ফেসবুক পোষ্ট | অনুগল্প

ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে লাগাতার। অনেক দিন এমন বৃষ্টি হয়নি। আর কিছুদিন এভাবে বৃষ্টি হলেই বোধহয় বন্যা হয়ে যাবে। জানলার পাশে একটা চেয়ার নিয়ে বসেছে সেলিম। হাতে মোবাইল ফোন। ফেসবুকের নিউসফিড জুড়ে শুধু রোম্যান্টিক পোষ্ট। বৃষ্টি নিয়ে কত কী লেখা। সেসব দেখে সেলিম খুব বিরক্ত। এই বৃষ্টিতে কত মানুষের ফসল নষ্ট হল, কত মানুষ কাজে যেতে পারেনি, কত মানুষের ঘরে রান্না হচ্ছে না – সেই খবর কজন রাখে। সবাই দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে আনন্দে মেতেছে!
মা চা দিয়ে গেল। গরম চায়ে চুমুক দিয়ে সেলিম ভাবছে একটা সুন্দর ফেসবুক পোষ্ট দেওয়া উচিত। যেন মানুষ রোম্যান্টিকতায় না ডুবে গরিব মানুষদের কথা ভাবে। পাড়া প্রতিবেশীদের সাহায্য করে। যেই ভাবা সেই কাজ। গরম চায়ে আরেকবার চুমুক দিয়ে মোবাইল কীবোর্ডে খটখট করে আঙ্গুল চালিয়ে একটা জ্ঞানগর্ভ পোষ্ট লিখলো সে। অনেক নীতি নৈতিকতার কথার পাশাপাশি বৃষ্টিতে খুশি হওয়া মানুষদের একটু ভৎসর্নাও করলো। খুব আবেগী ভাষায় জানালো মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব কর্তব্যের কথা।
পোষ্ট দেওয়ার সাথে সাথে লাইক কমেন্টের ঝড় উঠলো। অনেকে শেয়ারও করলো। একজন সেলিমকে উদ্দেশ্য করে লিখেছে এমন ভালো মানুষ আজকাল দেখায় যায় না। আরেকজন লিখেছে আপনার মত মানুষ আছে বলেই সমাজটা টিকে আছে। গর্বে সেলিমের বুকটা চওড়া হয়ে গেল। নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে দিতে ইচ্ছে করলো তার। বারবার ফেসবুক নোটিফিকেশন চেক করতে থাকলো। একটাও লাইক কমেন্ট শেয়ার মিস করতে চায়না সে।
ঠক ঠক ঠক। বেশ কয়েকবার সদর দরজায় ঠোকা পড়লো। সেলিম একটু বিরক্তই হল। এই বৃষ্টির দিনে আবার কে এসেছে! চিৎকার করে মাকে বললো দরজা খুলতে। এখন সে তার পোষ্ট নিয়ে খুবই ব্যস্ত। মা বললো রান্না ছেড়ে যেতে পারবে না। তাই একান্ত বাধ্য হয়েই সেলিম উঠলো। তবে স্ক্রীন থেকে চোখ সরছে না। দরজা খুলতেই দেখলো পাশের পাড়ার হারেসা চাচী। সিমেন্টের বস্তা মাথায় দিয়ে এসেছে। শরীরের বেশিরভাগ অংশ বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। ঠান্ডায় কাঁপছে। সেলিম চিনে ওকে। স্বামী নেই মহিলার, ছোট ছোট তিনটে বাচ্চা আছে। খুব অভাবী। চেয়ে চিনতে খায়।
ঠান্ডায় একটু কাঁপতে কাঁপতে হারেসা চাচী বললো – ‘বাবা, কয়েকদিন ধরে লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে। বাড়িতে কিছু খাবার নেই। তোর মাকে বল কিছু দেবে আমাকে’। সেলিম তখনও মোবাইলে ব্যস্ত। টিউশনির স্যার কমেন্ট করেছে সেলিমকে নিয়ে তার গর্ব হচ্ছে। কি রিপ্লাই দেবে সেটাই ভাবছে সেলিম। স্যারকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভালো কিছু রিপ্লাই দিতে হবে। হারেসা চাচী আবার বললো। সেলিম যেন কিছুই শুনতে পাচ্ছে না। হারেসা চাচী আবার বলতে যাবে তেমনি সেলিম চেঁচিয়ে উঠলো, ‘বৃষ্টির দিনেও তোমাদের শান্তি নেই। একটু আরামে থাকতেও দেবে না। দাঁড়াও মাকে বলছি।’ বলেই দ্রুতবেগে পা চালিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে গেল।

10 thoughts on “ফেসবুক পোষ্ট | অনুগল্প

  1. প্রথমতঃ শব্দনীড়ে আপনাকে স্বাগতম জানাই মি. সেখ ফরিদ আলম। দীর্ঘদিন আপনার লিখার সাথে দারুণ পরিচয় ছিলো আমাদের অনেকের। আজ হয়তো সেই দিন গুলোর মতো করে অনেকেই আমাদের আশেপাশে নেই; কিন্তু আপনার প্রত্যাবর্তন আমাকে সত্যিকারার্থেই উৎসাহিত করেছে। ধন্যবাদ। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    ফেসবুকের বিষয় গুলোন আসলে এমনটাই। আমরা যতটা না; তারচে বেশী দেখানোর চেষ্টা করি। আমাদের কর্মস্পৃহা এক কথায় কাগুজে বাঘে পরিণত হয়েছে। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    1. অনেক ধন্যবাদ মুরুব্বী ভাই। আবার ব্লগে ফিরে আমাকেও ভালো লাগছে। ফেসবুকের জ্যামের মধ্যে ব্লগ যেন একটা স্নিগ্ধ জায়গা। নিয়মিত হওয়ার ইচ্ছে আছে।

      অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানবেন প্রিয় https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

      1. আপনার জন্যও একরাশ ভালোবাসা। হ্যাপী ব্লগিং। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

  2. এই ফেসবুক আমাদের অনেককিছু দিয়েছে ঠিক, আবার অনেককিছুই কারো-না-কারোর কাছ থেকে কেড়েও নিয়েছে। তবুও এই যুগে শত-সহস্র মানুষের সাথে তাল মিলিয়ে বলতে চাই, "ফেসবুক দীর্ঘজীবী হোক!"

  3. অভিনন্দন আপনাকে শব্দনীড়ে। সুন্দর একটা লেখা দিয়ে প্রবেশ করলেন নীড়ে https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।