ক
তোমার জন্য কিছু চিহ্ন রেখে যাবো। দাগগুলো আমারই থাক,
এমন ধূসর শরীরে মাটির মমি হয়ে যেমন ঘুমিয়ে থাকে, পুরনো
কাঠের শিকড়, পচে যাওয়া পাতাবৃক্ষ কিংবা গোলাপের পাপড়ি
প্রদেশ। রেখে যাবো আঁকন আর কাঁপনের আঁচড়। চর, নৃ-নদী।
দাগগুলো শুকিয়ে যায়। চিহ্ণ শুকায় না কখনো। দাগগুলো ঢেকে
রাখে মানুষ। চিহ্নগুলো অন্য কাউকে দেখিয়ে বলে, এই দ্যাখো
আমার গরিমা,
দাগের অন্তঃসত্তা মেঘ, চিহ্নের প্রথম প্রতিমা।
খ
আমি না থাকলে এ স্থান দখল করে নেবে অন্য কেউ। অন্য কোনো
জমিনে দাঁড়িয়ে কৃষক ছড়িয়ে যাবে পুষ্ট আমন ধান
একদিন জাগবে চারা, বইবে হাওয়া এই ক্ষেতসমগ্রে। আসবে
ভাদ্র -অগ্রহায়ন, উঠবে ফসল কিষাণীর ভাঙা গোলায়, স্বর্ণ হয়ে।
আমি না এলে ও থেমে যাবে না, এই পথমিছিল। কাঁধে নায়ের
ভার টেনে এগিয়ে যাবে দাঁড়ের গুনিন। নদীর বাঁকে দাঁড়িয়ে
বিবাগী বাউল গেয়ে উঠবে আনমনে, আর তার বেহালা, বিরহে
অনাগত সুরসন্ধ্যায় থাকবে পথচয়ে এই ঘাটে আসিবে কালিয়া।
আমি না গেলে ও, জানি তুমি যাবে ছড়াতে জলচন্দন, আউলা
বসন্তের জারুল-শিমুলে। আরো কাম আর প্রেমের রেখারেণু দিয়ে
মিশানো মাটিতে খুঁজবে একটি সমাধির অস্তিত্ব। এপিটাফ পড়বে
কেউ, কেউ পড়বেনা কিছুই। কারণ সবাই কবিতা পড়তে জানেনা।
গ
মনগুলো মিশে গেছে চর-শীতলক্ষ্যায়। পায় যারা প্রাণপলির পূর্ণ সন্ধান
তারা অবশেষে মেতে উঠে হারানো নক্ষত্র চারণে। মেনে
সকল নেত্রনিয়ম, চোখ দুটো স্থির রাখে বসন্তের বর্ণ-বিভায়। চায়,
অন্তিমে হলেও আবার দেখা হোক তার সাথে। যেতে যেতে ভোর,
নামুক দুপুর, ফালগুনের শিমুল সাম্রাজ্যে। মাঝে মাঝে বেজে
উঠুক বাঁশী, কৃষ্ণের হাত ধরে রাধা যেমন ভাসে কালের খেয়ায়।
পরিযায়ী প্রথম আকাশ পেরিয়ে পাখিরা সাজায় মেলা, দোর রচনায়।
আমি না গেলে ও, জানি তুমি যাবে ছড়াতে জলচন্দন, আউলা
বসন্তের জারুল-শিমুলে। আরো কাম আর প্রেমের রেখারেণু দিয়ে
মিশানো মাটিতে খুঁজবে একটি সমাধির অস্তিত্ব।