সাহিত্যে মৌলিকত্ব // রুকশানা হক

সাহিত্যে মৌলিকত্ব বিষয়টি সাহিত্য এবং সাহিত্যিকের মান বিবেচনায় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সাহিত্য সাধনা করতে হয় গবেষণাধর্মী মন নিয়ে। সেখানে একজন বড় লেখকের লেখাকে অনুকরণ নয় বরং তার বাইরে এসে আত্মপ্রকাশ করতে হয়, সাহিত্যে নতুনত্ব আনতে হয়। আর নতুন ধারা উদ্ভাবন একজন সাহিত্যিকের মৌলিকত্ব নিশ্চিত করে। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথাকথিত কিছু সাহিত্যিকের নির্লজ্জ অনুকরণপ্রিয়তা খুবই দৃষ্টিকটু। এখানে এর চর্চা হয়ে থাকে নির্ভয়ে। কারণ এ মাধ্যমে যাতায়াতকারীদের অধিকাংশই সাহিত্যবিমুখ বলে বড় লেখকদের লেখা সম্বন্ধে একেবারেই অনভিজ্ঞ। তাই অনুকরণকারীকে সৎ পরামর্শ দেবার লোকের বড় অভাব। কেউ যদিও বা বুঝতে পারে সেও চোখ বন্ধ করে এড়িয়ে যায়। এটা আমাদের চরম দীনতা।

সাহিত্য, সংস্কৃতির মৌলিকত্ব হচ্ছে বিশ্বজুড়ে ঐ সাহিত্য কতটুকু নেতৃত্ব দিতে সক্ষম। সব দেশের সাহিত‌্যিক তাই তাদের নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা করেন। তথ্য প্রবাহের অবাধ প্রেক্ষাপটে অনুকরণপ্রিয়তার কারণে এই স্বকীয়তা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কবি সাহিত‌্যিকদের লেখায় নতুনত্ব, অভিনবত্ব সৃষ্টি করা অসম্ভব রকম চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সত্য। তাই বলে আরেকজনের লেখাকে দু’চার শব্দ পাল্টে দিয়ে নিজের বলে চালিয়ে দেয়া? এর চেয়ে লজ্জা আর কি হতে পারে? যার লেখার ক্ষমতা রয়েছে তাকে কেনো এমন দীনতা পেয়ে বসে আমার বোধগম্য হয়না।

অনেকেই বলে থাকেন এডগার এ্যালেন পোর “টু হেলেনের” কথা, যে কবিতা জীবনানন্দকে “বনলতা সেন” লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিল। এখানে জীবনানন্দ স্বকীয়তা বিসর্জন দেননি। তিনি ভারতীয় নারী চরিত্রের সকল আয়োজন ঘটিয়েছিলেন তাঁর বনলতায়। অতএব কবির কাছে টু হেলেন ছিল প্রেরণা, অনুকরণ নয়।

বাংলাদেশের বড় লেখকদের কিছু বিখ্যাত কবিতা ও গল্প রয়েছে যেগুলি তাঁদের যত্নে গড়া এক একটি মহীরুহের মতো। এসব কবিতাকে যখন সাহিত্যিক (?) নামধারীগণ শব্দ রদবদল করে কবিতা বা গল্পের আকার দিয়ে ফেলেন তখন করুণা করা ছাড়া কিছুই করার থাকেনা। কবি সাহিত্যিকের তো আপন মনের কিছু ভাবনা থাকেই, তাকে কেনো অন্যের দ্বারস্থ হতে হয় আমার বোধে আসেনা।

আসুন আমাদের সাহিত্যকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করে তুৃলি নিজেদের স্বকীয়তার মাধ্যমে। অন্যের ভাবনাকে নিজের বলে চালিয়ে দেয়া লজ্জাজনক। এভাবে নিজেকেই অসম্মান করা হয়।

22 thoughts on “সাহিত্যে মৌলিকত্ব // রুকশানা হক

  1. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথাকথিত কিছু সাহিত্যিকের নির্লজ্জ অনুকরণপ্রিয়তা খুবই দৃষ্টিকটু। এখানে এর চর্চা হয়ে থাকে নির্ভয়ে। কারণ এ মাধ্যমে যাতায়াতকারীদের অধিকাংশই সাহিত্যবিমুখ বলে বড় লেখকদের লেখা সম্বন্ধে একেবারেই অনভিজ্ঞ। তাই অনুকরণকারীকে সৎ পরামর্শ দেবার লোকের বড় অভাব। কেউ যদিও বা বুঝতে পারে সেও চোখ বন্ধ করে এড়িয়ে যায়। এটা আমাদের চরম দীনতা।

    আপনি সঠিক বলেছেন কবি রুকশানা হক। কোন দ্বিমত নাই।

    1. যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই নিজেদের লেখা চুরি নিয়ে বেশ হাপিত্যেশ করেন অথচ খুব সুক্ষ্মভাবে তারাই এসব অপকর্মে লিপ্ত থাকেন দুঃখজনক। 

      ধন্যবাদ আপনাকে                 

  2. সাহিত্যে মৌলিকত্ব বা ইন্টেকচূয়াল প্রোপ্রাারটিজ বলতে পুরো সিচুয়েশনটা এখন ভীষণ ঝুকিঁপূর্ণ। সব বিষয় গুলো এখন এই ডিজাটালিয় যুগে, এর তার বা তার এর হয়ে গেছে। নিজেদের স্বকীয়তার মূল্যবোধ অনেকেই ভুলে গেছে। :(

  3. আসুন আমাদের সাহিত্যকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করে তুৃলি নিজেদের স্বকীয়তার মাধ্যমে। অন্যের ভাবনাকে নিজের বলে চালিয়ে দেয়া লজ্জাজনক। এভাবে নিজেকেই অসম্মান করা হয়। ………….

    ঠিক বলেছেনhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. আমরা মৌলিক সাহিত্যচর্চায় আগ্রহী হলে সাহিত্যেও নতুনত্ব আসবে । আর এটাই সঠিক। শুভেচ্ছা।        

  4. সাহিত্যে মৌলিকত্ব বিষয়টি সাহিত্য এবং সাহিত্যিকের মান বিবেচনায় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এটা যেমন সত্য তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু সাহিত্যিকের নির্লজ্জ অনুকরণপ্রিয়তা খুবই দৃষ্টিকটু। পশ্চিম বাংলায়ও চলছে রমরমা উৎসব। পৃন্ট মিডিয়াতেও কোন রাখঢাক নেই। সরাসরি কপি বা অংশবিশেষ চালিয়ে দিচ্ছে হরহামেশা। দেখে যাচ্ছি। কি করার। :(

    1. দাদা বিষয়টি নিয়ে আরো বিস্তৃত আলোচনার প্রয়োজন। সাহিত্যের মান বজায়ে কাউকে তো এগিয়ে আসতেই হবে।          

  5. অনুকরণকারীকে সৎ পরামর্শ দেবার লোকের বড় অভাব। কেউ যদিও বা বুঝতে পারে সেও চোখ বন্ধ করে এড়িয়ে যায়। সত্য কথা আপা।  :(

    1. এ কাজ গুলি এ সমাজের প্রতিষ্ঠিত কিছু শিক্ষিতরাই করে আপু ,আমি নিজে দেখেছি ।ইনবক্সে বলেও দিয়েছি । শোধরাবার নয় ।   

  6. অন্যের ভাবনাকে নিজের বলে চালিয়ে দেয়া লজ্জাজনক। নিজেকেই অসম্মান করা হয়।

  7. সাহিত্যে মৌলিকত্ব না থাকলে একজন লেখকের আর কিইবা থাকে।

    1. সেটুকু বুঝার ক্ষমতাটুকুও নেই । তারা আবার প্রতিবছর বইও প্রকাশ করে ।     

  8. আসুন আমাদের সাহিত্যকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করে তুৃলি নিজেদের স্বকীয়তার মাধ্যমে। অন্যের ভাবনাকে নিজের বলে চালিয়ে দেয়া লজ্জাজনক। এভাবে নিজেকেই অসম্মান করা হয়।

     

    * https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

  9. সাহিত্যিকের নির্লজ্জ অনুকরণপ্রিয়তা খুবই দৃষ্টিকটু। খুব কাছের নামকরা মানুষদের মধ্যেও আমি চৌর্যবৃত্তির নিয়মিত অভ্যাস লক্ষ্য করেছি। বিবেক ওদের বাঁধা দেয় না। 

    1. বিবেকবোধ থাকলে তো  ! একজনকে রুদ্রের কবিতা আরেকজনকে আরণ্যকের কবিতা হুবুহু নকল করতে দেখলাম । ওনারা আবার কয়েকটি বইও প্রকাশ করেছেন ।ছি  ! ধন্যবাদ তোমাকে

  10. আসুন আমাদের সাহিত্যকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করে তুৃলি নিজেদের স্বকীয়তার মাধ্যমে। অন্যের ভাবনাকে নিজের বলে চালিয়ে দেয়া লজ্জাজনক। এভাবে নিজেকেই অসম্মান করা হয়।

    যথার্থই বলেছেন, শ্রদ্ধেয় দিদি। এসব লেখা চোর শুধু লেখকদেরই শত্রু নয়, এঁরা সকল মানুষের শত্রু।         

    1. যথার্থ পর্যবেক্ষণ দাদা।  সমস্বরে প্রতিবাদ করা উচিত। ধন্যবাদ আপনাকে ।         

  11. সঠিক লেখাটায় পিন করা হয়েছে, সঙ্গত কারণেই ব্লগের সঞ্চালককে অনেক অনেক ধন্যবাদ। লেখকের বিষয়ে তো কথায় নেই, সত্যিই চমৎকার লেখা। 

    1. অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। সহমত জানানোর জন্য কৃতজ্ঞতা । ভালো থাকুন।        

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।