসাজে।

<< শুভ নববর্ষ >>

এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ
তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক
যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে যাওয়া গীতি,
অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক।
মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা
রসের আবেশরাশি শুষ্ক করি দাও আসি,
আনো আনো আনো তব প্রলয়ের শাঁখ
মায়ার কুজ্ঝটিজাল যাক দূরে যাক।

”এসো হে বৈশাখ এসো এসো …” সবার প্রিয় কবির এই বিখ্যাত গানের মাধ্যমে বাংলায় বরণ করে নেওয়া হয় নববর্ষকে। নতুন বছরের পূর্ণ প্রভাতে ভরে উঠুক সবাকার জীবন পাখিদের আনন্দ কলতানে। আসুক এবার নতুন সকাল, কিছু কথা আর কিছু গান। কিছু সুন্দর স্বপ্ন, একমুঠো সাদা মেঘ, কিছু মিষ্টি অনুভূতি। বৈশাখের দাবদাহে আসুক স্বপ্নময় সৃষ্টি। শুরু হোক নতুন বছরে নতুন উদ্দীপনার আলোকে রঙিন হোক আগামী দিনগুলো।

A

এসো হে শুভ নববর্ষ-১৪২৮ …. আনো সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি
নতুন বছরের নতুন কবিতা (দ্বিতীয় পর্ব)

কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

নববর্ষ দিনে আজি সকলে আসিল সাজি
আজিকে হবে বর্ষ বরণ,
রবি উঠে পূবদিকে অরুণ আবীর মেখে
লাল হল পূবের গগন।

রাঙাপথে সারি সারি চলিছে গরুর গাড়ি
আসে এক নতুন সকাল,
সবুজ তরুর শাখে কিচিমিচি পাখি ডাকে
দূরে বন শাল ও পিয়াল।

নতুন বছর আসে ফুলের সৌরভ ভাসে
পুঞ্জেপুঞ্জে ধেয়ে আসে অলি,
নতুন প্রভাত হয় নতুন বছরে কয়
সবে শুভ নববর্ষ বলি।

বসন্ত হইল শেষ পরিল গ্রীষ্মের বেশ
বর্ষের প্রথমে গ্রীষ্ম আসে,
নতুন বছর আজি নব কিশলয় রাজি
তরুশাখে পত্রবৃন্তে হাসে।

সুখ শান্তি ভালবাসা জাগে মনে নব আশা
নতুন বছর লাগে ভালো,
অজয় নদীর চরে সোনা রোদ পড়ে ঝরে
অরুণ সূর্য ছড়ায় আলো।

B

এসো হে শুভ নববর্ষ-১৪২৮ …. আনো সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি নতুন বছরের নতুন কবিতা (প্রথম পর্ব)

এসো হে শুভ নববর্ষ-১৪২৮ …. আনো সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি
নতুন বছরের নতুন কবিতা (প্রথম পর্ব)

কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

1

আঁধার ভেদ করে সূর্যকিরণ বাংলার প্রতিটি গাঁয়ের মাটির ঘরের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে যাক। যাপিত জীবনের সারা বছরের যাবতীয় গ্লানি ও কালিমা ভুলে, আসুন রাঙিয়ে তুলি বাংলার নতুন বছর-১৪২৮ করোনার আক্রমণ থেকে বাঁচতে আর অপরকে বাঁচাতে সতর্কতা অবলম্বন করে আমার -আপনার- সকলের পরিবারকে সুরক্ষিত করুন। সংক্রমণ থেকে দূরে থাকুন, সবাইকে দূরে রাখুন। ভ্যাক্সিন নিন। অপরকে ভ্যাক্সিন নিতে উত্সাহিত করুন। নিজে বাঁচুন, অপরকে বাঁচান। সুস্থ থাকুন, অপরকে সুস্থ রাখুন।

আজ থেকে শত বর্ষ আগে….
আজকের বৃক্ষ-ছায়াহীন, জলাশয়হীন, রুক্ষ দগ্ধ পয়লা বৈশাখের সঙ্গে একশো বছর আগেকার নতুন পাতায় ঝলমলে গাছপালা ভরা, পুকুরের জলে ঢেউ দিয়ে জল ছুঁইয়ে আসা পয়লা বৈশাখের বোধ হয় বেশ কিছুটা অমিল ছিল। পয়লা বৈশাখের অঙ্গে জড়ানো থাকত বেলফুল আর নিমফুলের মৃদু গন্ধ। ফলের সরবত।

পয়লা বৈশাখে বাঙালির সেই সুখস্মৃতি এখনও অনেকখানি বহন করে আসছে বছরের পর বছর ধরে। বাংলা কবিতার আসরের সকল কবি ও পাঠকগণকে জানাই শুভ নববর্ষের আন্তরিক প্রীতি আর শুভেচ্ছা। সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু!

2

এসো হে শুভ নববর্ষ-১৪২৮ …. আনো সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি
নতুন বছরের নতুন কবিতা (প্রথম পর্ব)

কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

বর্ষশেষে নববর্ষ হাসি গান খুশি হর্ষ
নবরূপে আসিল ধরায়,
ফুলবনে ফুল ফুটে পূর্বদিকে রবি উঠে
বসুধায় কিরণ ছড়ায়।

নববর্ষে নব আশা সুখ শান্তি ভালবাসা
দিন শুভ হোক সবাকার,
হিংসা দ্বেষ দূরে যাক এসো নতুন বৈশাখ
আজি হোক দৃঢ় অঙ্গীকার।

করোনারে দূরে রাখো মাস্কে নিজ মুখ ঢাকো
হবে না করোনা সংক্রমণ,
করোনার বিধি মানো নতুন সকাল আনো
এই হোক সবাকার পণ।

আজি হাতে হাত রেখে নতুন পরাগ মেখে
পয়লা বৈশাখ দিল ডাক,
দূরত্ব বজায় রেখে মাস্কে মুখ রাখো ঢেকে
বলো করোনা নিপাত যাক।

নতুন বছর আসে করোনার বিষ নাশে
সূর্য দেয় নতুন আলোক,
নতুন প্রভাত জাগে পৃথিবী নতুন লাগে
নতুন বছর শুরু হোক।

3

বিশ্ব নারী দিবস ২০২১

IWD_16

বিশ্ব নারী দিবস ২০২১
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

আজ আন্তর্জাতিক বিশ্ব নারী দিবস। নারী শক্তি-র জোট বাঁধার আহ্বান দিকে দিকে। দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ড, হায়দ্রাবাদের প্রিয়াংকা কাণ্ড থেকে রাজ্যের কামদুনি-ধূপগুড়ি। একের পর এক গণধর্ষণ, নারী নির্যাতনের অভিযোগ তোলপাড় করে ভারতের নারী শক্তিকে জেগে ওঠার প্রেরণা দেয়। জাগো জাগো। অভয়া শক্তি মায়ের দল। তোমরা না জাগলে বিশ্ব জাগবে না। আসুন, বিশ্ব নারী দিবসে তাদের সম্মান জানাই।

প্রতি বছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়। সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মহিলাদের কৃতিত্বকে চিহ্নিত করতে মার্চ মাসের ৮ তারিখটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। পারিবারিক বা ব্যক্তিগত কিংবা পেশাদার জীবনে মহিলাদের নানান সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়। এই দিন পালনের মধ্য দিয়ে এই বিষয়টিকেও সকলের সামনে তুলে ধরে সচেতনতা প্রসারের চেষ্টা চালানো হয়ে থাকে।

করোনাভাইরাস অতিমারির কারণে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলিকে চিহ্নিত করা হচ্ছে চলতি বছরের আন্তর্জাতিক নারী দিবসে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২১-এর থিম:
প্রতি বছরই পৃথক পৃথক থিমে পালিত হয় এই দিনটি। প্রথমবার ১৯৯৬ সালে নির্দিষ্ট থিমে পালিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। চলতি বছরের থিম হচ্ছে Women in leadership: an equal future in a COVID-19 world (নেতৃত্বে নারী: কোভিড ১৯ পৃথিবীতে সমান ভবিষ্যৎ লাভ)। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া, বিশেষত নীতি নির্ধারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় মহিলারাও সমান অংশীদার হতে পারেন, তাই এই থিমের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, পরিস্থিতির চাহিদা অনুযায়ী, সমান ভবিষ্যৎ এবং অতিমারি থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য মহিলাদের চেষ্টাকে সকলের সামনে তুলে ধরাও এই থিমের অন্যতম উদ্দেশ্য।

রাষ্ট্রসংঘের মতে, পৃথিবীতে শুধুমাত্র তিনটি দেশের সংসদে ৫০ শতাংশ বা তার বেশি মহিলা রয়েছেন। শুধুমাত্র ২২টি রাষ্ট্রের প্রধান পদে আসীন আছেন মহিলারা। এমনকী পৃথিবীর ১১৯ টি দেশে কখনও মহিলারা রাষ্ট্রপ্রধানের ভূমিকা পালনের সুযোগ পাননি। রাষ্ট্রসংঘও জানিয়েছে যে, বর্তমান উন্নয়নের হার এবং লিঙ্গসাম্যের বিষয়টি বিবেচনা করে বোঝা যাচ্ছে যে, ২০৬৩ সালের আগে সংসদে নিজের স্থান পাকা করতে পারবেন না মহিলারা।

কোভিড ১৯ অতিমারি এবং মহিলাদের ভূমিকা:
এই অতিমারি দেখিয়েছে মহিলাদের নেতৃত্ব প্রদানের ইতিবাচক ফলাফল। করোনা ভাইরাস অতিমারির সময় কয়েকটি সফল ও দক্ষ প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব প্রদান করেছেন মহিলারা। অতিমারীর সঙ্গে মানব সভ্যতার যুদ্ধে তাঁরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত হোক বা বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, সেবিকা— সব ক্ষেত্রেই তাঁদের উপস্থিতি পরিস্থিতিকে উন্নত করেছে। তবে রাষ্ট্রসংঘের প্রকাশিত একটি রিপোর্ট জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী নিজের পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় ১১ শতাংশ হারে কম বেতন পাচ্ছেন প্রথমসারির করোনা মহিলা যোদ্ধারা। যা বেতন কাঠামোর বৈষম্যকেই প্রকাশ করে।

২০২১ সালের ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামে জানা গিয়েছে, ৪৩.৫ কোটি মহিলা ও মেয়েরা দিনে প্রায় ১৩৫ টাকার চেয়েও কম উপার্জন করছেন। আবার করোনা অতিমারির সময়কাল ৪.৭ কোটি মহিলাদের দারিদ্রের মুখে ঠেলে দিয়েছে। রিপোর্টে এ-ও বলা হচ্ছে যে, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের চাকরি ১৯ শতাংশ বেশি ঝুঁকির মুখে থাকে। শুধু তাই নয়, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম অনুযায়ী, চিকিৎসা ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ মহিলারা কাজ করলেও শুধুমাত্র ২৪.৭ শতাংশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীই একজন নারী।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তাৎপর্য:
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মধ্য দিয়ে নারীত্বের উৎসব পালিত হয়। জাতি, ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে মহিলাদের কৃতিত্বকে স্বীকৃতি জানানোর জন্য এই দিনটি পালিত হয়। এই দিনে প্রত্যেককে নারী অধিকার, লিঙ্গ সমতা সম্পর্কে সচেতন করে তোলা হয়। পাশাপাশি মহিলাদের সমান অধিকারের লড়াই জোরদার করা এই দিনটি পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য।

আসুন, প্রচলিত সমাজব্যবস্থা ও রাষ্ট্রঐক্যকে সুসংহত করতে নারীর অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে তুলতে হলে নারী সশক্তিকরণ আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হোক। নারী শুধু মা নয়, মেয়ে নয়, ভার্যা নয়, সহোদরা নয়, তিনি দেবী মহামায়ার অংশ। তাই মায়ের জাতিকে সম্মান না করতে পারলে দেশ কভু প্রগতির পথে এগোবে না। জয়গুরু।

বিশ্ব নারী দিবসের জ্বলন্ত কবিতা

news_257

বিশ্ব নারী দিবসের জ্বলন্ত কবিতা
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মধ্য দিয়ে নারীত্বের উৎসব পালিত হয়। জাতি, ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে মহিলাদের কৃতিত্বকে স্বীকৃতি জানানোর জন্য এই দিনটি পালিত হয়। এই দিনে প্রত্যেককে নারী অধিকার, লিঙ্গ সমতা সম্পর্কে সচেতন করে তোলা হয়। পাশাপাশি মহিলাদের সমান অধিকারের লড়াই জোরদার করা এই দিনটি পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য।

আসুন, প্রচলিত সমাজব্যবস্থা ও রাষ্ট্র ঐক্যকে সুসংহত করতে নারীর অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে তুলতে হলে নারী সশক্তিকরণ আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হোক। নারী শুধু মা নয়, মেয়ে নয়, ভার্যা নয়, সহোদরা নয়, তিনি দেবী মহামায়ার অংশ। তাই মায়ের জাতিকে সম্মান না করতে পারলে দেশ কভু প্রগতির পথে এগোবে না। জয়গুরু!

বিশ্ব নারী দিবসের জ্বলন্ত কবিতা
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

নারীর অপমান জাতির অপমান
বাঁচাও জাতির মান,
বিশ্ব নারী দিবসে আজিকে তাদের
দিতে হবে সম্মান।

নারীর সম্ভ্রম ভুলুণ্ঠিত আজি
ভুলতে কভু কি পারি?
বিশ্ব নারী দিবসে আজিকে,
জাগো সারা বিশ্বের নারী।

রজনী আঁধারে বসন কাড়ে,
ওরা কলির দুঃশাসন,
ওদের অত্যাচারে চলে নির্বিচারে
নারীহত্যা আর ধর্ষণ।

সতীনারী আজি লাঞ্ছিতা হয়ে
প্রাণ দেয় পলে পলে,
নারী ধর্ষণ দিকে দিকে আজ
দেশ গেছে রসাতলে।

মরিছে নারীরা অভিমান নিয়ে
জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ কায়া,
সেইদিন হতে নিখিল জগতে
নামিল শোকের ছায়া।

শোন কান পেতে রাত্রি নিশীথে
হাসে কারা খলখল,
হিসাব রাখি না অযুতা ধর্ষিতা
কেন জল মুছে অবিরল।

দিকেদিকে চলে নারী-ধর্ষণ আর
হত্যা রক্ত আর্তনাদ,
নারীরা ধর্ষিতা প্রতি পলেপলে,
কারা পাতে মৃত্যুফাঁদ?

সতীনারী হেথা জ্বলে পুড়ে মরে
পায় নাকো সুবিচার;
ধর্ষকে আজ ছেয়ে আছে দেশ,
দেশ জুড়ে হাহাকার।

মোছ আঁখিজল আগুন জ্বলুক,
দিকে দিকে জ্বালো আগুন,
এই বসুধায় নির্ষাতিতা নারী,
নারীহত্যা, রক্ত আর খুন।

নির্যাতিতা নারী জেগে ওঠো আজ
হাতে তুলে নাও মশাল,
দুচোখে জ্বলুক প্রতিশোধের আগুন
জেগে উঠুক মহাকাল।

অসুরে অসুরে ছেয়ে গেছে দেশ
অসুরে করিতে সংহার,
মহিষাসুরমর্দিনী রূপে আবির্ভূতা হয়ে
নাশো অসুর এ ধরার।

রণহুংকারে মেতে ওঠো নারী
আগুন জ্বলুক দুই চোখে,
বজ্রহুংকারে ফেটে পড়ো নারী
হয়ো না ক্ষুব্ধ কভু শোকে।

ত্রিশূল তুলে নাও মাগো আজি
বধিবারে ধরার মহিষাসুর,
বিশ্ববাসী দেখুক নারীশক্তি শংকা
সবাকার করো মা দূর।

জেগে ওঠো নারী ভীমা ভয়ংকরী
অসুর সংহারী মাগো তুমি,
করি শিরশ্ছিন্ন করো মা নিশ্চিহ্ন
অসুরমুক্ত করো বিশ্বভূমি।

রণ দুন্দুভি বাজিছে নিখিলে
জাগিছে বিশ্বের নারী,
দানবদলনী মহামায়া আজি
তুলে নাও তরবারি।

কবিতার পাতায় বিদ্রোহ আজি
ভুলতে কভু কি পারি?
অসুরে নাশিতে তাদের বধিতে
ত্রিশূল ধরো গো নারী।

নারীর অপমান জাতির অপমান
বাঁচাও জাতির মান,
বিশ্ব নারী দিবসে আজিকে তাদের
দিতে হবে সম্মান।

https://www.youtube.com/watch?v=LYord6PPQx4

অমর একুশের কবিতা

অমর একুশের কবিতা
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

1

বাংলাকে মাতৃভাষার দাবিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিকদের মত অগণিত ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি। শত শহীদের রক্তে লেখা মাতৃভাষা এই বাংলা ভাষা। আমরা হারি নি, হারতে পারি না, আমরা লড়াই করতে জানি, আমরা ভাষার তরে প্রাণ উত্সর্গ করতে জানি, আমরা ভীরু নই, আমরা কাপুরুষ নই, আমরা লড়াই করে মরতে পারি। আমরা বাঙালী, বাংলা আমাদের জন্মভূমি। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, আমাদের মায়ের ভাষা।

আসুন, আজকের মাতৃভাষা দিবসে, শত শহীদদের স্মরণে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর সম্মান জানাই। মাতৃভাষার মান ও সম্মান রক্ষার জন্য আমরা সংকল্প করি। আমাদের পরিচয় আমরা হিন্দু নই, আমরা মুসলমান নই, আমাদের পরিচয় আমরা বাঙ্গালী, বাংলা ভাষাভাষী সকলেই আমরা এক জাতি এক প্রাণ। আসুন, আমরা মাতৃভাষাকে যথাযোগ্য সম্মান দিই, সোচ্চার কণ্ঠে বলি-বাংলা ভাষা আমার গর্ব, আমার অহংকার। সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!

2

অমর একুশের কবিতা
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

বাংলা মায়ের ভাষা মেটায় মনের আশা
বাংলার গানে আছে সুর,
বাংলার যাত্রাপালা কান করে ঝালাপালা
বাংলা তাই এত সুমধুর।

কত না বছর ধরে বাংলা ভাষার তরে
কত প্রাণ হলো বলিদান,
দিবারাতি জেগে রই কান পেতে শুনি ওই
অমর একুশের আহ্বান।

যায় যাবে যাক প্রাণ মাতৃভাষার সম্মান
সবাকার এই হোক ব্রত,
মাতৃভাষা স্বাধীনতা ঘুচাবো মায়ের ব্যথা
আজি মোরা নিলাম শপথ।

বাংলা হলো রাষ্ট্রভাষা পুরিল সকল আশা
কত শহীদের রক্ত-দান,
শত প্রাণ বলিদান রাখিল ভাষার মান
ইতিহাস আছে তা প্রমাণ।

আজি হাতে হাত রেখে ফাগুন পরাগ মেখে
অমর একুশে দেয় ডাক,
মাতৃভাষা জয়গান জাতি ও ভাষার মান
হিংসা দ্বেষ সব মুছে যাক।

3

রক্ত দিয়ে লেখা মাতৃভাষা
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শত শহীদের রক্ত দিয়ে লেখা
আমাদের মাতৃভাষা,
মাতৃভাষার তরে জীবন দিয়ে যাঁরা
দিয়ে গেল ভালবাসা।

হাসিমুখে প্রাণ দিল বলিদান
বাংলা ভাষার তরে,
তাদের শোকে বাংলা মায়ের
দুই চোখে অশ্রু ঝরে।

বাংলা আমাদের জন্মভূমি মা
বাংলা আমাদের ভাষা,
বাংলার গর্বে ফুলে উঠে বুক
জাগে নব নব আশা।

রক্তমূল্য দিয়ে কিনেছি আমরা
মাতৃভাষা স্বাধীনতা,
বহুদিন পরে মায়ের আজিকে
ঘুচিল দুঃখ ব্যথা।

বাংলায় মোরা কথা বলি আর
বাংলায় গাহি গান,
বাংলার শ্যামল মাটিতে ফলে
সোনার ফসল ধান।

আসিছে অমর একুশে ফেব্রুয়ারী
শুনি তারই আহ্বান,
মাতৃভাষা দিবসে নিলাম শপথ
রাখিব ভাষার মান।

4

রক্তে লেখা মাতৃভাষা
– লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

আমার তরুণ ভাইদের
তাজা রক্তে রাঙানো
সেই একুশে ফেব্রুয়ারী।

কবিতার পাতায়
কথা বলে আজি
কালো অক্ষরের সারি।

বিপ্লবী এই বাংলায়
বারুদের গন্ধ আজ
সৌরভ ছড়ানো বাতাসে ।

আজও এই বাংলায়
নীল আকাশের গায়
চাঁদ ও তারারা হাসে।

আকাশে তারা আছে,
কিন্তু তারা নেই, যারা
ভাষার তরে দিয়েছে প্রাণ।

বুলেট বিদ্ধ তাজা
তরুণের রক্তে লেখা
বাংলা মাতৃভাষার গান।