চলনবিল

সূর্য কি পোড়ে! সূর্য পোড়ায়
তুমিও পোড়াও তবু কেন যে পুড়ি না!
এ পোড়া দেশ শুধু গল্প শোনায়
আগুনের নদী ঘেরে সামুদ্র সময়।

আসলে সেই কথাগুলো বলা হয়ে ওঠে না, যে গুলো স্বপ্নের মধ্যেও অলিগলি সাঁতরায়। দিন ওঠে, দিন নামে। মানুষের হাতে পায়ে শাখা প্রশাখা। অহংকার কিম্বা নমনীয়তার বৃত্ত ছাড়িয়ে মাটির ভেতর থেকে ছলকায় বিগত গরমের ঘাম, রক্ত, কান্নার শহীদ ইতিহাস। চোখের আড়ালে জমা হয় আশ্চর্য এক হ্রদের গভীর তলদেশে। একসময়ে হ্রদের বহির্গন্ডী উপচে গেলে বাষ্প হয় প্রাচীন পুরাতত্ব।

আসলে কথাগুলো কথা থাকে না চিরকাল। না বলা কথাদের গায়ে জমে যায় অনড় সবুজ শ্যাওলা। রোদ্দুর আছড়ায়, বৃষ্টি অসময়ের নোনা গন্ধ ভাসিয়ে ভঙ্গুর করে দেয় কখনোই না জন্মানো ভ্রুণ শব্দদের। বিরল প্রজাতির ঈগল হয়ে যায় না বলা কথারা। পূর্বী সমুদ্রের ওপরে ঝুলে থাকা বাষ্পের ঝুন্ড আচমকা আকাশ বাইসন হয়ে আছড়ে পড়ে মুখ আর মুখোশের যান্ত্রিক সভ্যতার অ্যাসফল্টের রাস্তায়, মধ্যযুগীয় বাড়ির বদ্ধ উঠানে, মেকি রেস্তোরাঁর রোমান্টিক টেবল্ ল্যাম্পশেডে।

কোনো শুরু ছিল না, তাই শেষও হয় নি
বিকার ছিল না, তাই নির্বিকার হওয়ার প্রশ্নও তোলেনি কেউ;
নিশ্ছিদ্র অন্ধকার কিম্বা ফুটফুটে আলো
মেরুর বরফজ্বলন শেষে ছিল না কোথাও,
এক অলীক ব্রহ্মের রূপক ঘিরে রেখেছিল আব্রহ্মস্তম্ব;
ছিল শুধু সুখ আর শোকের কল্পিত মন্ড।

নির্বিকল্প সমাধির গভীরে হারিয়ে যায় কোনো একলা মাঠকোঠা ঘর। সুখ আর সুখের বৃত্তান্তের ঘনিষ্ঠ আলাপচারিতায় উঠে আসে অনিবার্য শৈশবের ফেলে আসা আঁচড়। আস্তে আস্তে সুখের স্মৃতিকণা জমতে জমতে জন্ম নেয় রাজৈশ্বর্যের আলো ঠিকরানো টাইটানিক। আলোর সঞ্চয় পূর্ণ হলে আচমকা মহা বিস্ফোরণ।

দু হাত একত্র করে মহাকাশ উচ্চারণ করে ওহম্! গ্যালাক্সি থেকে অন্য গ্যালাক্সিতে উড়ে যায় শান্তির সাদা পতাকা –

প্রকৃতি রজঃস্বলা হয়…
প্রকৃতি শান্ত হয়…

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

2 thoughts on “চলনবিল

  1. বাহ বেশ নতুনত্ব পেলাম অনেক শুভ কামনা জানাই কবি দা

  2. নির্বিকল্প সমাধির গভীরে হারিয়ে যায় কোনো একলা মাঠকোঠা ঘর। সুখ আর সুখের বৃত্তান্তের ঘনিষ্ঠ আলাপচারিতায় উঠে আসে অনিবার্য শৈশবের ফেলে আসা আঁচড়। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।