মায়ের শিক্ষাই হলো শিশুর আগামীর আসল বুনিয়াদ। আমি আপনি সবাই আমরা সমাজের সচেতন মা বাবা। নৈতিকতার বীজ ঘর হতে বপন করতে হবে। তবে আজকাল কিছু কিছু মা ভারতীয় টিভি চ্যানেল এবং নেট নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বাচ্চা পরে থাকে প্রাইভেট টিচার কিংবা কোন কোচিং সেন্টারে। মা এতে স্বস্তিতে থাকে যে সন্তান পড়ছে। আসলে সে কি পড়ছে, পড়ার ধরনটা কি, কোন কিছুই তদারকি করে না। একজন আদর্শ মানবিক গুণ সম্পূর্ণ মা‘য়ের কারণে একজন সন্তান ভালো জীবন গড়তে পারে। আপনার সন্তানকে সত্য ন্যায়, মায়া মমতা, মননশীল সৃজনশীল ও মানবিক হওয়া মা হিসাবে আপনিই শিখাতে পারবেন। ঘুম হতে সকালে ভালোবাসা মিশ্রিত কণ্ঠে ডেকে তুলে দিন। এবং পড়তে বসতে বলুন। কি পড়ছে আপনি পাশে বসে তদারকি করুণ। স্কুলে শ্রেণী শিক্ষকের পড়ায় মনোযোগ দিতে বলবেন। চলার পথে সালাম দিতে বলবেন। কেউ কিছু দিলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে বলবেন। সন্ধ্যার পর পাশে নিয়ে পড়াতে বসবেন। অনেক মা টিভি দেখে, না হয় ঘুম যায়, নিজেকে পাল্টান দয়া করে। তবে পড়া হতে হবে আনন্দময়। সন্তানের সবচেয়ে ভালো বন্ধুই হলো পরিবারের মানুষ। আর আমরা তাদের হাত পা বেঁধে মেরে মনে ভয় এবং ঘৃণা ঢুকিয়ে দিই। যা বর্তমানে খুব ভয়ংকর ফল বয়ে আনছে।
রাতেও তদারকি করতে ভুলবেন না পড়াশোনার। পড়ার ভিতর বিরতি দিবেন। মজার কোন গল্প করবেন। যা পারেন খেতে দিবেন। পড়া শেষে লিখতে বলবেন। একটা অংক চার/পাঁচ বার করতে বলবেন। স্কুলে কি পড়ালো, কিভাবে পড়ালো আপনিও দেখবেন। আজকের পড়া ২/৩ দিন পর আবার পুনরায় জিজ্ঞাসা করবেন। মনে রাখবেন আমরা গরীব। আর গরীবের জন্য শিক্ষাই হলো সম্পদ। এবং আপনার সন্তান আপনার সম্পত্তি। আমাদের জন্য মা বাবা কিছু না করতে পারলেও আমরা মেনে নিয়েছি। কিন্তু আমাদের সন্তানের জন্য হয় অগাধ টাকা পয়সা রেখে যেতে হবে না হয় তাদের শিক্ষিত করতে হবে। শিক্ষিত হলে খেয়ে পরে চলার রাস্তা খোঁজ করে নিবে তারা। কারণ যায় দিন ভালো আসে দিন খারাপ। খেলাধুলার সুযোগ দিবেন, রাজনীতি নামক ক্যান্সার হতে “দূরে” রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কলেজ ভার্সিটিতে গিয়ে রাজনীতি করুক। পড়ার ব্যাপারে স্কুলের রুটিন এর পাশাপাশি বাড়ির জন্য রুটিন ঠিক করে দিন। সন্তান কৃষক হবে না গবেষক হবে সময় বলে দিবে আপনি চাপিয়ে দিবেন না। পড়া রিড়িং পড়তে উৎসাহিত করবেন। শুধু সিলেবাস নিয়ে পড়ে থাকবেন না। বাহিরের জগত সম্পর্কে ধারণা দিবেন। সাধারণ জ্ঞান অর্জন করলে সৃজনী চোখ খুলে যাবে। চিন্তার পরিধি বাড়লে পরীক্ষায় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে অবলীলায়।
একটি আন্তর্জাতিক দৌড় প্রতিযোগিতায় কেনিয়ান দৌড়বিদ আবেল মুতাই ফিনিশ লাইন শেষ করার ঠিক কয়েক ফুট আগেই দৌড় বন্ধ করে দিল। তার ধারনা ছিল যে, সে ফিনিশ লাইন শেষ করে ফেলেছে এবং সে জিতে গেছে। আবেলের ঠিক পিছনেই ছিল স্প্যানিশ দৌড়বিদ ইভান ফারনান্দেজ। সে চিৎকার করে আবেল কে বলতে লাগল, “হ্যালো, তুমি ফিনিশ লাইন শেষ করো নাই। তুমি দৌড় চালিয়ে যাও।” আবেল কেনিয়ান হওয়ায় ইভানের ভাষা “স্প্যানিশ” বুঝতে পারছিল না। সে দাঁড়িয়েই রইলো। ইভান এটা বুঝতে পেরে আবেলকে ধাক্কা দিয়ে ফিনিশ লাইন পার করে দিলো। তারপর কেনিয়ান দৌড়বিদ আবেল জিতলো এবং প্রথম হল। প্রতিযোগিতার শেষে এক সাংবাদিক ইভানকে জিজ্ঞাসা করল: তুমি এমনটা করলে কেন? ইভান বলল “আমার স্বপ্ন হল একদিন আমাদের একটি কমিউনিটি লাইফ থাকবে।” সাংবাদিকঃ তাতো বুঝলাম, কিন্তু ঐ কেনিয়ান আবেলকে কেন জিতিয়ে দিলে? ইভান আবারো বলল, আমি তো তাকে জিতিয়ে দেইনি। সেতো জিতেই যাচ্ছিল। সাংবাদিকঃ তুমি নিজেই তো জিততে পারতে, কারণ তুমি তো ঠিক তার পরেই ছিলে? ইভানঃ সাংবাদিকের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল। দেখ, সত্যিই আমি জিততে পারতাম। কিন্তু জেতার মুল্য কি হতে পারত? কি সম্মান আমি পেতাম। হয়ত একটি মেডেল পেতাম। তা দিয়ে আমি কি করতাম? আর এ রকম জেতায় আমার মা’ই বা আমাকে কি ভাবত!
মানুষের মূল্যবোধ বংশানুক্রমিক স্থানান্তর হয়। ইভান তার মায়ের কাছ যে মূল্যবোধ শিখে ছিলো তা হলো আরেকজনকে ঠকিয়ে জিতে না আসে। আর আমরা আমাদের বাচ্চাদের শিক্ষা দিচ্ছি যে কোন মূল্যে জিতে আসো। মনে রাখবেন ভালো কাজ করলে যেমন মানুষ বলে এইটা অমুকের সন্তান এবং খারাপ কাজ করলে মানুষ বলে এইটা অমুকের সন্তান।
(বিঃদ্রঃ আমার মেয়ে দুইটা। বড় মেয়ে সিক্সে পড়ে। ক্লাস প্রাইভেট ফেনী উপজেলায় দ্বিতীয় স্থানে হয়েছে। এবং সরকারি বৃত্তি পেয়েছে। ছোট মেয়ে ওয়ানে। আমি করৈয়া হাইস্কুলের ৯১ ব্যাচের ছাত্র। সেটা স্কুলের সোনালি অতীত। )
আমাদের সমাজ সংসার সন্তানাদির ভবিষ্যত গড়নে অসামান্য আলোচনা করেছেন। নিশ্চয়ই তা শিক্ষণীয়। আপনাকে এবং আপনার পরিবারের সবার প্রতি শুভেচ্ছা।
বড় ভাই কৃতজ্ঞ আমি
ভাল লেখেছেন মহী দা
Thank you dear brother