জাগ্রত চেতনায় স্বাধীনতার মানে

পরাধীন ভারত…. দেশবাসীর স্বাধীনতার স্বপ্ন।
আমার জাগ্রত চেতনায় স্বাধীনতার মানে।

সংগ্রহ ও সম্পাদনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

দেশ আজ স্বাধীন। স্বাধীনোত্তর ভারতে আজ গর্বভরে উড়ছে অশোক লাঞ্ছিত ত্রিবর্ণ পতাকা। আমাদের আশা আকাঙ্খার প্রতীক, দেশের অগ্রগতির প্রতীক, জাতির প্রতীক, জাতীয় পতাকা। আসুন আমরা সকলেই গেয়ে উঠি ভারতমাতার গান। জনগণবন্দিত জাতীয় সংগীত, জনগণ-মন -অধিনায়ক জয় হে- আর দেশের স্বাধীন চেতনায় আমার দেশাত্মবোধক কবিতা-মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারের জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি-
“স্বাধীনতার মানে”।

স্বাধীনতার মানে- দেশকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তির উপরে দাঁড় করানো; স্বাধীনতা মানে-দেশের মানুষের ন্যূনতম প্রয়োজন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, ও বস্ত্র। স্বাধীনতার মানে- বসবাস যোগ্য স্থানের চাহিদা পূরণে সক্ষম করে তোলার সাথে কর্মসংস্থান ও বিজ্ঞান বিষয়ক দিকে দেশকে স্বনির্ভর করে তোলা। স্বাধীনতার মানে এই নয় যে স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচারণ করা, স্বাধীনতার মানে- দেশের প্রতি আরও কর্তব্য পরায়ণ হওয়া। স্বাধীনতার মানে-দেশের মানুষকে ভালবাসা, দেশের মানুষের সেবা করা, মানুষের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়ানোর নাম স্বাধীনতা।

আমরা স্বাধীন- দেশের মধ্যে এখনও প্রতিদিন কৃষককে আত্মহত্যা করতে হয়। ফসলের বীজ কেনার টাকা নেই। ধারের টাকা শোধ করতে না পেরে আত্মহত্যাকে মুক্তির সহজ উপায় বলে ভেবে নিচ্ছে কৃষকেরা। “কৃষক সারা জীবন চাষ করে আর সারাজীবন ধরে ধার করা সুদের টাকা শোধ করে”- সব চাইতে দুঃখের বিষয় হল- এইসব কৃষকদের দুর্দশাকে সামনে রেখে কিছু সুযোগ সন্ধানী মানুষ আমাদের স্বাধীন দেশের স্বাধীন সরকারের কাছ থেকে স্বাধীনভাবে ধার হিসাবে টাকা তুলে দিচ্ছে কৃষকদের হাতে। তাদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তি নেই এই স্বাধীন দেশের স্বাধীন সরকারের কাছে। সঠিক ভাবে মূল্যায়ন করা দরকার কৃষকদের আর্থসামাজিক জীবনযাত্রা নিয়ে, কৃষকদের প্রয়োজন বৈজ্ঞানিকভাবে কৃষি উন্নয়নের প্রশিক্ষণ। সঠিক কৃষককে সঠিক ভাবে চিহ্নিতকরণ প্রয়োজন, সাথে সাথে দরকার শিক্ষা। শিক্ষিত কৃষক পারবে নিজের অধিকারটি বুঝে নিতে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফসলের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে।

স্বাধীনতার মানে- এক দিনের ছুটি নয়, স্বাধীনতা মানে- জাতীয় পতাকা উত্তোলন নয়, নয় ক্লাবে, ক্লাবে উচ্চস্বরে মাইক বাজানো। এই স্বাধীনতার মানে- স্বাধীনতার সঠিক মূল্যায়ন করা।

স্বাধীনতার মানে (ব্যঙ্গ কবিতা)
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

স্বাধীনতা মানে ঠাকুর দাদার পুরানো ভাঙা ছাতা,
স্বাধীনতা মানে ঠাকুমার কেনা এক আনার পানপাতা।
স্বাধীনতা মানে আদরের জেঠুর কীর্তন গানের খাতা,
স্বাধীনতা মানে জেঠিমার প্রিয় চুন, দক্তা, বেগুনপাতা।

স্বাধীনতা মানে বাবার ক্লান্তি, মাঠে মাঠে চাষে খাটা,
স্বাধীনতা মানে আমার মায়ের বাসন, খুন্তি ও হাতা।
স্বাধীনতা মানে আমার দাদার গোয়ালঘরে ছানি কাটা,
স্বাধীনতা মানে দিদির হাতের কাঠের জ্বালে ক্ষীর ঘাটা।

স্বাধীনতা মানে হাত পেতে চাওয়া আমার বেকার ভাতা,
স্বাধীনতা মানে বউয়ের লজ্জায় নীচু করে রাখা মাথা।
স্বাধীনতা মানে আমার ভাইয়ের কাস্তে নিয়ে ধান কাটা,
স্বাধীনতা মানে আমার বোনের পুরানো ফ্রক হাত কাটা।

স্বাধীনতা মানে ক্ষুধাতুর শিশুর কিশলয়ের ছেঁড়া পাতা,
স্বাধীনতা মানে পথের ভিখিরি সবার কাছে হাত পাতা।
স্বাধীনতা মানে অভাবী সংসারে নুন, লঙ্কা ভাত পান্তা,
স্বাধীনতা মানে ধার করে কেনা শাঁখা শাড়ি আর আলতা।

স্বাধীনতা মানে চিবিয়ে খাওয়া, ইলিশ মাছের কাঁটা,
স্বাধীনতা মানে ছেঁড়া চটি জুতা উঠোনের মুড়ো ঝাঁটা।
স্বাধীনতা মানে হাতুড়ি শাবল, সাঁড়াশি আর চিমটি,
স্বাধীনতা মানে সাতচল্লিশের পনেরো আগস্ট দিনটি।

আমার পূর্বপ্রকাশিত একটি দেশাত্মবোধক কবিতা
স্বাধীন ভারত (গীতি কবিতা)

কলমে – লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

স্বাধীন ভারত স্বাধীন ভারত
গাও ভারতের জয়গান,
স্বাধীনতার পরশ পেয়ে
মেতে উঠুক সবার প্রাণ।

কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা,
ভারতের ভালে বিজয়-টীকা,
হাতে লয়ে জাতীয় পতাকা
গাহিছে ভারতের সন্তান।
স্বাধীন ভারত স্বাধীন ভারত
গাও ভারতের জয়গান।

উত্তরে হিমালয়ের শিরে
দক্ষিণে কুমারিকা তীরে
ত্রিবর্ণ পতাকা গর্ব ভরে
গায় ভারতের জয়গান।
স্বাধীনতার পরশ পেয়ে
মেতে উঠুক সবার প্রাণ।

ভারত স্বাধীন ভারত স্বাধীন,
আজ মোরা নই পরাধীন,
বর্ষে বর্ষে আসে শুভ-দিন
আমার ভারত মহীয়ান।
স্বাধীন ভারত স্বাধীন ভারত
গাও ভারতের জয়গান।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

2 thoughts on “জাগ্রত চেতনায় স্বাধীনতার মানে

  1. স্বাধীনতার মানে- এক দিনের ছুটি নয়, স্বাধীনতা মানে- জাতীয় পতাকা উত্তোলন নয়, নয় ক্লাবে, ক্লাবে উচ্চস্বরে মাইক বাজানো। এই স্বাধীনতার মানে- স্বাধীনতার সঠিক মূল্যায়ন করা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

  2. স্বাধীনতা মানে চিবিয়ে খাওয়া, ইলিশ মাছের কাঁটা,
    স্বাধীনতা মানে ছেঁড়া চটি জুতা উঠোনের মুড়ো ঝাঁটা।
    স্বাধীনতা মানে হাতুড়ি শাবল, সাঁড়াশি আর চিমটি,
    স্বাধীনতা মানে সাতচল্লিশের পনেরো আগস্ট দিনটি।

    ভারতের স্বাধীনতা দিবসে ভারতবাসীকে শুভেচ্ছা। 

    এই দিনটির সাথে আমাদের একটি শোকের দিন মিশে গেলো বলে মনে হয়। মানে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কথা বলতে চেয়েছি।        

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।