মহাশক্তির আরাধনা ……দেবীর বন্দনা -১৪২৭
শ্রী শ্রী মহাষষ্ঠী পূজার কবিতা (দ্বিতীয় পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
দুর্গাপূজা মানেই সার্বজনীন উৎসব, দেবী দুর্গা আমাদের মাঝে মাতৃরূপে বিরাজ করেন, সবার মা। মা সন্তানের সুরক্ষাদায়িনী, সব অপশক্তি বিনাশিনী, মুক্তিদায়িনী, আনন্দময়ী দুর্গা। মায়ের কাছে সব সন্তান সমান, সব সন্তানের কাছে মা অনন্য, তাই মা দুর্গা সর্বজনের, দুর্গাপূজা সার্বজনীন।
দেবীর বোধন :- শুদ্ধ ভাষায় যা নবপত্রিকা সেটাই চলিত ভাষায় পরিচিত কলাবউ রূপে৷ আর এই কলাবউ তো বাংলার দুর্গাপূজার একটি বিশিষ্ট অঙ্গ। আর এই নবপত্রিকা শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল নয়টি গাছের পাতা। যদিও বাস্তবে এই নবপত্রিকা নটি পাতা নয় আসলে ৯টি গাছ। মূলত এটা কলাগাছ তার সঙ্গে থাকে কচু, বেল, হরিদ্রা (হলুদ), দাড়িম্ব (দাড়িম), অশোক, মান জয়ন্তী এবং ধান গাছ ৷ কলাগাছের সঙ্গে একেবারে মূল থেকে উৎপাটিত করে তা বেঁধে দেওয়া হয় এবং গণেশের ডান পাশেই বসানো হয় এই নবপত্রিকাকে ৷ একেই একেবারে লাল পাড় সাদা শাড়ি পড়িয়ে একেবারে ঘোমটা পড়া কলাবউয়ের রূপ দেওয়া হয় ৷
দেবী দুর্গার ছেলে মেয়ে এবং মহিষাসুরের সঙ্গে পুজো পায় এই নবপত্রিকা৷ কথিত আছে এই নবপত্রিকার ৯টি গাছ আসলে দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীকস্বরূপ৷ এই নয় দেবী হলেন-রম্ভাধিষ্ঠাত্রী ব্রহ্মাণী, কচ্বাধিষ্ঠাত্রী কালিকা, হরিদ্রাধিষ্ঠাত্রী উমা, জয়ন্ত্যাধিষ্ঠাত্রী কার্তিকী, বিল্বাধিষ্ঠাত্রী শিবা, দাড়িম্বাধিষ্ঠাত্রী রক্তদন্তিকা, অশোকাধিষ্ঠাত্রী শোকরহিতা, মানাধিষ্ঠাত্রী চামুণ্ডা ও ধান্যাধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মী৷ অর্থাৎ এরাই যেন একত্রে নবদুর্গা রূপে পূজিত হয়৷ কলাবউয়ের চান দুর্গাপুজোর এক বিশেষ অঙ্গস্বরূপ৷
মহাশক্তির আরাধনা ……দেবীর বন্দনা -১৪২৭
শ্রী শ্রী মহাষষ্ঠী পূজার কবিতা (দ্বিতীয় পর্ব)
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
আজি শ্রীশ্রী মহাষষ্ঠী দেবীর বোধন,
দোলা চড়ে মা দুর্গার মর্ত্তে আগমন।
জয়ন্তী, অশোক, কলাগাছ আর মান,
হলুদ, দাড়িম্ব, বেল সঙ্গে থাকে ধান।
পাটসুতো দিয়ে বাঁধা নব পত্রিকার,
সন্ধ্যাকালে কল্পারম্ভ বিবিধ প্রকার।
ষষ্ঠাদি বিহিত পূজা হয় সমাপন,
দেবীর আরতি হলে হরষিত মন।
করোনা আবহে আজি জাতীয় সঙ্কট,
মূর্ত্তিপূজা বন্ধ তাই, সবে পূজে ঘট।
ঢাক বাজে কাঁসি বাজে মণ্ডপ প্রাঙ্গনে,
শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি দেয় এয়োগণে।
মন্দিরেতে পুরোহিত বসিয়া আসনে,
করিছেন মন্ত্রপাঠ ভক্তিযুক্ত মনে।
কল্পারম্ভ পূজাপাঠ হয় বিধিমতে,
মহাশক্তি আরাধনা বিদিত জগতে।
বিল্ব-ষষ্ঠী মহা পূজা হয় সমাপন,
মহাষষ্ঠী কাব্য লিখে শ্রীমান লক্ষ্মণ।
……………………………………….
ষষ্ঠী তিথি আরম্ভ:
বাংলা তারিখ– ৪কার্তিক, ১৪২৭, বুধবার।
ইংরেজি তারিখ – ২১/১০/২০২০
সময় – দুপুর ২টো ৪৪ মিনিট ২০ সেকেন্ড থেকে।
ষষ্ঠী তিথি শেষ:
বাংলা তারিখ – ৫ কার্তিক, ১৪২৭, বৃহস্পতিবার।
ইংরেজি তারিখ – ২২/১০/২০২০
সময় – দুপুর ১টা ১১ মিনিট ৫৮ সেকেন্ড পর্যন্ত।
সকাল ৯টা ২৭ মিনিট ১১ সেকেন্ড মধ্যে শ্রীশ্রী শারদীয়া দুর্গাদেবীর ষষ্ঠাদিকল্পারম্ভ ও ষষ্ঠী বিহিত পূজাপ্রশস্তা।সায়ংকালে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস।
……………………………………………………….
এ বছর সব কিছুই অন্য রকম। মহালয়ার প্রায় পাঁচ সপ্তাহ পরে পুজো, তা-ও আবার এক ভয়াবহ অতিমারীর আবহে। বিশেষত দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ সামলাতে সমস্ত সম্মেলনের জন্য নিয়ম বেঁধে দিয়েছে সরকার:
– ২৫ জন এর বেশী লোক জমায়েত হতে পারবে না।
– সর্দি কাশি বা জ্বর থাকলে অনুষ্ঠানে যোগদান নিষেধ।
– ১.৫ মিটার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
– মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।
– স্যানিটাইজ করতে হবে।
নিয়ম না মানলে কড়া শাস্তির ভয়। এ দিকে দুর্গাপুজোর অঙ্গ, যেমন শাঁখ বাজানো, উলু দেওয়া- সে সব মাস্ক পরে সম্ভব নয়। তাছাড়া মেলামেশাও তো পুজোর খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। সেটাও এই পরিস্থিতিতে সম্ভব নয়। এত সব মেনে কি আর আনন্দ করা সম্ভব!
তাই প্রায় সকলেই শর্ট নোটিসে পুজো বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।এমনকি, কোলন-এর মতো প্রাচীন পুজোও। তা বলে কি দেবী দুর্গা কে আবাহন করব না? অঞ্জলি দেব না? নিশ্চয়ই আবাহন করব। তবে এই অতিমারীর সময়ে এবার ভার্চুয়াল পুজো হবে। আমরা “আপন মনের মাধুরী মিশায়ে” বাড়িতে থেকেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে অঞ্জলি দেব, ঠাকুর দেখব। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করব। মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা উৎসবের ঊর্ধ্বে। সব কিছু ঠিক থাকলে আসছে বছর আবার হবে!
“আজি শ্রীশ্রী মহাষষ্ঠী দেবীর বোধন, দোলা চড়ে মা দূর্গার মর্ত্যে আগমন।”
সামাজিক দূরত্ব আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা উদযাপিত হবে এই শুভকামনা রাখি।
যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।
সবাইকে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা।