মেয়ে ও মায়া মাদক ও রাষ্ট্র (26…30)

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
২6তম পর্ব।
একটা কথা বলতাম আপনাকে । আগে বলেন শুনে চিৎকার দিবেন না ঠান্ডা মাথায় আমার কথা শুনবেন। হাঃ হাঃ হাঃ । আমি বুঝেছি তুমি কি বলবে ঠিক আছে বলো। তুমি মেয়ের কথা বলবে আমি জানি ইদানীং মেয়ের জন্য তোমার খাওয়া দাওয়া ঘুম এমনকি চলাফেরা ও কথাবার্তা সব এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। আমি ঢাকায় ভাবীর কাছে ফোন দিয়ে ছিলাম উনি বলেছেন আপনাকে একবার ফোন দিতে উনাকে।
ঠিক আছে ফোন দিবো, উনি ভালো মানুষ উনার মত দুই একজন লোক গ্রামে থাকলে আমাদের মত গরিবদের উপকার হতো। কিন্তু উনি থাকেন ঢাকা শহরে।

হ্যালো, আসসালামুলাইকুম। কেমন আছেন ভাবী। আমি শিউলীর বাবা বলছি।
ওয়ালাইকুম সালাম। জ্বী আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন।
জ্বী ভালো আছি। কিন্তু মেয়েটার জন্য মন কাঁদে। আর মেয়ের মা বলে আমি পাষাণ। আচ্ছা ভাবী আমার মত গরিব কি করতে পারি, থানা পুলিশ করতেও টাকা লাগে। দিন মুজুরি করে কি আর এইসব করা যায়। কয়েক বিঘা জমি আছে বলে ঘরে ভাত আছে না হয় এদের নিয়ে উপবাস দিন কাটতো।
তা ঠিক বলেছেন ভাইজান। কিন্তু মেয়েটার কোন বিপদ আপদও হতে পারে। থানায় একটা সাধারণ ডায়েরিতো করতে পারতেন। তাহাছাড়া বর্তমানে ব্যাপক হারে নারী নির্যাতন বেড়ে গিয়েছে রেপ করে হত্যা করছে এবং এমনও তো হতে পারে বিয়ে কথা বলে শিউলীর সাথে প্রতারণা করেছে। থানা পুলিশ করলে তারা অন্তত খোঁজ করতো মেয়েটার।

ভাবী আমি অশিক্ষিত কৃষক মানুষ এতো সব বুঝি। না বুঝলে আপনি আমাকে জানাতে পারতেন এখন ছয় মাস পর জানালেন। ঠিক আছে কি করবেন চিন্তা করে দেখেন। সমাজের লোকের সাথে বলেন যে শিউলী চলে গিয়েছে যে ছয় মাস হলো এখনো তার কোনো খোঁজ পাইনি এখন কি করবো। বলবেন তারা যেন সহযোগিতা করে শিউলীর খোঁজ নিতে। সে ফিরে আসলে তারপর বিচার হলে সমাজের সিদ্ধান্ত মেনে নিবেন। কোন সমস্যা হলে আমিতো আছি, কালকে সকালে আবার ফোন দিবেন। সবাইকে জানালে সাহায্যে কেউ না কেউ এগিয়ে আসবে আমি ফোন করেও বলবো যেন আপনার সাথে থানায় যায় অভিযোগ করতে। আপনি লজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু না জানালে মেয়েটার বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। এখন এইসব কোন ব্যাপার না অহরহ ঘটছে প্রতিদিন।
ভাবী ঠিক বলেছেন লজ্জা লাগছে অনেক, গ্রামের মানুষ কানাঘুষো করে। একজন এক কথা বলে কেউ কেউ বলছে আমি চুরি করে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি কতশত আজেবাজে কথা। আসলে আপনার মত এমন আপন করে সুন্দর করে ভাই বোনের মত কেউ বুঝাতে চায় না। ঠিক আছে খোদা হাফেজ।

হ্যালো আম্মু, আসসালামুলাইকুম। কেমন আছো।
ওয়ালাইকুম সালাম। আমি ভালো আছি, তুমি কেমন আছো। তোমার সবকিছু ঠিক আছেতো লেখাপড়া ঠিকমত হচ্ছে কিনা। খাওয়া দাওয়া ঠিকভাবে হচ্ছে ? ওহ! আম্মু আমি কি এখন সেই তোমার ছোট মামনি মৌরি আছি, আমি এখন বৃটেনে আছি এক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসাবে। তবে খেতে কষ্ট লাগে আগের মত তাও খেয়ে হয় কারণ আমার আম্মু নাই পাশে যে মুখে তুলে খাওয়াবে। আর ঢাকায় তুমি একা বলে ভয় লাগে কষ্ট লাগে।
আমাকে নিয়ে কোন চিন্তা করো না। তোমার নানী সপ্তাহে দুই/তিন দিন এসে দেখে যায়। আমিও ব্যস্ত থাকি সময় কেটে যাচ্ছে। তোমার দাদীর সাথে কথা বলেছো? প্রতিদিন আমি কথা বলি। মৌরি, একটা দুঃখজনক কথা গ্রামের শিউলী মেয়েটার এখনো কোনো খোঁজ মেলেনি বা তার বাবা নেয়নি।
খুবই দুঃখজনক আম্মু। মেয়েটার কি হয়েছে খোজ নেওয়া দরকার ছিল চাচার আম্মু এখন রেখে দিবো। ভালো থাকো ।
তুমিও ভালো থাকো মৌরি মা।

মেয়ে ও মায়া মাদক ও রাষ্ট্র।
২৭তম পর্ব।

চাচা কেমন আছেন।
ভালো আছি তোমরা কেমন আছো।
জ্বী চাচা আমরা ভালো আছি। একটা কথা বলতে এসেছি আমরা। মনে হয় আপনি জানেন না।
কি কথা বলে ফেল তাড়াতাড়ি। আমার আবার একজনের সাথে দেখা করার কথা আছে।
ওই যে একটা পোলা নাহিদ মিয়া আপনার টিন সেড ঘরে ভাড়া থাকে তাকে ইয়াবাসহ পুলিশ ধরেছে আপনি কি জানেন আজ কয়েক দিন হলো ধরেছে যে
আরে কও কি তোমরা আমিতো জানি না। ওর বউ আমার কাছে আসে নাই বলতে, ঘর ভাড়াও বাকি। নাহিদের বন্ধু সুজনতো প্রতিদিন আসে তার বউয়ের কাছে। আপনি তাও জানেন না।
না তাও জানি না কিন্তু মেয়েটা ভালো ভদ্র মনে হলো। আরে চাচা ভালো খারাপ পরে যাচাই হবে। আপনি বললে আমরা পাহারা দিয়ে দেখতে পারি কেন আসে সুজন একবার ধরতে পারলে প্রমাণ হবে ভালো খারাপ। মানুষ দেখলে আপনার বদনাম হবে বলবে সোবহান মিয়ার কলোনিতে আজে বাজে লোক থাকে পরে ভাড়াটিয়া পাওয়া মুশকিল হবে।

কথা তোমরা ঠিক বলেছো তবে আমাকে একটু সময় দাও আমি মেয়েটার সাথে কথা বলে দেখি। দরকার হলে তোমাদের আমি ডাকবো এখন চুপ থাকো সবাই
ঠিক আছে আমরা চুপ থাকবো (তিনজনেই বলে উঠে)। যখনি দরকার হবে ডাক দিবেন চাচা।
সবাই চা খেয়ে যাও আমি এখন বের হবো।
সোবহান চাচা আসলে একজন ভালো লোক তাই ঝামেলা চায় না অন্য লোক হলে বলতো ধরে পিটিয়ে হাত পা ভেঙ্গে দিতে আর চাচা চুপ থাকতে বলতেছে। তা ঠিক মেয়েটা একা পেয়ে সুজন মজা নিতেছে আর আমরা চেয়ে চেয়ে দেখছি ।
চুপ কর শালা ছাগল খারাপ চিন্তা মাথা হতে বাদ দাও
আমরা চাই খারাপ কাজে বাধা দিতে আর তোমার মাথায় খারাপ চিন্তা চক্কর দেয়। মেয়েটা ভালোবেসে অপাপ্ত বয়সে আবেগী হয়ে একটা জুয়াড়ি মাদকসেবীর সাথে পালিয়ে এসেছে কিন্তু এইসব জানলে কখনো নাহিদের মত ছেলের সাথে গৃহ ত্যাগী হতো না। আর এখন কত বড় বিপদে পড়েছে দেখো।

তুমি ঠিক বলেছো আমরা চাই সুজন হতে মেয়েটাকে বাঁচিয়ে রাখতে। সে যেন মেয়েটাকে কোন প্রলোভনে ফেলতে না পারে কোন খারাপ মতলব চরিতার্থ করতে না পারে। দরকার হলে চাচাকে দিয়ে ওর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করবো তার বাবা এসে তাকে নিয়ে যাবে।
বাহ আপনারা মহৎ অনেক মহান অনেক বড় সমাজ সেবক স্যালুট আপনাদের তবে আমি এইসবে নাই। তুমি একটা অজগর সাপ ছোবল মারতে চাও আরে বেটা তুুমি পুরুষ কবে হলে আমি সেটাই জানি না।
দেখো অপমান করবে না। আমি লাভ ছাড়া লসে নাই।
একদম ঠিক বলেছো দোস্ত এইটাও একটা লাভ। একটা ভালো কাজে অনেক লাভ আমাদের নিজের কেউ এমন বিপদে পড়লে আমরা দিশাহারা হতাম ঠিক তেমনি মেয়েটা ও তার পরিবার আজ দিশাহারা। এমন বিপদে মানুষ হয়ে মানুষের ক্ষতি করা মোটেই উচিত নয়। মানুষের দুর্বলতার সুযোগে ক্ষতি করা সুপুরুষের কাজ নয় কাপুরুষের কাজ আর তুমি একজন সুপুরুষ ও একজন ভদ্র মানুষেরই সন্তান।

আমাকে তেল কম মারো শাইখ সিরাজের তৈলাক্ত কলাগাছে আমি উঠতে ভালোবাসি।
হাঃ হাঃ হাঃ তুমি সত্যিই জিনিয়াস।
রাইট, সে জিনজিরার ইঞ্জিনিয়ার সাহেব। জিনিস নকল উনার মুল কাজ। যে কোন বিদেশী জিনিস অতি সহজে নকল করে আসল বলে বিক্রি করা উনার কাজ । কসমেটিক্স ব্যবহার করে মুখ হয় বিকৃত তেল ব্যবহার করে পুরুষ হয় চুল হারা আর গাড়ির পার্টস ব্যবহার করে মানুষ হয় জীবনহারা।
দুর শালা তোমরা দোস্ত না দুশমন।

(চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
২৮তম পর্ব।

কেউ আছে ঘরে ? আমি সোবহান মিয়া ।
জ্বী চাচা আছি ভিতরে আসেন ।
আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে এসেছি।
আপনার বাড়ি আপনি অবশ্যই দেখতে আসবেন। আমি একটু চা বানিয়ে নিয়ে আসি আপনি বসেন।
আচ্ছা ঠিক আছে জলদি চা করে নিয়ে আসো। তোমার বর নাহিদ জেলে তুমি এই কথা আমাকে কেন বলো নাই।
ভুল হয়েছে চাচা। আমি ভয়ে আপনার কাছে যাই নাই কারণ আপনার ঘর ভাড়া বাকি নাহিদ জেলে শুনলে আপনি পাওনা টাকার জন্য চিন্তা করবেন আর হয়তো ঘর ছেড়ে দিতে বলবেন ,আমি একা এখন কোথায় যাব। তারপরও তোমার বলা উচিত ছিল আমি নাহিদের জন্য কোট কাচারিতে যেতাম তুমি একা কিন্তু সুজন আসে দিনে রাতে ছেলেরা আমার কাছে বিচার দিল।
জ্বী আসে গভীর ফ্যাকাশে হয়ে যায় মুখ শিউলীর। সে নাহিদের বন্ধু ভালো মানুষ আমাকে বোন ডাকছে। তাহাছাড়া সুজন ভাই চেষ্টা করতেছে নাহিদকে জেল হতে বাহির করতে।
ওহ তাই। আমি হলাম এখানের নেতা আমার সাথে থানা পুলিশ মন্ত্রীর সম্পর্ক আর সুজন আমার চেয়েও বড় নেতা নাকি। সবাই বলতেছে সে আসে তোমার সাথে খারাপ কাজ করতে আজ হতে আর আসতে পারবে না যদি কথা না শুনে তাহলে চরম অসুবিধা হবে। আর আমি আসবো তোমার কাছে তুমি আমার কথামত চললে আমি নাহিদকে এক সপ্তাহে বের করে নিয়ে আসবো। দুইজন এখানে সবসময় থাকতে পারবে আমি আর কোন ঘর ভাড়াও নিবো না। তুমি কোন চিন্তা করে দেখো আমি আসবো সন্ধ্যার পরে আর এই কথা আমি আর তুমি ছাড়া কেউ জানতে পারবে না। তুমি আমার চাওয়া পূরণ করলে বিনা ভাড়ায় দালান বাড়িতে থাকতে পারবে ভবিষ্যতে ।

হ্যালো ভাইয়া।
আরে কি হয়েছে বলো। কান্না বন্ধ করে কথা বলো। সোবহান মিয়া আসছে একটু আগে কি সব আজে বাজে কথা বললো আর বলছে আপনি আসতে পারবেন না একদম যদি আসেন তাহলে অসুবিধা হবে মেরে ফেলবে।
ওহ! আচ্ছা তাই , চিন্তার বিষয়। এখন কি করা যায়?
ভাইয়া আমার এখানে থাকতে ভয় লাগতেছে। দয়া করে কিছু করেন এই অসহায় বোনটার জন্য।
তা তো অবশ্যই করবো কিন্তু কি করা যায় ভাবতে হবে। ভয় পেয়েও না আমি তোমার কোন ক্ষতি হতে দিবো না। এখন রাখো একটু পরে আমি কল দিবো।
(শিউলী অঝোরে কান্না শুরু করে)।
মন শক্ত রাখতে হবে শিউলী একটু পরই ফোন দিচ্ছি।

মা একটা বলতে চাইতেছি অর্থাৎ একটা কিছু চাইবো বুঝে শুনে জবাব দিবেন আবেগী হয়ে নয়।
ঠিক আছে বলো কি কথা।
আমার বন্ধু নাহিদ জেলে আপনি জানেন ।
হুম , জানি এখন কি হয়েছে।
তার স্ত্রী বাসায় একা মানুষ আজে বাজে কথা বলতেছে । তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা বাড়ির মালিক লোকটা ভালো না শিউলীকে বাজে কথা বলতেছে। ঘর ছেড়ে দিতে বলতেছে কারণ ঘর ভাড়া বাকি।
তাই , এখন আমরা কি করতে পারি?
মা আমরা মেয়েটার ইজ্জত সম্মান বাঁচাতে পারি। কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব ।
মা আমি চাইতেছি মেয়েটাকে দুই তিন আমার বাসায় আপনার কাছে রাখতে লোকজন জানার আগেই তাকে তার মা বাবার কাছে পাঠিয়ে দিবো।
কিন্তু তোর বাবা জানলে যদি রাগ করে। তাকে জিজ্ঞাসা করা দরকার না।

আম্মু মাত্র দুইদিন বাবা জানবেও না। উনাকে বললে রাজিতো হবেই না বরঞ্চ আপনাকে আরো বকা দিবে।
কিন্তু পরে জানলে অনেক রাগ করবে তাহাছাড়া এইসব কথা গোপন থাকে না। আবার পাড়া প্রতিবেশী শুনলে জানলে নানা কথা বলবে।
আম্মু মেয়েটা আশ্রয় না ফেলে তার সর্বনাশ হয়ে যাবে , মাত্র দুইটা দিন থাকবে কেউ জানবেও না শুনবেও না। আম্মু একটু দয়া করেন মেয়েটাকে। যদি আমার বোন হতো আপনি কি দয়া না করে পারতেন নিজেকে একবার মেয়েটার মা ভেবে চিন্তা করেন। শিউলীর মা অনেক উৎকণ্ঠায় দিন পার করলে জানে না উনার মেয়ে কতটা বিপদে এখন। আমরা সাহায্য না করলে শিউলীর মরণ ছাড়া উপায় থাকবে না । (চলবে) ।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
২৯তম পর্ব।

আমার কোন সমস্যা নাই কিন্তু ভাবছি তোমার বাবার কথা উনি চাকরী হতে কয়েক দিনের জন্য ছুটিতে আসে লোকজন যদি এইসব কথা বলে ,শুনলে উনার মন খারাপ হবে। তোমার আপু বিপদে পড়লে আমি মা হয়ে অনেক চিন্তা করতাম শিউলীর মাও চিন্তা করছে। কিন্তু মেয়েটা কেন এমন বাজে ছেলের সাথে ঘর ছাড়লো যে নাহিদকে তোমার বন্ধু বললেও আমার বিরক্ত লাগে। তাকে তোমার আব্বু একদম পছন্দ করে না। যখন শুনবে তোমার বন্ধু মাদক নিয়ে ধরা পড়ে জেলে আছে তখন তোমাকেও বকা দিবে এমন ছেলের সাথে চলার জন্য।
আম্মু পরে সবাই মিলে আমাকে ইচ্ছামত পিটাইতে পারবেন এখন হ্যা বলেন।
ঠিক আছে শর্ত হলো কেউ কেউ জানতে পারবে না সাবধান দেয়ালেরও কান আছে।
লাভ ইউ মা। হ্যা জয়যুক্ত হলো। আমার মা জগত সেরা। সুজন মাকে বুকে ছেপে ধরে আর মা ছেলের খুশিতে মিটমিট করে হাসে।

হ্যালো শিউলী।
ভাইয়া ফোন কেন দিতেছো না ।
কান্নাকাটি আর একদম না । কথা মনোযোগ দিয়ে শুনো তারপরও না বুঝলে প্রশ্ন করবে।
ঠিক আছে বলেন।
এখন হতে যে কোন সময় সুযোগমত একদম খালি হাতে বাসা হতে বের হয়ে মার্কেট যাবে সেখানে এইদিক সেইদিকে ঘুর আমাদের রিক্সা নিয়ে আমার বাসায় চলে আসবে। বুঝতে পেরেছো আমার কথা।
জ্বী বুঝেছি। ধন্যবাদ ভাইয়া।
সাবধানে বাহির হবে কেউ যেন টের না পায় তুমি পালিয়ে যাচ্ছো শুনো সাথে ব্যাগ ছাড়া আর কিছুই আনতে পারবে না ব্যাগে সম্ভব হলে একজোড়া কাপড় আনবে ব্যাস। বাসা হতে বাহির হয়েই আমাকে ফোন দিবে।
ঠিক আছে ভাইয়া।
বাই।

কি করে যে দোজখ হতে মুক্তি পাবো জানি না। আজ কয়েকদিন মায়ের কথাও খুব মনে পড়তেছে কোন অসুখ বিসুখ হলো কিনা আল্লাহ জানে। পরিবারের অবাধ্য হয়ে আমি সাগরে ডুবতে যাচ্ছি এখন সুজন ভাই না থাকলে কি যে হতো আমার, ইজ্জত বাঁচানোর জন্য হয়তো আত্মহত্যা করতে হতো। মা বদদোয়া না দিয়ে একটু দোয়া করো আমি সহী সালামতে তোমার বুকে ফিরতে চাই মা রে রে।
হ্যালো, ভাইয়া আমি বাহির হচ্ছি বাসা হতে।
ঠিক আছে আমিও বাসায় থাকবো।
ভাইয়া আমি হক টাওয়ারে গিয়ে কল দিবো। এবং আপনাদের বাসায় রওয়ানা দিয়ে আবার কল দিবো। আপনি ফোন হাতে রাখবেন।
এই এত ভয় পাওয়ার কিছু নাই। তোমাকে বাসা হতে বাহির হতে কেউ না দেখলে চলবে।
আমি রাস্তায় দেখে এসেছি কেউ নাই এখন।
ভেরী গুড।

ভাইয়া হ্যালো, আমি টাউনে কিন্তু একটা সমস্যা হচ্ছে। দূইটা ছেলে বার বার আমাকে অনুসরণ করতেছে অথচ আমি তাদের চিনি না।
শিউলী তুমি তাদের দিকে দেখার দরকার নাই। আপততঃ এই দোকান সেই দোকান ঘুরতে থাকো ওরা চলে গেলে তারপর এসে যাবে আমাদের বাসায়।আচ্ছা ঠিক আছে। (চলব)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৩০তম পর্ব।

কি হলো শিউলী তুমি আসতেছো না কেন ।
ভাইয়া ছেলে দুইটা মনে হয় আমাকে চিনেছে ওরা আমার দিকে লক্ষ্য রাখতেছে ।
তুমি সেখান হতে বের হয়ে অন্য মার্কেটে চলে যাও। এইভাবে দুই তিন মার্কেটে ঘুরতে থাকো এরপর দেখো ওরা তোমার পিছে থাকে কিনা।
আচ্ছা ঠিক আছে।
আর টাকা থাকলে অল্প কিছু কিনতে চেষ্টা করো কম টাকায়। তাহলে দেখবে তুমি কেনাকাটা করতে এসেছো এতে সমস্যা কমে যাবে।
আচ্ছা ঠিক আছে। আমি আপনার বাসায় আসার জন্য রিক্সায় উঠেই কল দিবো।
ঠিক আছে কিন্তু সাবধানে ঠান্ডা মাথায় সব করো ।
হ্যালো ভাইয়া আমি রিক্সায় উঠেছি এবং আসতেছি।

সুজন দেখো কে এসেছে।
জ্বী দেখছি । আম্মু শিউলী এসেছে ।
আসসালামুলাইকুম ভাইয়া ।
এসো এসো ভিতরে এসো । ওয়ালাইকুম সালাম।
আসসালামুলাইকুম আন্টি। কেমন আছেন আপনি।
ওয়ালাইকুম সালাম, জ্বী আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো।
আমি ভালো আছি। আপনারা না থাকলে হয়তো ভালো থাকাই হতো না আজীবন।
যাও মা হাত মুখ ধুয়ে এসে বসো। মুখ একদম শুকিয়ে গিয়েছে। আমি খাবার দিচ্ছি এখন আর নাস্তা পানি দিবো না তোমার অপেক্ষায় থেকে আমরা মা ছেলেরও খাওয়া হয়নি।
ঠিক আছে আন্টি আরে আপনারা কেন না খেয়ে কষ্ট করতেছেন। ভাইয়া আসেন খেতে। সরি, আসতে দেরি হলো ছেলেগুলি একদম পিছনে পিছনে ছিল। তারা আমার সাথে সাথে অন্য মার্কেটও দেখতে গিয়েছে। আমি যখন ওড়না দেখছি আর তখন চলে যায়।
আচ্ছা , এখন খেয়ে ঘুম দাও পরে সব কথা হবে । আর একদম বাসার বাহিরে যাইবে না । তুমি এখন ক্লান্ত তাহাছাড়া ওইখানে একা ভয়ে তোমার ঘুম হওয়ার কথা না।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া ভয়ে সারা রাত ঘুম একদম আসতো না। কোন কিছুর আওয়াজ হলেই ভয় লাগতো মনে হয় দরজা খোলছে কেউ।
নাও মা নিয়ে খাও। এখানে কোন ভয় নাই এখন তুমি নিরাপদ। কোন কিছুর প্রয়োজন হলে বলবে লজ্জা পাবে না।

কেমন ঘুম হলো শিউলী।
জ্বী খুব ভালো ।
তোমার চেহারা দেখে বুঝেছি ।
সত্যিই আজ দুপরে এক ঘন্টার ঘুম যে প্রশান্তি মনে এনে দিয়েছে এক কথায় অসাধারণ। খুবই সতেজ লাগছে নিজেকে। মাথা মন কেমন যেন হালকা হালকা লাগছে ,এতদিন এইসব নিয়ে চলা যেন অসম্ভব হয়ে পড়ে ছিল। হাসনে হেনার গন্ধ মনে হয় জীবনে প্রথম নাকে লাগছে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারতেছি শুধু এই লোকদের জন্য। উনারকে কোন উপমায় আমি বন্ধি করবো না এই মা ছেলে থাক আকাশের মত বিশাল হয়ে। সংসার জীবনের কয়েক মাসে যে আমি শিক্ষা পেয়েছি তা অতীত জীবনের সব শিক্ষা হতে গুরুত্বপূর্ণ । সব পিছনে ফেলে এখন আমাকে ফিরতে হবে বাপ মায়ের বুকে। কিন্তু নাহিদকেও মুক্ত করা দরকার , লোকটাকে জীবন শুধরানোর জন্য একটা সুযোগ দেওয়া দরকার ।

ভাইয়া আসেন গরম গরম চা। হাঃ হাঃ।
তুমি কেন আম্মু কোথায় ।
আন্টি প্রতিদিন উনার ছেলেকে বানিয়ে খাওয়ায়।
আজ না হয় আমি খাওয়ালাম ভাইটি কে।
ঠিক আছে আমি খেতে পারলেই হলো। এখন তুমি কি করতে চাও বলো, যেটা তোমার পছন্দ সেটা বলবে। নাহিদ কখন জেল হতে ছাড়া পায় তার কোন নিশ্চয়তা নাই তবে তাকে আমি জামিন করাবো তুমি নিশ্চিত থাকো। তুমি কি এখন তোমার মা বাবার কাছে ফিরতে চাও নাকি আমাদের এখানে থাকতে চাও। (চলবে)।

4 thoughts on “মেয়ে ও মায়া মাদক ও রাষ্ট্র (26…30)

  1. অদ্ভুত গোছানো আপনার এই সিরিজটি। ইন্টারেস্টিং মি. ফয়জুল মহী। yes

  2. কিছু পর্ব পড়া হয় নি, তারপরও স্বতন্ত্রভাবে পোস্টের বক্তব্য বা যথার্থতা বুঝতে কষ্ট হয়নি https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

  3. আপনার চলতি সিরিজে দেশের চলমান চিত্র তুলে ধরেছেন দাদা।  চলুক সাথে আছি।   

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।