ধারাবাহিক উপন্যাসঃ কুসুম-কুমার

IMG_20221026_102736

পর্ব -৮

– মিলু দাদা, ও মিলু দাদা!
কারো একটা ডাকার শব্দ পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন ব্রহ্মানন্দ।
– ও মামুদালি এসেছো? – তা চল বাগানের দিকে।
– শুধু আপনে গেইলে তো হইবে না কত্তাবাবু। আমার যে মিলু দাদারে লাইগবে। – মামুদ আলি বলে।

মামুদ আলি মাইল দেড়েক দূরের গাঁয়ের এক গরীব গাছি। এ বাড়ি সে বাড়ি গাছের ফলাদি পেড়ে দিয়েই তার সংসার চলে। মিলুদের বাড়ীর নারকেল, আম, কাঁঠাল সব ফলাদিও পেড়ে দেওয়ার দায়িত্ব ওর।

গতকাল বিকেল কাকা ব্রহ্মানন্দের সাথে হাঁটতে বের হয়ে মিলু বাড়ির গাছের সুপুরী পাকার কথা জানিয়েছিল কাকাকে। বাড়ির বাগানে কোথায় কোন গাছে কি ফল ধরেছে সবই মিলুর নখদর্পনে। আর এ ব্যাপারে মিলুর কাকা বাবা সবাই মিলুর কাছ থেকে খবরটি নিয়ে নেন।
সুপুরী পাকার কথা শুনে কাকা বলেছিলেন – চল তাহলে হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে মামুদালিকে বলে আসি।
মিলুও উৎসাহের সাথে রাজি হয়ে গিয়েছিল মাসুদালিদের গাঁয়ে যেতে।
শহর পেরিয়ে গাঁয়ের কাঁচাপথ কাকা ভাইপো গল্প করতে করতে চলেছিল। হেমন্তের বিকেলের নরম রোদের পরশ বড় ভাল লাগছিল মিলুর। গাঁয়ের রাস্তার দু’পাশে কখনও জলা, কখনও উঁচুজমি। ছড়ানো ছিটানো দূরে কাছে ছোট বড় বাড়ি। নানান রকম গাছগাছালির ভেতর দিয়ে যেতে যেতে কাকার কাছ থেকে মাঝে মাঝে জেনে নিচ্ছিল কোনটি কী গাছ। বাবলা, হিজল, জিয়ল, তাল, তমালসহ কত বুনোগাছ- বুনোফুল- আর জলায় লাল নীল সাদা-শাপলা, পদ্ম, হোগলা, …
গ্রামের অপরূপ দৃশ্যাবলী মিলুর মনকে অপার মুগ্ধতায় ভরিয়ে দিয়েছিল।

মামুদ আলি বলে – কত্তাবাবু আমি বাগানে যাইচ্ছি। আপনে আহেন মিলু দাদাকে ডাইক্যে নিয়ে।
মামুদ আলি বাগানের দিকে এগোয়ে পাটের মোটা আলগা পাকের দড়ি দিয়ে তৈরি ফাঁদি হাতে।

মিলুও এতক্ষণ বাগানেই ছিল। উঠোনে কথাবার্তা শুনতে পেয়ে বুঝতে পারে নিশ্চয়ই গাছিদাদা এসে পড়েছে।

মিলুকে হঠাৎ সামনে দেখতে পেয়ে মামুদ আলি সানন্দে বলে – এই যে মিলু দাদা, তুমি এই হেনে ? চল। কও তো কুন কুন গাছে হুবরী পেইক্যেছে ?

ওরা বাগানের ভেতরে ঢুকে পড়ে। মিলুর কাছ থেকে জেনে নিয়ে নিয়ে মামুদ আলি এ গাছ সে গাছ করে করে সুপুরী পেড়ে চলেছে। আর পিছন পিছন মিলু গিয়ে সেগুলো জড়ো করে রাখছে এক জায়গায়।
মামুদ আলির গাছে চড়া দেখে মিলুর মনেও সাধ জাগে গাছে চড়ার। বলে – গাছিদাদা, তুমি কার কাছ থেকে এমন সুন্দর গাছে চড়া শিখেছ?
– সে কী আর মনে আছে? কুন হোট্ট বিলায় শিখ্যেছি।
– আমাকে শিখিয়ে দেবে গাছে চড়া ?
– তুমি শিইখব্যে? কী এর লাইগ্যে? তুমার কি আর গাছে উঠা লাইগবে ?
– সে না লাগে না লাগুক। শিখতে তো আর দোষ নেই।
– আইচ্ছা। হুবরী গুলোন পেইড়ে নি আগে। তারপর শিইখ্যে দেব।

আরে ঐ কামরাঙা গাছটা নড়ছে কেন? হঠাৎ মিলুর চোখে পড়ে দক্ষিণের দিকে যে কামরাঙা গাছটা আছে – সেটার ডালপালা কেমন যেন নড়াচড়া করছে। মনে হচ্ছে কেউ গাছে আছে। প্রচুর ফল ধরেছে গাছে। পেকেওছে কিছু কিছু। গাছটিতে প্রায় সারাবছরই ফল ধরে। কামরাঙা ফলটি দেখতে মিলুর বড় ভাল লাগে।
গাছিদাদা, তুমি এই সারির গাছগুলোর সুপুরী পাড়তে লাগ। আমি একটু ওদিকে যাচ্ছি – বলে মিলু গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায় কামরাঙা গাছের দিকে। দক্ষিণ পাশে ওদের বাগানের সীমানার পরেই গাঁয়ের দিকে যাবার রাস্তা। ওখান থেকে একটা সুড়ি পথ বাইরে বেরিয়ে গেছে। পাড়ার অন্য বাড়ির মেয়ে বৌরা ওদের পুকুরে আসে ঐ পথ দিয়ে।

কামরাঙা তলায় গিয়ে দাঁড়ায় মিলু। দেখে গাছে প্রায় ওরই সমবয়সী পাশের বাড়ির সেই শ্যামলা মেয়েটি যাকে মাঝে মাঝেই দেখে পাশের জলা থেকে সন্ধ্যায় এক দল হাঁস তাড়িয়ে নিয়ে বাড়ি যেতে। ওর সাথে তেমন একটা কথাবার্তা না হলেও অপরিচিত নয়। মেয়েটির শ্যামলা বলেই সকলে শ্যামা বলে ডাকে। তার ভাল নাম তরুলতা কখন যেন গায়ের রঙের আড়ালেই ঢাকা পড়ে গেছে নামটি মিলুর বেশ লাগে।
মিলুকে দেখে একটু ভয় পেয়ে যায় শ্যামা। তাড়াতাড়ি গাছ থেকে নেমে পড়ার চেষ্টা করে।
মিলু বলে – নামছ কেন? পাড়ো না পাকাপাকা দেখে কয়েকটা!
মিলুর কথায় সাহস পেয়ে মেয়েটি দেখে দেখে কয়েকটা টকটকে হলুদ রঙের কামরাঙা পাড়ে। তারপর কাপডের খোটায় জড়িয়ে ধীরে ধীরে নেমে আসে।
তুমি নেবে ? – শ্যামা মিলুর দিকে দু’টো কামরাঙা এগিয়ে ধরে।
মিলু মেয়েটির মুখের দিকে তাকায়। কালো হলেও ভারি সুন্দর তো দেখতে শ্যামাকে। এত কাছ থেকে তো কখনো ওকে দেখে নি মিলু। –
শ্যামা আবার বলে – এই দু’টো তুমি নাও আর এই কটা আমি।
মিলু বলে – না, তুমি সবগুলোই নিয়ে যাও।

মেয়েটি মৃদু হেসে মায়াভরা টানাটানা দু’টো চোখ মেলে মিলুর দিকে তাকায়।

শংকর দেবনাথ সম্পর্কে

শংকর দেবনাথ জন্মঃ ২১ অক্টোবর, ১৯৭৪ প্রকাশিত গ্রন্থ - কবিতার বইঃ ১) আত্মহনন অথবা মৈথুন ২) শিয়রে নীলাভ জ্বর ৩) পরকীয়া ঘুম ছড়ার বইঃ ১) দুধমাখা ভাত ২) টক ঝাল তেতো কড়া ৩) ফাটকা কথার টাটকা ছড়া ৪) লাগ ভেল্কি লাগ ৫) রসে কষে ভরা প্রবাদের ছড়া গল্পগ্রন্থঃ ১) দুই শালিকের গল্প ২) গাছের জন্মদিন পিডিএফ ছড়ার বই: ১. ফাটকা কথার টাটকা ছড়া ২. সুজন পাখির কূজন ৩. অথৈ প্রাণের ধারা ৪. ছন্দ মাতে বন্দনাতে ৫. কিম্ভুতকিমাকার ৬. অপ্রচলিত ছড়া ৭. আমার সুকুমার ৮. প্রাণের ঠাকুর ৯. গাছপাগলের পদ্য ১০. ছড়ায় পড়া ১১. শব্দ নিয়ে মজা ১২. ভূত আছে ভূত নেই ১৩) ঠাকুরদাদার বউ ১৪) তাই রে না না ১৫) খুশি মনে পুষি ছড়া ১৬) স্বরবর্ণের ঘর সম্পাদিত পত্রিকাঃ ছোটদের ভোরের পাখি ভেল্কি ছড়াপত্র ঠোঁটকাটা মাসিক ছড়াপত্রিকা পুরষ্কার ও সম্মাননাঃ ১। নিখিলবঙ্গ শিশুসাহিত্য সংসদ প্রদত্ত " কবি কৃত্তিবাস সম্মাননা" -২০১৮ ২। দীনবন্ধু রাখালদাস বিভূতি বিনয় একাডেমি প্রদত্ত " কবি যোগীন্দ্রনাথ সরকার সাহিত্য সম্মান -২০১৯

4 thoughts on “ধারাবাহিক উপন্যাসঃ কুসুম-কুমার

  1. পড়লাম প্রিয় কবি। নিরলস ভাবে উপন্যাসের খণ্ডাংশ প্রকাশ করে যাওয়ায় আপনার জন্য রইলো একরাশ শুভ কামনা। ভালো থাকুন এবং এভাবেই শব্দনীড়ের পাশে থাকুন। ধন্যবাদ। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।