স্বতন্ত্রের স্বাতন্ত্র্য সুপিরিয়রের মধ্যে ইনফিরিয়র কমপ্লেক্স তৈরি করে দেয়

শৃঙ্খলা নামক শৃঙ্খল সুপিরিয়র নামক এককের যাবতীয় ক্ষমতার চাবিকাঠি। আসলে সুপিরিয়র মাত্রেই আধারিত ক্ষমতা। আবার উক্ত একক একটা জেলখানা বা খোঁয়াড়ের পাহারাদার ছাড়া আর কিছু নয়, যা তার কর্মক্ষেত্র। শৃঙ্খলা তথা শৃঙ্খলের বাইরে বের হতে চাওয়া কোনো স্বতন্ত্রের স্বাতন্ত্র্য তাই সহ্য করা কোনো ‘ক্ষমতা’ বা সুপিরিয়রের পক্ষে দস্তুর নয়। হায়ার্কির সকল অধস্থানীয় এবং তার বাইরের সাধারণদের খড়-ভূষি দেওয়া হবে, চকচকে দড়ির গলান দেওয়া হবে, অথচ সেসব অস্বীকার করে খোঁয়াড়ের বাইরে ঘুরে বেড়তে চাইলে কেউই তা মানবেন না।

বিশেষ্য ও বিশেষণ আছড়ে পড়বে খোঁয়াড়ের বাইরে যেতে চাওয়া যে কোনো স্বতন্ত্রের পিঠে! স্বতন্ত্রের স্বাতন্ত্র্য সুপিরিয়রের মধ্যে ইনফিরিয়র কমপ্লেক্স তৈরি করে দেয়, তখন তাকে গুরুত্ব না দিয়ে সুপিরিয়রের উপায় থাকে না। আর সেখানেই সুপিরিয়রের সব মহিমার ভাঙচুর ঘটে যায়। তখন ঠ্যাঙা নিয়ে তারই পিছনে পড়ে থাকবে সেই সুপিরিয়র। সমন পাঠাবে, পেয়াদা পাঠাবে, জেলখানার ভিতরের জেলখানায় ঢুকিয়ে দিতে চাইবে। আসলে সুপিরিয়রের প্রতি যখন সে আনুগত্য প্রদর্শন করতে পারছে না, তার ঘাড় বেঁকে যাচ্ছে, এবং কিছু প্রশ্ন সত্যের সরগম ছুঁয়ে ফেলে সুপিরিয়রকে বিদ্ধ করছে তখন সুপিরিয়রের নখ-দাঁত তার ঘাড়ে বসে সেই অসহায় ঘাড়টিকে ভেঙে ফেলতে চাইবে এ তো ক্ষমতার অলিন্দে স্বাভাবিক তরিকা! কারও স্বাতন্ত্র্য ‘ক্ষমতা’র না-পসন্দ। ধমকে কাজ না হলে লাইনছুট তৃণভোজীকে বংশদন্ডের প্রহার করা ছাড়া উপায় কী? নিয়ন্ত্রণের কব্জায় না আনা পর্যন্ত সুপিরিয়রের শান্তি নেই। যেখানে যতটুকু ক্ষমতা তাই দিয়ে স্বাতন্ত্র্য ধ্বংস করে তার হেঁটোয় কাঁটা, জোড়া হাত পিছন দিকে বেঁধে, আর সেই অদ্বিতীয় ‘ঘাড়’ সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে স্বতন্ত্রকে বসিয়ে দিতে পারলে তবেই তো সুপিরিয়রের সাফল্য! বলির বাজনা বাজবে দ্রুত ঝাঁপতালে, আর সুপিরিয়র খড়্গের রক্ত মুছে প্রচন্ড কাপালিক – রক্তাম্বর, কপালে বড়ো করে সিঁদুরের তিলক, ঘামে চকচকে মুখ …। সিংহাসনে বসে ঠ্যাঙের উপর ঠ্যাঙ তুলে নাচাচ্ছেন আর মুখে আত্ম প্রসাদের হাসি।

কিন্তু ‘স্বতন্ত্র’ স্বতন্ত্র বলেই নির্ভয়। সুপিরিয়র যতই পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে মাটিতে পুঁতে দিতে চাইবে, ততই সে শক্তিশালী হবে। সুপিরিয়র প্রতিবার হারবে। হারবে যত তত নিজের ক্ষমতাও জাহির করবে।

1 thought on “স্বতন্ত্রের স্বাতন্ত্র্য সুপিরিয়রের মধ্যে ইনফিরিয়র কমপ্লেক্স তৈরি করে দেয়

  1. একদম সরল বিশ্লেষণ। অসংখ্য শুভেচ্ছা প্রিয় কবি বন্ধু।  https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।