লিখে_রাখি_করোনাকাল_৪১

রাতের করুণ আলোয়
হুইসেল বাজিয়ে ছুটে যাচ্ছে
অ্যাম্বুলেন্স। স্ট্রেচারে শোয়ে আছে পিতা।

ঘরে বিমূঢ় পুত্র, কন্যা।
পাশের কামরায় সহধর্মিণী
আঁচল মুছছে চৌত্রিশ বছরের
দাম্পত্যের স্মৃতি। পজিটিভ সন্দেহে
দূরে দূরে থেকেছে স্ত্রী, কন্যা, পুত্র।

নিজ বাড়িতে অস্পৃশ্য আসামি। পায়নি
মায়ার পরশ। একাকী সময়ে বুকের
ধড়ফড়ানি বেড়ে গেলে
পাশের কামরা থেকে ছুটে আসেনি
কেউ। দরজার খিল খুলে
কেউ বলেনি দুদণ্ড উপশম কথা।

শুশ্রূষার মানসে যদিও তারা ভিড়তে চেয়েছে,
কপালে ছোঁয়াতে চেয়েছে মমতার হাত।
অক্ষম পিতার ভরসার লাঠি
হতে দৌড়ে যেতে চেয়েছে পুত্র।

আদরের কন্যা কষ্টে
চুপসানো জনকের বুকে দিতে চেয়েছে
মায়ার মালিশ। অর্ধাঙ্গিনী পূর্ণ
অঙ্গের বিনিময়ে স্বামী কে
সুস্থ করতে চেয়েছে। পারেনি,
অদৃশ্য ঘাতক প্রবল বিক্রম নিয়ে
বাধা দিয়েছে। পাশাপাশি কামরার
দেয়াল ভেদ করে তারা পৌঁছাতে পারেনি।

করোনার দেয়ালে মাথা ঠুকে মরে
গেছে মায়া। মরে গেছে মমতা।
করোনার দাপটে চুপসে গেছে
দুর্জয় সাহস। তারুণ্যের প্রতিবাদী
মন করোনার ছোবলে ক্ষয়ে গেছে।
পুত্র পিতা থেকে দূরে সরে গেছে,
দূরে সরে গেছে আদরের কন্যা।

সহমরণের প্রতিজ্ঞায় যে নারী ঘর
বেধেছিল, কুঁকড়ে যাওয়া ভয়
প্রতিজ্ঞার চিতায় পুড়েছে।
অসহায় অর্ধাঙ্গিনী গুমরে মরছে
প্রবল কান্নায় চোখে ভর করছে
উছলানো দীঘি। অদৃশ্য ঘাতক
ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে সহজাত সম্পর্ক।

হাসপাতালের কৃত্রিম যন্ত্র ডাক্তার খুলে
নিলে দায়িত্ববান পিতা লাশে পরিণত হয়।
শেষ মুহূর্তের ভয়াবহতা থেকে
মুক্তি। দয়ামায়াহীন অদৃশ্য ঘাতক
কেড়ে ফেলেছে অনেককিছু।
কাড়তে পারেনি শুধু চোখের জল।
পুত্র হাউমাউ কান্নায় বুক কাঁপাচ্ছে
আদরের কন্যা ঘন, ঘন মুর্ছা যাচ্ছে।

অর্ধাঙ্গিনীর চোখে জড়ো হচ্ছে জলের
সমুদ্র, পবিত্র প্রার্থনায় জানাচ্ছে অন্তিম
ভালবাসা। সবকিছু কেড়ে নিয়েছে অদৃশ্য ঘাতক,
কাড়তে পারেনি তবু বিশ্বাস, ভালবাসা।

2 thoughts on “লিখে_রাখি_করোনাকাল_৪১

  1. সবকিছু কেড়ে নিয়েছে অদৃশ্য ঘাতক,
    কাড়তে পারেনি তবু বিশ্বাস, ভালবাসা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।