দাঁড়াও পথিক!

242799

এখানে একটু থেমে যাও বন্ধু আমার’
নতজানু শরীরের ভাঁজে জমেছে অনেক ক্লান্তি
অদূরে লাল টুকটুকে খেজুর বাগান,
অজস্র নক্ষত্রের আলোয় মুখরিত।

ছোট্ট একটি কুঁড়েঘর একাকিত্বের বোঝা নিয়ে
আটকে আছে সুদীর্ঘকাল;
এখানে একটু থামো; বিশ্রামের এটাই দারুণ সময়।
আমার পাশেই বিস্তৃত আঙ্গুরের ক্ষেত
কি এক মাতাল বাতাসে নিজেকে ঘুমিয়ে দিচ্ছে।

যদি শরীরকে শক্তিশালী করতে চাও
তবে এখানে বিশ্রাম এর বিকল্প নেই
আমাদের যেতে হবে বহুদূর
এখানেই দাঁড়াও বন্ধুরা আমার থেমে যাও এখানে।

এখানে ঐ এলেবেলে বেলে পাহাড়ের ঢালে
প্রাচীন ক্যাকটাস বিস্তৃত মরুভূমির বুক চিরে জীবন সাজিয়েছে।

কতটা কোমল পানীয় আর বিষাক্ত পানি
সে ধারণ করছে কেউ জানে না।
এখানেই বিশ্রামের সবচাইতে উপযোগী স্থান
এখানে বসে পড়ো বন্ধুরা আমার।
এখানে প্রার্থনা করো যার যে কষ্ট
লোহিত সাগরের বুকে ঝেড়ে ফেলো
জীবনের বেদনাবিধুর শ্লোক।

আমরা যেখানে বসে আছি
একদিন এই মরুভূমির বুকে সাগরের উপস্থিতি ছিল।
এখানে সবেমাত্র জীবনের গন্ধ এখানেই তাবু ফেলো যার যা কিছু আছে তা নিয়ে।

এখানে রচিত হয়েছে বালুর বুকে প্রাচীন জাহাজ
এখানে বিস্তৃত মরুভূমি জুড়ে রয়েছে
প্রাচীন জীবাশ্মের ফসিল
এর চেয়ে সুন্দর স্থান আর কোথাও পাবে না।

এখানে রাত্রির গভীরে খুঁজে পাবে
আকাশের ফুটন্ত তারা ছুটে চলা নক্ষত্র
আর মিল্কিওয়ে ছায়াপথ গ্যালাক্সি।

এখানে রাত্রি মাঝে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাবো আমাদের সাবধান থাকতে হবে
আমরা রাত জেগে বিশ্রাম নিয়ে পাহারা দেবো আমাদের এই বিশ্রামাগার।

এখানে সূচিত হয়েছে প্রাচীনতম ইতিহাসের
সবচেয়ে নজরকাড়া প্রত্নতাত্ত্বিক জীবনের গান।
ওরা বসবাস করেছিল চিহ্ন রেখে গিয়েছে
কিন্তু ইতিহাস তাদের বিরক্ত করেনি বিলুপ্ত করে নি।

এখানে চারদিক থেকে প্রাচীনতম
জীবনের গান যদি না আসে তবে বাতাস আসবে।
কোন চিহ্ন মুছে যায়নি অস্তিত্বের বিলীন হয়েছে
কিন্তু শরীরের রেখে যাওয়া চিহ্নগুলো শেষ হয়নি।

এখানে অস্তিত্বের বিচ্ছেদ দেখা যায়
শরীরের বিচ্ছেদে, এখানে প্রাণের বিচ্ছেদ দেখা যায় প্রাণহীন ভাবে তবুও বিলুপ্ত হয়ে যায়নি
মুছে যায়নি কোনো ইতিহাস

কোন প্রাণ কোন স্মৃতি কোন জীবনের সুঘ্রাণ। এখানে কোন কিছু নির্জনতায় ছুঁয়ে যাবে না
মুছে যাবে না আমাদের এই জীবনের পদোন্নতি।

এখানে এই বিচ্ছেদের পর থেকে
আমরা অনেক কিছু খুঁজে পেতে পারি
বন্ধুরা আমার এখানে পৃথিবীর নতুন এক
জীবনের শুরু হয়েছে যুগের শুরু হয়েছে
সময় শুরু হয়েছে।

এখানে জীবন্ত কোন গোত্রের সন্ধান না পেলেও প্রাচীনতম প্রাণীর দেহাবশেষ ঢেকে আছে
এ মরুপ্রান্তরে। তাদেরকে কি বিচ্ছেদের জ্বালা শুনিয়েছে জীবনের এই যন্ত্রণাদগ্ধ অস্তিত্বে।
এখানে এই প্রাচীনতম ইতিহাসের বুকে
কী এক দুঃখ বহন করছে এই মরুর অনুর্বর বুক। চোখের কোনে ইতিহাসের জ্বলন্ত উদাহরণ
অকাতরে কান্নার রোল তুলে থামিয়ে দিয়েছে
সুরেলা হাওয়া,

দামাল বাতাসে কান্নার মুখ
বিষণ্ণতা বাড়িয়ে দেয় বহমান পথিক।
হে বন্ধুরা আমার এখানে এসে দাঁড়াও
এখানে এসে সবাই জোট বেঁধে তাকিয়ে দেখো
মরুর অদৃশ্য সীমানা।
এখানে বসে গাইতে পারো কষ্টের বিলাপ।

সুরের কি প্রয়োজন রয়েছে
অসুর এই যন্ত্রণাদগ্ধ মরুপ্রান্তর
অবিরাম কান্না ধারায় মুখরিত জীবনের এই পথ

এখানে বসে নির্জনে কাঁদতে পারো
কষ্টগুলোকে ঘিরে ফেলে হাঁটতে পারো
মেঘের ফাঁক গলে জোসনার আভা আর নক্ষত্রের খেলা গুলো দেখতে পারো।

এখানে কেউ করবে না মানা
কেউ রবে না তোমায়।
যা মন চায় তা করতে পারো যা খুশি ভাবতে পারো
যা কিছু বলার বলতে পারো
এখানে কেউ দেবে না বাঁধা।

শুধু এটুকু চাও,
চাও সান্তনা অন্তর থেকে
এখানে তোমাদের ছোটখাট জ্যোতিষ
শাস্ত্রের ইতিহাস গুলো রচনা করতে পারো
নতুন করে ঝালিয়ে নিতে পারো
ধ্রুপদী জীবনের আবরণ,

চন্দ্রের গমন কৃত পথের দিকে তাকিয়ে
দেখতে পারো তার খেলা
নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে দেখতে পারো
তার চমকিত দর্শন।
দুঃখগুলো যত আছে তা মোচন করবে
এই মনোহরি রাত্রির আলো।

এখানে তোমায় নির্জনতা দেবে
কীটপতঙ্গের সুরেলা মধুর বাঁশরী।
এখানে কান পেতে শুনতে পারো প্রাচীনতম
জীবনের প্রতিধ্বনী

এখানে শুয়ে বসে কান পেতে অনুভব
করতে পারো প্রাচীনতম জীবনের ছুটোছুটি।
চোখ মেলে চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে পারো
তাদের অস্তিত্বের আলোড়ন।

এসো বন্ধুরা আমার
কজন আমরা আজ এই রাত্রি গভীরে
কিছু নতুন সৃষ্টির ডিগনিটি রচনা করি।
আমরা একে একে ভাগ হয়ে আমাদের রাত্রির আয়োজন সেরে নেই

তোমার হাতে যে আইনের পেয়ালা
ছড়িয়ে দাও জীবনের পথে
না হয় মাতাল না হও
এই বিজয়ী দর্শনের পথ ধরে আজ না হয়
ইতিহাস গড়। আজ না হয় সমবেত
এই আয়োজনে মেলে ধরো জীবনের সকল অজানা কাহিনী।

2 thoughts on “দাঁড়াও পথিক!

  1. এই বিজয়ী দর্শনের পথ ধরে আজ না হয়
    ইতিহাস গড়। আজ না হয় সমবেত
    এই আয়োজনে মেলে ধরো জীবনের সকল অজানা কাহিনী। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।